-- হ্যালো বাবা।..
-- হ্যাঁ মা বল।
-- কি করছিলে বাবা।
-- এই একটু শুয়ে
আছি।
একটু ক্লান্ত
লাগছে তাই।
-- ও... তুমি ভাল
আছ ত
বাবা।
-- হ্যাঁ রে মা
ভাল আছি। তুই
চিন্তা করিস
না।
-- হ্যালো বাবাইরে
-- শোন না,বাবা
এখানে এখন
কারেন্ট নেই,
অন্ধকার হয়ে
আসছে। বাবা আমি জানলা
টা খুলে
তোমাকে মোবাইলে
বাইরের আওয়াজ
টা শোনাচ্ছি
দেখ ত
জেনারেটর কি
চলছে আমি
ত বুঝতে
পারছিনা।
দাঁড়াও আমি
তোমাকে শোনাচ্ছি।
(জানলা টা খুলে
ও মোবাইল
টা মেলে
ধরে বাইরে। বাবা
যদি শুনতে
পায় বাইরে
টা।
)
-- শুনতে পেলে বাবা,
চালিয়েছে?
-- নারে মা।
এখন ও
চালায় নি। একটু
ওয়েট কর
কিছু হয়ত
প্রব্লেম আছে। ঐ
জন্য দেরি
হচ্ছে।
-- বাবা জান ত
আমাদের পাশের
ব্রহ্মপুত্র কমপ্লেক্সটাতে খালি পাইপ থেকে
জল পড়ে
যায় আর
সবসময় একটা
আওয়াজ
হয়।
বাবা জান
আমি তোমার
সাথে কথা
বলতে বলতে
বাইরের বারান্দায়
এসে গেছি। দাঁড়াও
তোমাকে ঐ
জল পড়ার
শব্দ শোনাচ্ছি।
(আবার কান থেকে
সরিয়ে মোবাইল
টা মেলে
ধরে বাইরে
যেদিকে নাগাড়ে
জল পড়ে
যাচ্ছে পাশের
কমপ্লেক্সের জলের পাম্প থেকে।
)
বাবা শুনতে পেলে। বাবাইরে
এখানে আবার
বৃষ্টি নেমে
গেল।
শুনতে পেলি। আমি
ত বৃষ্টির
আওয়াজ ও
শোনালাম।
-- জলের আওয়াজ পেলাম
রে মা
কিন্তু বৃষ্টিটা
সেভাবে শুনতে
পেলাম না।
-- আচ্ছা আচ্ছা।
আসলে বাবা
মোবাইল এ
কি আর
পুর বোঝা
যাবে তাই
না। আচ্ছা
বাবা,
মা পড়তে বসতে ডাকছে।
তুমি কি
মায়ের সাথে
কথা বলবে
না পরে।
-- নানা রেখে দে
মা আমি
পরে ফোন
করে নেব।
-----------------------------------------------------------
এরকম ভাবেই আমার
সাথে আমার
মেয়ের কথা
হয়।
অনেকদিন ধরে। এভাবেই। আমার
মেয়ে আমাকে
তাঁর পৃথিবী
দেখায় হেলায়
- ফোনে কম্পিউটারে। এরকম
বৃষ্টির আওয়াজ,
সদ্য জন্মান
বেড়াল ছানা
কিভাবে ফ্ল্যাটে
ঢুকে যায়,
তাকে তাড়িয়ে
দিলে তাঁর
ডুকরে ওঠা,
কুকুর বাচ্চার
ঘুরপাক খাওয়া
তাদের মাকে
ঘিরে, পাখিদের
খেতে আসা
আমাদের বারান্দার
কার্নিশে, স্কুলে যেতে বাস স্ট্যান্ডের
গল্প, রাস্তার
ধুলোর কষ্ট,
ভাঙ্গা রাস্তায়
রিক্সাতে ও
কিভাবে ঝাঁকুনি খায় তাঁর গল্প
এ সব
ই আমি
ওর চোখ
দিয়ে শুনি
দেখি।
কিন্তু একটা ঘটনা
বা একটা
গল্পেও আমি
পাশে থাকতে
পারিনা।
আমার মেয়েকে
নিয়ে আমি
বেড়িয়ে পড়তে
পারিনা বৃষ্টি
ভেজা দুপুরে,
বলতে পারিনা
দেখ ছোট
ছোট গাছ
গুল কেমন
ভিজে চান
তোর দেখা
কুকুর বাচ্চার
মত, আর
টিনের চালের
উপর বৃষ্টি
পড়লে গরম
ঘর কেমন
ঠাণ্ডা হয়ে
যায় আর
সারা উঠনে
কিভাবে নৌকা
ছাড়া যায়,
আম বাগানে
নিয়ে গিয়ে
দেখাতে পারিনা
দেখ মা
বট হচ্ছে
বৃক্ষ আর
আম হচ্ছে
গাছ সে
যত বড়
ই হোক।
ওকে আমার দেখান হয়না কিভাবে
মিশে যায়
সাগরনদিজল, কিভাবে আকাশে গাভী চরে
মেঘের মতন
আর কিভাবেই
বা ওর
মন খারাপ
হলে সারা
দুনিয়ার মন
খারাপ হয়ে
যায়।
ওকে দেখাতে
পারিনা ঘরের
পুরনো ছাতা কিভাবে
গল্প হয়ে
যায়।
কিছুই না। কিচ্ছু
না।
----------------------------------------------------
কর্মক্ষেত্র যোগদান করতে
সহরগ্রামঘরবাসা সবকিছু ছেড়ে মানুষ চলে
যায় দূর
সহর দূর
গ্রাম দূর
রাস্তায়।
এ যেন
এক ঐতিহাসিক
সত্য, এর
থেকে আমাদের
বেরোবার উপায়
নেই।
আর শুধু
আমাদের ই
বা বলি
কি করে। মানে
এত শুধু
বাংলায় আটকে
নেই।
এক ব্যাপার
সত্যি হয়ে
আছে সমস্ত
রাজ্যে।
মধ্যপ্রদেশ যায় মহারাষ্ট্রে, কলকাতা যায়
দিল্লী দিল্লী
যায় হরিয়ানা,
উড়িষ্যা যায়
পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ যায় কর্ণাটক, কর্ণাটক
যায় মহারাষ্ট্র,
বিহার যায়
অন্ধ্রপ্রদেশ আর অন্ধ্রপ্রদেশ যায় তামিলনাড়ু।
আর কত অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে
রয়েছে চারিদিকে। দেশের
বাইরেও এর
মেলা উদাহরণ।
---------------------------------------------------------------
আমিও আজ এই ইতিহাসের
একজন হয়ে
গেছি কখন
নিজের অজান্তে।
তাই কাজ ফাঁকে, কাজ শেষে,
বাসে, ট্যাক্সিতে,
রাস্তার মোড়
বা চায়ের
চুমুকে, যেখানেই
ফোন পাই
মনে হয়
মেয়ে ফোন
করেছে।
ওর চোখে
এখনি দেখব
পৃথিবীটাকে।
আর কি ই বা করতে
পারি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন