শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
কলকাতা মেট্রো ~ রাজদীপ বিশ্বাস রুদ্র
মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫
ডাইরেক্ট একশন ডে, গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ~ রাজদীপ বিশ্বাস রুদ্র
প্রোপাগান্ডা : " ২৯ জুলাই ১৯৪৬, ময়দানের সভা থেকে জ্যোতি বসুর উপস্থিতিতে সুরাবর্দী ডায়রেক্ট একশন ডে ঘোষণা করে"
সত্যতা : ২৯ শে জুলাই ১৯৪৬ আদৌ মুসলিম লীগ বা সুরাবর্দির ডাকে কোন সভা হয়নি। ২৯ শে জুলাই ১৯৪৬, ডাক ও তার বিভাগের কর্মীদের ডাকা ধর্মঘটের সমর্থনে বাংলা জুড়ে একটি সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটটির উদ্যোক্তা ছিল কমিউনিস্ট পার্টির শ্রমিক সংগঠনগুলো। ধর্মঘটের অন্যতম দাবী ছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর জওয়ানদের নিঃশর্ত মুক্তি। ধর্মঘট প্রসঙ্গে অমৃতবাজার পত্রিকা লিখেছিল : " General Strike by All Communities; " দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে 'বৃহত্তম সাধারণ ধর্মঘট' পালিত হয়েছে কলকাতায়। সলিল চৌধুরী এই ধর্মঘটের সমর্থনেই লেখেন তাঁর বিখ্যাত গণসংগীত, " ঢেউ উঠছে কারা টুটছে "। আর ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডে? হ্যাঁ, ২৯ য়ে জুলাই ডায়রেক্ট একশনের কথাও ঘোষিত হয় ঠিকই, তবে তা কলকাতায় ঘোষিত হয়নি। ময়দানেও ঘোষিত হয়নি। হয়েছিল বম্বে বা অধুনা মুম্বাইয়ে। জিন্নাহর বাসগৃহে। ২৯ জুলাই জিন্নাহ তার মালাবার হিলের বাড়িটিতে দেশ এবং বিদেশের সাংবাদিকদের একটি সম্মেলন ডাকেন। ওই সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই জিন্না ডাক দেন " ডায়রেক্ট একশন ডে " র। ডায়রেক্ট একশন ডে'র প্রস্তুতি শুরু হয় ৩১ য়ে জুলাই থেকে। আর চূড়ান্ত রূপ পায় ১৬ ই আগস্টে। গোটা প্রক্রিয়াটিতে ২৯ য়ে জুলাইয়ের বাংলার শ্রমিক ধর্মঘটের কোন ভূমিকা ছিল না। লীগ বরং শ্রমিক ধর্মঘটে মুসলমান জনতার অংশগ্রহণে বিরক্তি প্রকাশ করে। লীগপন্থী সংবাদপত্রে ২৯ য়ে জুলাইয়ের ঐতিহাসিক ধর্মঘটকে হুমকি আর হুলিগানিজমের সাফল্য হিসেবে বিদ্রূপ করা হয়।
সাথে রইল ঐতিহাসিক সুরঞ্জন দাসের লেখার অংশ।
রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
দেশভাগ ও সেই সময়ের গণসংগ্রাম ~ মানস দাস
গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নিয়ে এখন খুব নাড়াচাড়া হচ্ছে। ধামাকা বোম্বে ফিল্ম হচ্ছে। দুই সম্প্রদায়ের দাঙ্গা এখন বাণিজ্য ও। এমন একটা প্রচার হচ্ছে এখন, যেন দেশভাগ ঐসময় সমস্ত রাজনৈতিক দল, যুযুধান দুই সম্প্রদায় সবাই চেয়েছিল।একথা শুধু মিথ্যে নয় দেশবাসীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা! কার্যত দেশভাগে দ্বিজাতি তত্ত্ব কার্যকর হওয়ায় হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ ছাড়া কেউ উল্লসিত হয় নি।
তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক পি সি যোশী বলেন, " কলিকাতার দাঙ্গা ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের বিষময় ফল; লীগ নেতৃত্বের ব্যর্থতা, কংগ্রেস লীগ বিরোধের পরিণতি।" কিন্তু যে গৌরবের ইতিহাস অনালোচিত থেকে যায় তার খবর বলা এখন জরুরি। যখন কলকাতার রাস্তায় হিন্দু মুসলমান খুনোখুনি করছে তখন ৪০০০০ হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান শ্রমিক কর্মচারী দক্ষিণ ভারত রেলে অধিকারের দাবিতে ধর্মঘট করছে ( ২৪ আগস্ট -২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬)।
যখন বোম্বে, ঢাকা এবং অন্যত্র দাঙ্গা চলছে তখন পাটনা ও বেগুসরাই তে মিলিটারি পুলিশ, হিন্দু ও মুসলমান একসাথে অর্থনৈতিক দাবিতে হাঙ্গার স্ট্রাইক করছে। যখন নোয়াখালী তে খুন, দাঙ্গা চলছে তখন সমস্ত জাত পাত কে দূরে ঠেলে সঙ্গবদ্ধ শ্রমিক শ্রেণী ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য গর্বের ইতিহাস রচনা করছে আলেপ্পি ও ত্রিভাঙকুরে।
যখন বিহারে গণ হত্যা চলছে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে, তখন তেলেঙ্গানার সমস্ত অংশের বিপ্লবী কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে হায়দ্রাবাদ মিলিটারির কুখ্যাত মার্শাল ল টেরর এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছে। নোয়াখালীর দাঙ্গার সময় কিষান সভা তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করছে। অল্প সময়ের মধ্যে হিন্দু মুসলমান ভাগচাষীদের আন্দোলন বন্যার মত ছড়িয়ে পরে। ফসলের তিন ভাগের দুভাগ দাও।যুদ্ধ স্লোগান ওঠে, " crop today land tomorrow "। নোয়াখালী আর ত্রিপুরা কে ঘিরে ১৯ টি জিলাতে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। ভয় পেয়ে যায় সাম্প্রদায়িক ও জোতদার -জমিদার দের শক্তি। তারা চিৎকার করতে শুরু করে তেভাগা আন্দোলন একটি হিন্দু বিরোধী আন্দোলন, এতে যোগ দিও না!! দেশভাগের ঐ ভাতৃঘাতী দাঙ্গার সময়েও ছড়িয়ে আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও জোতদার জমিদার দের বিরুদ্ধে এরকম অসংখ্য লড়াই। আর এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি। তাদের এই লড়াই জয়যুক্ত হতে পারেনি। দেশভাগের পর খণ্ডিত দুটি দেশ ব্রিটিশদের হটিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে ঠিক। কিন্তু সামন্ততন্ত্রের বাঁধনে আজও যন্ত্রনা নিয়ে থেকে গিয়েছে। কিন্তু সেই গৌরবজ্জল লড়াই এর কথা আমাদের সবসময় মনে রাখা জরুরি।
শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫
হিন্দু মহাসভা ও স্বাধীনতা আন্দোলন ~ দেবত্তম চক্রবর্তী
১৯১৫ সালের ৯ এপ্রিল, হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় 'অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা'। গান্ধী হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলনের ডাক দিলেও অসহযোগের তীব্র বিরোধিতা করে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকে মহাসভা। চৌরিচৌরার হিংসার প্রেক্ষিতে গান্ধী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে, ১৯২৩ সালে বিরাট হিন্দু পুনরুত্থান অভিযান শুরু করে তারা। সেই বছর অগস্ট মাসে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের সভাপতিত্বে বারাণসী অধিবেশনে মহাসভা 'শুদ্ধি' কর্মসূচী গ্রহণ করে, 'হিন্দু আত্মরক্ষা বাহিনী' গড়ে তোলারও ডাক দেয়।

অসহযোগ-খিলাফতের ব্যর্থতার পরে মুসলমান সমাজের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং কংগ্রেসের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলার জন্য, ১৯২৪ সালের ৪ মে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লিগের সভাপতির অভিভাষণে জিন্না বলেন: "...আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, স্বরাজ অর্জনের এক অপরিহার্য শর্ত হল হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য। ...আমি এই ক্থা বলতে চাই যে, যেদিন হিন্দু ও মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হবে, সেদিনই ভারতবর্ষ ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন পাবে।"
অথচ, সেই সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনাশ করতে চেয়ে হিন্দু মহাসভার অন্যতম নেতা লালা লাজপত রাই ওই বছরেরই ১৪ ডিসেম্বর 'দ্য ট্রিবিউন' পত্রিকায় ঘোষণা করেন: "আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলমানদের চারটি মুসলিম রাজ্য থাকবে: ১) পাঠান প্রদেশ বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত, ২) পশ্চিম পাঞ্জাব, ৩) সিন্ধু এবং ৪) পূর্ব বাংলা। যদি ভারতের অন্য কোনও অংশে একটি [আলাদা] প্রদেশ গঠনের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক মুসলিম সম্প্রদায় থাকে, [তাহলে] তাদেরও একইভাবে গঠন করা উচিত। কিন্তু এটা স্পষ্টভাবে বোঝা উচিত যে, এটি অখণ্ড ভারতবর্ষ নয়। এর অর্থ হল, ভারতবর্ষকে স্পষ্টত একটি মুসলিম ভারতবর্ষ এবং একটি অমুসলিম ভারতবর্ষে বিভক্ত করা।"
এই ঘোষণার পরের বছরে অর্থাৎ ১৯২৫ সালে হিন্দু মহাসভার অষ্টম অধিবেশনে সভাপতি হন লাজপত রাই। ওই বছরের বিজয়া দশমীর দিন কেশব বলীরাম হেডগেওয়ার-এর নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী হিন্দু মহাসভা থেকে বেরিয়ে এসে তৈরি করেন 'রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ' (আরএসএস) নামে এক নতুন সংগঠন। স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে আরএসএস-এর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে সঙ্ঘের অন্যতম তাত্ত্বিক গুরু ও দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গোলওয়ালকর বলেন: "ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমার্থক ভাবা হচ্ছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলন, তার নেতৃবর্গ ও সাধারণ মানুষের উপর বিনাশকারী প্রভাব ফেলেছিল।" অর্থাৎ তাঁর মতে ব্রিটিশ বিরোধিতা হচ্ছে 'প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি'!
এহ বাহ্য! ১৯৪০ সালে জিন্নার লাহোর প্রস্তাবের ৩ বছর আগে ১৯৩৭ সালে, হিন্দু মহাসভার আহমেদাবাদ অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে উগ্র হিন্দুত্বের জিগির তুলে বিনায়ক দামোদর সাভারকর খোলাখুলি বলেন: "...ভারতবর্ষে দুটি শত্রুভাবাপন্ন জাতি পাশাপাশি বাস করে। ...ভারতবর্ষকে আজ আর একক (Unitarian) ও সমজাতীয় (homogeneous) জাতি বলে বিবেচনা করা যায় না। বরং পক্ষান্তরে [এ দেশে] প্রধানত দুটি জাতি রয়েছে: হিন্দু ও মুসলমান।" মনে রাখতে হবে, লাহোর প্রস্তাবের বহু আগেই এভাবে এ দেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের সূচনা করে হিন্দু মহাসভা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি দেশবাসীর দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, সেই প্রসঙ্গে সাভারকর ১৯৪১ সালে ভাগলপুরে হিন্দু মহাসভার ২৩তম অধিবেশনে বলেন: "So far as India's defence is concerned, Hindudom must ally unhesitatingly, in a spirit of responsive co-operation, with the war effort of the Indian government in so far as it is consistent with the Hindu interests, by joining the Army, Navy and the Aerial forces in as large a number as possible and by securing an entry into all ordnance, ammunition and war craft factories।" যদিও ওই সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি নীরব ও নিষ্পৃহ থাকেন, কারণ তাঁর মতে "মুসলমানেরা প্রথমে মুসলমান, শেষে মুসলমান, এবং কদাচ ভারতীয় নয়।"
অথচ, ক্ষমতার স্বাদ পেলে হিন্দু মহাসভা যে তার দীর্ঘলালিত মুসলমান-বিদ্বেষ এক লহমায় ভুলে যেতে পারে, এমনকি মুসলিম লিগের সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গড়তেও দ্বিধা করে না, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরে কংগ্রেস মন্ত্রিসভাগুলির পদত্যাগের পর থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমরা দেখি, 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের ডাক দিয়ে যখন গান্ধী-সহ প্যাটেল, নেহরু, আজাদ প্রমুখ কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দ জেলে বন্দিজীবন যাপন করছেন, তখন হিন্দু মহাসভার দ্বিতীয় প্রধান নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপক ফজলুল হকের অর্থমন্ত্রী হিসাবে বাংলায় প্রায় ১১ মাস দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। একই ভাবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে খান আব্দুল জব্বর খানের কংগ্রেস মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করলে মুসলিম লিগের প্রধানমন্ত্রী সর্দার আওরঙ্গজেব খানের অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন হিন্দু মহাসভার মেহেরচাঁদ খান্না। আর ১৯৪৩ সালের ৩ মার্চ, সিন্ধু প্রদেশের আইনসভায় পাকিস্তান প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরেও স্যার গুলাম হুসেন হিদায়েতুল্লার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার প্রয়োজন বোধ করছেন না মহাসভার তিন মন্ত্রী। এর কারণ একটিই। কারণ ১৯৪২-এর ২৮ অগস্ট 'দ্য বম্বে ক্রনিকল' পত্রিকায় হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়ে সাভারকর বলেন: "...যতটা সম্ভব রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি দখল করার জন্য হিন্দু সদস্যদের অবশ্যই প্রতিরক্ষা সংস্থা (Defence bodies) এবং কাউন্সিলে তাদের অবস্থানে অটল থাকতে হবে।"
ব্রিটিশদের সঙ্গে সহযোগিতা করার হিন্দু মহাসভার এই নির্দেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৪২-এর ২৬ জুলাই বাংলার ছোটলাট জন হার্বার্টকে একটি চিঠি লিখে কংগ্রেসকে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা ছকে দেন এই ভাষায়: "... কংগ্রেসের ডাকা সারা ভারতবর্ষ ব্যাপী আন্দোলনের ফলে এই প্রদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্ট হতে পারে, আমাকে এখন তার উল্লেখ করতে হবে। যুদ্ধের সময়কালে যদি কেউ গণ-অনুভূতিকে এমনভাবে জাগিয়ে তোলার পরিকল্পনা করে যাতে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তাহীনতা ঘটতে পারে, তবে যে কোনও সরকার, তার কার্যক্রমের মেয়াদ যদি স্বল্পকালীনও হয়, তবু সে অবশ্যই এই আন্দোলনকে প্রতিহত করবে।" শুধু তা-ই নয়, ব্রিটিশ সরকারের বিশ্বস্ত মন্ত্রী হিসাবে তিনি আন্দোলন দমন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একই চিঠিতে ছোটলাটকে জানান: "ব্রিটেনের স্বার্থে নয়, ব্রিটিশরা লাভবান হতে পারে এমন কোনও সুবিধার জন্য নয়, বরং প্রদেশের প্রতিরক্ষা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্রিটিশদের ওপর ভারতীয়দের আস্থা রাখতে হবে। আপনি গভর্নর হিসাবে, প্রদেশের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে কাজ করবেন এবং আপনার মন্ত্রীর পরামর্শে সম্পূর্ণরূপে পরিচালিত হবেন।"
অন্য দিকে আরএসএস-এর তাত্ত্বিক গুরু গোলওয়ালকর দেশটাকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার খোয়াবে মশগুল থেকে নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করেন: "হিন্দুস্তানের অ-হিন্দু জনগণকে অবশ্যই হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষাকে [হিন্দি] গ্রহণ করতে হবে, হিন্দু ধর্মকে শিখতে হবে এবং সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে, হিন্দু জাতি ও সংস্কৃতির গৌরব ছাড়া অন্য কোনও ধারণাই গ্রহণ করতে হবে না।" তাঁর মতে, ". . . in a word they must cease to be foreigners, or may stay in the country, wholly subordinated to the Hindu nation, claiming nothing, deserving no privileges, far less any preferential treatment – not even citizens' rights।" অর্থাৎ সোজা কথায়, কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্যদের কোনও কিছুই দাবি না করে, এমনকি নাগরিক অধিকারটুকুও বিসর্জন দিয়ে সম্পূর্ণত হিন্দু জাতির অধীনস্থ হয়ে এ দেশে থাকতে হবে। দেশ সদ্য স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৪৭ সালের ৭ ডিসেম্বর, দিল্লির রামলীলা ময়দানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিশাল সমাবেশেও তিনি বলেন: "হিন্দু সমাজের সংহতিই আমাদের লক্ষ্য । এই আদর্শকে সামনে রেখে, সঙ্ঘ তার পথে অগ্রসর হবে এবং কোনও কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিত্ব দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে না।"
এই ঘটনার অল্প কিছু দিন আগে, ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই ভারতীয় সাংবিধানিক গণপরিষদে গৃহীত ভারতের জাতীয় পতাকাটিকেও সাভারকার বাতিল করে দেন। তার এক সপ্তাহ পরে, জুলাই মাসের ২৯ তারিখে তিনি এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন: "সিন্ধু থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত অবিচ্ছিন্ন ও অবিভক্ত আমাদের মাতৃভূমি ও পুণ্যভূমি হিন্দুস্থানের জন্য একমাত্র ভাগোয়া [গেরুয়া পতাকা]— যার বুকে অঙ্কিত আমাদের জাতিসত্তার আপন উপস্থিতির প্রকাশে উদ্ভাসিত কুণ্ডলিনী ও কৃপাণ— ছাড়া আর অন্য কোনও কর্তৃত্বপূর্ণ পতাকা হতে পারে না। এটি কারও ফরমায়েশে গড়া নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় সত্তার বিবর্তনের সঙ্গে স্ববিকশিত। এই পতাকা আমাদের হিন্দু-ইতিহাসের সমগ্র দৃশ্যপটকে প্রতিফলিত করে। লক্ষ লক্ষ হিন্দু প্রকৃতপক্ষে এরই পূজারি। ইতিমধ্যেই হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গ থেকে দক্ষিণের সমুদ্র অবধি এটি উড্ডীন। অন্যান্য দলীয় পতাকাগুলিকে বরদাস্ত করা যেতে পারে। [সেই কারণে] এদের কয়েকটিকে এমনকি কিছুটা সম্মানও করা যেতে পারে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই হিন্দুরাজত্বের জাতীয় আদর্শ হিসাবে এই হিন্দু-অনুসারী ধ্বজা, এই ভাগোয়া পতাকা ছাড়া আর অন্য কোনও পতাকাকে আনুগত্যের সঙ্গে অভিবাদন জানানো যায় না।"
এমনকি স্বাধীনতা লাভের পরেও সঙ্ঘ তাদের জাতীয় পতাকাকে অস্বীকার করার ঐতিহ্য অটুট রাখে। এ প্রসঙ্গে গোলওয়ালকর লেখেন: "...আমাদের নেতারা আমাদের দেশের জন্য একটি নতুন পতাকা বেছে নিয়েছেন। তাঁরা এই কাজ করলেন কেন? এটি নিছকই অনুকরণ মাত্র। …আমরা একটি প্রাচীন ও মহান জাতি, যার গৌরবময় অতীত রয়েছে। তাহলে কি আমাদের নিজস্ব কোনও পতাকা ছিল না? এত হাজার বছর ধরে আমাদের কি কোনও জাতীয় প্রতীক ছিল না? নিঃসন্দেহে ছিল। তাহলে আমাদের মনে এই নিদারুণ শূন্যতা কেন?"
যে হিন্দু মহাসভা কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সদস্যেরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিন পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থেকেছে, দেশের প্রত্যেকটি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ের সরাসরি বিরোধিতা করে এসেছে, জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মানুষকে সুচতুরভাবে হিন্দু-মুসলমানের বিদ্বেষ বিষে জর্জরিত করেছে, এই সেদিন পর্যন্ত জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত অবমাননা করেছে— আজ তারাই সহসা দেশপ্রেমের ঠিকাদারি নিতে চাইছে একচেটিয়া ভাবে!
এই পরিস্থিতিতে আপনারা আগামীকাল মোদি-শাহ অ্যান্ড কোং-এর নবতম গড্ডলিকা প্রবাহের অন্যতম গড্ডল হবেন কি না, সে কথা ভেবে দেখুন।
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
আন্দামান সেলুলার জেলে বন্দি থাকা ৩৯০ জন বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামের তালিকা ~ অভিক সেনগুপ্ত
আন্দামান সেলুলার জেলে বন্দি থাকা ৩৯০ জন বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো। এই তালিকা ১৯০৯ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে বন্দি হওয়া বিপ্লবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে, যা লিটারেসি প্যারাডাইস এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তালিকাটি বেঙ্গল প্রভিন্স এবং অন্যান্য প্রদেশ থেকে বাঙালি বিপ্লবীদের নাম ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করে।
বেঙ্গল প্রভিন্স (১৯০৯-১৯২১)
অবনী ভূষণ চক্রবর্তী
অবিনাশ ভট্টাচার্য
অমৃতলাল হাজরা
আশুতোষ লাহিড়ী
অশ্বিনী কুমার বসু
বারীন্দ্র কুমার ঘোষ
ভূপেন্দ্র নাথ ঘোষ
বিভূতিভূষণ সরকার
বিধূ ভূষণ দে
বিধূ ভূষণ সরকার
বীরেন সেন
ব্রজেন্দ্র নাথ দত্ত
গোবিন্দ চন্দ্র কর
গোপেন্দ্র লাল রায়
হরেন্দ্র ভট্টাচার্য
হেমচন্দ্র দাস (কানাইলাল)
হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল
ইন্দু ভূষণ রায়
যতীন্দ্র নাথ নন্দী
জ্যোতিষ চন্দ্র পাল
কালিদাস ঘোষ
খগেন্দ্র নাথ চৌধুরী ওরফে সুরেশ চন্দ্র
কিনুরাম পাই ওরফে প্রিয়নাথ
ক্ষিতিশ চন্দ্র স্যান্যাল
মদন মোহন ভৌমিক
নগেন্দ্র নাথ চন্দ্র
নগেন্দ্র নাথ সরকার
ননী গোপাল মুখার্জী
নরেন ঘোষ চৌধুরী
নিখিল রঞ্জন গুহ রায়
নিকুঞ্জ বিহারী পাল
নীরাপদ রায়
ফণীভূষণ রায়
পুলিন বিহারী দাস
শচীন্দ্র নাথ দত্ত
শচীন্দ্র লাল মিত্র
সোনুকুল চ্যাটার্জী
সতীশ চন্দ্র চ্যাটার্জী (ভট্টাচার্য)
সত্য রঞ্জন বসু
সুধীর কুমার সরকার
সুধীর চন্দ্র দে
সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস
ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী
উল্লাসকর দত্ত
সুরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
উপেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী
বেঙ্গল প্রভিন্স (১৯৩২-১৯৩৮)
অবনী রঞ্জন ঘোষ
অবনী মুখার্জী
আব্দুল কাদের চৌধুরী
অভয়পদ মুখার্জী
অচ্যুতা ঘটক
অধীর রঞ্জন নাগ
অধীর চন্দ্র সিনহা
অজয় সিনহা
অজিত কুমার মিত্র
অক্ষয় কুমার চৌধুরী
অমলেন্দু বাগচি
অমর মুখার্জী
অমর সূত্রধর
অমৃতেন্দু মুখার্জী
অমূল্য কুমার মিত্র
অমূল্য রায়
অমূল্য চন্দ্র সেনগুপ্ত
আনন্দ প্রসাদ গুপ্ত
অনন্ত ভট্টাচার্য
অনন্ত (ভোলা) চক্রবর্তী
অনন্ত কুমার চক্রবর্তী
অনন্ত দে
অনন্ত মুখার্জী
অনন্ত লাল সিংহ
অনাথ বন্ধু সাহা
অনিল মুখার্জী
আনন্দ চরণ পাল
অনুকূল চ্যাটার্জী
অরবিন্দ দে
অতুল চন্দ্র দত্ত
বঙ্গেশ্বর রায়
বঙ্কিম চক্রবর্তী
বারীন্দ্র কুমার ঘোষ
বিনয় কুমার বসু
বিনয় ভূষণ রায়
বিনয় তরফদার
ভবা রঞ্জন পাতুতুণ্ড
ভবোতোষ কর্মকার
ভবেশ তালুকদার
ভগবান চন্দ্র বিশ্বাস
ভারত শর্মা রায়
ভোলানাথ রায়
ভূবন মোহন চন্দ
ভূপাল চন্দ্র বসু
ভূপাল চন্দ্র পণ্ডা
ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য
ভূপেশ চন্দ্র ব্যানার্জী
ভূপেশ চন্দ্র গুহ
ভূপেশ চন্দ্র সাহা
বিভূতিভূষণ ব্যানার্জী
বিধূ ভূষণ গুহ বিশ্বাস
বিধূ ভূষণ সেন
বিদ্যাধর সাহা
বিজন কুমার সেন
বিজয় কুমার দত্ত
বিজয় কুমার সাহা
বিজয় কুমার সেন
বিজয় কুমার সিংহ
বিকাশ চন্দ্র বসু
বিনোদ বিহারী দে
বিনোদ বিহারী মজুমদার
বিনোদ বিহারী রায়
বিনোদ কুমার ঘোষ
বিনোদ কুমার মিত্র
বিনোদ কুমার সাহা
বিনোদ কুমার সেন
বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়
বিপিন বিহারী রায়
বিপিন চন্দ্র দত্ত
বিপিন চন্দ্র গুহ
বিপিন চন্দ্র মিত্র
বিপুল চন্দ্র ঘোষ
বিষ্ণু চন্দ্র ঘোষ
বিষ্ণু দত্ত শর্মা
বিষ্ণু প্রসাদ সিনহা
ব্রজেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী
ব্রজেন্দ্র নাথ সেন
বুদ্ধদেব বসু
চন্দ্রশেখর দে
চন্দ্রশেখর সাহা
চিত্তরঞ্জন দে
দয়াল হরি দাস
দীনেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য
দীনেশ চন্দ্র দত্ত
দীনেশ চন্দ্র মজুমদার
দীনেশ চন্দ্র সেন
দীননাথ দাস
দীপক কুমার ঘোষ
দ্বারকা নাথ দাস
দ্বারকা নাথ সেন
দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র দত্ত
দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র রায়
দ্বিজেন্দ্র নাথ সেন
গিরীন্দ্র নাথ দাস
গোপাল চন্দ্র দাস
গোপাল চন্দ্র ঘোষ
গোপাল চন্দ্র মুখার্জী
গোপীনাথ সাহা
হরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
হরেন্দ্র নাথ দাস
হরেন্দ্র নাথ ঘোষ
হরেন্দ্র নাথ মুখার্জী
হরেন্দ্র নাথ সেন
হরিদাস দত্ত
হরিমোহন রায়
হরিপদ ভট্টাচার্য
হরিপদ দাস
হরিপ্রিয় মুখার্জী
হেমচন্দ্র সেন
হেমেন্দ্র কুমার দাস
হেমেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
হেমেন্দ্র নাথ দাস
হেমেন্দ্র নাথ ঘোষ
হেমেন্দ্র নাথ মুখার্জী
হেমেন্দ্র নাথ সেন
হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ
হেমেন্দ্র প্রসাদ সেন
হেম প্রকাশ রায়
হিরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
হিরেন্দ্র নাথ দাস
হিরেন্দ্র নাথ ঘোষ
হিরেন্দ্র নাথ মুখার্জী
হিরেন্দ্র নাথ সেন
ইন্দ্রজিৎ সিংহ
ঈশান চন্দ্র ঘোষ
জগদীশ চন্দ্র দে
জগদীশ চন্দ্র ঘোষ
জগদীশ চন্দ্র রায়
জগদীশ চন্দ্র সেন
জিতেন্দ্র নাথ দাস
জিতেন্দ্র নাথ ঘোষ
জিতেন্দ্র নাথ মুখার্জী
জিতেন্দ্র নাথ সেন
জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র দাস
জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ
জ্ঞানেন্দ্র নাথ দত্ত
জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখার্জী
জ্যোতিষ চন্দ্র বসু
জ্যোতিষ চন্দ্র দাস
জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষ
জ্যোতিষ চন্দ্র মুখার্জী
জ্যোতিষ চন্দ্র সেন
কালীচরণ দাস
কালীচরণ ঘোষ
কালীচরণ মুখার্জী
কালীচরণ সেন
কালীপদ চক্রবর্তী
কালীপ্রসাদ দাস
কামাখ্যা চরণ ঘোষ
কানাইলাল ভট্টাচার্য
কানাইলাল দাস
কানাইলাল ঘোষ
কানাইলাল মুখার্জী
কানাইলাল সেন
কেদারনাথ ব্যানার্জী
কেদারনাথ দাস
কেদারনাথ ঘোষ
কেশব চন্দ্র দাস
কেশব চন্দ্র ঘোষ
কেশব চন্দ্র মুখার্জী
ক্ষিতিশ চন্দ্র দাস
ক্ষিতিশ চন্দ্র ঘোষ
কুমুদ রঞ্জন দাস
কুমুদ রঞ্জন ঘোষ
কুমুদ রঞ্জন মুখার্জী
লক্ষ্মীকান্ত দাস
লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ
মাখনলাল দাস
মাখনলাল ঘোষ
মাখনলাল সেন
মানিক চন্দ্র দাস
মানিক চন্দ্র ঘোষ
মানিক চন্দ্র মুখার্জী
মানিকলাল দত্ত
মানিকলাল সেন
মানিন্দ্র নাথ দাস
মানিন্দ্র নাথ ঘোষ
মানিন্দ্র নাথ মুখার্জী
মানিন্দ্র নাথ সেন
মনোরঞ্জন ব্যানার্জী
মনোরঞ্জন দাস
মনোরঞ্জন ঘোষ
মনোরঞ্জন মুখার্জী
মনোরঞ্জন সেন
মৃত্যুঞ্জয় বসু
মৃত্যুঞ্জয় দাস
মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ
মৃত্যুঞ্জয় মুখার্জী
মৃত্যুঞ্জয় সেন
নগেন্দ্র নাথ দাস
নগেন্দ্র নাথ ঘোষ
নগেন্দ্র নাথ মুখার্জী
নগেন্দ্র নাথ সেন
নলিনী কান্তি দাস
নলিনী কান্তি ঘোষ
নলিনী কান্তি মুখার্জী
নলিনী রঞ্জন দাস
নলিনী রঞ্জন ঘোষ
নরেন্দ্র নাথ দাস
নরেন্দ্র নাথ ঘোষ
নরেন্দ্র নাথ মুখার্জী
নরেন্দ্র নাথ সেন
নীহার রঞ্জন দাস
নীহার রঞ্জন ঘোষ
নিখিল চন্দ্র দাস
নিখিল চন্দ্র ঘোষ
নিমাই চরণ দাস
নিমাই চরণ ঘোষ
নির্মল চন্দ্র দাস
নির্মল চন্দ্র ঘোষ
নির্মল চন্দ্র সেন
নীতিন্দ্র নাথ দাস
নীতিন্দ্র নাথ ঘোষ
নীতিন্দ্র নাথ মুখার্জী
পঞ্চানন চক্রবর্তী
পঞ্চানন দাস
পঞ্চানন ঘোষ
পঞ্চানন মুখার্জী
পার্থ প্রতিম দাস
পার্থ প্রতিম ঘোষ
পবিত্র রঞ্জন দাস
পবিত্র রঞ্জন ঘোষ
প্রভাত চন্দ্র দাস
প্রভাত চন্দ্র ঘোষ
প্রভাত চন্দ্র মুখার্জী
প্রদ্যোত কুমার ভট্টাচার্য
প্রদ্যোত কুমার দাস
প্রদ্যোত কুমার ঘোষ
প্রফুল্ল চন্দ্র দাস
প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ
প্রফুল্ল চন্দ্র মুখার্জী
প্রমোদ কুমার দাস
প্রমোদ কুমার ঘোষ
প্রমোদ কুমার মুখার্জী
প্রশান্ত কুমার দাস
প্রশান্ত কুমার ঘোষ
প্রশান্ত কুমার মুখার্জী
প্রতুল চন্দ্র দাস
প্রতুল চন্দ্র ঘোষ
প্রতুল চন্দ্র মুখার্জী
পূর্ণ চন্দ্র দাস
পূর্ণ চন্দ্র ঘোষ
পূর্ণ চন্দ্র মুখার্জী
পূর্ণেন্দু দাস
পূর্ণেন্দু ঘোষ
পূর্ণেন্দু মুখার্জী
রাধা চরণ দাস
রাধা চরণ ঘোষ
রাধা কান্ত দাস
রাধা কান্ত ঘোষ
রাজেন্দ্র চন্দ্র দাস
রাজেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ
রাজেন্দ্র নাথ দাস
রাজেন্দ্র নাথ ঘোষ
রামচন্দ্র দাস
রামচন্দ্র ঘোষ
রামচন্দ্র মুখার্জী
রামকৃষ্ণ দাস
রামকৃষ্ণ ঘোষ
রামকৃষ্ণ মুখার্জী
রামপ্রসাদ দাস
রামপ্রসাদ ঘোষ
রঞ্জিত কুমার দাস
রঞ্জিত কুমার ঘোষ
রতন লাল চক্রবর্তী
রতন লাল দাস
রতন লাল ঘোষ
রেবতী মোহন দাস
রেবতী মোহন ঘোষ
রুদ্র প্রতাপ দাস
রুদ্র প্রতাপ ঘোষ
শৈলেন্দ্র নাথ দাস
শৈলেন্দ্র নাথ ঘোষ
শৈলেন্দ্র নাথ মুখার্জী
শান্তি রঞ্জন দাস
শান্তি রঞ্জন ঘোষ
শরৎ চন্দ্র দাস
শরৎ চন্দ্র ঘোষ
শরৎ চন্দ্র মুখার্জী
শশধর আচার্য
শশী ভূষণ দাস
শশী ভূষণ ঘোষ
শশী ভূষণ মুখার্জী
শিব নাথ দাস
শিব নাথ ঘোষ
শিব নাথ মুখার্জী
শিব প্রসাদ দাস
শিব প্রসাদ ঘোষ
শিবেন্দ্র নাথ দাস
শিবেন্দ্র নাথ ঘোষ
শোভন লাল দাস
শোভন লাল ঘোষ
শ্রীকান্ত দাস
শ্রীকান্ত ঘোষ
শ্রীকান্ত মুখার্জী
শ্রীনাথ দাস
শ্রীনাথ ঘোষ
শ্রীনাথ মুখার্জী
শুকদেব রায়
শুকদেব সেন
শ্যামল কুমার দাস
শ্যামল কুমার ঘোষ
সিদ্ধার্থ দাস
সিদ্ধার্থ ঘোষ
সীতারাম দাস
সীতারাম ঘোষ
স্মরণ চন্দ্র দাস
স্মরণ চন্দ্র ঘোষ
স্নেহাংশু দাস
স্নেহাংশু ঘোষ
সোহন লাল দাস
সোহন লাল ঘোষ
সুধাংশু দাস
সুধাংশু ঘোষ
সুধীর চন্দ্র দাস
সুধীর চন্দ্র ঘোষ
সুধীর চন্দ্র মুখার্জী
সুখেন্দু দাস
সুখেন্দু ঘোষ
সুকুমার দাস
সুকুমার ঘোষ
সুকুমার মুখার্জী
সুনীল চন্দ্র দাস
সুনীল চন্দ্র ঘোষ
সুনীল চন্দ্র মুখার্জী
সুপ্রকাশ দাস
সুপ্রকাশ ঘোষ
সুরেন্দ্র নাথ দাস
সুরেন্দ্র নাথ ঘোষ
সুরেন্দ্র নাথ মুখার্জী
সুশীল চন্দ্র দাস
সুশীল চন্দ্র ঘোষ
সুশীল চন্দ্র মুখার্জী
স্বদেশ চন্দ্র দাস
স্বদেশ চন্দ্র ঘোষ
স্বদেশ চন্দ্র মুখার্জী
উদয় চন্দ্র দাস
উদয় চন্দ্র ঘোষ
অন্যান্য প্রদেশ থেকে বাঙালি
ইউনাইটেড প্রভিন্স (১৯০৯-১৯২১):
385. শচীন্দ্র নাথ সান্যাল
ইউনাইটেড প্রভিন্স (১৯৩২-১৯৩৮):
386. বটুকেশ্বর দত্ত
দিল্লি প্রভিন্স (১৯৩২-১৯৩৮):
387. হরবন্ধু সমাজদার
বিহার প্রভিন্স (১৯৩২-১৯৩৮):
388. প্রমথ নাথ ঘোষ
আসাম প্রভিন্স (১৯৩২-১৯৩৮):
389. বিনয় লস্কর
390. গোপেন রায়
তথ্যসূত্র: তালিকাটি আন্দামান সেলুলার জেলের রেকর্ড, লিটারেসি প্যারাডাইসের প্রকাশিত তথ্য, এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিশেষ নোট: কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯০৯-১৯৩৮ সালের মধ্যে ৫৮৫ জন বিপ্লবীর মধ্যে ৩৯৮ জন ছিলেন বাঙালি, তবে এই তালিকায় ৩৯০ জনের নাম পাওয়া গেছে। বাকি ৮ জনের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
বিতর্ক: সাম্প্রতিক সময়ে সেলুলার জেলের ফলক থেকে শতাধিক বাঙালি বিপ্লবীর নাম সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
#GrokAI
সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
ভোটার চেনা ~ শুভ্র সুন্দর
ভোটারের রকম-সকম দেখে আমার ভারি অদ্ভুত লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম "তুমি কে? তোমার নাম কি?"
সে খানিকক্ষণ ভেবে বলল, "আমার নাম হিজি বিজ বিজ। আমার নাম হিজি বিজ বিজ, আমার ভায়ের নাম হিজি বিজ বিজ, আমার বাবার নাম হিজি বিজ বিজ, আমার পিসের নাম হিজি বিজ বিজ্-"
আমি বললাম, "তার চেয়ে সোজা বললেই হয় তোমার গুষ্টিসুদ্ধ সবাই হিজি বিজ বিজ।"
সে আবার খানিক ভেবে বলল, "তা তো নয়, আমার নাম ভক্ত। আমার মামার নাম ভক্ত, আমার খুড়োর নাম ভক্ত, আমার মেসোর নাম ভক্ত, আমার শ্বশুরের নাম ভক্ত-
আমি ধমক দিয়ে বললাম, "সত্যি বলছ? না বানিয়ে?"
ভোটারটা কেমন থতমত খেয়ে বলল, "না, না আমার শ্বশুরের নাম ট্রাম্প।"
আমি ধমকে বললাম "কিচ্ছু বিশ্বাস করি না। তুমি থাকো কোথায়?"
সে একটু ভেবে বললো "আমি থাকি হাউস নম্বর ০ তে, আমার বন্ধু থাকে হাউস নম্বর ০ তে, আমার বন্ধুর শালা থাকে হাউস নম্বর ০ তে, আমার শালার ভাইরা ভাই থাকে হাউস নম্বর ০ তে, আমার দিদির নন্দাই এর মামা ও থাকে হাউস নম্বর ০ তে, আমার বসের দিদির ভাইপো ও থাকে হাউস নম্বর ০ তে।"
আমি বললাম "কি যা তা বলছো, তোমার বিধানসভার সবাই হাউস নম্বর ০ তে থাকে?"
সে একটু ভেবে বলল, "না তা তো নয়, আমার পিসি থাকে কালীঘাটে।"
আমি বললাম "বাজে কথা। তোমার বয়স কত? কবে ভোটার হয়েছ?"
বলল "আমার বয়স ১২৩, আমার বাবার বয়স ১১৪, আমার দাদুর বয়স ১০৭, আমার প্রপিতামহের বয়স ৯৮ বছর। আমরা সবাই এই প্রথম বার ভোট দিলাম।"
আবার আমার রাগ হল, বললাম "এতো জল মেশাচ্ছ বয়সে, এরকম হয় নাকি। তোমার দাদু তোমার থেকে ছোট?"
সে বললো, "না তো, আমার বয়স ৭, দাদুর বয়স ১০৭ কিন্তু আমার ইচ্ছা হল দাদুর থেকে বড় হবো তাই ১২৩ বললাম। ১+২+৩ = ৭"
আমি বললাম, "১+২+৩ তো ৬ হয়"
সে বললো, "উঁহু। তুমি অঙ্ক কিছুই জানো না দেখছি। (a+b) হোল স্কোয়ারের এক্সট্রা 2ab টা ধরবে না? এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি ভোটের অঙ্ক বুঝবে কী করে?"
বি.দ্র: সুকুমার রায় এরকম কিছু লেখেন নি!
শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ~ চন্দন দাস
১৯২৫।
২৭শে সেপ্টেম্বর দশমী ছিল।
সেদিন তৈরি হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।
১৯২৫। ২৬শে সেপ্টেম্বর ছিল নবমী। সেদিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক ধার্মিক, হিন্দু ব্রাহ্মণ, সাহাজাহানপুর থেকে। তাঁর নাম রামপ্রসাদ বিসমিল। তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ট, বিশ্বস্ত, প্রাণের বন্ধু গ্রেপ্তার হয়েছিলেন প্রায় একবছর পর। তাঁরও বাড়ি ছিল উত্তরপ্রদেশের সাহাজাহানাপুরে। তিনিও খুব ধর্মপ্রাণ ছিলেন। তাঁর নাম আশফাকউল্লা খান।
দুজনের একই দিনে ফাঁসি হয়েছিল। ১৯২৭-এর ১২ই ডিসেম্বর। রামপ্রসাদ বিসমিল ফাঁসির আগের রাতে সেলে গীতা পাঠ করেছিলেন। কাবুল হয়ে সোভিয়েতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করা আশফাকউল্লা ধরা পড়েছিলেন একজনের বিশ্বাসঘাতকতায়। ফাঁসির আগের রাতে তিনি পাঠ করেছিলেন কোরান। দুজনকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ।
কেন?
দুজনেই ছিলেন সাম্রাজ্যবাদকে দেশ থেকে উৎখাত করার সংগ্রামের সেনানী। তৎকালীন 'হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি'র সদস্য। যা পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি'। দুজনেই সংগ্রামের জন্য টাকা সংগ্রহের তাগিদে ট্রেন ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিলেন ১৯২৫-এর ৯ই আগস্ট। সেই ট্রেন ডাকাতি ভারতের ইতিহাসে 'কাকোরি ট্রেন ডাকাতি' নামে সুপরিচিত।
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, তাঁরা যখন দেশ থেকে ব্রিটিশকে তাড়ানোর জন্য জীবনপণ করছেন, ঠিক তখনই দেশে তৈরি হচ্ছে ব্রিটিশের 'ভাগ করে শাসন করো' চক্রান্তের সংগঠন আরএসএস। রামপ্রসাদ বিসমিল গ্রেপ্তার হচ্ছেন, সূর্য সেন আর রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী উত্তর প্রদেশ ছেড়ে কলকাতায় গা ঢাকা দিচ্ছেন ১৯২৫-এর ২৬শে সেপ্টেম্বর। আরএসএস তৈরি হচ্ছে ঠিক তার চব্বিশ ঘন্টা পরে।
সমাপতন? ইতিহাসে এমন হয়। 'কাকোরি' তাই পালিত হয় না। উত্তরপ্রদেশের তখতে এখন সাম্প্রদায়িক শক্তি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল আর বিজেপি সেই আরএসএস-এরই ছকে রাজ্যে বিভাজন খাড়া করেছে। দেশজুড়ে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে পালিত হচ্ছে আরএসএস-এর একশো বছর।
অথচ কাকোরির সেই ঘটনাতেই দেশ জানতে পারে চট্টগ্রাম, কলকাতা, বরানগর থেকে বেনারস, লক্ষ্মৌ— সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামীরা। ৯ই আগস্ট ১৯২৫ উত্তরপ্রদেশের কাকোরিতে ট্রেন ডাকাতি করেছিলেন বিপ্লবীরা। তাঁরা নিয়েছিলেন শুধু সরকারি কোষাগারের টাকা। ট্রেনের কোনও যাত্রী, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান গার্ড—কারোকে আঘাত করেননি বিপ্লবীরা। বৃষ্টির সেই রাতে একটি বস্তায় টাকা ভরে তাঁরা লক্ষ্মৌ থেকে সাহাজাহানপুরগামী ট্রেনটি ছেড়ে চলে গেছিলেন তাঁরা।
কাকোরি ট্রেন ডাকাতির সময় উত্তরপ্রদেশেই ছিলেন সূর্য সেন। তিনি বিপ্লবীদের সেই পরিকল্পনার অংশ ছিলেন। ১৯২৫-এর ২৬শে সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে ধরপাকড় শুরু হলে মাস্টারদা চলে আসেন কলকাতায়। পরে আবার ফিরে যান উত্তরপ্রদেশে জেল ভেঙে সহযোদ্ধাদের মুক্তির পরিকল্পনা সফল করতে। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আর একটি ঘটনা ছিল চমকপ্রদ। কাকোরি ট্রেন ডাকাতির মামলার শুনানির সময় আদালতে নিয়মিত হাজির থাকতে দেখা যায় এক শিখ যুবককে— তিনি ভগৎ সিং। অভিযুক্তদের অন্যতম যোগেশ চ্যাটার্জি তাঁকে চিনতেন। তিনি ভগৎ সিংকে বন্দীদের আদালতে আনার রাস্তার ধারে, শুনানির সময় আদালতে একদম সামনের সারিতে বসে থাকতে দেখেন দিনের পর দিন।
সেই ঘটনায় যাঁদের ফাঁসি হয়েছিল তাঁদের তিনজনের বাড়ি ছিল উত্তরদ্রদেশে। তাঁরা রামপ্রসাদ বিসমিল, আশফাকউল্লা খান এবং ঠাকুর রোশন সিং। একজন ছিলেন বাংলার, জন্ম তাঁর আজকের বাংলাদেশের পাবনায়— তিনি রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী। এই মানুষটি বিস্ময়কর ছিলেন। গীতা পাঠ করতেন। কিন্তু গোরু, শূকরের মাংস খেতেন। কোনও কুসংস্কার মানতেন না। পৈতে ধারণ করতেন না। দক্ষিণেশ্বর বোমার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার আগেই তিনি কাকোরি ট্রেন ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিলেন। আর দক্ষিণেশ্বর বোমার মামলায় তিন বছরের মেয়াদে সেই সময় জেলে ছিলেন বলেই উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাঁর হদিশ পেয়েছিল। তাঁর ফাঁসি হয়েছিল সবার আগে— ১৯২৭-এর ১৭ই ডিসেম্বর।
কাকোরি ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় যে পাঁচ জনের আন্দামানে দ্বীপান্তরের সাজা হয়েছিল তাঁদের চার জন উত্তরপ্রদেশের, একজন বাংলার। কিন্তু গোবিন্দচন্দ্র কর, মুকুন্দিলাল গুপ্ত, যোগেশ চ্যাটার্জি, শচীন বক্সি এবং শচীন্দ্রনাথ সান্যাল— প্রত্যেকে ছিলেন বাংলাভাষী। দশ থেকে চোদ্দ বছর সশ্রম কারাদন্ড হয়েছিল পাঁচ জনের। চারজন ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা, একজন ছিলেন মধ্যপ্রদেশের। চার এবং পাঁচ বছর যাঁদের কারাদন্ড হয়েছিল সেই ছয়জনের মধ্যে পাঁচ জন ছিলেন উত্তরপ্রদেশের, একজন মধ্যপ্রদেশের। বেইমানদের কথা বাকি থাকে কেন? রাজসাক্ষী হয়েছিলেন দু'জন—একজন বাংলার, একজন উত্তরপ্রদেশের।
শেষ করবো দুটি প্রসঙ্গ তুলে ধরার চেষ্টা করে। প্রথমত, আশফাকউল্লা খানের সঙ্গে তসাদ্দক হোসেনের কথোপকথন। দ্বিতীয়ত, রামপ্রসাদ বিসমিলের শেষ চিঠি।
তসাদ্দক হোসেন ছিলেন সিআইডি-র ডেপুটি সুপার। তাকে পাঠানো হয়েছিল জেলে, আসফাকউল্লা খানের সামনে। এক মুসলমান আর এক মুসলমানকে ভাঙতে পারবে—এই ছিল চক্রান্ত।
তসাদ্দক হোসেন আশফাকউল্লাকে বললেন,'আপনি একজন মুসলমান। আমিও সেই একই ধর্মের মানুষ। হিন্দুদের সঙ্গে বিপ্লবের কাজে নেমে কেন আপনার অমূল্য জীবন নষ্ট করবেন। রামপ্রসাদ তো হিন্দু। তার উদ্দেশ্য ব্রিটিশরাজ উৎখাত করে তার বদলে হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠা করা।''
আশফাকউল্লা জবাব দিয়েছিলেন। আর তা ভারতের ভিত্তি। ২২ বছরের সেই যুবক বলেছিলেন,''আপনার শুভেচ্ছার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার সঙ্কল্প বদলাবে না। আমার কাছে রামপ্রসাদ শুধু একজন হিন্দু নন। তিনি হিন্দুস্তানের অধিবাসী। তাঁর লক্ষ্য হিন্দুদের স্বাধীনতা নয়, সমগ্র হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা। আমার লক্ষ্যও তাই।''
এবার রামপ্রসাদ বিসমিলের শেষ চিঠি। ১৯২৭-এর ১৬ই ডিসেম্বর লেখা তাঁর দীর্ঘ চিঠিতে তিনি লেখেন,''সরকার বলেছে আশফাকুল্লাহ খান রামপ্রসাদের ডান হাত। যদি আশফাকের মতো একজন নিবেদিত মুসলিম রামপ্রসাদের মতো একজন আর্য সমাজীর ডান হাত হতে পারে, তবে কেন অন্য হিন্দু এবং মুসলিমরা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না? আশফাকই প্রথম এমন মুসলিম, যাকে বাংলার বিপ্লবী দলের সাথে জড়িত থাকার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। আমার কাজ শেষ হয়েছে। একজন মুসলিম যুবককে আত্মত্যাগের জন্য পেয়ে আমি হিন্দুস্তানকে দেখিয়ে দিয়েছি যে মুসলিম যুবকরাও হিন্দু যুবকদের চেয়েও বেশি উদ্দীপনার সাথে দেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে এবং সে সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন আর কেউ সাহস করে বলতে পারবে না যে মুসলিমদের বিশ্বাস করা উচিত নয়। এটি প্রথম পরীক্ষা ছিল যা সফল হয়েছে।''
সঙ্ঘ সেদিনও হেরেছিল। আবার।
মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫
বনলতা সেন হিন্দি অনুবাদ ~ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
বনলতিয়া সেইন
(কবিবর চুস্তজিন্দগি দাসসাহিব কী মূল কাভ্য পর আধারিত)
হাজারো সাল সে মৈ
চলতা গয়া চলতা গয়া চলতা গয়া
শ্রীলংকা সে মালয় হো'কর
অশোকজি ঔর বিম্বিসারজিকা কুটিয়া তক
উধার ভি থা মৈ, ইধার ভি থা,
বিদর্ভ কা চুনাওঁ মে ভি থা
থকে হুয়ে হৈ দুখি আত্মা
তাকত হো গয়া ড্রেন
আজ মেরে দিল মে শান্তি জগায়ী
নাট্টৌরবালী বনলতিয়া সেন
উসকি বাল হৈ কামাল
আন্ধেরা ভিদিশাকে চাল
সুরতমে শ্রাবস্তি নকশা কৈসা হৈ কামাল
দূর কোই সমন্দরকা
নৈয়া আকেলা এক লড়কা
আইল্যান্ড যাকে দালচিনি খাকে
দেখে সমন্দরি ফেন
বৈসি প্রীত মেরে দিল মে জগা লি
ঘোসলে জৈসা আঁখোবালি
নাট্টৌরবালী বনলতিয়া সেন।
কোহরা জৈসা শাম গিরে যব
আয়ে আন্ধেরা রাজ
পংখ্ সে পোঁছে ধুপ কি খুশবু
খুন কা প্যাসা বাজ
মিটাকে সব নীলা পিলা
আপনা হিসাবকা খাতা খোলা
ঘোসলে পে সব পঞ্ছি লৌটা
সমন্দর মে সরিতা মিটা
হাত মে রহতা আন্ধার, মিটা
জীবনকা লেনদেন
তব হাথোঁ মে হাথ রহতি হৈ সাথ
নাট্টৌরবালি বনলতিয়া সেন
বাংলা নাকি বাংলাদেশী ভাষা ~ পবিত্র সরকার
দিল্লি পুলিশ আর অমিত মালব্যের কথাবার্তার ব্যাখ্যা আর ভিত্তি নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মাঠে নেমে পড়েছেন। তাতে ছবিটা একটু গুলিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমি আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিমতো 'ভাষা' সম্বন্ধে ধারণা একটু পরিষ্কার করে দিই, সকলকে অভিবাদন জানিয়ে। এ কথা আমি ছাপার অক্ষরে বিশ-পঁচিশ বছর আগে থেকে লিখছি, আমার 'ভাষাপ্রেম ভাষাবিরোধ', বা 'ভাষা, ব্যাকরণের বাইরে' দেখলেই সেটা মালুম হবে। হযতো বাংলায় লেখা বলে সেগুলি বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের চোখে পড়ে না। যাঁদের পড়ে না, তাঁরা আমাকে বলবেন, ইংরেজি বা অন্য ভাষায় তাঁরা ভাষা সম্বন্ধে এই ধারণাটা পেয়েছেন কি না।
আসল কথা হল ভাষা, বিশেষত বড়সড়ো লিখিত ভাষা একটা অ্যাবস্ট্র্যাক্ট বা অবস্তুক ধারণা। তা কখনোই একটিমাত্র, সংহত, একরূপী (ইউনিফর্ম), অবিমিশ্র, ভূগোলে একস্থানবদ্ধ বস্তু নয়। বাস্তবে তার অনেক ধরনের রূপ আছে।
এক ধরনের রূপ হল স্থানিক। তাকে স্থানীয় উপভাষা বা রিজিয়োনাল ডায়ালেক্ট বলে। বাংলা পাঠ্যবইয়ে তার চারটে বা পাঁচটা রূপ বলেছেন পণ্ডিতেরা। কিন্তু তা বিপুল সরলীকরণ মাত্র। আসলে সেগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও অজস্র উপভাষা, যেগুলোর সীমানানির্ধারণ করা খুব কঠিন। রাঢ়ীর মধ্যে আছে রাঢ় অঞ্চলের নানা জেলার উপভাষা। কিন্তু একটা জেলার উপভাষাই কি এক ? তাও তো নয়। মেদিনীপুরেই ঝাড়গ্রাম অঞ্চলে এক, ঘাটাল অঞ্চলে এক, কাঁথি দিঘা অঞ্চলে এক, আবার উত্তরাংশে এক। নিশ্চয়ই আরও আছে। এই রকম বর্ধমানে, নদীয়ায়, মুর্শিদাবাদে, অখণ্ড চ্ব্বিশ পরগনায়। নদীয়ায়। অর্থাৎ জেলার উপভাষাও একটা সরলীকরণ।
তারপর তারই মধ্যে আবার নানা স্তর তৈরি করে নারী, পুরুষ, জীবিকা, ধর্ম ইত্যাদির মাত্রা। নদীয়ার ভাষাকে আমরা মান্য বাংলার কাছাকাছি মনে করি, কিন্তু নদীয়ার কোনও কোনও অঞ্চলে আমি জিগাশলুম, (জিজ্ঞেস করলাম) ইত্যাদি শুনি, তা মোটেই মান্য নয়। এইভাবে লিঙ্গ, জীবিকা, ধর্ম ইত্যাদি ভাষার স্থানিক ছাড়া যে আর-একরকম বৈচিত্র্য নির্মাণ করে তাকে বলি শ্রেণিভাষা, ইংরেজি সোশিয়োলেক্ট। তাতে নানা বানানো বৈচিত্র্যও থাকে, যেমন নারীদের, বা ব্যবসায়ীদের গোপন ভাষা, দুই দূরবর্তী ভাষার লোকের আদান-প্রদানে তৈরি পিজিন (pidgin) ভাষা, বা তার খানিকটা স্থায়ী রূপ ক্রেয়োল (creole) ইত্যাদি। পিজিন আর ক্রেয়োলে তফাত হল, পিজিন যেখানে শুধু বাইরের ভাষা থেকে যায়, সেখানে ক্রেয়োল ঘরের ভাষা হয়ে যায়।
এই সমস্থ স্থানিক, সামাজিক আর গোষ্ঠীগত ভাষারূপের ওপর গড়ে ওঠে একটা মান্য ভাষারূপ, যাকে বলা হয় মান্য বা স্ট্যান্ডার্ড বা প্রমিত ডায়ালেক্ট। সেটাও ডায়ালেক্ট, কিন্তু সেটা একটা সুপার ডায়ালেক্ট। কারণ তার ব্যবহারের ব্যাপ্তি যেমন সবচেয়ে বেশি, তার মর্যাদাও সবচেয়ে বেশি। কেন ? কারণ সেটা নানা উপভাষা অঞ্চলের লোকেরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার সময় ব্যবহার করতে বাধ্য হয়, যদি নিজেদের উপভাষা অন্যে বুঝতে না পারে। এর মুখে ব্যবহার হয় রাজধানীতে (বেশিরভাগ সময়ে রাজধানীতে তৈরিও হয় এটা), ক্লাসঘরে, লেখাপড়ার জগতে, রেডিয়ো-টেলিভিশনের সম্প্রচারে, ওখানে আর বাইরে নানা বক্তৃতায়--তাই যেমন এর মর্যাদা অন্য বৈচিত্র্যের তুলনায় হু হু করে বেড়ে যায়, আবার লেখা আর ছাপায় এর ব্যবহার এর মর্যাদাকে আরও জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে দেয়। সরকারও প্রশাসনিক কাজে এ ভাষা ব্যবহার করতে থাকে, তাই এটা কখনও সরকারি ভাষাও হয়ে ওঠে।
এভাবে এর সম্মান এত বেড়ে যায় যে, এটাই পুরো ভাষাটার পরিচয় দখল করে নেয়, অন্য বৈচিত্র্যগুলোকে আড়াল করে। সেগুলোও কিন্তু ভাষা, বাংলার হলে বাংলা ভাষারই অংশ। সিলেটের বাংলাও বাংলা, পুরুলিয়ার বাংলাও বাংলা, চট্টগ্রামের বাংলাও বাংলা। বৈধ বাংলা। যদি না, রাজনৈতিক বা অন্য কোনও কারণে, ব্যবহারকারীরা তাকে অন্য ভাষা বলে দাবি করে। সেটার ভিত্তি অন্য। এই ভাবে বাংলার আগেকার কামরূপী উপভাষা (অসমিয়ার গোয়ালপাড়িয়া উপভাষাও খানিকটা) এখন সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে 'রাজবংশী' ভাষা হয়েছে।
যাই হোক, এই সব ছুটকো উদাহরণ ছাড়া. এখনও সবই বা়ংলা। কাজেই বাংলাভাষা, সব ভাষার মতোই একটা ভাষাবৈচিত্র্যের গুচ্ছ মাত্র, একটা অখণ্ড, শিলীভূত ভাষা নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মান্য বা প্রমিত বাংলাই বাংলা, এই সমীকরণের মূলে আছে ওই ভাষারূপটির ব্যাপক ব্যবহার আর মর্যাদা। বিদেশিরা যখন 'আমি বাংলা শিখছি' বলে তারা ওই মান্য বাংলাই বোঝায়, ইশ্কুল কলেজের বাংলা পাঠ্যক্রমও মূলত মান্য বাংলার।
এই মান্য বাংলাই দুই বাংলায়, ত্রিপুরায়, আসামে আচারিক বা ফর্ম্যাল উপলক্ষ্যে চলে, এমনকি পৃথিবীর নানা জায়গায়, ইংল্যান্ডে, মার্কিনদেশে, অস্ট্রেলিয়ায়, জাপানে--নানা অঞ্চলের বাঙালিরা একত্র হলে এই বাংলায় কথা বলে। কিন্তু সব জায়গার মান্য বাংলা কি হুবহু এক ? একেবারেই না, তা হওয়ার কথাই নয়। ব্যাকরণ মূলত এক, কিন্তু প্রচুর স্থানীয় শব্দ ও পদবন্ধ তাকে কিছুটা 'আঞ্চলিক' করে তোলে। কিন্তু তার 'মান্য' চেহারাটি অস্পষ্ট হয় না। 'প্রমিত' উচ্চারণও একটা আছে। সেটা সবাই মোটামুটি মেনে চলার চেষ্টা করে, টানটোনের তফাত হলেও। এই লেখক জানে যে, বাংলাদেশে প্রমিত উচ্চারণ নিয়ে বেশ মাথাব্যথা আছে। ঢাকায় প্রচুর প্রমিত উচ্চারণের কর্মশালা ও ক্লাস হয়।
লেখা বড় হচ্ছে, আমি সাধারণত এত বড় লিখি না। শেষে যোগ করি যে, ভাষাবিজ্ঞানে সব ভাষা আর উপভাষাকে বৈধ আর সমমর্যাদাসম্পন্ন বলে বলা হয়। তা নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করা এক ধরনের অসৌজন্য। অবশ্যই বাস্তব জীবনে সামাজিক ক্ষেত্রে তা বার বার লঙ্ঘিত হয়, কারণ মানুষের ব্যবহার বিজ্ঞানের নির্দেশ মেনে চলে না।
এখন দিল্লির পুলিশের কর্তা বা মালব্যবাবুর এত সব কথা জানবার কথা নয়। তাঁরা তাঁদের অজ্ঞতা বা কূটনীতি নিয়ে খুশি থাকতেই পারেন। 'বাংলা' কোনও ভাষাই নয়' এই কথাটা তিনি কী অর্থে বলেছেন জানি না, কিন্তু বলে তিনি তাঁর দলের উপকার করেছেন তা বলা যাবে না। জানি না, রাজনীতিতে একটু উঁকি দিয়ে বলি, এরও পেছনে কোনও 'সেটিং' আছে কি না। যাই হোক, তিনি ভারতের সংবিধান যদি পড়ে থাকেন তা হলে দেখবেন তার অষ্টম তফশিলে 'বাংলা' ভাষার একটি স্বীকৃতি আছে, নানা অভিধানেও 'বাংলা' কথাটির অর্থ দেখতে পারেন। কিন্তু তাঁকে শিক্ষিত করা আমার কাজ বা জীবন-সাধনা নয়। বাংলা ভাষা বলতে কী বোঝায় তাই আমি একটু বন্ধুদের জানানোর চেষ্টা করলাম। ভুল বা অসম্পূর্ণতা থাকলে নিশ্চয় কেউ আমাকে দেখিয়ে দেবেন।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)