মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বাকি রাখা খাজনা ~ মধুশ্রী বন্দোপাধ্যায়

এই মুহূর্তে ভারতের জনসংখ্যা ১৩৩.৯ কোটি। গতবছর এই জনসংখ্যার কত শতাংশ ব্যক্তিগত আয়কর দিয়েছেন? গত বছর সর্বমোট ৬.৮৭ কোটি মানুষ ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে তাদের আয়কর ফর্ম  জমা দিয়েছেন। 
অর্থাৎ এইমুহূর্তে  দেশের ৫% মানুষ আয়কর ফর্ম জমা দিয়েছেন। 
বিগত দিনের তুলনায় এই সংখ্যা নাকি এক বিরাট উল্লম্ফন। 

একবার বুঝুন অবস্থাটা।

এদের মধ্যে আবার দুই কোটি মানুষ এই আয়কর জমা দেন শূন্য কর সহ। অর্থাৎ ওদের আয় নিম্নতম সীমারেখার নিচে।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন, বড় বড় শহর দেখুন, রিসর্ট দেখুন, খুচরা কারবারি দেখুন, হোলসেল ডিলার দেখুন, রিয়্যাল এস্টেট, ফ্যাশন ডিসাইনার, পাড়ায় পাড়ায় খাবার দোকান দেখুন, খেলার মাঠের ফাটকা দেখুন, চারিদিকে সাট্টা, তোলা, কাটমানি দেখুন। জাল জুয়েলারির ব্যবসা দেখুন।

এদেশে চাষিরা আয়কর দেন না, সেই সুবাদে যারা ধনী কৃষক, পঞ্জাব, হরিয়ানার অতি সমৃদ্ধ কৃষক, তারাও আয়কর দেন না। তারা আমার আপনার মত পঞ্চাশ জনকে কিনে বেঁচে দিতে পারে।

তারপরে বিশ্বাস করতে পারেন দেশে প্রকৃত পক্ষে  ৩.৪% করযোগ্য মানুষ বাস করেন! 

মাত্র ৪.৬৭ কোটি মানুষ?

তবে এই কথা গুলি কেন তুলছি? কারণ আছে। 

এদেশে হিসাবের অনেক কারিকুরি সহ ৩৪% মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করেন। 
দরিদ্র্য মানুষের আসল সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

যদি সরাসরি আয়কর দেওয়া না হয়, তাহলে পিছন দিয়ে প্রতিটি প্রয়োজনীয় ও বিলাস  দ্রব্যের উপরে অধিক পরিমানে কর লাগবে। GST ইত্যাদি কর বেড়ে যায়।
কারণ দেশের সরকারকে কর তুলতে হবে। 

অর্থাৎ এই যে বিরাট অংশের মানুষ যারা কর দিতে পারেন কিন্তু দেন না, তাদের বোঝা চাপে দেশের দরিদ্রতম মানুষের উপরে। 

স্কুল গুলিতে শিশুরা নুন ভাত, নুন রুটি খায়। ওদের একটু ডিম দিতেও নাকি পয়সা থাকে না। কিন্তু রাজসিক পূজায় যারা বেহেড খরচ করছেন, তাতে কর দেবার কথা বললেই ধর্ম নিপাত যায়। এমনকি ওই পূজায় যারা তাঁবু  দিয়ে, আলো দিয়ে সাজায় তাদের বকেয়া কর দেবার কথা বললেও হুমকি ওঠে।

 লজ্জা করে।

লজ্জা করে যখন গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে গলা ফাটাই, আর পৃথিবীর অধিকাংশ স্কুল ছুট ছাত্র থাকে এই দেশে। নিশ্চুপ থাকি যখন শিশু  কিশোররা পড়া ছেড়ে শহরে, গ্রামে খুচরা কাজ করে।

একটা উদাহরণ দেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি পশ্চিম বঙ্গের বিপ্লবের পীঠস্থান। এই কলেজ গুলির ক্যান্টিনে দেখবেন শিশু, কিশোররা ফাইফরমাশ খেটে  খেটে হাতে হাজা ধরিয়ে দেয় ।

আর ছাত্ররা, যারা টুয়েলভ পর্যন্ত বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ঢুকবার জন্য, ও পরে বছরে লক্ষ লক্ষ, কেউ কেউ কোটি টাকা পাবে পাশটি করে বেরোলেই, তারা পড়ার খরচ বাবদ বছরে কয়েক হাজার টাকাও দেবে না।

আয়কর না দেবার মূল যুক্তি, এদেশে সামাজিক নিরাপত্তা নেই - কেন দেব আয়কর? 

আমার প্রশ্ন, কেন দেশের তথা পৃথিবীর দরিদ্রতম মানুষ দেবেন পরোক্ষ কর? কেন পৃথিবীর সংখ্যাগুরু স্কুল ছুট  ছাত্র থাকবে এই দেশে?

একটু ভাববেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন