বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গনেশ পুজোর রমরমা ~ মানস নাথ

অনেকেই আছেন যারা রাজনীতিটা প্রফেশন মনে করেই করেন৷ তাতে দোষের কিছু দেখি না। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুন সমাজসেবা করতে এবং মানুষের জন্য কাজ করতে হলেই রাজনীতিতে আসুন বাস্তবে তা খুব একটা  সম্ভব হয় না৷ কারণ রাজনীতি করতে টাকা লাগে, সমাজসেবা করতেও লাগে। প্লাস নিজের এবং পরিবারের ভরনপোষণ খরচখরচা রয়েছে। তো সারাদিন ধরে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ালেন, কাঁধে করে মৃতদেহ অন্তেষ্টি করতে নিয়ে গেলেন কিন্তু দিনের শেষে আপনার খরচা আপনাকেই তুলতে হবে। ঠিক কিনা? 



এবার আপনি বলবেন রাজনীতিতে কি পয়সা নাই?  

নেতাদের ফ্ল্যাট ফুঁড়ে কোটি কোটি টাকার বান্ডিল এমনি এমনি বেরোচ্ছে! আহা, সেতো বিগ বিগ নেতা মন্ত্রীদের। থিংক লোকাল৷  আসুন তো হিসাব করি একটা এলাকায় কতজন নেতা থাকতে পারে। সবার উপরে অনুপ্রেরণা আর কালিঘাট, ওটা বাদ দিয়েই হিসাব করছি৷ ধরুন একজন হল এম পি, একজন হল এম এল এ,  একজন হল কাউন্সিলার। পঞ্চায়েত হলে  প্রধান, মেম্বার  এগুলো নির্বাচিত পোস্ট। এছাড়া দলের  সভাপতি বা সেক্রেটারি। দলের ছাত্র যুব শাখার এক দুজন কচি নেতা, যে স্কুল কলেজগুলো দেখবে। এবারে বাদবাকি যারা তারা হল অনুগামী  চ্যালাচামুণ্ডা।

এরা বিভিন্ন নেতার আশেপাশে থাকে, এদের যথেষ্ট কামাই। ইঁট বালুর সাপ্লাই, সিন্ডিকেট, কন্ট্রাকটারি এদেরই হাতে। এখানেই হল আসল ক্ষীর। এর কন্ট্রোল হাতে নেওয়ার জন্যই এত কষ্ট এত ত্যাগ স্বীকার এত সমাজসেবা।

এবার দেখেনি একটা এলাকায় ক্ষমতার ভরকেন্দ্র মানে টাকাপয়সা বিলিবন্টন কার হাতে। এম পি দূরের শুকতারা। এইসব এঁটোকাঁটায় সচারাচর মুখ মারেন না। এম এল এ প্রভাবশালী হলে সুতো তার হাতে থাকে, শিল্পী বুদ্ধিজীবী হলে তার রোল অতিথি শিল্পীর। কর্পোরেশন মিউনিসিপালিটিতে অনেকটাই ক্ষমতা কাউন্সিলারের হাতে। তাই কাউন্সিলর হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতাও বেশি।

এক একটা এলাকায় আট দশজন লবি করতে থাকে কাউন্সিলর পদের জন্য। তার উপর আবার মহিলা বা এস সি / এস টি সংরক্ষিত হলে গেলে পারমুটেশন কম্বিনেশন বদলাতে থাকে।

আচ্ছা এই যে একটা ওয়ার্ডে আট দশজন কাউন্সিলর হওয়ার জন্য লড়াইতে থাকে প্রফেশনের শুরুরদিকে  তাদের ইনভেস্টমেন্ট  কেমন?  প্রথম যোগ্যতা ঠিকঠাক ল্যাজ ধরা। এম পি,  এম এল এ বা পার্টির বড় নেতার সাথে সুসম্পর্ক। যাকে বলে দাদা/ দিদি ধরা। পরের কাজ কিছু চামচা পোষা। যারা তার আশেপাশে থাকবে সমাজসেবা করার সময়। একা একা তো আর মড়া কাঁধে করে শ্মশানে কবরস্থানে যাওয়া যায়  না!  পরের স্টেপে ধরতে হবে কোন শাঁসালো ক্লাব। যারা বেশ নামকরা পুজো করে থাকে। একেবারে বড়বড় দুর্গাপূজা কমিটিগুলোতে ঢোকা তো মুখের কথা নয়। একজিস্টিং বিধায়ক বা কাউন্সিলর সেখানে অলরেডি অনুপ্রেরণায় রয়েছেন৷ তাকে সরিয়ে নতুন নেতা হতে চাওয়া মুখটি জায়গা নেবে কেমন করে?  এর উপর আবার রয়েছে নেপোটিজম৷ নেতার ছেলে মেয়েদের ডায়রেক্ট লাইন৷ 

দুর্গা, কালী এরা হল ওপরতলার। আগে থেকেই বড় নেতাদের স্নেহধন্য। বিশ্বকর্মা এখন রিকসাওয়ালা অটোওয়ালাদের হাতে, কারখানা ফারখানা কবেই উঠে গেছে! লক্ষ্মী কার্তিক ঘরোয়া। সরস্বতী ছোটদের। রবিঠাকুরের আর সেই আগের বাজার নেই। শুরুটা তাই রামনবমী, হনুমান বা গনেশপুজো দিয়েই করা ভালো। এলাকায় কচিনেতার ছবিসহ গনেশ পুজোর ফেস্টুনে ছেয়ে দিতে হবে। পাড়ার এমাথা থেকে ওমাথা মাইক আর ননস্টপ মারাঠি গান। 
 এতকিছুর পরেও কপালে সিঁকে নাও ছিঁড়তে পারে। কিন্তু লেগে থাকার তো কোন বিকল্প নেই রাজনীতিতে৷ ভাবলে একটু খারাপই লাগে। একবার ফস্কে গেলে চার চারটি বছরের অপেক্ষা। দেঁতো হাসি মুখে মেখে নতুন কাউন্সিলারের সাথে মিছিলে মিটিংয়ে অনুষ্ঠানে আলাপে হে হে চালিয়ে যেতে হবে কিন্তু স্বপ্ন মরতে দেওয়া যাবে না। বছরে একবার অন্তত ফ্লেক্সে ব্যানারে নিজের নাম তুলে এলাকাবাসীকে পুজো, দেওয়ালি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে হবে।আর ছোট ছোট পুজোতে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে হবে।  এটুকু ইনভেস্টমেন্ট মাস্ট। 

তাহলে কথা হল হাতেখড়ি করতে গনেশ হল প্রথম পছন্দ। সিদ্ধিদাতা বলে কথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন