বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

শুয়োর ~ ডাঃ কৌস্তুভ রায়

যখন  নিজস্ব হার্লে-ডেভিডসন বাড়িতে এসেছিল তখনকার কয়েকটা কথা লিখলে বোধহয়  পাঠককুল নিশ্চয়ই বিরক্ত হবেন না। আপনারা অনেকেই জানেন, বা জানেন না, যে  হার্লে - ডেভিডসন মোটরসাইকেল আসতো মস্ত একটা পিচবোর্ডের বাক্স করে। তলায়  লোহার ফ্রেমে আটকানো মোটরসাইকেলটা থাকত, আর মস্ত পিচবোর্ডের বাক্সটা ওপরে  চাপানো থাকতো। তলার নাটবোল্টগুলো খুলে ফেললে বাক্সটা আলগা হয়ে যেত তখন দুজন  লোক ওটা ধরে তুলে বার করে নিলে মোটরসাইকেলটা দৃশ্যমান হতো। বাক্সের গায়ে  এটা সেটার সাথে একটা কথা লেখা থাকতো - ইয়োর হগ হ্যাজ অ্যারাইভড।

এবারে  আসি - হগ মানে কি? ইংরাজীতে হগ মানে হয় বুনো শুয়োর। অর্থাৎ গুগল  ট্রান্সস্লেটরের মত বাংলা করলে দাঁড়ায় - 'বাপধন, তোমার শুয়োর এসে গেছে।'  এখানে কিন্তু হগ মানে অন্য - হগ পুরো কথাটা হল - এইচ. এ. জি. মানে হার্লে  ওনারস্ গ্রুপ। অর্থাৎ আমি এখন থেকে হগ হলাম। যদিও আমার মাথায় এখনও ঢুকল না  যে গোটা গ্রুপটা কি করে একজনের বাড়িতে আসতে পারে। তা হবে বা, লিখেছে যখন -  আমেরিক্যানদের ব্যাপার স্যাপার, আদার ব্যাপারী অত জাহাজের খপর জিজ্ঞাসা  করতে নেই। কিন্তু ওটা লেখা থাকত। এটা শুনে আমার এক কাছের বন্ধু জিজ্ঞাসা  করেছিল - মানে তুই আলটিমেটলি শুযোর হলি। তখন ছিলাম রোগা ডিগডিগে, ছাতি বার  ইঞ্চি, পেট বার ইঞ্চি, কোমর বার ইঞ্চি, অর্থাৎ একদম বাচ্চা শুয়োর। এটা আরও  প্রমাণ হল যখন গোটা কলকাতা হার্লে ডেভিডসন শো রুম খুঁজেও আমার জন্য একটা  লেদার জ্যাকেট পাওয়া গেল না। অবশেষে সেটা আমেরিকা থেকে স্পেশাল করে আনাতে  হয়েছিল। এবং সাইজটা ছিল - আমেরিক্যান বাচ্চাদের বড় সাইজ।
সে যাই হোক  হার্লে নেবার পর দেখলাম আমি জাতে উঠেছি। অনেকেই যারা নাক সিঁটকে চলে যেত  আমি শেরপা কিংবা একটা পেট্রল অ্যামবাসাডার চালাই বলে, তারা গদগদ চিত্তে  আমাকে আজাদ হিন্দ ধাবায় অথবা হিন্দুস্থান হোটেলে গিয়ে বাইকার্স ব্রাদারহুডে  যোগ দেবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন - এমনকি আমি কোনোদিন লাদাখ যাইনি বলে  অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মনে করিয়ে দিলেন যে যেকোন বাইকারের জীবনে লাদাখ  রিটার্ণ ব্যাজ ঝোলানো নাকি অবশ্যকর্তব্য। এছাড়াও এপ্রান্ত ওপ্রান্ত থেকে  অনুষ্ঠানে ডাক আসতে লাগল। অনেক অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি পেছনের একটা চেয়ারে  গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে লক্ষ্য করি যে - স্টেজে গিয়ে একজন আর একজনের থেকে  দেড় ইঞ্চি বড় হবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমি অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে এটাও  লক্ষ্য করলাম আমি দাদা বা ভাই থেকে স্যার - এ উন্নীত হযেছি। (অবশ্যই  ব্যতিক্রম আছে, থাকবেই) আমি আলটিমেটলি এটা বুঝলাম যে মানুষে মোটরসাইকেল  তৈরী করে না, মোটরসাইকেলে মানুষ থুড়ি "স্যার" ওরফে শুয়োর  তৈরী করে।

কিন্তু  কি হল? আদতে আমি একটা গেঁয়ো আখাম্বা ভূত, ওরফে বর্তমানে ছোট্ট, বাচ্চা  শুয়োর - তার পেডিগ্রী যাবে কোথায়? তাই আমি আমার মত করে বাইকার্স ব্রাদারহুড  বলতে যা বুঝেছি তা লিখতে বসলাম।

"অঞ্জনা নদীতীরে চন্দনী গাঁয়ে, পোড়ো মন্দিরখানা গঞ্জের বাঁয়ে। 
জীর্ণ ফাটলধরা এককোণে তারি, অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী"
১৯৯৭  - ৯৮ সালের কথা হবে। উত্তরপ্রদেশের এক গ্রাম্য জায়গা ধরে এগোচ্ছি, ওখানকার  স্টেট হাইওয়ে, দুপাশে আমগাছের সারি, রাস্তায় ট্রাকের-বাসের-গাড়ির চাকায়  পিষ্ট হওয়া আম। গরমকাল, মে মাস, হু হু করে লু বইছে, মুখ গামছায় ঢাকা,  চম্বলের দস্যুর মতো মুখের চেহারা, এর আগে দু বার শেরপার ইঞ্জিন সিজ হয়ে  রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছিল, ঠান্ডা আর হতেই চায় না, তাও লাথিয়ে লাথিয়ে  ২০-৩০ মিনিট পর 'এস্টাট' করা গেছে। এখান থেকে নানশোনা আরও ৪৫ কিলোমিটার  ওখান থেকে রাতের আশ্রয় খেরিপুর বা খৈরীপুর আরও ৯০ কিলোমিটার। বিরক্ত  লাগছিল। ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার দেখাচ্ছে স্পিডোমিটার, যাচ্ছি বোধহয় আরও কম।  গরমে বোধহয় ওটারও মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মোটরসাইকেলে কেউ বেড়াতে আসে?  যত্তসব......
হঠাৎ একটা কড় কড় আওয়াজ করে আবার গাড়িটা বন্ধ হয়ে গেল।  ধ্যাত্তেরী। আবার সিজার? না অন্য কিছু? যাই হোক একটু ছায়া দেখে দাঁড় করালাম  বাহনকে। পিচ রাস্তার উপড়ে থেবড়ে বসলাম, ব্যাথাওয়ালা পেছনে বেশ সেঁক দেবার  মতো আরাম লাগলো।
উপরে আমগাছ, দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত  মাঠ......দিগন্তবিস্তৃত বলতে একদম যা বোঝায় ঠিক তাই। একটু দূরে রাস্তার  থেকে শ-দুই ফুট দূরে একটা ঝোপ মতো, গোটা দুই বড় গাছ, একটা জায়গা থেকে ধোঁয়া  উঠছে।
গাড়িটাকে ঠেলে নিয়ে গেলাম। বড় রাস্তা থেকে একটু হাল্কা পায়ে চলা  দাগ চলে গেছে ঝোপের দিকে। আার মনে হল ধোঁয়া মানে লোক আছে বা ছিল বা  থাকবে....ইত্যাদি প্রভৃতি।
একটা হিরো পুক মোপেড দাঁড় করানো ঝোপটার কাছে,  তার উপরে কিছু সাদা কাপড় শুকোতে দেওয়া আছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল  রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা পশ্চিমবাংলার। হিসেব করলাম মনে মনে - পশ্চিমবাংলা  থেকে মোপেড নিয়ে কেউ এতদূর আসতেই পারে না। আমি প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে  আছি কলকাতা থেকে। তার মানে কেউ এটাকে কিনে এনেছিল মল্লিকবাজার থেকে কিলোদরে  - তারপর একটু সারিয়ে-সুরিয়ে বোধহয় মাঠে আসে ক্ষেতি দেখতে। নম্বরটা বাহুল্য  হলেও রয়ে গেছে। যাই হোক চোরডাকাত না হলেই ভাল। তারপরেই মনে হল এই রে  খেয়েছে....নির্ঘাত কেউ প্রাতঃকৃত্য করতে ঢুকেছে এখানে আর  আমি....ইয়ে........
যাই হোক, একটু বসলাম মোপেডটার কাছে। একটু বাদে মনে  হল, প্রাতকৃত্য ভাল কথা...তাহলে ধোঁয়া থাকবে কেন? এই গরমে ধোঁয়া দিয়ে  মশামাছি তাড়িয়ে এই পান্ডববর্জিত জায়গায় কেউ ইয়ে করতে বসে না। যাই হোক আর  একটু এগিয়ে দেখলাম গামছা পরা একটি লোক একটা মেকশিফ্ট্ উনুন বানিয়ে একটু  চটা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে কিছু বসিয়েছে। যাই হোক বললাম....."নমস্তে,  থোড়া পিনে কা পানি হোগা?" আমার খাবার জলও তলানিতে তখন।
লোকটি বিনা বাক্যব্যয়ে একটা বোতল এগিয়ে দিল, ঘোলাটে জল, তাই সই। নেই মামার থেকে কানা মামা ভাল - কানা মামি আরও ভাল।
লোকটি ঠেঁটো হিন্দিতে বলল - "বৈঠিয়ে জারা, হাম থোড়া পিনে কা পানি লে আইই।"
খাণিকক্ষণ  বাদে ফিরে এসে পরিষ্কার বাংলা শুনলাম কানের কাছে...."কোথা থেকে আসা হচ্ছে  বাবুমশায়ের" শুনেই সাংঘাতিক শক খেলাম একটা ....বুঝলাম রেজিস্ট্রিশন নম্বরটা  যথার্থ পশ্চিমবঙ্গের, এবং মালিক ওটাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কোথাও।  কোনওরকমে বললাম "আপনি বাঙালী?" এবারে উত্তর এল - "না দাদা"। সন্দেহের চোখে  তাকালাম - নির্ভুল বাংলা উচ্চারণ, কোথাও কোন টান নেই। আবার কানে এল "এ  বাংলার শরীর নয়, তবে বাংলায় অনেকদিন ছিলাম। আপার গাড়ির চেহারা আর নম্বর  দেখে বুঝলাম আপনি বাঙালী, তাই বাঙলায় কথা বললাম। তা চললেন কোথায় আর  দাঁড়ালেনই বা কেন? এইসব জায়গায় তো কেউ দাঁড়ায় না।"
বললাম "গাড়ি খারাপ  হয়েছে.....মিস্ত্রি ডাকতে হবে না হয়তো, সাথেই যন্ত্রপাতি স্পেয়ার সব আছে।  একটু গাড়িটা ঠান্ডা হলে দেখে নিয়ে সারাব।"
খানিকক্ষণ আবার কোন কথা  নেই....গুণগুণ করে গান করতে করতে ভদ্রলোক ভাতে ফুঁ দিতে লাগলেন। অসাধারণ  গানের গলা - সম্ভবতঃ কোন ভজন হবে। একটু বাদে গুণগুণ থামিয়ে বললেন "স্কুলে  যা পড়েছিলাম তার সাথে তখন একাত্ম হতে পারি নি এখন তার মানে বুঝছি।"
উনি  হয়ত কিছু বুঝেছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি কিছুই বুঝলাম  না....একমনে গাড়িটা কি করে ঠিক করব তাই ভাবতে লাগলাম। বেলা পড়ে আসতে লাগল,  আমগাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যদেব পশ্চিমদিকে চললেন। রান্তা দিয়ে হুশ হুশ করে চলে  যাওয়া মাঝে মাঝে কোন গাড়ি ছাড়া পিনড্রপ সাইলেন্স। কান মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল।
একটু বাদে ডাক এল....."দাদা, দুটো প্রসাদ মুখে দিয়ে নিন, নুন নেই, রাগ করবেন না। আজকে ওপরওয়ালা এইরকমই মাপিয়েছেন।"
দেখি  একটা শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ছবি। বিবর্ণ হয়ে গেছে। তার সামনে একটা ছোট থালাতে  করে একটু ভাত আর শাক। পাশেই বোতলে ঠাকুরের খাবার জন্য সেই ঘোলা জল।
খুব কুণ্ঠিত হয়ে বললাম আরে না না আপনি খান ....আমি যা হোক করে চালিয়ে নেব।
হাসলেন,  বললেন "কে কাকে খাওয়ায় ভাই.....আপনি এসে গেলেন, একটু না হয় আনন্দ করেই  দুভাইয়ে খেলাম। আনন্দটাকে কেন বিসর্জন দেন দাদা?" আর কথা বাড়ানো গেল না।
খেতে  বসলাম - দুটো তোবড়ানো অ্যালুমিনিয়ামের থালা, তাতে একটু করে ভাত, আর কোন  শাকসেদ্ধ, তাতে আবার একটু সয়াবিনের বড়ি ফেলা। ভাতের যা পরিমাণ তাতে কারোরই  পেট ভরার কথা নয়। স্বাভাবিক....আমি একজনের কষ্টার্জিত খাবারে ভাগ বসিয়েছি।
খাওয়া  শেষ হবার পরে পেছনে একটা ডোবাতে গিয়ে আঁচিয়েও আসা হোল। এবারে গাড়ি খুলে  আমি খুটখাট করতে লাগলাম আর উনি চিৎপটাং হয়ে শুয়ে ঘুমাতে লাগলেন। নাক ডাকার  শব্দ আসতে লাগল। আমার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে গাড়ি পারাবত থেকে পর্বত হয়ে গোঁ  ধরে বসতে লাগল। নট নড়নচড়ন।
যখন রোগ আবিষ্কার করা গেল তখন বেলা শেষ,  দিনের আলোয় রোগের উপশমের কাজটা করতে পারলেও গাড়ি ফিট করে খেরিপুর যাওয়া  প্রায় কেন, একদমই অসম্ভব।
ভদ্রলোক জেগে উঠে বললেন "রাতে কি বানাবো  বাবাজী?" আটা আছে সাথে....।" যেন বাড়ির লোকের গলা শুনছি - "আজ রাতে কি  খাওয়া হবে?" আঁৎকে উঠে বললাম "রাতটা কি এখানে কাটাবেন?" ভদ্রলোকের গলায় কোন  তাপ উত্তাপ পাওয়া গেল না, বললেন "তা নয়তো কি? আপনাকে ফেলে রেখে আমি চলে  যাব? সেটি হবে না বাবাজী"
রাত নামল, কোটি কোটি তারার মেলা, হাওয়া দিতে  লাগল, একটু ঠান্ডা হল চরাচর, ভদ্রলোক সুমধুর গলায় গাইতে লাগলেন "খন্ডন ভব  বন্ধন জগ-বন্দন বন্দি তোমায়......" আমি চুপ করে বসে বসে শুনতে লাগলাম। নিশা  ঘন হতে লাগল, আবার গান শুরু হল - "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যতদূরে আমি  ধাই...." গান শেষ হলে বললেন...ছোটবেলায় রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছিলাম, পরে  শান্তিনিকেতনে।"
শুধু এটুকুই জানতে পেরেছিলাম ওনার সম্পর্কে....নামটাও  জানি নি, জানার মতো কৌতুহল-ও হয় নি। ফোন নম্বর তখন ভারতবর্ষে সুলভ ছিল না,  উনি পরিব্রাজক, কোন ঠিকানাও নেই....খালি মনে হচ্ছিল বেশি কথা বলে কি হবে?  আমি তো কিছুই জানি না।
রাত্রে মোটামোটা হাতে চাপা পোড়া রুটি প্রসাদ পেয়েছিলাম। তারপর চাদর বিছিয়ে মহাকাশের তলায় ঘুম।
পরের  দিনের ঘটনা সংক্ষিপ্ত - আমার গাড়ি ঠিক হয়ে যাবার পর সব গুছিয়ে নিয়ে দুজন  দুদিকে যাত্রা করলাম। যতদূর মনে আছে উনি যাচ্ছিলেন বারাণসীর দিকে। জড়িয়ে  ধরে বলেছিলেন, "দ্যাখো দেখি প্রেমময় ঠাকুরের কীর্তি, সব জায়গায় সঙ্গী  পাঠিয়ে দেন। পরে কোথাও আবার ঠিক দেখা হয়ে যাবে বাবাজী, অথবা যদি শরীর চলে  যায় আর হবে না"। বলে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে  লাগলাম .....সামান্য সংসার নিয়ে পঞ্চাশ সিসির হিরো পুক চলেছে দিগন্তের  দিকে। সাদা কাপড় দিগন্তে মিলিয়ে গেল ঝাপসা হয়ে চোখের জলের সাথে।
আজও অবধি আর দেখা হয় নি।

এরপর  যখন শুনি বাইকার্স ব্রাদারহুড জিন্দাবাদ - আজাদ হিন্দ ধাবায় গিয়ে, তখন  বুঝি আমি খরচার খাতায়......। এটা পড়ার পর আমি খুব শিওর অনেক "বাইকার" এর  মনের কথা হবে.....

হতচ্ছাড়া শুয়োর - তোমাকে আর লাদাখ যেতে হবে না, তুমি গোল্লায় অথবা জাহান্নম যেখানে খুশি যাও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন