মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২০

বর্গী এলো দেশে ~ অনির্বাণ অনিক

চাইর দিকে লোক পলাঞ ঠাঞি ঠাঞি।
ছর্ত্তিস বর্ণের লোক পলাএ তার অন্ত নাঞি।।
এইমত সব লোক পলাইয়া জাইতে।
আচম্বিত বরগি ঘেরিল আইসা সাথে।।
মাঠে ঘেরিয়া বরগী দেয় তবে সাড়া।
সোনা রুপা লুটে নেএ আর সব ছাড়া।।
কারূ হাত কাটে কারূ নাক কান।
একি চোটে কারূ বধএ পরাণ।।
ভাল ভাল স্ত্রীলোক জত ধইরা লইআ জাএ।
আঙ্গুষ্ঠে দড়ি বাঁধি দেয় তার গলাএ।।
একজনে ছাড়ে তারে আর জনা ধরে।
রমনের ভরে ত্রাহি শব্দ করে ।।'

কার লেখা জানেন? কোন ঘটনার বর্ণনা জানেন? পলাশী যুদ্ধের বহু বছর আগে এক বাঙালি কবি গঙ্গারামের লেখা। "হিন্দু পাদ পাদশাহী" অর্থাৎ হিন্দু সাম্রাজ্য গড়ার নামে মারাঠা ভাস্কর পণ্ডিত এবং তার দলবলের বর্গী আক্রমণে সেদিন সমগ্র  বাংলাদেশ  ও বাঙালি ছারখার হয়ে গিয়েছিল। বার বার বাংলা আক্রমণ করে কত বাঙালিকে যে খুন করেছিল, কত বাঙালি নারীকে যে ধর্ষণ করেছিল, কত লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ লুঠ করেছিল তার ইয়ত্তা নেই। একবার না , বার বার। বাংলার গ্রামে গ্রামে, মাঠে প্রান্তরে বছরের পর বছর তাদের আক্রমণে  নেমে এসেছিল শ্মশানের স্তব্ধতা। ৪ লক্ষ বাঙালির খুনে সেদিন লাল হয়ে গিয়েছিল বাংলার প্রান্তর। কয়েক সহস্র বাঙালি মহিলাকে লুঠ করে "হিন্দু পাদ পাদশাহীর" যোদ্ধারা যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করেছিল। সেদিনের বাঙালি কবি গঙ্গারামের বর্ণনায় প্রতিফলিত হয়েছে সেদিনের নির্মম বাস্তবতা।  "খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে/বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে" গানে মায়ের আকুতিতে ধরা পড়েছে সেদিনের বাঙালির অসহায়তা। 

অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই, বিদেশী আক্রমণকারীর ধর্ম দেখে "মুসলিম" বিচার করে নির্মমতার যে বিবরণ জনমানসে খাড়া করা হয় তার ১% শিহরণের ন্যারেটিভ "হিন্দু পাদ পাদশাহীর" নির্মমতার ক্ষেত্রে কোনদিন তৈরী করা হয়নি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন