কোথায়? তালপাটি-র খালের
জলে মুণ্ডু কেটে ভাসিয়ে দেওয়ার দিবা স্বপ্ন দেখা দেড়েল কবি আজ কোথায়? বুদ্ধদেবের
ছবির ঠোঁটে রক্তের রঙ লাগিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সাথে তুলনা করা কাক আঁকিয়ে কে দেখছিনা
যে! হাজার হাজার বাচ্চার পা চিড়ে খালের জলে ভাসিয়ে দেওয়ার গল্প বলিয়ে স্বঘোষিত
দিদি আজ চুপ কেন? গণহত্যার গল্প ফাঁদা গণমাধ্যম আর দাসানুদাস পরিবর্তন প্রিয় (বদ)বুদ্ধিজীবীরাই বা কোথায়?
চুপ আরও কেউ কেউ। ৩৪ বছরের
আন্দোলন বিমুখতায় মেদ সর্বস্ব কোনও কোনও বাম নেতাও চুপ। ‘লজ্জায় মাথা কেটে যাওয়া’
গোঁসাই মশাই ও চুপ।
ফলে গলার রগ ফুলিয়ে, মাথা
ঝাঁকিয়ে চ্যাঁচামেচিটা আমাদেরই করতে হবে। করতেই হবে কেননা, স্বজন হারানো ভিটে মাটি
ছাড়া ক্যাম্পে থাকা এক মা-এর কোলে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে একরত্তির ‘সন্ত্রাস’
(বাচ্চাটার নাম)-এর হাত ধরে কথা দিয়েছিলাম যে। বুড়ো মেনাজ দা-কে ওর ভাঙ্গা
ক্ল্যারিওনেট এর দোহাই দিয়েছিলাম যে। কেননা, খুন হয়ে যাওয়া আমার কমরেড-দের চিতার
আগুনে নিজেদেরও পোড়াতে পোড়াতে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে। ‘ক’ টাকে ‘ক’ বলার অপরাধে
আমরাও সেদিন ‘হার্মাদ’ হয়েছিলাম যে।
অতএব লড়াই চলবে। লড়াই এর
নিয়মেই সেদিন দু’পা পিছিয়ে এসেছিলাম। আজ আবার এগোনোর শুরু। আবার নতুন করে বলব
সেদিনের কথা। বলব, ‘কোন জমি অধিগ্রহণ হবেনা’- তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের
প্রতিশ্রুতি স্বত্বেও, নন্দীগ্রাম কে রাস্তা কেটে বিচ্ছিন্ন করে রাখাটা তৃণমূল তথা
ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ভুল নয়, ছিল গণ্ডগোল বাঁধানোর পরিকল্পিত প্রয়াস।
সাউদাখালি-র বিশ্বজিৎ মাইতি, সোনাচুরার ভুদেব মণ্ডল, সুদেব মণ্ডল, রবিন ভুঁইয়া,
তালডাংরার শঙ্কর সামন্ত কে খুন করাটা ওদের এলাকার মানুষদের সন্ত্রস্ত করে রাখার
পরিকল্পিত ছক ছিল। তাই পরিবারের লোকের সামনে, ভুদেব মণ্ডলকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে অথবা
শঙ্কর সামন্ত কে তলোয়ার দিয়ে চিরে জ্বলন্ত খড়ের গাদায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার বীভৎসতা।
সাধুচড়ন চট্টোপাধ্যায় এর পচে ফুলে ওঠা চোখ বেড়িয়ে যাওয়া বিকৃত দেহটা যদিও (বদ)বুদ্ধিজীবীদের
‘হাড় হিম’ করেনি, নন্দীগ্রাম-এর মানুষদের করেছিল। সিঙ্গুরের তাপসী মালিক বা সোনাচুরার সুনিতা মণ্ডল –কে ধর্ষণ করে খুন করাটা ছিল
পলিটিকাল অ্যাজেন্ডা। কামদুনি থেকে লাভপুর- সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। বেশি ট্যাঁ ফুঁ করেছ কি বাড়ির মেয়েরা
ধর্ষিতা হয়ে যাবে। ‘গুণ্ডা পোষা’ নেত্রীর গুণ্ডা কর্মীর সগর্ব হুঙ্কার- ‘কামদুনি
করে দেব’। বাচ্চা- মহিলাদের সামনে এগিয়ে সশস্ত্র কাপুরুষের দল পেছনে থেকে ১৪ই
মার্চ ২০০৭ এ যে ‘প্রতিরোধ’ গড়েছিল, তা ‘কি প্রতিরোধ করতে?’- জানা নেই। কিন্তু সি
বি আই এর চার্জশিট-এ পরিষ্কার, নেপথ্যে কারা ছিল। অভিযুক্ত ১২৯
জনের বেশীর ভাগই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। আর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া বি ডি ও,
নীতিশ কুমার দাস এখন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এর ব্যক্তিগত সচিব। কারা
মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হয়? কেনই বা
দময়ন্তী সেন-দের বদলি হতে হয় সুদূর দার্জিলিং-এ? উত্তরের অপেক্ষা রাখে না।
সবে সি বি আই এর চার্জশিট
বেরিয়েছে। সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলন-এর নামে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ৫৬ টা সংগঠন বা
তার থেকে বাছাই করা পশ্চিমবঙ্গ কৃষিজমি রক্ষা কমিটি- র ১৯টা সংগঠন আর তাদের মাথা
তৃনমূল কংগ্রেস তো আর চুপ করে বসে থাকবেনা। চুপ করে বসে থাকবেনা আমেরিকান কনসোল
জেনারেল হেনরি জার্ডিন আর তার চেলা চামুণ্ডারা। সামনে লোকসভা
নির্বাচন। কারা সরকার গড়বে জানা নেই। ফলে, এই চার্জশিট এর পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটবে
কিনা, সেটাও অজানা। শুধু কিছু প্রশ্ন, উত্তর খুঁজে বেড়াবে। আর উত্তর না পাওয়া
পর্যন্ত জারি থাকবে আমাদের লড়াই।
তোষামুদে (বদ)বুদ্ধিজীবীরা নাটুকেপনায় পটু হবেই। হাওয়া
মোরগের দল ততক্ষণ দুলবে, যতক্ষণ না তাদের কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার পাচ্ছে। সবাই তো আর তা না। সাময়িক ভুল বোঝাবুঝিতে যারা তাৎক্ষণিক পরিবর্তন
পিয়াসি হয়েছিলেন, শোনা যায়, আজ তাদের অনেকেই হাত কামড়াচ্ছেন। নিজেকে রক্তাক্ত না
করে, আর একবার রাস্তায় নামবেন কি তারা? সেটাও সময় বলবে।
আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল
লড়াই-এ পাশে থাকার। লড়ে যাওয়ার। লড়াই- সম্মিলিত আক্রমণের বিরুদ্ধে। মিথ্যাচারের
বিরুদ্ধে। মতাদর্শের জগতে হামলার বিরুদ্ধে। আজও ঘোষণা করতে দ্বিধা নেই, পাশেই আছি।
আমরা যে সময়-এর সারথি। লাল ঝাণ্ডার কসম, আজও বেঁচে আছি, আরও একটা সূর্যোদয়-এর
প্রতীক্ষায়।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন