এই নিন শুনুন।
# 'স্বামী বিবেকান্দের স্বকণ্ঠের বাণী। অবশেষে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে সেই মহান মনীষীর কণ্ঠস্বর। শিকাগোর ধর্মমহাসভার সেই কালজয়ী বক্তৃতাটি। ভালো লাগলে শেয়ার করুন।'
# 'আনন্দ সংবাদ। ভারতবাসী হিসাবে আমরা গর্বিত। ইউনিসেফ ভারতের জাতীয় সংগীত জনগণমনকে বিশ্বের সেরা জাতীয় সংগীতে ভূষিত করেছে। প্রথম পুরস্কার পেয়েছে আমাদের জাতীয় সংগীত। ভারত মাতা কি জয়। এখনই শেয়ার করুন। '
# 'ভ্যালেনটাইন ডে পালন করার উচ্ছ্বাসে যারা ভেসে যাচ্ছে, তারা কি একবারও মনে রাখতে পারে না যে আজ এই ১৪ ফেব্রয়ারিতে মহান বিপ্লবী ভগৎ সিং, সুখদেব আর রাজগুরুর ফাঁসি হয়েছিল? এই মহাপুরুষদের বলিদান দিবসকে যারা ভুলে গিয়েছে তাদের ধিক্কার জানান। প্রত্যেকে শেয়ার করুন। '
# 'পাকিস্তানকে সমর্থন করে চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদীর জল ভারতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আপনাদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি এবার থেকে চীনের জিনিস কেউ কিনবেন না। চীন দেওয়ালিতে ৫৫ হাজার কোটি টাকার ব্যাবসা করে ভারতে। আর বছরে দেড় লক্ষ কোটি টাকা ভারত থেকে আয় করে। তাই বয়কট করুক চীনকে। যত পারেন শেয়ার করুন আর গর্বের সঙ্গে বলুন আপনি ভারতীয়। '
#যে কোনও অজানা কবিতার নীচে লেখা হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। যে কোনও অজানা কোটেশনের নীচে বলা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
'পোস্ট ট্রুথ' যুগে সকলকে স্বাগত। ২০১৬ সালের অক্সফোর্ড ডিকশনারির ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছে এই শব্দটি।
পোস্ট ট্রুথ।
আমাদের এই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ট্যুইটারের এই সময় অথবা যুগকে পশ্চিমি দেশগুলিতে নতুন নামকরণ করা হয়েছে পোস্ট ট্রুথ যুগ। অর্থাৎ সত্যের পরবর্তী যুগ। সোজা কথা মিথ্যার যুগ। অর্ধ সত্য, মিথ্যা, ভুল ইতিহাস, আসল ঘটনাকে বিকৃত করে পরিবেশন এবং উচ্চকিত কণ্ঠে বারংবার মিথ্যা সম্প্রচারের নামই হল পোস্ট ট্রুথ।
হিটলার, মুসোলিনি এরকম করতেন। কিন্তু তখন প্রযুক্তি ছিল না। এই মারাত্মক শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। এক লহমায় এক নিমেষে কোটি কোটি মানুষের কাছে একটিমাত্র আঙুলের খোঁচায় শেয়ার করে অসত্য তথ্য প্রচার করার ভয়ংকর সুযোগটিই ছিল না। এখন আছে। তাই মানবসভ্যতার সবথেকে বিপজ্জনক একটি অধ্যায় উপস্থিত হয়েছে। সেটিই হল পোস্ট ট্রুথ যুগ।
কাকে বলে পোস্ট ট্রুথ সিনড্রোম? আচমকাই দেখবেন এই সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে তথ্য দেওয়ার নাম করে অনবরত মিথ্যা সংবাদ ও ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়ে চলেছে নিরন্তর।
উপরে যে উদাহরণগুলি লেখা হয়েছে সেরকম মেসেজ বা পোস্ট হোয়াটস অ্যাপে কিংবা ফেসবুকে বিগত কয়েক বছর ধরে প্রায় সকলেই পেয়েছেন। এখনও চলছে। কিন্তু আমরা কেউই ওই মেসেজ নিজেরা তৈরি করিনি। সবথেকে উদ্বেগজনক বিষয় হল আমরা জানিও না কে মেসেজগুলির লেখক বা রচয়িতা।
আমরা পেয়েছি। এবং পেয়েই চলেছি এরকম হাজারো ভুল তথ্য, মিথ্যা সংবাদ ও সম্পূর্ণ মনগড়া কাহিনির পরিসংখ্যান সংবলিত জ্ঞান। তার মানে হল আমাদের মধ্যেই বহু মানুষ এগুলি নিয়ম করে পেয়েই শেয়ারও করছেন। অর্থাৎ যে বা যারা এসব ভুল তথ্য ছড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল তারা সফল। কারণ একবার পোস্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি লক্ষ কোটি শেয়ার হয়ে যাচ্ছে।
এবার একটা বড় অংশ সেগুলি বিশ্বাস করছে এবং শেয়ারও করছে। আবার আর একটি অংশ বিরক্ত হচ্ছে, শেয়ার করছে না। কিন্তু, এই শেয়ার যারা করছে না তারা পালটা যুক্তি বা আসল সত্য অথবা প্রকৃত পরিসংখ্যানটা দেওয়ার মতো উদ্যোগ নিচ্ছে না এবং সেটা সম্ভবও হচ্ছে না। কারণ, প্রকৃত সত্য ও তথ্যের উৎস অর্থাৎ সোর্স গুটেনবার্গের বাইবেল থেকে আজ পর্যন্ত মেনে চলা হচ্ছে ছাপানো অক্ষরকে।
সেটি বই হতে পারে। রিপোর্ট হতে পারে। এনসাইক্লোপিডিয়া কিংবা ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে থাকা কোনও গবেষণামূলক স্বীকৃত প্রামাণ্য নথি হতে পারে। অর্থাৎ এতদিন পর্যন্ত যে কোনও ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত প্রমাণিত সত্য তথা স্বীকৃত পরিসংখ্যানকেই ধ্রুবসত্য তথা রেফারেন্স হিসাবে মেনে নিয়েছি।
এখন এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেটি হচ্ছে না।
এখন সবটাই অনলাইন। গুগল সার্চ থেকে অসংখ্য ওয়েবসাইট। আর ঠিক এই সুযোগটাই নেওয়া হচ্ছে পোস্ট ট্রুথে। কারণ ইন্টারনেট দুনিয়ায় সবথেকে দ্রুত যা বাড়ছে সেটি হল 'ফেক নিউজ' ওয়েবসাইট। অর্থাৎ আস্ত মিথ্যা তথ্য দেওয়ার স্বীকৃত ওয়েবসাইট। মিথ্যা তথ্যের স্বীকৃত ওয়েবসাইট বলা হলে মনে হতে পারে এটা একটা অক্সিমোরন। অর্থাৎ সোনার পাথরবাটি টাইপ শুনতে। কিন্তু ঘটনা তাই। কারণ, এগুলো মোটেই ব্লক করা হয়নি। রমরম করে চলছে। পেজ খুলে গেলে কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে ওই সাইট মিথ্যা সংবাদের ওয়েবসাইট। ফেক নিউজ ওয়েবসাইটই এখন সবথেকে বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক।
সর্বাগ্রে এই পোস্ট ট্রুথ যুগের সুবিধা নিতে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কেন গোটা দুনিয়ায় এখন পোস্ট ট্রুথ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে? কারণ দুটি ঘটনা। এবং দুটিই শিহরন জাগানো ।
প্রথমত ব্রেক্সিট। অর্থাৎ ব্রিটেন ইওরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকবে কি না তা নিয়ে যখন গণভোট হয়েছিল তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার প্রবক্তারা ব্রিটেন জুড়ে যে প্রচারটি সবথেকে তুঙ্গে তুলেছিল সেটি হল ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার জন্য ব্রিটেনকে প্রতি সপ্তাহে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক গুণাগার দিতে হয়।
ব্রিটেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে ওই টাকা বেঁচে যাবে এবং সেই টাকা ব্যবহার করা হবে স্বাস্থ্য পরিষেবায়। এই প্রচারে গোটা ব্রিটেন উত্তাল হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই যুব সম্প্রদায় এই আমাদের টাকায় বাকি ইউরোপকে পোষা হচ্ছে বার্তায় ক্ষেপে যায়। অথচ ঘটনা হল গোটা প্রচারটিই মিথ্যা ছিল। পরিসংখ্যানগত কারসাজি। কারণ, পরিবর্তে ব্রিটেন কত টাকা ইউনিয়ন থেকে ফেরত পায় সেটা বলা হয়নি। অথচ ওরকম একাধিক ভুল ও মিথ্যা প্রচারে ভর করেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সমর্থক দলগুলি জয়ী হয়ে গেল। ব্রেক্সিট জয়ী হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে ইস্তফা দিতে হয়।
আর তারপরই পোস্ট ট্রুথের জয়ের সবথেকে বৃহত্তম উদাহরণ ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প অসংখ্য মিথ্যা প্রচার করেছেন। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার সেনাবাহিনী লাগাতার ভুল পরিসংখ্যান, বিকৃত তথ্য, মনগড়া ইতিহাস ইত্যাদি প্রচার করে গিয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে মারাত্মক হল বারাক ওবামাই নাকি আইএসআইএস নামক জঙ্গি সংগঠনটি গঠন করেছিলেন। তিনি এবং হিলারি ক্লিনটন ওই আইএসআইএস তৈরিতে গোপন সাহায্য করেছিলেন। এটি একটি ছোট্ট উদাহরণ।
আমেরিকার ডিফেন্স, আমেরিকার চিকিৎসা পরিষেবা, অভিবাসন নীতি, আমেরিকার বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কে তাবৎ অসত্য প্রচার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা লাগাতার ছড়ানো হয়েছে যে আমেরিকা ভয়াবহ বিপদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বাঁচার জন্য ট্রাম্পকে দরকার। আমেরিকানের একাংশ ধরেই নিয়েছিলেন এসবই হল ট্রাম্পের অপরিণতমনস্ক আচরণ ও প্রশাসন সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা। তাই তাঁরা পাত্তাই দেননি। কিন্তু বোঝা যায়নি বৃহৎ অংশের সেভাবে দেশ কাল সরকার ইতিহাসের খবর না রাখা শ্রেণি ও যুব সম্প্রদায় ওইসব প্রচারে বিশ্বাস করেছে। এবং দেশভক্তির আবেগে সাড়া দিয়ে তারা ঢেলে সমর্থন করেছে। পোস্ট ট্রুথ হল
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার অন্যতম উপকরণ। এই দুটি ঘটনা প্রমাণ করছেযে কীভাবে রাজনৈতিক দল বা নেতাদের একটি কমন প্যাটার্ন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে গোটা বিশ্বেই একে একে গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশগুলিকে অতি দক্ষিণপন্থী একনায়কসদৃশ নেতাদের আবির্ভাব হচ্ছে। এবং সেই নেতাটি দলের থেকে বড় হয়ে উঠছেন। তাঁদের দেখেই মানুষ সমর্থন করছেন। দল দেখে নয়। তাঁরাই নায়ক হয়ে উঠছেন। এই প্যাটার্নটি হল বিরোধীদের সম্পর্কে অসত্য প্রচার, লাগাতার সোশ্যাল মিডিয়ায় জাতীয়তাবাদ তথা দেশের সম্পর্কে অতি আবেগকে উসকে দেওয়া এবং ইতিহাসকে বিকৃত করে প্রচার করা।
রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিন, আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাপানের শিনজো অ্যাবে, ভারতের নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটেনের থেরেসা মে যেমন কমবেশি এরকমই একক ক্ষমতা সম্পন্ন লার্জার দ্যান পার্টি ইমেজ নিয়ে গদিতে বসেছেন, সেরকমই আগামীদিনে ফ্রান্সে আসতে চলেছেন অতি দক্ষিণপন্থী ফ্রাংকো ফিলোঁ অথবা মেরিন লে প্যন। এই যুগ মানুষকে স্বার্থপর দৈত্য হতে পাঠ দিচ্ছে। তাই স্লোগান তৈরি হচ্ছে আমেরিকা ফার্স্ট, ফ্রান্স ফার্স্ট, রাশিয়া ফার্স্ট।
পোস্ট ট্রুথ প্রবণতার বৈশিষ্ট্য কী? এটি সত্যকে ঢেকে দেয় মিথ্যে দিয়ে। সততার থেকে বড় হয়ে ওঠে আবেগ। ব্যক্তিগত বিশ্লেষণের তাৎক্ষণিক প্রচার বা ব্যাখ্যা প্রমাণিত সত্য বা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত ঘটনাকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। একজন বা দুজনের যুক্তিবাদী ও প্রমাণিত অভিমতকে চাপা দিয়ে দেয় অনেকের চিৎকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও তথ্য শেয়ার করলে তার সোর্স কী জানানোর কোনও দায় থাকে না। মুহূর্তে সেটি আরও শেয়ার হয়ে যাবে। এর কারণ আধুনিক যুগটি ছাপানো জিনিস পড়া কমিয়ে দিয়েছে। সবথেকে বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নতুন প্রজন্ম। যাদের কোনও স্মৃতি বা অতীত নেই। সিলেবাসের বাইরের বই পড়া অধীত বিদ্যা বা অভিজ্ঞতা প্রায় নেই। তাই দেশভাগ, তিনটি যুদ্ধ, নকশাল আন্দোলন, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা কিংবা ১৯৯১ সালের উদার অর্থনীতি শুরু হওয়া, ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ভাঙা ইত্যাদি কোনও বিষয়েই কোনও অভিজ্ঞতাও নেই। স্মৃতিও নেই। তাই এই প্রজন্মের একটি বড় অংশের কাছে যে কোনও ঘটনাই যে কোনও আকারে পাঠিয়ে দিলেই তারা বিশ্বাস করবে। তবে সত্যির মতো দেখতে লাগতে হবে। মিথ্যাকে সত্যির মতো দেখতে তখনই মনে হয়, যখন কিছু পরিসংখ্যান কিংবা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য জুড়ে দেওয়া হবে। যেমন অমর্ত্য সেন খারাপ অর্থনীতিক। কারণ, তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন। কিংবা মনমোহন সিং দুর্বল প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু তিনি জোরে কথা বলেন না।
পোস্ট ট্রুথ যুগের ধর্ম হল যেহেতু ইদানীং মানুষ বেশি পড়াশোনা করার সময় পায় না বা করেই না, তাই নিয়ম করে তাদের কাছে এমন তথ্য মোবাইলে প্রেরণ করা, যা কেউ ভেরিফাই করবে না। যাচাই করবে না। করার মতো উদ্যোগই দেখাবে না। মোবাইলে এসেছে, অনলাইনে দেখাচ্ছে? তার মানেই সঠিক,এভাবেই বিশ্বাস করে নেবে। সুবিধা হল মোবাইল যুগটি হল মুখোমুখি কমিউনিকেশন করে না। কেউ কাউকে দেখতে পায় না। সামনাসামনি কেউ প্রতিবাদ করে ভুল সংশোধনও করে দেয় না। হয় বিশ্বাস করবে। অথবা ইগনোর করবে। সুতরাং ওই ভুল ইনফরমেশনটির মৃত্যু হচ্ছে না। রয়ে যাচ্ছে। শেয়ার হচ্ছে। এভাবে ধীরে ধীরে একটি কম জানা, ভুল জানা, মিথ্যাকেই সত্য ধরে নেওয়া সমাজ তৈরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের চারপাশে চোখের আড়ালে। যা সবথেকে বেশি সুবিধা করে দিচ্ছে রাজনীতিকে। সব রাজনৈতিক দলই ক্রমেই আরও বেশি করে নিজেদের সুবিধামতো নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী মনগড়া তথ্য নির্মাণ করে প্রচার করবে, পোস্ট করবে, শেয়ার করবে। আমরা সেই ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের অজ্ঞ ও মূর্খ একটি সমাজে পরিণত করে চলেছি। দুনিয়ার সব দেশেই রাজনৈতিক দলগুলি সেই পথেই হাঁটছে। কারণ, এটা প্রমাণিত যে আজ আমরা বেশি করে মোবাইল আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি। সংবাদপত্র, বই, গবেষণাপত্র, এনসাইক্লোপিডিয়া নয়। নতুন ও আগামী প্রজন্মের হাতের কাছে এসব প্রামাণ্য রেফারেন্স আগামীদিনে থাকবেও না। তাই আরও বেশি করে বিশ্বাস করা হবে মোবাইলে যা শেয়ার করা হচ্ছে তাই সত্যি। আমরা প্রামাণ্য স্বীকৃত তথ্য ছেড়ে আরও বেশি করে ঢুকে পড়ছি গুজব, জল্পনা, লোককথা, মিথ, আবেগ আর একতরফা কথিত কাহিনির মধ্যে। যা আধুনিকতার পরিপন্থী।
লোকগীতির সিডির কভারে গানের লাইনের পাশে ব্র্যাকেটে লেখা থাকে দেখবেন (প্রচলিত)। অর্থাৎ কে লিখেছিলেন জানা যায় না। সেরকমই যে কোনও ঘটনা বা তথ্যের সোর্স আর আমাদের দরকার হবে না। প্রচলিত বলে বিশ্বাস করে নিলেই হবে। এভাবে ইতিহাসের বিকৃতি আর বদলে যাওয়া শুরু হয়। ফ্রেডরিখ নিটশে বলেছিলেন, ''প্রকৃত ঘটনা বলে কিছু হয় না, সবই আসলে ব্যাখ্যা।'' সম্ভবত রাজস্থান ও হরিয়ানা সরকার এই কোটেশনকে ধ্রুবপদ হিসাবে নিয়েছেন। তাই ওই দুই রাজ্যের বিজেপি
সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে গত মাসে আলোচনা হয়েছে আগামীদিনে হলদিঘাটের যুদ্ধে মহারানা প্রতাপ জিতে গিয়েছিলেন বলে ইতিহাস বইতে লেখা হলে কেমন হয়? হলদিঘাটের যুদ্ধে আকবরের
সেনাপতি মানসিংকে রাণা প্রতাপ হারিয়ে দিয়েছিলেন এরকমই সিলেবাস তৈরি করার ভাবনাচিন্তা চলছে ওই দুই রাজ্যে। পোস্ট ট্রুথ। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর আর কলিযুগ জানতাম। এই অজানা নতুন যুগের নাম তাহলে মিথ্যা যুগ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন