রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯

আটকথা ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

-"বুঝলেন মিত্তিরবাবু, আজ আমি যাকে বলে, একেবারে আহ্লাদে আটখানা!" বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতে লালমোহনবাবু জানালেন। 
সকাল থেকেই ফেলুদা আজ অন্যমনস্ক, কী যেন চিন্তা করছে। মুখ না ঘুরিয়েই উত্তর দিল, "আটখানা কেন বলে, লালমোহনবাবু? সাত বা নয়খানা নয় কেন?" 
লালমোহনবাবু হতভম্ব হয়ে তপসের দিকে তাকালেন। তপসে হেসে বললো, "আপনি বসুন। সকাল থেকে ফেলুদাকে আটে পেয়েছে।" 
-আর্ট? মানে, মডার্ণ আর্ট, নাকি মার্শাল...
-আরে না না, আট সংখ্যাটা। আচ্ছা, আজ কী উৎসব বলুন তো?
এবার লালমোহনবাবু একগাল হেসে বললেন, "এটা নিশ্চিত জানি। আজ হলো গিয়ে জন্মাষ্টমী!" 
-ঠিক। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। কিন্তু উনি বেছে বেছে অষ্টমী তিথিতেই জন্মালেন কেন, বলতে পারেন? 
এবার তপসে ধুয়ো ধরলো, "মাসটাও কিন্তু অগস্ট, মানে আট নম্বর!" 
-সেটা বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে আর কিছু মিল পাচ্ছিস কি, আট আর কৃষ্ণের মধ্যে? 
-কৃষ্ণ ছিলেন দেবকীর গর্ভের অষ্টম সন্তান... 
-রাইট। আর কিছু?
কিছুক্ষণ দু'জনেই চুপচাপ। ফেলুদাই বলল "কৃষ্ণের বদলে কংস কাকে হত্যা করতে গেছিলেন, মনে পড়ে?"
তপসে বলে উঠল "মহামায়া! আট হাতের দেবী!"
-ভেরি গুড। আর কৃষ্ণের জন্মদাতা কে ছিলেন?
-বসুদেব! আরে, অষ্টবসু ছিলেন না!
-কানেকশন থাকতেই পারে! আচ্ছা, কৃষ্ণ বললেই আর কোন নামটা মনে পড়ে?
এবার লালমোহনবাবু লাফিয়ে উঠে বললেন, "এটা আমি জানি! রাধা!"
ফেলুদা হেসে বলল, "ঠিক। রে, আর ধা। দ্বিতীয় সুর, ষষ্ঠ সুর। দুইয়ে মিলে কতো হয় বলুন তো?"
দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলো, "আট!" 
ফেলুদা হেসে বলল, "আর কৃষ্ণ কে যদি বলি কৃ, সা, নি, তাহলে? সা হলো প্রথম সুর, নি হলো সপ্তম। দুইয়ে মিলে?" 
লালমোহনবাবু ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন। "এ তো সাঙ্ঘাতিক কানেকশন মশাই! যাকে বলে, যাকে বলে..."
-"আটার কোইন্সিডেন্স্‌, তাই তো? আসলে কী জানেন, আমার বিশ্বাস, এই সব পুরাণের গল্পগুলো আসলে প্রতীকী। কিন্তু কিসের প্রতীক? আট সংখ্যাটা বারবার এসে কী বোঝাতে চেয়েছে? আমরা যে সাষ্টাঙ্গে, মানে স অষ্ট অঙ্গে প্রণাম করি, তার সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে কি?" 
একটু দম নিয়ে লালমোহনবাবু বললেন, "আহা, আমি আমার পরের উপন্যাসের নাম পেয়ে গেছি!" 
ফেলুদা হেসে বলল, "কী নাম, আটেতে আটকালি?" 
-"নো স্যার, অষ্টের কষ্ট!!" 
হা-হা করে হেসে উঠলো তিনজনেই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন