মাত্র ৩০০ জন স্পার্টার সৈন্য নিয়ে রাজা লিওনাইডাস যখন গ্রীসকে রক্ষা করতে পারস্যের রাজা জার্ক্সিস এবং তার ১০ লাখের সেনাবাহিনীর সামনে দাড়িয়েছিলো, তখন জার্ক্সিস তাকে সুযোগ দিয়েছিলো আত্মসমর্পণ করবার। লিওনাইডাস রাজি হয়েনি। জার্ক্সিস বলেছিলো - তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। নির্মূল হয়ে যাবে। তোমাদের কোন চিহ্নও বাকি থাকবে না। একটা পাখি বা একটা পাথরও তোমাদের সাক্ষ্য বহন করবে না। তোমাদের অস্তিত্ব বলে কোন কিছু থাকবে না এই জগতে।
লিওনাইডাস বলেছিলো - থাকবে। মানুষের মনে থাকবে। তাদের মনে থাকবে যে ৩০০ জন তোমার ১০ লাখ সেনার সামনে লড়েছিলো। বহু বহু যুগ পরে, যখন এই পৃথিবীতে আমি বা তুমি কেউই থাকবো না, তখনও মানুষ আমাদের ৩০০ জনের কথা মনে রাখবে।
বোলপুরে শিবপুর মৌজার অন্তর্গত ২৯৪ একর জমি পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম অধিগ্রহন করেন ২০০১ এবং ২০০২ সালে বিভিন্ন পর্যায়। এই জমি হস্তান্তর করা হয় শিল্প স্থাপনের জন্যে। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৫ বছর। সেখানে শিল্প স্থাপন হয়নি।
বর্তমান সরকার ঠিক করেছেন, সেখানে আবাসন প্রকল্প করবেন। বর্তমান সরকারের আধুনিক বিশ্ববীক্ষাতে শিল্প মানে আবাসন প্রকল্প হতেই পারে। যেমন তারা ইনফোসিসকে দেওয়া জমিতেও তাই করতে চান। কিন্তু ওই গ্রামের মানুষগুলো কিঞ্চিত প্রাচীনপন্থী বলেই হয়তো তারা বর্তমান সরকারের এই মহান উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে পারেননি।
তাই ওই গ্রামের মানুষরা আন্দোলন শুরু করেছেন। ওনাদের দাবিগুলো খুবই সামান্য। শিল্পের জন্যে নেওয়া জমিতে শিল্পই হোক। আর শিল্প না হলে সেই জমি আবার ক্ষতিপূরন সহ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। শিল্পের জন্যে অধিগৃহণ করা জমিতে ফ্ল্যাটবাড়ি তুলে প্রমোটার, সাপ্লায়ার আর রিয়েল এস্টেট চোরপোরেটদের রমরমায় সামিল হতে তাদের অসুবিধে আছে।
কিন্তু বর্তমান সরকার এই অন্যায় দাবি মেনে নেবে কেন? তারা সর্বশক্তিমান, ইশ্বরের মতন আরকি, আর ইশ্বর সমালোচনা সইতে পারে না। আর এতো সমালোচনা নয়, সরাসরি বিদ্রোহ! তাই মাঠে নেমেছেন বাংলার নতুন মূক্তিসূর্য অনুব্রত মন্ডল। সামরিক কায়দায় তিনি তার ক্র্যাক ব্যাটেলিয়নদের দিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘিরে সেখানে মারধোর শুরু করেছেন। সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার। মানে একটা সংখ্যার লোককে পেটালেই বাকিরা চুপ করে যাবে। অনুব্রত মন্ডলের সামরিক স্ট্র্যাটেজি দেখলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বড় বড় জেনারেলরা লজ্জা পেতে পারেন। জার্মান আর্মি প্রথমে কোন একটি অঞ্চল আক্রমন করে সেখানে আধিপত্য কায়েম করতো। তারপর তাদের ভূমিকা শেষ। এরপর ঢুকতো এস এস। এস এসের ইউনিটরা সেই অঞ্চল ধরে ধরে সিভিলিয়ানদের আস্তে আস্তে কাবু করতো, প্রতিরোধে নামগন্ধ মিটিয়ে দিতো। একই কায়দায় শিবপুরে প্রথম ঢুকছে পুলিশ। তারপর অনুব্রতর ক্র্যাক ব্যাটেলিয়ন।
কিন্তু বোকা গ্রামবাসীরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়না। এরা তার পরেও সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। আজকের সভায় যখন অনুব্রতর বাহিনী আক্রমন করে, কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়, তখন তাদেরকে ধাওয়া করে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অনুব্রত প্রেসে হুংকার দিয়েছেন - এই ঝামেলা না থামলে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এবং তা শুরু হবে কালকে থেকেই।
আমরা জানি, এই লড়াই অসম লড়াই। পুলিশ এবং অনুব্রতর বাহিনীর সামনে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধ না টেকবার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ র এই বিশ্বে এই বাস্তবকে মেনে নিয়েই আমরা বেচে আছি, থাকবো। কিন্তু আমরা তো একটা কাজ করতেই পারি।
মনে রাখা। আমরা মনে রাখবো, কতগুলো অচেনা অজানা সাধারন লোকও এই অসম লড়াই লড়েছিলো। প্রতিরোধ করেছিলো।
বিশ্বাস করুন, একদিন অনুব্রত থাকবে না। মমতা থাকবে না। মোদীও থাকবে না। কিন্তু থেকে যাবে এই মানুষগুলোর লড়াইয়ের স্মৃতি। কারন আমরা মনে রাখবো। আমাদের মনে রাখতেই হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন