শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩

পার্টি ও ধর্ম ~ শুভম ব্যানার্জী

গল্প টা তিরুপতি পার্টি অফিসে বসে শুনছিলাম যখন, গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো, হয়তো অনেকেই ভীষণ অবাক হবেন, তাই গল্প টা শেয়ার করছি। ঠিক দুই দশক আগের ঘটনা...

নিচের ছবি টা অবশ্য ২ দিন আগেই ভেঙ্কটেশ্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তোলা। পেছনেই দেখা যাচ্ছে থিরুমালা পর্বত, যার ওপরে দেশের অন্যতম ধর্মস্থান ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির বা তিরুপতি বালাজি মন্দির অবস্থিত। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) এখানে মাথার চুল দান করেন নিজের মনোকামনা পূরণ হওয়ার আশায়, পুজো দেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। 

কিন্তু ভক্তের সাথে ভগবান কে ডাইরেক্ট কানেক্ট করাচ্ছেন যারা, সেই তিরুপতি মন্দিরের পূজারীরা দিন কাটাচ্ছিলেন অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে। কারণ বহু বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন, অথচ এতো বছরেও কারও বেতন বাড়ে নি এক পয়সা। কোনও একজন পূজারী জানতে পারেন AITUC নামে যে সংগঠন আছে, তারা নাকি বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি ঘটাতে খুব পটু। ব্যাস আর কি, তারা কয়েক জন সটান হাজির CPI এর তিরুপতি জেলা অফিসে AITUC নেতা শ্রীনিবাস এর সাথে দেখা করতে।

কমরেড শ্রীনিবাস সব শুনে বললেন বেতন বাড়বে, কিন্তু তোমাদের আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে হবে, ৫০ টা সদস্য পদের একটা ফোলিও নিয়ে যাও, যত জন কে পারো যুক্ত করো। পূজারী রা বললেন একটা ফোলিও তে কি হবে, অন্তত ৬ টা কি ৮ টা দিন...আমরা মোট ৪০০ জন আছি। আর সত্যি সত্যিই ৪০০ পূজারীর সদস্য পদ পূরণ করে এক সপ্তাহের মধ্যে জমা দিয়ে গেলো।

সেদিন ই শ্রীনিবাস চিঠি লিখলেন তৎকালীন মন্দির ট্রাস্টির চেয়ারম্যান টিডিপি সাংসদ অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা সুব্বি রামি কে। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করলেন যে আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত পূজারী দের অবিলম্বে বেতন বৃদ্ধি করতে হবে, নয়তো তাদের নিয়ে আমরা ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হবো। সুব্বি রামি ভীষণ হাসলেন, তারপর চিঠি টা ফেলে দিলেন। হাসার মতোই তো কথা, লাল ঝান্ডার বস্তুবাদী নেতারা বলে কিনা গেরুয়াধারী পূজারী দের নিয়ে আন্দোলন করবে!

যাই হোক চিঠির উত্তর না পেয়ে, শ্রীনিবাস আবার চিঠি লিখলেন, সময়সীমা বেঁধে দিলেন। সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে মিছিল করে সুব্বি রামির ট্রাস্টি অফিস অভিযান করা হবে এবং ধর্মঘট শুরু হবে। চিঠির কপি ফরওয়ার্ড করলেন তিরুপতি পুলিশ কমিশনার কে। এবারেও সুব্বি রামি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না, কিন্তু পুলিশ কমিশনারের ফোন পেয়ে তার ভুল ভাঙলো। কমিশনার বললেন যে তাদের কাছে রিপোর্ট আছে, বড় মিছিল হবে এবং প্রায় সমস্ত পূজারীই সেই মিছিলে হাঁটবে।

সুব্বি রামি এবার ঘামতে শুরু করেছেন, মন্দির প্রাঙ্গণে লাল ঝান্ডার মিছিল হবে!! পার্টি তে তিনি মুখ দেখাবেন কি করে!!
তিনি কমিশনার কে অনুরোধ করলেন যেকোনও ভাবে মিছিল, ধর্মঘট আটকাতে হবে। কমিশনার বললেন একটাই উপায় - AITUC নেতা দের সাথে মিটিং এ বসুন।  

সুব্বি রামি মিটিং এ বসলেন, কমিশনার অফিসেই বসা হলো। AITUC র পক্ষ থেকে উপস্থিত জেলা সম্পাদক কমরেড শ্রীনিবাস ও ৪ জন মন্দিরের পূজারী। শ্রীনিবাস বললেন - তিনটি দাবি - প্রথমত, পূজারীদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব মন্দিরের ট্রাস্ট কে নিতে হবে, দ্বিতীয়ত তাদের পরিবারের সকলের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে, এবং অবশ্যই বেতন দ্বিগুণ করতে হবে।

সুব্বি রামি প্রথম দুটো দাবি সম্পূর্ণ ভাবে মেনে নিলেন এবং তৃতীয় দাবি নিয়ে ট্রাস্টি মিটিং এ আলোচনা করে যত টা সম্ভব বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেন। মিটিং থেকে বেরিয়েই ৪০০ পূজারীর বিজয় মিছিল হলো CPI দপ্তর পর্যন্ত। গায়ে পীত অথবা শ্বেত বস্ত্র, কপালে তিলক আর হাতে লাল ঝান্ডা। হ্যাঁ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ এর স্লোগান ও নাকি উঠেছিল।

যাই হোক এখনও পর্যন্ত মন্দিরের ভেতরে পূজারী দের মধ্যে AITUC ই বড় সংগঠন, তবে TDP র শ্রমিক সংগঠন ও আছে এখন, যা চাপে পড়ে TDP নেতা রা গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর আমাদের কমিউনিস্ট নেতা রা তো আনন্দেই আছেন - মন্দিরে না ঢুকে, পুজো না দিয়ে পার্টি অফিসে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন GI (Geographical Indication) ট্যাগ সম্পন্ন, অত্যন্ত সুস্বাদু তিরুপতি লাড্ডু...

- শুভম

#AITUC
#Tirupati

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন