রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

দেশভাগ ও সেই সময়ের গণসংরাম ~ মানস দাস

গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নিয়ে এখন খুব নাড়াচাড়া হচ্ছে। ধামাকা বোম্বে ফিল্ম হচ্ছে। দুই সম্প্রদায়ের দাঙ্গা এখন বাণিজ্য ও। এমন একটা প্রচার হচ্ছে এখন, যেন দেশভাগ ঐসময় সমস্ত রাজনৈতিক দল, যুযুধান দুই সম্প্রদায় সবাই চেয়েছিল।একথা শুধু মিথ্যে নয় দেশবাসীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা! কার্যত দেশভাগে দ্বিজাতি তত্ত্ব কার্যকর হওয়ায় হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ ছাড়া কেউ উল্লসিত হয় নি।

তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক পি সি যোশী বলেন, " কলিকাতার দাঙ্গা ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের বিষময় ফল; লীগ নেতৃত্বের ব্যর্থতা, কংগ্রেস লীগ বিরোধের পরিণতি।" কিন্তু যে গৌরবের ইতিহাস অনালোচিত থেকে যায় তার খবর বলা এখন জরুরি। যখন কলকাতার রাস্তায় হিন্দু মুসলমান খুনোখুনি করছে তখন ৪০০০০ হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান শ্রমিক কর্মচারী দক্ষিণ ভারত রেলে অধিকারের দাবিতে ধর্মঘট করছে ( ২৪ আগস্ট -২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬)।

যখন বোম্বে, ঢাকা এবং অন্যত্র দাঙ্গা চলছে তখন পাটনা ও বেগুসরাই তে মিলিটারি পুলিশ,  হিন্দু ও মুসলমান একসাথে অর্থনৈতিক দাবিতে হাঙ্গার স্ট্রাইক করছে। যখন নোয়াখালী তে খুন, দাঙ্গা চলছে তখন সমস্ত জাত পাত কে দূরে ঠেলে সঙ্গবদ্ধ শ্রমিক শ্রেণী ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার  ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য গর্বের ইতিহাস রচনা করছে আলেপ্পি ও ত্রিভাঙকুরে।

যখন বিহারে গণ হত্যা চলছে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে, তখন তেলেঙ্গানার সমস্ত অংশের বিপ্লবী কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে হায়দ্রাবাদ মিলিটারির কুখ্যাত মার্শাল ল টেরর এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছে। নোয়াখালীর দাঙ্গার সময় কিষান সভা তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করছে। অল্প সময়ের মধ্যে হিন্দু মুসলমান ভাগচাষীদের আন্দোলন বন্যার মত ছড়িয়ে পরে। ফসলের তিন ভাগের  দুভাগ দাও।যুদ্ধ স্লোগান ওঠে, " crop today land tomorrow "। নোয়াখালী আর ত্রিপুরা কে ঘিরে ১৯ টি জিলাতে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। ভয় পেয়ে যায় সাম্প্রদায়িক ও জোতদার -জমিদার দের শক্তি। তারা চিৎকার করতে  শুরু করে  তেভাগা  আন্দোলন একটি হিন্দু বিরোধী  আন্দোলন, এতে যোগ দিও না!! দেশভাগের  ঐ  ভাতৃঘাতী দাঙ্গার সময়েও  ছড়িয়ে  আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও জোতদার জমিদার  দের বিরুদ্ধে এরকম অসংখ্য  লড়াই। আর  এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি। তাদের এই লড়াই জয়যুক্ত হতে  পারেনি। দেশভাগের  পর খণ্ডিত  দুটি দেশ ব্রিটিশদের হটিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে ঠিক। কিন্তু সামন্ততন্ত্রের বাঁধনে আজও যন্ত্রনা নিয়ে থেকে গিয়েছে। কিন্তু সেই গৌরবজ্জল লড়াই এর কথা আমাদের সবসময় মনে রাখা জরুরি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন