১# উনি যে নতুন রাস্তা টা দেখালেন সেটা হল দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির নামে মেগা প্রজেক্ট না নিয়ে সেকটার ধরে ধরে ছোট ছোট ইন্টারভেনশন নেওয়া। এবং এই সমাধানের রাস্তাটা বাস্তবে কতটা কাজ করবে সেটা আগে ছোট করে ফিল্ড ট্রায়াল এর মাধ্যমে মেপে নেওয়া। যদি সফল হয় তাহলেই সেটা লারজ স্কেলে এপ্লাই করা। যেমন ধরুন সার্বিক টিকাকরণ এর হার বৃদ্ধি। তিনটে গ্রূপ বানানো হল একই কমিউনিটিতে। একদল শুধু ভ্যাকশিন। আরেকদল মোবাইল ক্লিনিক প্লাস ভ্যাকসিন আরেকদল মোবাইল ক্লিনিক প্লাস ভ্যাকসিন প্লাস দু মুঠো মুসুরি ডাল। এবার কোন গ্রূপে টিকাকরণের হার বেশি এবং সে জন্য খরচ কত বেশি সেটা দেখা হল। এই উদাহরণটি রিয়েল লাইফ স্টাডি থেকেই দিলাম। একে বলে RCT বা রেন্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল । এটা ফার্মা কোম্পানিরা নতুন ওষুধ আবিষ্কারের সময়ে করে।
২# দরিদ্র মানুষের অর্থ সম্পদ সংগ্রহ, ব্যয় ও সঞ্চয় এর অভ্যেস বা প্রবণতা নিয়েও ওনার কাজ আছে। যেমন উনি দেখিয়ে ছিলেন যে গরিব পরিবার চেষ্টা করে তাদর্র প্রথম ছেলে সন্তান কে সমস্ত সঞ্চয় ব্যয় করে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলতে তাতে তার অন্য সন্তানদের লেখা পড়া বেশিদূর না হলেও চলবে কারণ সেই পরিবারের প্রধানের ধারণা যে তার উচ্চ শিক্ষ প্রাপ্ত বড় ছেলে একটি চাকরি জুটিয়ে সংসারের অভাব ঘোচাবে। বাস্তবে সেই আশা খুব কম সময়েই পূরণ হয়। সেজন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছাড়া গতি নেই। যে বিষয়ে বামফ্রন্ট সরকার পথিকৃৎ ছিল।
৩# গরিবের অভ্যাস নিয়ে অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডুফলোর একটি খুব ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষণ আছে। তারা দেখিয়েছিলেন যে লোকে দামি ও মুখরোচক খাবার কিনছে। বিস্বাদ কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্য কিনছে না। পুওর ইকনমিকস নামে বইয়ে ওনারা লিখছেন, "অত্যন্ত গরীব মানুষ যখন খাবারের পেছনে একটু বেশি খরচ করার সুযোগ পায়, সে আরো বেশি ক্যালরি পাওয়ার জন্য পুরো টাকাটা খরচ করে না। বরং আরেকটু ভাল খাবার জন্য, বেশি দামি ক্যালরির পেছনে খরচ করে"। তাই আর্থিক উন্নতি ঘটলেই অপুষ্টি দূর হয়ে যাবে না।
৪# বাজার অর্থনীতি নিয়েও ওনার কাজ আছে। উনি মনে করেন যে গরিবদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ালে বাজার চাঙ্গা হবে। কৃষক পেনশন, নূন্যতম মজুরি এনরেগার মজুরি বৃদ্ধি এসবের ফলে সরকারের কোষাগার থেকে যে বাড়তি টাকা টুকু যাবে তার তুলনায় বাজার বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনীতি অনেক বেশি চাঙ্গা হবে। এটার ওপর ভিত্তি করেই কংগ্রেস গত লোকসভা নির্বাচনের ইশতেহারে "ন্যায়" প্রকল্প এনেছিল। এই দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বামপন্থীদের দাবি। সারা ভারত কৃষক লংমার্চ স্মরণযোগ্য।
৫# প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে মাইগ্রেট চিপ লেবার নিয়েও ওনার কাজ আছে। উনি দেখিয়েছিলেন যে এর ফলে আমেরিকার পাকা নাগরিকদের চাকরি চলে যাওয়া, মজুরি কমে যাওয়া ইত্যাদি আশঙ্কা অমূলক।
৬# উনি যে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থ্যার গুনাগুন বিচারে নৈবয়ারতিক লাভ ক্ষতির চেয়ে অঙ্ক কষে লাভ ক্ষতির বিচারের যে স্কুল অফ থট আছে তার প্রবক্তাদের অন্যতম। প বঙ্গের অপারেশন বর্গার ফলে এফিসিয়েন্সি বেড়েছে সেটা অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন (প্রোডাকশন ২৩% বৃদ্ধি) ওনার ও মৈত্রেশ ঘটক এই যুগ্ম কাজ ছিল এটা। অর্থাৎ অপারেশন বর্গা যে কেবল চাষিদের মর্যাদা বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি করেছে তাই নয়, অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে চাঙ্গাও করেছিল।
৭# সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের নাম উল্লেখ করে জমি অধিগ্রহনের ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার জন্য জোরালো সওয়াল করেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মৈত্রেশ ঘটক, প্রণব বর্ধন সহ ন জন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ। তারা কেবল সরকারের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের ওপর জোর দিয়েছিলেন। বাজারের হাতে ওই জমি অধিগ্রহণ ছেড়ে দিলে তার ফলাফল বিপর্যয়কর হবে এই সতর্কবাতা দিয়েছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন