শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩

দার্জিলিং মেলের ইতিহাস




দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ কে সংযুক্ত করার জন্য প্রচুর ট্রেন আছে কিন্তু তার মধ্যেও সবথেকে জনপ্রিয় একটি ট্রেন হলো (১২৩৪৩/১২৩৪৪-দার্জিলিং মেল)আজ তারই কথা বলবো, এটি হলো উত্তরবঙ্গের এবং দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের কাছে যাতায়াতের জন্য প্রথম চয়েস, দার্জিলিং মেল প্রথম চালু হয় ব্রিটিশ ভারতের সময় ১লা জানুয়ারি ১৮৭৮ সালে এই কিংবদন্তি ট্রেনটি, ব্রিটিশ আমলে কলকাতা কে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য পূর্ববঙ্গের(বতর্মানে যার নাম বাংলাদেশ) মাধ্যমে যেতে হতো,১৯৭৮ সালে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি মধ্যে রেল পথটি ছিল দুই ভাগে বিভক্ত, এর প্রথম ভাগটি ছিল ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের একটি ১৮৫কিলোমিটার এর যাত্রা পথ যেটি ছিল কোলকাতা স্টেশন(যার বর্তমান নাম শিয়ালদহ স্টেশন) থেকে পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত দামূখদিয়াহ ঘাট পর্যন্ত।এরপর ফেরি করে নদী পার করে দ্বিতীয় ভাগের যাত্রা শুরু হতো যেটা পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত সরাঘাট থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ৩৬৬কিলোমিটার এর দূরত্ব, নর্থ বেঙ্গল রেলওয়ের মিটারগেজ লাইনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করা হতো।
Sealdah Station History

পদ্মা নদীর ওপারে ১.৮কিলোমিটার দীর্ঘ লম্বা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ,১৯১২সালে তৈরি করা হলে,১৯২৬সালে এই সেতুর উত্তরে মিটার গেজ সেকশন টি ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়, এর ফলে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি রুটটি পুরোটাই ব্রডগেজ হয়ে ওঠে।তখন এই দার্জিলিং মেলের রুট এইরকম ছিল-কোলকাতা(বর্তমান নাম-শিয়ালদহ),রানাঘাট,(ভেড়ামারা,হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, ঈশ্বরদী, সান্তাহার, হিলি, পার্বতীপুর, নীলফামারী - এই প্রতিটি স্টেশন বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত), হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি।দার্জিলিং মেল ভারত বিভাগের আগে থেকেই এই রুটে চলাচল করতো, এমনকি ভারত বিভাগের পরেও কিছু বছর এই রুটেই চলাচল করেছে।এই রুটে ট্রেনটি এই জন্য চসলানো হতো কারণ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর কলকাতা কে শিলিগুড়ির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে বা বিহার জুড়ে গঙ্গার ওপরে কোনো ব্রিজ ছিল না,. তবে শিলিগুড়ি অবধি একটি সাধারণত গ্রহণযোগ্য রুট ছিল সাহিবগঞ্জ লুপ এর মাধ্যমে সাকরিগালি অবধি এবং কখনও কখনও সাহিবগঞ্জ ঘাট অবধি| ফেরি করে গঙ্গা পার করে মনিহারী ঘাট।



 তারপর মিটার গেজ এ কাটিহার এবং বার্সই এর মাধ্যমে কিষণগঞ্জ এবং অবশেষে ন্যারো গেজ এ শিলিগুড়ি। এরপর ১৯৬০এর দশকের প্রথম দিকে যখন ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল, তখন আর একটি আমূল পরিবর্তন করা হয়, ভারতীয় রেল কলকাতা থেকে একটি নতুন ব্রডগেজ রেল লিংক তৈরি করে যেটি শিলিগুড়ি টাউনের দক্ষিণ দিকে একটি গ্রীনফিল্ড সাইটে একটি সম্পূর্ণ নতুন ভাবে ব্রডগেজ স্টেশনের নির্মাণ করা হয় যেটির নাম নিউ জলপাইগুড়ি, ১৯৭১সালে ফারাক্কা সেতুটি তৈরি হয়ে যাবার পর দার্জিলিং মেল এখন যে রুটে চলাচল করছে এর পর থেকে দার্জিলিং মেল হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি লাইন বেবহার করে আসছে। (বর্তমানে দার্জিলিং মেল-শিয়ালদহ থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত চলাচল করে)
Darjeeling Mail Time Table 1941


দার্জিলিং মেল শিয়ালদহ থেকে প্রতিদিন রাত্রি-১০:০৫মিনিটে ছেড়ে ৬৩০কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পরের দিন সকাল ১০:০০মিনিটে হলদিবাড়ি পৌঁছায়।

বিগত ১৪৫বছর ধরে এই কিংবদন্তি ট্রেনটি আজও নিরন্তন যাত্রী পরিষেবা দিয়ে চলেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন