ডেঙ্গু তরজা থামার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। শাসকদলে যে এত বড় বড় অজানা জ্বর বিশেষজ্ঞ আছেন জানা ছিল না। আজ একজন মন্ত্রী বললেন- যে জ্বর হচ্ছে তার সব ডেঙ্গু নয়, অজানা জ্বরেও মানুষ মারা যাচ্ছে, ডাক্তার বাবুরা ভুল করে ডেঙ্গু লিখে ফেলছেন। এদেশের পেশাদার রাজনীতিকরা যে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন সে বিষয়ে আমাদের অল্পস্বল্প ধারনা ছিল কিন্তু তারা যে অবিবেচক তা আরো নতুন করে প্রতিদিন প্রমান করছেন। শুধু এই রাজ্যে নয়, গোটা দেশ জুড়েই এই অবস্থা- জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য সবরকম অপবিজ্ঞানের চাষ হচ্ছে। যারা রাজ্য আর দেশের কর্ণধার আগামী কোন একদিন তারা ক্ষমতা থেকে নির্বাসিত হবেন কিন্তু এই দেশ থাকবে। আজ যে অপবিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা আর অকর্মন্যতা ঢাকার চেষ্টা করছেন,তা কিন্তু জনমানস থেকে মুছতে অনেক সময় লেগে যাবে।
পৃথিবীর আর কোন দেশে নির্বুদ্ধিতার প্রতিযোগিতা হয় না, সাধারন মানুষের জীবনের দাম সেখানে অমূল্য। মানুষকে সেখানে মর্যাদা দেওয়া হয় এবং সরকার জনগনের ক্ষোভ প্রশমনেও আন্তরিক। এদেশের অন্যত্রও অবস্থা এত খারাপ নয়। সম্প্রতি কর্নাটকে দেখা গেল চিকিৎসকদের কথা শুনতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হাজির- তিনি চিকিৎসকদের অনেক দাবী দাওয়া মেনেও নিয়েছেন এবং প্রস্তাবিত বিলে প্রয়োজনীয় সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন। দক্ষিনের রাজ্যগুলিতে অন্তত: স্বাস্থ্যের মত গুরুতর বিষয়ে নিয়ে অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য করা থেকে রাজনৈতিক নেতারা অনেক সতর্ক। আমাদের নেতারা হ জ ব র ল সব নিয়ে বিশেষজ্ঞ। সুকুমারের ব্যকরণ সিংও সব কিছু খায় না, কিন্তু... তা যাক সেকথা।
এই রকম পরিস্থিতিতে এ রাজ্যে প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা নিয়ে সরকার যে মনোযোগ দেবে না তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এই রাজ্যে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র, নোংরা ও বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ, বেকারি, অশিক্ষা, অপুষ্টি, অনাহার ও রাজনৈতিক কুনাট্যে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কে বলবে বাঙালী একদিন সারা ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তার মেধা ও অধ্যাবসায় তাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিল। যারা শিরদাঁডায় তফাৎ নিয়ে কাব্য রচনা করছিলেন তারাও নিরাপদ দূরত্বে দাঁডিয়ে দাঁডিয়ে মজা দেখছেন। আজকাল হস্ত প্রক্ষালন করেও অনেকে পি সি সরকারের মত ম্যাজিক-দণ্ড ছোঁয়া রত্ন হয়ে যান। সুতরাং অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন নেই। একটা চার আনা নেতার মাথায় অক্সিজেন সাপ্লাই নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। অক্সিজেনের অভাবে কি হতে পারে সেই ব্যাখার আমরা চমৎকৃত হয়েছিলাম। কিন্তু সে ছিল অপবিজ্ঞান শুরুর দিনগুলির কথা, এখন সেটা ফুলে ফলে পল্লবিত হয়ে সমাজের মর্মমূলে স্থাপিত হচ্ছে। আমরা সচেতন ভাবে রাজনৈতিক কূট ক্ষুরস্যধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে চেয়েছি।তা সত্বেও যারা আমাদের অভিভাবকত্ব করবেন বলে আমরা আশা করেছিলাম তাদের অন্যায় আচরনের জন্যই প্রতিদিন পেশার উপর আক্রমণ হচ্ছে ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হচ্ছে। চিকিৎসকদের কাজ ও প্রতিদিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। এই অবস্থায় কর্নাটি চিকিৎসকদের মত ঐক্যের নজির সৃষ্টি করতে হবে। ঐক্য অমূল্য ও অসীম গুরুত্ব সহকারে তা অর্জন ও রক্ষা করা দরকার। আই এম এ (পশ্চিমবঙ্গ, রাজ্য শাখা) যদি কর্নাটি শাখার মত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিত তাহলে বোধহয় ঐক্য ঐক্য বলে এত কথা বলতে হত না। কিন্তু তারা তাদের ন্যস্ত দায়িত্ব পালন না করে সবকিছুর মধ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আর সিপিএমের ভুত দেখছেন। যদিও জানি ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, সে আসে ধীরলয়ে আপনার নিজস্ব গতিতে। ন্যায় বিচারের পথ সুগম,প্রশস্থ ও তরান্বিত করতে না পারলে কিন্তু ইতিহাসের কাছে আমরাও অপরাধী থেকে যাবো। রাজনীতির কালনেমি ভাগ নিয়ে যার ইচ্ছা কাড়াকাড়ি করুক আমরা নিজেদের পেশার সম্মান যেন রক্ষা করতে পারি আর সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারি, শুধু সেই কামনাই করতে চাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন