সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭

ধর্মঘট ~ আর্কাদি গাইদার

শাবানা, দিল্লী
==========

"নোটবন্দী আর জিএসটি, দুটোই আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের গ্রাম মুস্তাফাবাদের ৫০০ জন, যার মধ্যে আমি আর আমার স্বামীও রয়েছি, একজন কন্ট্র‍্যাক্টরের সাথে কাজ করতাম, কোম্পানীগুলোর জন্যে কাপড় সেলাই করে। সেলাই মেশিন কোম্পানি দিতো আর কনট্র‍্যাক্টর জনপ্রতি দিনে ১৫০ টাকা দিতো। এই জিএসটি কি সেটা আমি বুঝি না, কিন্তু যবে থেকে লাগু হয়েছে, আমরা সবাই কাজ হারিয়েছি। তিনমাস ধরে কোম্পানিগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কন্ট্র‍্যাক্টর জানিয়েছে তার হাতে কোন কাজ আসছে না।"

শিবশংকর বন্দোপাধ্যায়, এল আই সি এজেন্ট, চূঁচুড়া
==========================

"এল আই সি কে ধ্বংস করবার প্রক্রিয়া মনমোহন সিং শুরু করেছিলেন, মোদী এসে তাকে তরান্বিত করেছেন। এল আই সি'র নিজস্ব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, আর সরকার নিজের স্টেক বিদেশী কোম্পানিদের বেচে দেওয়ার ফিকির করছে। এই গোটা দেশের পরিকাঠামো - রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ তৈরিতে এল আই সি'র লাভ্যাংশের ভূমিকা বিশাল। এল আই সি'র বর্তমান ভ্যালুয়েশন ২৪ লাখ কোটি টাকা। এটাকে বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দিলে কার স্বার্থরক্ষা হবে? এই বেসরকারি মালিকরাই ব্যাংকগুলোর কাছে ৮.৫ লাখ কোটি টাকা ঋন নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। তার থেকে আমাদের নজর ঘোরাতে প্রথমে এলো নোটবন্দী, তারপর জিএসটি। 
এই জিএসটির জন্যে সিংগেল প্রিমিয়াম পলিসিতে এল আই সি'র পলিসি হোল্ডারদের ১.৮% অতিরিক্ত কর দিতে হচ্ছে। দেশজুড়ে আমাদের পলিসির বিক্রি কমছে।"

লক্ষনীয়া দেবী, বিহার
===============

" আমি আর আমার বন্ধুরা নালন্দা থেকে এসেছি। আমরা সরকারি স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করি। আমরা কাজ করি ১২ মাস কিন্তু আমাদের মাইনে আসে ১০ মাসের। নোটবন্দীর সময় আমাদের স্কুলে রেশন আসা বন্ধ হয়ে যায়। আমি অশিক্ষিত, জিএসটি মানে বুঝি না। কিন্তু দেখছি যবে থেকে এটা লাগু হয়েছে, আমাদের মিড-ডে মিলের আনাজ আর সবজির পরিমান কন্ট্র‍্যাক্টর কমিয়ে দিয়েছে। আগে মাঝেমধ্যে ডিম আর ফল আসতো, সেগুলোও আর আসে না। কন্ট্র‍্যাক্টরকে নালিশ জানালে বলে জিএসটির পরে এর বেশি দিলে তার লস হবে। বাচ্চারা কম খেলে সেটা তার মাথাব্যাথা না।"

শত্রুঘ্ন কুমার, উত্তর প্রদেশ
==================

"জিএসটি আমাদের শেষ করে দিয়েছে। আমি গাজিয়াবাদে একটি ছোট কাপড়ের মিলে চাকরি করতাম। জিএসটির আগে আমরা ১০০০০ টাকা মাইনে পেতাম, এখন সেটা কমে ৭৫০০ হয়ে গেছে। আমার সন্তানদের স্কুল ছাড়িয়ে দিয়েছি, গ্রামেও আর টাকা পাঠাতে পারি না। মালিক বলেছে যতদিন না জিএসটি পুরোপুরি ঠিকঠাক বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে এর বেশি মাইনে দিতে পারবে না। তাও আমার চাকরিটা আছে, অনেকের তো সেটাও চলে গেছে। 
আসলে নোটবন্দীর পরে আমাদের ক্যাশে মাইনে বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক একাউন্ট তো গ্রামে, তাই ব্যাংকে যে মাইনে আসছিলো তা তুলতে পারিনি, ধার করে চালিয়েছি। এখনো সেই ধার শোধ করছি, তাই অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।"

সারবান কুমার, হরিয়ানা
=================

"আমি এখানে এসেছি দিনমজুরদের নূন্যতম বেতনবৃদ্ধির দাবিতে। আমি নির্মাণ শ্রমিক, দিনে ২০০ টাকা পাই। আমি চাই এটা নূন্যতম ৭০০ টাকা হোক। এর কমে আজকাল সংসার চালানো যায় না। এমনিতেই নোটবন্দীর পরে নির্মাণশিল্পে কাজ পেতে খুব কষ্ট হয়। এর বাইরে আমরা যে ইটভাটায় কাজ পেতাম, সেগুলোও সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মাসে ১০ দিন কাজ পেতেও কষ্ট করতে হয়। 
আগে আমরা গ্রামে ক্ষেতে মজুরির কাজ করতাম খারাপ সময়ে। এখন সেই কাজও পাওয়া যায় না, চাষীদের অবস্থা খুব খারাপ, ওরা বলছে চাষে আর প্রফিট নেই।"

হেমলতা, কেরালা
============

"আমি একজন অংগনওয়াড়ি কর্মী। আমরা ৫০০০ জন এই ধর্ণায় এসেছি। আমাদের এখন মাসে ১০০০০ টাকা দেওয়া হয়। এই সরকার আসবার পরে আমাদের জন্যে বাজেটে নতুন কোন বরাদ্দ হয়নি। আমরা চাইছি আমাদের নূন্যতম বেতন ১৮,০০০ টাকা করা হোক, এবং এর সাথে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের মতনই ছুটি আর বোনাসের সুযোগ সুবিধে দেওয়া হোক। "

যাদের জবানবন্দী ওপরে লিপিবদ্ধ করলাম, তারা এবং দেশের আরো কয়েক লাখ শ্রমিক মিলে গত সপ্তাহে তিনদিন ধরে দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রীটে ধর্ণাতে বসেছিলো। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন স্বাধীন ফেডারেশনের ডাকে। 

দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রীটে সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক লাখ শ্রমিকের লড়াইয়ের ঘোষনা, কোন টিভি বা খবরের কাগজ আপনাকে দেখিয়েছে? আপনি জানতে পেরেছেন যে দেশের রাজধানীতে এইরকম বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো?
না জানতে পারেননি। কারন যাদের দায়িত্ব আপনাকে জানানোর, তারা মনে করেছে হয়তো এটা আপনাকে জানানো অতটা গুরুত্বপূর্ন না। তার মানেই এই মিডিয়া সবাই সরকারের দালাল? একদমই না।সরকারের বিরুদ্ধে অন্য যে বিভিন্ন ইস্যুতে লড়াই চলছে, যেমন ধর্ম, বাকস্বাধীনতা, লিঙ্গ, জাত, খাদ্যভাস, ইত্যাদি, এই লড়াইতে সবসময়েই এই মিডিয়াদের পাশে পাবেন। কিন্তু অর্থনীতির প্রশ্ন এলেই দেখবেন এনারা  ঘুমিয়ে পড়েন। কেন বলুন তো? কারন শ্রেনী। শ্রেনী বড়ই বিষম বস্তু। তাই জিগ্নেশ মেওয়ানিকে নিয়ে খবরের কাগজগুলো আর্টিকেল লিখবে, আপনাকে জানাবে সে দলিতদের অধিকারের জন্যে লড়ছে, কিন্তু তার প্রধান দাবি যে দলিতদের মধ্যে এক্ষুনি ভূমিবন্টন করা হোক, সেটা আপনাকে জানতে দেওয়া হবে না। আপনি নারীর অধিকার, স্বাধীনতা, সুরক্ষা নিয়ে মাঠে নামুন, টেলিগ্রাফ আপনার পাশে ঝাপিয়ে পড়বে, আপনি খাদ্যের স্বাধীনতা এবং ধর্মাচরণের স্বাধীনতা নিয়ে মিছিল করুন, এনডিটিভি আপনাকে এক ঘন্টার কভারেজ দেবে। কিন্তু আপনি যদি শ্রমিকের অধিকারের জন্যে ট্রেড ইউনিয়নের লড়াইয়ের কথা বলেন, তখন দেখবেন, এনারা খুব রেগে গেছেন। 

কারন ওই একটাই, শ্রেনী। 

ওই ওরা যেটা বোঝে, আমরাও সেটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবো, ততই ভালো। আসল লড়াইটা মোদীকে সরিয়ে রাহুল কে জেতানো না। আসল লড়াইটা ২০১৯ বা ২০২১ এর না। এগুলো একেকটা battle. আসল লড়াইটা war. শ্রেনী যুদ্ধ।  আজকে মোদীর বিরুদ্ধে যাদের পাশে পাচ্ছেন, এই টেলিগ্রাফ, এনডিটিভি, ইত্যাদি, আসল লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তারা কিন্তু দিক বেছে নিতে ভুল করবে না। আপনিও যেন ভুল না করেন। 

যেমন করেননি ওই কয়েক লাখ শ্রমিক। ওনারা ঘোষনা করেছেন, এর পরেই বাজেট ঘোষনার আগেই ওনারা দেশজুড়ে 'জেল ভরো' আন্দোলন শুরু করবেন। এবং তারপরেও তাদের দাবী না মানা হলে তারা লাগাতার ধর্মঘটের দিকে এগোবেন। মানে একদিনের সাধারন ধর্মঘট না। সমস্ত দাবী না মানা অবধি দেশজুড়ে লাগাতার ধর্মঘট। যা শেষবার এমার্জেন্সির সময় হয়েছিলো। 
এই লড়াই আসল লড়াই। এই লড়াই প্রধান লড়াই। এই লড়াই পবিত্র লড়াই। এখানে নিরপেক্ষ থাকবার অবকাশ নেই। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই লড়াইতে আপনি কোনদিকে থাকবেন।শাবানা, দিল্লী
==========

"নোটবন্দী আর জিএসটি, দুটোই আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের গ্রাম মুস্তাফাবাদের ৫০০ জন, যার মধ্যে আমি আর আমার স্বামীও রয়েছি, একজন কন্ট্র‍্যাক্টরের সাথে কাজ করতাম, কোম্পানীগুলোর জন্যে কাপড় সেলাই করে। সেলাই মেশিন কোম্পানি দিতো আর কনট্র‍্যাক্টর জনপ্রতি দিনে ১৫০ টাকা দিতো। এই জিএসটি কি সেটা আমি বুঝি না, কিন্তু যবে থেকে লাগু হয়েছে, আমরা সবাই কাজ হারিয়েছি। তিনমাস ধরে কোম্পানিগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কন্ট্র‍্যাক্টর জানিয়েছে তার হাতে কোন কাজ আসছে না।"

শিবশংকর বন্দোপাধ্যায়, এল আই সি এজেন্ট, চূঁচুড়া
==========================

"এল আই সি কে ধ্বংস করবার প্রক্রিয়া মনমোহন সিং শুরু করেছিলেন, মোদী এসে তাকে তরান্বিত করেছেন। এল আই সি'র নিজস্ব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, আর সরকার নিজের স্টেক বিদেশী কোম্পানিদের বেচে দেওয়ার ফিকির করছে। এই গোটা দেশের পরিকাঠামো - রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ তৈরিতে এল আই সি'র লাভ্যাংশের ভূমিকা বিশাল। এল আই সি'র বর্তমান ভ্যালুয়েশন ২৪ লাখ কোটি টাকা। এটাকে বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দিলে কার স্বার্থরক্ষা হবে? এই বেসরকারি মালিকরাই ব্যাংকগুলোর কাছে ৮.৫ লাখ কোটি টাকা ঋন নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। তার থেকে আমাদের নজর ঘোরাতে প্রথমে এলো নোটবন্দী, তারপর জিএসটি। 
এই জিএসটির জন্যে সিংগেল প্রিমিয়াম পলিসিতে এল আই সি'র পলিসি হোল্ডারদের ১.৮% অতিরিক্ত কর দিতে হচ্ছে। দেশজুড়ে আমাদের পলিসির বিক্রি কমছে।"

লক্ষনীয়া দেবী, বিহার
===============

" আমি আর আমার বন্ধুরা নালন্দা থেকে এসেছি। আমরা সরকারি স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করি। আমরা কাজ করি ১২ মাস কিন্তু আমাদের মাইনে আসে ১০ মাসের। নোটবন্দীর সময় আমাদের স্কুলে রেশন আসা বন্ধ হয়ে যায়। আমি অশিক্ষিত, জিএসটি মানে বুঝি না। কিন্তু দেখছি যবে থেকে এটা লাগু হয়েছে, আমাদের মিড-ডে মিলের আনাজ আর সবজির পরিমান কন্ট্র‍্যাক্টর কমিয়ে দিয়েছে। আগে মাঝেমধ্যে ডিম আর ফল আসতো, সেগুলোও আর আসে না। কন্ট্র‍্যাক্টরকে নালিশ জানালে বলে জিএসটির পরে এর বেশি দিলে তার লস হবে। বাচ্চারা কম খেলে সেটা তার মাথাব্যাথা না।"

শত্রুঘ্ন কুমার, উত্তর প্রদেশ
==================

"জিএসটি আমাদের শেষ করে দিয়েছে। আমি গাজিয়াবাদে একটি ছোট কাপড়ের মিলে চাকরি করতাম। জিএসটির আগে আমরা ১০০০০ টাকা মাইনে পেতাম, এখন সেটা কমে ৭৫০০ হয়ে গেছে। আমার সন্তানদের স্কুল ছাড়িয়ে দিয়েছি, গ্রামেও আর টাকা পাঠাতে পারি না। মালিক বলেছে যতদিন না জিএসটি পুরোপুরি ঠিকঠাক বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে এর বেশি মাইনে দিতে পারবে না। তাও আমার চাকরিটা আছে, অনেকের তো সেটাও চলে গেছে। 
আসলে নোটবন্দীর পরে আমাদের ক্যাশে মাইনে বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক একাউন্ট তো গ্রামে, তাই ব্যাংকে যে মাইনে আসছিলো তা তুলতে পারিনি, ধার করে চালিয়েছি। এখনো সেই ধার শোধ করছি, তাই অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।"

সারবান কুমার, হরিয়ানা
=================

"আমি এখানে এসেছি দিনমজুরদের নূন্যতম বেতনবৃদ্ধির দাবিতে। আমি নির্মাণ শ্রমিক, দিনে ২০০ টাকা পাই। আমি চাই এটা নূন্যতম ৭০০ টাকা হোক। এর কমে আজকাল সংসার চালানো যায় না। এমনিতেই নোটবন্দীর পরে নির্মাণশিল্পে কাজ পেতে খুব কষ্ট হয়। এর বাইরে আমরা যে ইটভাটায় কাজ পেতাম, সেগুলোও সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মাসে ১০ দিন কাজ পেতেও কষ্ট করতে হয়। 
আগে আমরা গ্রামে ক্ষেতে মজুরির কাজ করতাম খারাপ সময়ে। এখন সেই কাজও পাওয়া যায় না, চাষীদের অবস্থা খুব খারাপ, ওরা বলছে চাষে আর প্রফিট নেই।"

হেমলতা, কেরালা
============

"আমি একজন অংগনওয়াড়ি কর্মী। আমরা ৫০০০ জন এই ধর্ণায় এসেছি। আমাদের এখন মাসে ১০০০০ টাকা দেওয়া হয়। এই সরকার আসবার পরে আমাদের জন্যে বাজেটে নতুন কোন বরাদ্দ হয়নি। আমরা চাইছি আমাদের নূন্যতম বেতন ১৮,০০০ টাকা করা হোক, এবং এর সাথে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের মতনই ছুটি আর বোনাসের সুযোগ সুবিধে দেওয়া হোক। "

যাদের জবানবন্দী ওপরে লিপিবদ্ধ করলাম, তারা এবং দেশের আরো কয়েক লাখ শ্রমিক মিলে গত সপ্তাহে তিনদিন ধরে দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রীটে ধর্ণাতে বসেছিলো। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন স্বাধীন ফেডারেশনের ডাকে। 

দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রীটে সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক লাখ শ্রমিকের লড়াইয়ের ঘোষনা, কোন টিভি বা খবরের কাগজ আপনাকে দেখিয়েছে? আপনি জানতে পেরেছেন যে দেশের রাজধানীতে এইরকম বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো?
না জানতে পারেননি। কারন যাদের দায়িত্ব আপনাকে জানানোর, তারা মনে করেছে হয়তো এটা আপনাকে জানানো অতটা গুরুত্বপূর্ন না। তার মানেই এই মিডিয়া সবাই সরকারের দালাল? একদমই না।সরকারের বিরুদ্ধে অন্য যে বিভিন্ন ইস্যুতে লড়াই চলছে, যেমন ধর্ম, বাকস্বাধীনতা, লিঙ্গ, জাত, খাদ্যভাস, ইত্যাদি, এই লড়াইতে সবসময়েই এই মিডিয়াদের পাশে পাবেন। কিন্তু অর্থনীতির প্রশ্ন এলেই দেখবেন এনারা  ঘুমিয়ে পড়েন। কেন বলুন তো? কারন শ্রেনী। শ্রেনী বড়ই বিষম বস্তু। তাই জিগ্নেশ মেওয়ানিকে নিয়ে খবরের কাগজগুলো আর্টিকেল লিখবে, আপনাকে জানাবে সে দলিতদের অধিকারের জন্যে লড়ছে, কিন্তু তার প্রধান দাবি যে দলিতদের মধ্যে এক্ষুনি ভূমিবন্টন করা হোক, সেটা আপনাকে জানতে দেওয়া হবে না। আপনি নারীর অধিকার, স্বাধীনতা, সুরক্ষা নিয়ে মাঠে নামুন, টেলিগ্রাফ আপনার পাশে ঝাপিয়ে পড়বে, আপনি খাদ্যের স্বাধীনতা এবং ধর্মাচরণের স্বাধীনতা নিয়ে মিছিল করুন, এনডিটিভি আপনাকে এক ঘন্টার কভারেজ দেবে। কিন্তু আপনি যদি শ্রমিকের অধিকারের জন্যে ট্রেড ইউনিয়নের লড়াইয়ের কথা বলেন, তখন দেখবেন, এনারা খুব রেগে গেছেন। 

কারন ওই একটাই, শ্রেনী। 

ওই ওরা যেটা বোঝে, আমরাও সেটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবো, ততই ভালো। আসল লড়াইটা মোদীকে সরিয়ে রাহুল কে জেতানো না। আসল লড়াইটা ২০১৯ বা ২০২১ এর না। এগুলো একেকটা battle. আসল লড়াইটা war. শ্রেনী যুদ্ধ।  আজকে মোদীর বিরুদ্ধে যাদের পাশে পাচ্ছেন, এই টেলিগ্রাফ, এনডিটিভি, ইত্যাদি, আসল লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তারা কিন্তু দিক বেছে নিতে ভুল করবে না। আপনিও যেন ভুল না করেন। 

যেমন করেননি ওই কয়েক লাখ শ্রমিক। ওনারা ঘোষনা করেছেন, এর পরেই বাজেট ঘোষনার আগেই ওনারা দেশজুড়ে 'জেল ভরো' আন্দোলন শুরু করবেন। এবং তারপরেও তাদের দাবী না মানা হলে তারা লাগাতার ধর্মঘটের দিকে এগোবেন। মানে একদিনের সাধারন ধর্মঘট না। সমস্ত দাবী না মানা অবধি দেশজুড়ে লাগাতার ধর্মঘট। যা শেষবার এমার্জেন্সির সময় হয়েছিলো। 
এই লড়াই আসল লড়াই। এই লড়াই প্রধান লড়াই। এই লড়াই পবিত্র লড়াই। এখানে নিরপেক্ষ থাকবার অবকাশ নেই। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই লড়াইতে আপনি কোনদিকে থাকবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন