বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২০

নেতাজী ~ ত্রিদিব বাইন

বাঙালি বড়ো হয় সুভাষ বনাম গান্ধী শুনে। আর শোনে সুভাষের সেরা শত্রু নেহেরু। ঐ হারামিটাই চোরাগোপ্তায় চৌপাট করেছে নেতাজিকে।

বোধগম্য হয়না, কি করে মহাত্মাই সুভাষের নাম প্রস্তাব করেন ১৯৩৫ কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে। কি করে ৫ বছর বাদে ইলেকশনে সুভাষ পাশে পান নেহেরুকে। কি করে সুভাষ আজাদ হিন্দের দুই ব্রিগেডের নাম রাখেন 'গান্ধী ব্রিগেড' আর 'নেহেরু ব্রিগেড' ! কি করে ১৯৪৪শে গান্ধীকে "জাতির জনক" তকমা দিলেন সুভাষ।

তবে হ্যাঁ, একজন ছিলেন। ঘোষিত সুভাষ বিরোধী। গুজরাটি।যার ১৮২ মিটার ষ্ট্যাচু দেখে হাঘরে হাত্তালি সাবড়ায় ইতিহাস অশিক্ষিত কিছু সদ্য গুজরাটি ভক্ত বাঙালি ! হ্যাঁ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ১৯৩৯ এ সুভাষের কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হওয়া আটকাতে ধুতি ফুতি ঢিল করে ফ্যালা আয়রন ম্যান। ডিপ্লোম্যাসি করে দলে টেনেছিলেন গান্ধীকে। রাজেন্দ্র প্রসাদকে চিঠি লিখলেন সুভাষকে খিস্তিয়ে। বল্লেন সুভাষের প্রেসিডেন্ট হওয়া দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তারপরও যখন তার জয় আটকানো গ্যালোনা, সুভাষকে ব্যাঙ্গিয়ে বল্লেন, "সিংহরা জন্মসূত্রে রাজা হয়, সামান্য একটা জঙ্গলের নির্বাচনে জিতে নয়" ! সুভাষের প্রতি প্যাটেলের ছিলো "নীচ, বিদ্বেষ আর প্রতিহিংসা"! বলেছেন দাদা শরৎ বোস।

গান্ধী নেহেরু'র বিরুদ্ধে সুভাষ নামিয়ে, ফুরফুরে সুরসুরি দিয়ে কিছু হিন্দুত্বের গোজলে চোবানো মস্তিষ্কের দখল নেওয়া যায়। ইতিহাস বদলানো যায়না। যে ইতিহাস বলে, আজীবন হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের চাবকিয়েছেন চিত্তরঞ্জনের এই শিষ্য। ১৯৩৫ এর "ইন্ডিয়ান ষ্ট্রাগেল" বই থেকে ৪০ এর ঝাড়খণ্ড জনসভা। ছানাবড়া চোখে ১৯৪০ নাগাদ শ্যামাপ্রসাদ ডায়রিতে লিখছে 'সুভাষ যদি থাকতেন, সৃষ্টির আগেই ভাঙচুরে চুরমার হতো হিন্দু মহাসভা'! সুভাষ যখন আজাদ হিন্দ নিয়ে ইংরেজদের চামড়া গোটানোর জন্য তৈরি, আজকের শাসকের সৃষ্টিপুরুষ সাভারকার তখন ১৯৪১ এ ভাগলপুরে আহ্বান দিচ্ছেন দলে দলে হিন্দু ইংরেজদের দলে নাম লেখাক ! 
সেই কবে, ১৯৪০ এর ১২ই মে সুভাষ বলেছিলেন, "হিন্দু মহাসভাকে দেশছাড়া করুন। এরা বিশ্বাসঘাতক" ! প্রফেটিক !

আজ তার জন্মদিন। তার জীবন, তার আদর্শ, তার চেতনা সব্বাই জানে। আজ শুধু তার নাম ভাড়িয়ে ভোট চাখা ভাঁড়গুলোকে ভাঙচুর করার তাগিদ নিক বাঙালি।

1 টি মন্তব্য:

  1. ভীষণ প্রাসঙ্গিক।এই ধরণের আরো লেখা চাই। সাথে তথ্যসূত্র থাকলে ভালো হয়।

    উত্তরমুছুন