আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে।
প্রথমে আরএসএস আসামে 'বংগাল খেদা'র আগুনে ঘী ঢালবে। বাজপেয়ী আসাম আন্দোলনকে সমর্থন করে পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেবে। তারপর আসামে গিয়ে বলবে 'এখানে বিদেশীরা এসে সব দখল করে নিচ্ছে। পাঞ্জাবে এরকম করলে আমরা কেটে টুকরো টুকরো করে দিতাম'। এরপর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জুড়ে বাঙালিদের কচুকাটা আর বিতাড়ন চলবে।
তারপর বরাক উপত্যকার বাঙালীদের আরএসএস বোঝাবে হিন্দু বাঙালী আমাদের আপন। মুসলিম বাঙালী বহিরাগত। তাদের এনআরসি করে বার করে দেবো।
তারপর অহমীয়াদের বোঝাবে এনআরসি করে সব বাঙালিকে তাড়াবো। এরকম করে ১৯ লাখ বাঙালী আর সাথে কিছু কোল্যাটারাল হিসেবে বিহারী গোর্খা পাড়ি দেবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। সর্বানন্দ সোনেওয়াল বলবে বাজপেয়ীজি আমাদের কাছে পরম শ্রদ্ধেয়, আসাম আন্দোলনে ওনার অবদান চিরস্মরণীয়। এরপর ভীত বাঙালী হিন্দুকে বিজেপি বোঝাবে তোমাদের আবার ক্যা এনে ঢুকিয়ে নেবো। আমরাই তোমাদের রক্ষাকর্তা।
আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে।
কাশ্মীরে পন্ডিতদের ওপর আক্রমণের সময় কেন্দ্রে বিজেপির জোট সরকার। কাশ্মীরের গভর্নর আরএসএসের সদস্য জগমোহন পন্ডিতদের উদ্দেশ্য ঘোষণা করবে - ৩,৪ মাসের জন্যে জম্মুতে সাময়িক ভাবে আশ্রয় নাও। এরপর কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্ত করেই তোমাদের আবার ঢুকিয়ে নেবো। পন্ডিতদের স্থানান্তরিত করতে গাদা গাদা সরকারি বাস, প্লেনের আয়োজন করা হবে। এরপর দুবার বাজপেয়ীর সরকার আসবে। দুবার মোদীর সরকার আসবে। স্থানান্তরিত পন্ডিতরা সেই ক্যাম্পেই থাকবে। তার কারন প্রতিবার আপনার মতন বেয়াদবকে প্রশ্ন করবার অবকাশ রাখতে হবে - কাশ্মীরী পন্ডিতদের বিতাড়নের সময় আপনি কি করছিলেন? আর আপনি, যিনি অত খবর রাখেন না, তিনি ভুলেই যাবেন, যে বিতাড়নের সময় কেন্দ্রের সরকারের জোটসঙ্গী বিজেপি কাশ্মীরি পন্ডিতদের বিতাড়ণের সময় দেশজুড়ে রথযাত্রা করছিলো। আর কাশ্মীরি পন্ডিতদের ক্যাম্পে গিয়ে গিয়ে বছরে একবার বিজেপি নেতারা মুসলমানদের গালি দিয়ে বলবে - আমরাই তোমাদের রক্ষাকর্তা।
আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে।
সেই পার্টিশনের পর থেকেই এই রাজ্যে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বাঙাল উদ্বাস্তুরা আসছে। এই রাজ্যে তো রীতিমতন আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে তারা জমি, কাজের অধিকার পেয়েছে। আস্তে আস্তে কাগজ পেয়েছে, ভোটাধিকার পেয়েছে। ভোটাধিকার মানেই নাগরিক, এমনটাই আপনি জানবেন, কারন সংবিধানেই লেখা আছে একমাত্র নাগরিকদের নামই ভোটার তালিকায় উঠবে। এমতবস্থায় ২০০৩ এ বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী এনে বলবে এবার থেকে 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী'র সংজ্ঞা তৈরি হলো। যারাই সঠিক প্রনালী বা সঠিক কাগজ ছাড়া এই দেশে ঢুকবে, তারাই 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী'। এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা আর কখনো কোন উপায় দেশের নাগরিকত্ব পাবে না। শুধু তাই নয়, কারুর বাবা বা মা যদি 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' হয়, সেও নাগরিকত্ব পাবে না।
এর ফলে কি হবে? এতদিন যেই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় এই দেশে এসেছে উদ্বাস্তু হয়ে, এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সময়ের সাথে সাথে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড পেয়েছে, ২০০৩ এর এই আইনি সংশোধনীর পর তাদের এবার নাগরিকত্ব পাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ।
আপ ক্রনোলজি সমঝিয়ে।
২০০৩ থেকে ২০১৪, বিজেপি বলছে আহা রে, এই উদ্বাস্তুদ্বের নাগরিকত্ব পাওয়া আরও সহজ করতে চাই আমরা, তাই তো আমরা ক্যা এনেছি। চলো ভাইসকল উদ্বাস্তু, তোমাদের আমরা আসাম থেকে তাড়িয়েছি, ২০০৩ এ নাগরিকত্ব পাওয়া আটকে দিয়েছি, এবার আমরা ক্যা আনছি বলে আমাদের ভগবান মেনে লাইনে দাড়িয়ে প্রথমে নিজেদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করো, তারপর আমাদের কাছে নাগরিকত্ব ভিক্ষা চাও। আজ থেকে ১০ বছর পর আবার তখন আমরা সব বেয়াদবকে প্রশ্ন করবো - বাঙালি হিন্দুদের সমস্যার সময় আপনারা কি করছিলেন?
আপ ক্রনোলজি সমঝিয়ে।
এই ভাবেই এক হাত থেকে অন্য হাতে কয়েন চালান দেওয়ার ম্যাজিক দেখতে দেখতে আপনার চোখে যখন ঝিলিমিলি লেগে গেছে, সেই সময়কালে বাজপেয়ী আর যশবন্ত সিনহা বিলগ্নিকরণ মন্ত্রক খুলে ফেলবে, আর তাদের যোগ্য উত্তরসূরি নির্মলা সিতারমণ চুপিচুপি ঘোষণা করে দেবে, ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি করবার লক্ষ্যে সমস্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ঝটপট বেচে ফেলতে হবে।
আপ ক্রনোলজি সমঝিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন