শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

পিতৃতান্ত্রিক ধর্ষণ সংস্কৃতি ~ শতাব্দী দাস

বর্তমান ভারতে হিন্দু-মুসলিম মিলে হাতে হাত ধরে তাহলে একটি কাজই সম্পন্ন করতে পারে। ২৬ বছরের একটি মেয়ের গণধর্ষণ। তারপর পুড়িয়ে দেওয়া। এ আদিম বিকারই সাম্প্রদায়িক সমন্বয় ঘটায়, এমনকি বিজেপির ভারতেও। 

কেউ বলছেন, হায়দ্রাবাদ হজম করে ওঠা গেল না, তারপরেই রাঁচি...তারপরেই কলকাতায় কালীঘাট...এ কী! হঠাৎ গণধর্ষণের মরশুম শুরু হল নাকি? 

তাঁদের জানাই, গণধর্ষণের মরশুম বছরভর চলে, স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে। কিন্তু যেহেতু একটি নির্মম গণধর্ষণের খবর ভেসে উঠেছে, তাই এখন কিছুদিন সংবাদপত্রগুলো গণধর্ষণের খবর বেশি কাভার করবে। এমনিতে এসব রোজই ঘটে। রোজই। 

যাঁরা (ধরে নিচ্ছি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েই) হায়দ্রাবাদের মেয়েটির উপর ঘটে যাওয়া নির্মমতার গ্রাফিক বর্ণনা দিচ্ছেন, তাঁদের অনুরোধ, এটা করা বন্ধ করুন। আমরা খবরের কাগজে পড়ে নিয়েছি।  না, 'বারবার পড়ে আমার অসুস্থ লাগছে' ধরণের কোনো ব্যক্তিগত কারণে নয়। দেখা গেছিল, জ্যোতির মৃত্যুর পর যোনিতে রড-টড ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনা আরও বেশ কিছু ঘটেছিল। কে জানে,  এইবার পুড়িয়ে দেওয়াটাই ট্রেন্ড হবে কিনা! 

আর হ্যাঁ, এবার ফাঁসিবাদীরা জেগে উঠবেন৷ 'ফাঁসি দাও, লিঙ্গকর্তন করো, জনসমক্ষে কোরো' ইত্যাদি শোনা যাবে।  ধর্ষকের মানবাধিকার নিয়ে কি আমি   চিন্তিত?  না।।

 আমি শঙ্কিত, কারণ আজ যাঁরা ফাঁসি চাইবেন, তাঁদেরই কাল  রেপ জোক বলতে শুনব, রেপ রেটরিক ব্যবহার করতে শুনব। এঁরা বলবেন, ভারতের ক্রিকেট টিম তো বাংলাদেশকে রেপ করে দিল! এরা সামান্য ঝগড়া হলেই প্রতিপক্ষের মাকে চুদে দিতে চাইবেন৷ একে আমরা 'রেপ কালচার' বলি। ধর্ষণ সংস্কৃতি৷ যেখানে রেপ আসলে এতই সামান্য ঘটনা যে তাকে নিয়ে মস্করা চলে। মস্করার প্রতিবাদ  যারা করে, তারা  'ফেমিনিস্ট কিলজয়'। আমরা রেপ কালচারে বাস করি। এখানে মুড়ি মুড়কির মতো রেপ ঘটবে, এ আর আশ্চর্য কী? 

ধর্ষক এই সমাজ থেকেই স্বাভাবিক ভাবে  উদ্ভুত। তারা বহিরাগত নয়।  তারা শিং-লেজ-নখ বিশিষ্ট আজিব প্রাণী নয়। কিংবা ওরকম জন্তু আসলে সবার মধ্যেই থাকতে পারে, পিতৃতাতন্ত্রিক জলহাওয়ায় বাড়তে পারে তারা। জান্তবতার দায় হাতে গোণা কয়েকজন ধর্ষকের উপর চাপিয়ে তাদের শূলে চড়িয়ে দিলেও কাল থেকে আমি বা আমার মেয়ে  এই কারণেই নিরাপদ নই৷ আর ঠিক এই কারণেই সম্পূর্ণ ধর্ষণ সংস্কৃতির বিরোধিতা করা কর্তব্য মনে করি। এ'কারণেই স্বেচ্ছায়
 'ফেমিনিস্ট কিলজয়'। 

  কালিঘাটের ভিখারি মেয়েদুটির ধর্ষণ  যারা ঘটিয়েছে, তাদের বয়স তের ও চোদ্দ। এদের ভিতরে জন্তুকে জাগিয়ে তোলার দায় আপনি ও আপনার পিতৃতান্ত্রিক ধর্ষণ সংস্কৃতি  ঝেড়ে ফেলতে পারবে তো?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন