বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বউবাজারে মেট্রোর দুর্ঘটনা ~ দীপঙ্কর সিংহ

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মুখ্যস্থপতি ও নগরপরিকল্পক এবং আর্কিটেক্ট দীপঙ্কর সিংহ লিখছেন বউবাজারে মেট্রোর দুর্ঘটনা নিয়ে:

"কলকাতায় প্রথম মেট্রো রেল তৈরির সময় ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশী হয়েছিল। জনজীবন অনেক বেশী বিপর্যস্ত হয়েছিল। একটা বড় প্রজেক্টে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। অবশ্যই আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল মেট্রো কতৃপক্ষের। কিন্তু এটাও মনে রাখতে মূল পরিকল্পিত পথের পরিবর্তন করতে মেট্রোকে বাধ্য করা হয়েছিল। যেখানে শিয়ালদহ থেকে বউবাজার স্ট্রিট ধরে মেট্রো সরাসরি মহাকরণ পৌঁছে যেতো, তাকে রাজনৈতিক প্রতিরোধ করে ঘুরপথে যেতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে দুটি বিপদজনক বাঁক নিতে বাধ্য হচ্ছে ঐ বউবাজার এলাকায়। এর ফলে নির্মাণ অনেক কঠিন হয়ে যায়। আজ যদি এই বিপর্যয়ের জন্য ঐ পরিবর্তনকে কেউ দায়ী করে, খুব কি ভুল হবে? মনে রাখতেই হবে যে ঐ অঞ্চলের ভূমির বিভিন্ন স্তরের চরিত্র যথেষ্ট জটিল। প্রাচীন কলকাতার প্রান্তিক অঞ্চলের দুটি খালের (মারহাট্টা ডিচ ও ক্রীক রো বরাবর খাল) সংযোগস্থল এই অঞ্চল।  কলকাতার উপকণ্ঠের বাজার ঘিরে বিভিন্ন পেশার দরিদ্র মানুষের বাস ছিল অনেক বেশী। শাঁখারিটোলা, স্বর্ণকারপট্টি ইত্যাদি নাম থেকেই এটা বোঝা যায়। এদের বাড়িগুলির নির্মাণ যথেষ্ট ভাল নয়। বাড়ির নীচের মাটি ভালো নয়। সব মিলিয়ে এই বউবাজার অঞ্চলে মেট্রোর টানেল নির্মাণ বেশ ঝুঁকির। তার মধ্যে অমন বাঁক নিয়ে টানেল করা আরও কঠিন। টানেলের নির্মাণের যন্ত্রের কম্পনে যদি উপরের মাটি জলে মিশে আঁটসাঁট ভাব চুকে গিয়ে থকথকে হয়ে যায় ও আর ভার নিতে পারেনা (known as a phenomenon of liquefaction. This area is known for poor soil)।এক্ষেত্রেও তাইই হয়েছে। নির্মাণ কাজে ঝুঁকি থাকে। এই ক্ষেত্রে একটা ব্যর্থতা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সামনে আরও জটিল এলাকা। তবে এই বিপর্যয় থেকে কাউকে দায়ী করতে হয়, তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেনা। কিন্তু যারা মেট্রোকে এই দুরূহ বাঁক নিতে যারা বাধ্য করেছে, মানুষের বাড়ির নীচ দিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, তারাও দায় এড়াতে পারেনা।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন