সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২

চলে গেলেন মহম্মদ ইলিয়াস ~ শতদ্রু দাস ও সাহেবুল হক

কমরেড মহম্মদ ইলিয়াস। নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বাম বিধায়ক মহম্মদ ইলিয়াস।

কুলাঙ্গার শঙ্কুদেব পান্ডাকে মনে আছে? তৎকালীন তৃণমূল নেতা, দামাল ছেলে৷ নন্দীগ্রামের বাম বিধায়ক কমরেড ইলিয়াসকে ঘুষের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয়। যদিও পরবর্তী সময়ে ইলিয়াস নির্দোষ প্রমাণিত হন। কিন্তু নির্দোষ প্রমাণ হতে হতে ইলিয়াসের জীবনে চলে আসে বড়সড় পরিবর্তন।

পরিকল্পনা করে বিধায়কের পকেটে ১০ হাজার টাকা গুঁজে দেয় শঙ্কু। সেই অবস্থায় ছবি তুলে নেয়৷ যদিও ছবিতে দেখা গিয়েছিল প্রথমে ইলিয়াস বাধা দিয়েছিলেন। বিধানসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। বিধায়ক পদ, এমনকী দলের সদস্য পদও ছেড়ে দিতে হয় ইলিয়াস মহম্মদকে।

'ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।' ইলিয়াসকে যারা চক্রান্ত করে ফাঁসাতে চেয়েছিল সেই মূল মাথা শঙ্কুদেব পাণ্ডা চিটফান্ড মামলায় গ্রেফতার হয়৷ নারদা স্টিং অপারেশনে তাকে ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা যায়। শেষপর্যন্ত জেল খাটার ভয়ে বিজেপিতে ভিড়ে যেতে বাধ্য হয় শঙ্কু। সেই গোয়ালঘরই এখন তার বর্তমান ঠিকানা৷

নন্দীগ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস মেধাবি ছাত্র ছিলেন। গণিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক পাশ করেন। সমাজসেবার ইচ্ছে থেকেই রাজনীতিতে পা দেন। মেদিনীপুরের মানুষের জনসমর্থন পেয়ে বাম জমানায় ২০০১ সালে এবং ২০০৬ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন।

অনেক অভিমান নিয়ে কমরেড ইলিয়াস চলে গেলেন৷ চলে গেল একটা সংগ্রামী জীবন৷ তৃণমূলের একদা প্রভাবশালী নেতা নন্দীগ্রামের আবু সুফিয়ানদের প্রাসাদের মতো বাড়িঘর৷ ইলিয়াস সেই ফুলে ফেঁপে ওঠা জীবন চাননি। শঙ্কুদেবের টাকার প্রলোভন তাঁকে ভোলাতে পারেনি৷ ক্যামেরার সামনে তোয়ালে মুড়ে টাকা নেওয়া নেতাদের মতো ছিলেন না ইলিয়াস৷ আমৃত্যু সরল-সাধারণ জীবন অতিবাহিত করেছেন৷ এমন মানুষ উন্নয়নের জমানায় বিরল।

চলে যাওয়ার দিনে লোকটার কথা তেমন কাউকে লিখতে দেখলাম না। শোকজ্ঞাপনের তেমন তোড়জোড় চোখে পড়ল না৷ মনে হল লেখা উচিত।

***********************

মহম্মদ ইলিয়াসের ওপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো তথাকথিত "সংখ্যালঘুদের মসিহা", কোনো "সাবল্টার্ন"-এর প্রতিনিধি, কোনো "দলিত অ্যাক্টিভিস্ট"-কে বলতে শুনেছেন? 

সব উপাদান কিন্তু ছিল। ইলিয়াসবাবু গরিব খেটে খাওয়া সংখ্যালঘু, যারা তাকে ফাঁসিয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছিল সেই শঙ্কু পণ্ডা, সৌগত রায়, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার, অধিকারী পরিবার – সবাই উচ্চবর্ণ হিন্দু। যারা চোরকে চোর বললে আজকাল চোরের ধর্ম আর বর্ণ টেনে এনে "উচ্চবর্ণের ষড়যন্ত্র" দেখে, তাদের কাউকে দেখেছেন কখনো কিছু বলতে? যারা ফাঁসিয়েছিল তাদের প্রত্যেককে টিভির পর্দায় এক্সপার্টের মত ঘুষ খেতে দেখেছেন, সৌগতবাবু ঠোঁটের গোড়ায় সিগারেট ঝুলিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে ঘুষদাতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ঘুষদাতার সংস্থার নামটা। মনে পড়ে? 

কেউ কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়নি। বিজেপি এ টিম এবং বিজেপি বি টিম করে দিব্য সকলেই আজ রাজনীতিতে করে কম্মে খাচ্ছে, কোনো লজ্জা শরম তাদের বা তাদের দলের কারুর নেই। কিন্তু কোনো সংখ্যালঘুদের মসিহা, কোনো "রিকশাচালক সাহিত্যিক দলিত নেতা", কোনো "ছোট প্রকাশনা" কাউকে দেখিনি বলতে যে মহাম্মদ ইলিয়াস এক দল বরাহ শাবকের ঘৃণ্য চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন।

[ সেখ সাহেবুল হক ] [ Purandar Bhat ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন