শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

পূর্ণেন্দু পত্রী মশাই মার্জনা করবেন ~ রৌহীন ব্যানার্জি

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

আগুন জ্বালিয়ে হোলি খেলবি বলে আমরা তোকে দিয়েছি এক ট্রেন ভর্তি করসেবক। দেদার মুসলমান মারবি বলে তুলে দিয়েছি পুরো গুজরাট। তোর রাজধর্ম পালন করতে ইচ্ছে করে বলে পাঠিয়ে দিয়েছি স্বয়ং আদবানীজীকে, কড়ি নিন্দার সাথে আশীর্বাণী পাঞ্চ করিয়ে খাইয়েছি তোকে। সমস্ত বিরোধী দল, বিরোধী জাতকে বলেছি সরে যাও, নরেন এখন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খেলা খেলবে।

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

মঞ্চে আদবাণী, মুরলী মনোহরদের সাইড করে সবার আগে বসতে দিয়েছি তোকেই। রেডিওতে সবার আগে মন কী বাত। তোর যখন উড়তে ইচ্ছে হয়েছে, হাজার কোটির বিমান দিয়েছি তোকে, সাজতে ইচ্ছে করলে দশ লাখি স্যুট। সারা পৃথিবী ঘুরে বেরিয়েছিস তুই, আমরা অনাহারক্লিষ্ট মুখে তোকে শুভযাত্রা বলেছি বারবার।

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

তুই রেডিওয় বক্তৃতা দিবি, জাতির উদ্দেশে ভাষণ, ঘন্টার পর ঘন্টা এটিএম এর লাইনে দাঁড়িয়ে তার দাম মিটিয়েছি আমরা। তুই অর্থনীতির কোমর ভেঙেছিস ইচ্ছামত, আমরা বলেছি সিয়াচেনে পাহারা দিচ্ছে সৈন্য। তুই জি এস টি র নামে ধ্বংস করেছিস ছোট ব্যবসা, আমরা বলেছি এসব দুর্নীতি দমন, দেশের জন্য ত্যাগ। তুই দুই কোটি বেকারকে পকোড়া ভাজতে বলেছিস, আমরা বুঁদ হয়েছি চপশিল্পের স্বপ্নে।

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

তিনশোর কমে তোর আসন যেন না থাকে তা নিশ্চিত করেছি আমরা। তুই একের পর এক নির্বাচিত সরকার ভাঙিয়েছিস অমিতকে দিয়ে, আমরা চাণক্য বলে চিৎকার করে পাড়া মাৎ করে দিয়েছি। তুই আখলাক, আফরাজুল, পেহলুদের খুনের পর খুন করিয়ে গেছিস, আমরা বলেছি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। উন্নাও, কাঠুয়া, লক্ষ্ণৌ, হায়দরাবাদ - তুই ধর্ষকদের আশ্রয় দিয়ে গেছিস, আমরা বলেছি বিরোধিদের ফ্রাসট্রেশন। বেকারত্ব পৌঁছেছে সর্বোচ্চ হারে, বৃদ্ধি তলানিতে, আমরা বলেছি মন্দা নয়। পেঁয়াজের দাম একশো টাকা হলে বলেছি কদিন পেঁয়াজ খাবেন না।

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

তোর বন্ধু মুকেশ, গৌতম ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি - আমরা বলেছি তুলে দাও অলাভজনক ব্যাঙ্ক। তোর প্রিয় মেহুল, নীরব, বিজয়, ললিতেরা পালিয়েছে লন্ডনে, আমরা বলেছি ফেরৎ আসবেই কালো টাকা। দাউদের টাকায় সরকার গড়তে চেয়েছিস মহারাষ্ট্রে, আমরা বলেছি ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। ভাইপো জয় লক্ষ কোটি চুরি করে হয়ে গেছে বিসিসিআই সেক্রেটারি, আমরা সৌরভ গাঙ্গুলিকে বশংবদ ভৃত্যের মত দাঁড় করিয়ে দিয়েছি পিছনে। তোর প্রিয় মোটাভাইকে দিয়েছি ক্লিনচিট - "নোবডি কিলড জাস্টিস লোহিয়া" বলে।

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

তোর জন্য বিচারবিভাগ ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে উপেক্ষা করে মান্যতা দিয়েছে ধর্মীয় "বিশ্বাস" কে। তোর জন্য বাতিল হয়ে গেছে রাফালের তদন্ত। তোর জন্য আমরা বিনা দোষে ঢুকে পড়েছি ডিটেনশন ক্যাম্পে, মুখে তুলে নিয়েছি ফলিডলের শিশি - শুধু তুই নিশ্চিন্তে সাম্প্রদায়িক তাস খেলবি বলে। তোরই জন্য মেনে নিয়েছি দেড়শো দিন বিচ্ছিন্ন থেকে কাশ্মিরে বয়ে যাবে উন্নয়নের জোয়ার। শুধু তোরই জন্য গলায় দড়ি দিতেও দ্বিধা করেননি সহস্র কৃষক।

তোকে আমরা কী দিইনি নরেন?

তোরই কথা ভেবে আমরা আজও স্বপ্ন দেখি, নাগপুর একদিন ভারতের ন্যুরেমবার্গ হবে। তোর শরীরে সোনালি গয়নার মত আদর করবে রোদ্দুর রায়ের স্বপ্ন। আচ্ছে দিন আসবেই ভারতভূমিতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন