বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সিনেমার ধারাবিবরণী ~ সচেতনতা দত্ত

জি বাংলায় সিনেমায় একটা বাংলা সিনেমা হচ্ছে।

মুনমুন সেন ফুলশয্যার খাট থেকে জর্জ বেকারকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
জর্জ বেকারকে তাড়িয়ে দিয়ে মুনমুন সেন তার পোষা ডোবারম্যানকে নিয়ে শুয়েছে।
জর্জ বেকার মনের দুঃখে এমন একটা ঘরে গিয়ে ঘুমিয়েছে, যে ঘরে একটা কালী মূর্তি, আর তিন দেওয়ালে তিনটে বন্ধ জানলা।
মুনমুন সেন ফুলশয্যার ঘরে চাদরমুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে।
 জর্জ বেকার তিনটে টেবিল জোড়া লাগিয়ে বিনা চাদরে ঘুমোচ্ছে বলে বেজায় শীত করছে। কারণ বন্ধ জানলার ঘরটার ভিতরে প্রবল ঝড় উঠেছে।
মুনমুন সেনের পাশে শোয়া ডোবারম্যানটা টেলিপ্যাথি করে টের পেয়েছে বন্ধ জানলার ঘরটার ভিতরে সোঁ সোঁ করে ঝড় হচ্ছে বলে জর্জ বেকারের ভীষণ শীত করছে।
নিজের টেলিপ্যাথি ক্ষমতার উপর বিশ্বাস না রেখে ডোবারম্যান নিজের চোখে জর্জ বেকারকে দেখতে যায়।
জর্জ বেকারকে টিউনিং ফর্কের মতো কাঁপতে দেখে ডোবারম্যান মুনমুন সেনের ঘরে ফিরে আসে এবং ঘুমন্ত মুনমুনের গায়ের থেকে চাদরটা মুখে করে খুলে নিয়ে গিয়ে জর্জ বেকারের গায়ে সেই চাদরটা চাপিয়ে দিয়ে এসে ভাল পোষা কুকুরের মতো মুনমুন সেনের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
মুনমুন সেন ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে ডোবারম্যানকে জিজ্ঞেস করে "আমার চাদরটা কোথায় গেল রে?"
সেই সময় গদগদ মুখে জর্জ বেকার চাদরটা ফেরত দিতে আসে।
এই চরম ক্লাইম্যাক্সের মুহূর্তে বদমাইশ ডোবারম্যান খাট থেকে নেমে পড়ে কোথায় একটা চলে যায় জর্জ বেকারকে কেস খাইয়ে দিয়ে।
জর্জ বেকারের হাতে চাদরটা দেখে মুনমুন সেন ভাবে রাতে জর্জ বেকার এসে মুনমুনের চাদর খুলে নিয়ে গেছে।
তারপর মুনমুন বেজায় গালাগালি করে রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে চলে গেছে।
তাই মুনমুনের বাবা কালী ব্যানার্জী সব সম্পত্তি জর্জ বেকারকে লিখে দিয়েছে।

আমি কি সিনেমাটা এরপরেও দেখব?
পুনশ্চঃ  বন্ধুদের অনুরোধে ধারাবিবরণী দিচ্ছি এর পর থেকে।

জর্জ বেকার শ্বশুরের আদেশ পালন করতে চাবাগানে রঞ্জিত মল্লিকের বাংলো থেকে মুনমুনকে ফিরিয়ে আনতে গেছে।
মুনমুন জিজ্ঞেস করেছে জর্জ বেকার কি ওর ভাল চায়? 
জর্জ বেকার হ্যাঁ বলেছে।
মুনমুন উত্তরে বলেছে, তাহলে যেন জর্জ বেকার নিজেকে মুনমুনের "কেয়ারটেকার" বলে পরিচয় দেয়।
জর্জ বেকার এক গাল হেসে বলেছে, "মা কালী আপনাদের সহায় হোন।"

এখন আবার বিজ্ঞাপন বিরতি।

মুনমুনঃ মা কালী সহায় হলে চলবে না। আপনাকে সহায় হতে হবে। আমার বাবাকে গিয়ে বলুন রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করতে।
জর্জ বেকার (রঞ্জিত মল্লিকের উদ্দেশ্যে) ঃ আই উইশ ইউ অল দা বেস্ট।
জর্জ বেকার (ডোবারম্যানের উদ্দেশ্যে) ঃ চলি রে বিট্টু। আর বোধহয় দেখা হবে না। তোর মায়ের ভাল করে দেখাশোনা করিস।

শয়তান কুকুর কালী ব্যানার্জীর চিঠি রঞ্জিত মল্লিককে দিয়ে দিয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে জর্জ বেকার মুনমুনের বর এবং কালী ব্যানার্জীর সব চা বাগানের মালিক।
রঞ্জিত মল্লিক জিপগাড়ি নিয়ে জর্জ বেকারের পিছনে তাড়া করেছে।
রঞ্জিত মল্লিক জর্জ বেকারকে বলছে, "আপনি মালিক, আমি আপনার কর্মচারী।" 
রঞ্জিত মল্লিক মুনমুনকে জর্জ বেকারের সিঁদুর পরতে বলছে। সিঁথি সাদা রাখতে মানা করছে।

মুনমুন সেন কালী ব্যানার্জীকে থ্রেট দিচ্ছে, "দেখি ওর মা কালী ওকে কী করে বাঁচায়!"
কালী ব্যানার্জী থ্রেট খেয়ে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে মরে গেছে।

জর্জ বেকার মুনমুন সেনের ক্লাবের মেম্বারশিপের রিনিউয়াল ফি দিচ্ছে না। মাধবী মুনমুনের হয়ে জর্জ বেকারকে বলছে টাকা দিয়ে দিতে।

বিজ্ঞাপন বিরতি।

সৌমিত্র ব্যানার্জী ভাড়াটে খুনি নিয়ে এসে যেই বলেছে "এবার দেখি সালাকে কে বাঁচায়?" বিট্টু ডোবারম্যান এসে সৌমিত্র ব্যানার্জীর জামা কামড়ে ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে একটা গাছের উপর তুলে দিয়েছে সৌমিত্র ব্যানার্জীকে।
তারপর সৌমিত্র ব্যানার্জী ভিতরে সাদা গেঞ্জি পরে আছে দেখে সৌমিত্র ব্যানার্জীর জামা খুলে এনে পাঞ্জাবি পরা জর্জ বেকারের হাতে দিয়ে দিয়েছে।

মুনমুন সেনের বন্ধু শুভ্রার বিয়েতে জর্জ বেকার মুনমুন সেনের হয়ে এক লক্ষ টাকা দিয়ে দিয়েছে। সেই শুভ্রা যে ফুলশয্যার রাতে মুনমুনকে থ্রেট দিয়ে বলেছিল যে মুনমুন যদি জর্জ বেকারকে আর কষ্ট দেয়, তাহলে জর্জ বেকারকে একদিন শুভ্রার ঘরের বিছানায় পাওয়া যাবে।

শুভ্রার বাবা মুনমুনকে বলছে শুভ্রার কন্যাসম্প্রদানের সময় মুনমুন যেন শুভ্রার বাবার পাশে থাকে।

বিজ্ঞাপন বিরতি

শুভ্রার বাবা মুনমুনকে বলছে, "তোর মতো মেয়ে কি স্বামীনিন্দা সহ্য করতে পারে? জর্জ বেকার তোর মতো দেবীকে বৌ হিসেবে পেয়ে ধন্য হয়েছে।"

মুনমুন জর্জকে ঃ তুমি নিজেকে এত ছোট করলে কেন? 
জর্জ ঃ যাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি, তাকে তো আমি বড় করবই।

শুভ্রার বাসরে সৌমিত্র ব্যানার্জী জর্জ বেকারকে গান গাইতে বলেছে বলে মুনমুন রেগে গিয়ে জর্জ বেকারকে নিয়ে বাসর থেকে চলে যেতে চাইছে।

জর্জ বেকার বাসরে "আমি সবার সামনে ছোট হব। মা কালীর নাম করে একটা গান শুনিয়ে দিই" বলে একটা প্রচণ্ড সেল্ফপিটির গান গাইছে। মুনমুন বাসর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ডেকোরেটর আর ক্যাটারারের সাইনবোর্ডে মাথা ঠেকিয়ে জর্জ বেকারের সেল্ফপিটির গান শুনছে।

শুভ্রা নিজের বাসি বিয়ের সকালে এসে মুনমুনকে হাজব্যান্ড সোয়াপিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। 

মুনমুন তাই রাতে কাঁদছে। নিজের খাটের চাদর এনে তিনটে টেবিল জোড়া লাগিয়ে ঘুমন্ত জর্জ বেকারকে চাদরমুড়ি দিয়ে ডোবারম্যান বিট্টুকে খুব বকে দিয়েছে, "আমি নাহয় ওকে ভালবাসি না। কিন্তু তুই তো ওকে ভালবাসিস। কিছু তো করতে পারতিস, দেখছিস না শীতে কষ্ট পাচ্ছে!" বলে। কিন্তু এখন ঘরের ভিতর ঝড় হচ্ছিল না। জর্জ বেকারও এসএইচএমে কাঁপছিল না।

বিজ্ঞাপন বিরতি

রঞ্জিত মল্লিক জর্জ বেকারের সই নিতে এসেছে। জর্জ বেকার রঞ্জিত মল্লিককে বাড়িতে মুনমুনের কাছে পাঠাতে চাইছে। কিন্তু রঞ্জিত মল্লিকের তাড়া আছে, দার্জিলিং মেলে ফিরতে হবে বলছে।

সৌমিত্র ব্যানার্জীকে মুনমুন চড় মেরেছে বলে ওর চ্যালাদের দিয়ে মুনমুনকে মলেস্ট করাচ্ছে। জর্জ বেকার সৌমিত্রকে বলছে মুনমুনকে ছেড়ে দিয়ে জর্জ বেকারকে ধরতে।

সৌমিত্র এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি, জর্জ বেকারকে বলেছে চা বাগানগুলো সৌমিত্রকে দিয়ে দিতে। আর যতক্ষণে জর্জ বেকার দলিল আনবে ততক্ষণ মুনমুনকে মাঠে নিয়ে গিয়ে মলেস্ট করা হবে।

জর্জ বেকার কাগজ আনতে যাচ্ছিল রাজি হয়ে। কিন্তু রঞ্জিত মল্লিক খুব রেগে গিয়ে একাই সবাইকে মেরে পাট করে দিয়েছে।

সৌমিত্র ব্যানার্জীর ঘাড় ধরে মুনমুনের পায়ে ফেলে রঞ্জিত মল্লিক বলেছে "মাকে যেমন ভক্তিশ্রদ্ধা করো, তেমন করে পায়ে ধরে মা ডেকে ক্ষমা চাও।"
সৌমিত্র মুনমুনকে ঃ "মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।"

মুনমুন মা কালীকে অঞ্জলি দিতে দিতে গান গাইছে, "তোমার চরণ ছুঁয়ে বলছি আমি মা, চাই না সোনাদানা... ওর জীবনের আনন্দতে চাই না আমি বেড়া দিতে...ও যেখানে সুখ খুঁজে পায় ওকে দে সেই ঠিকানা।"

বিজ্ঞাপন  বিরতি

মুনমুন সেনকে জর্জ বেকার জড়িয়ে ধরেছে। তাই দেখে বিট্টু ডোবারম্যান আড়মোড়া ভাঙছে।

জর্জ বেকার আর মুনমুন মাধবীকে প্রণাম করতে গেছে। কিন্তু মাধবী নিজের প্রণাম বুঝে না নিয়ে আগে মরে যাওয়া কালী ব্যানার্জীকে প্রণাম করতে বলেছে। যেই প্রণাম করেছে কালী ব্যানার্জীর ছবিতে অমনি সিনেমা শেষ হয়ে গেছে।

অতএব সিনেমার ধারাবিবরণীও শেষ হল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন