শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

কলকাতার অমীমাংসিত খুনের মামলা ~ পি বিশ্বাস

ব্রিটিশ পুলিশের ইনস্পেকটর নৃপেন ঘোষ ছিল বিপ্লবী মহলে কুখ্যাত। তার অত্যাচারে বাঙালি বিপ্লবীরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। অনুশীলন সমিতির সদস্য নির্মলকান্ত রায়ের ওপর ভার পড়ে নৃপেনকে চিরকালের জন্য ধরাধাম থেকে সরিয়ে দেওয়ার।

১৯১৪ এর ১৯ জানুয়ারি, চিৎপুর রোড আর শোভাবাজার স্ট্রীট ক্রসিং এ ট্রাম থেকে নামার সময় নৃপেনকে লক্ষ্য করে ফায়ার করলেন নির্মল। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেন। তাজ্জব কি বাত, গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ল নৃপেন! মাথায় একটা ও শরীরে দুটো গুলি। এলাকা রীতিমতো জনবহুল। নির্মলকে ফায়ার করতে দেখা গেছে ফলতঃ তাকেই ধরার জন্য পাহারারত পুলিশ ও জনতা সমবেতভাবে তেড়ে গেল। সবার আগে ছুটছে অতি উৎসাহী অনন্ত তেলী। ধরতে পারলে পুরষ্কার জুটবে।
পুরষ্কার সাথে সাথেই জুটল।
পেছনপাকা অনন্তর বুকে এসে ঢোকে আরেকটি বুলেট। সেও অক্কা পেল।

নির্মলকান্ত ধরা পড়লেন পাঁচঘরা একখানি রিভলভার সমেত। অনুশীলন সমিতির আরেক বিপ্লবী প্রিয়নাথ ব্যানার্জীও এরেস্ট হলেন অকুস্থলে৷ পুলিশের অসামান্য কর্মতৎপরতায় ধন্য ধন্য পড়ে গেল। উচ্ছ্বসিত সরকারি প্রশংসায় ভেসে গেল লালবাজার। Statesman পত্রিকা নৃপেনের মৃত্যু ও অপরাধী ধরা পড়ায় যুগপৎভাবে ভারি মর্মাহত ও খুশি হয়ে লিখল:
The unfortunate Inspector was an able and honest officer whose sole fault was his faithful discharge of his duty, and his reward is to be shot down in a crowded street where any man might suppose himself to be safe. Happily, his assassin has been caught.

হাইকোর্ট জাস্টিস স্টিফেনের এজলাসে Emperor vs Nirmal Kanta মামলার শুনানী হয়। ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট নিশ্চিতভাবে জানালেন নিহত নৃপেনের দেহে প্রাপ্ত তিনটি বুলেটের একটিও নির্মলকান্তের রিভলভার হতে নির্গত হয়নি। অনন্ত তেলিকেও সে মারেনি। বহুজনসমক্ষে অনুষ্ঠিত হত্যাকান্ডে নির্মলকান্ত হাতে নাতে গ্রেপ্তার হলেও তার গুলিতে যে দুজনের কেউ খুন হয় এ নিঃসন্দেহ। প্রিয়নাথের কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছিলনা।
তাহলে হত্যাকারী কে!
ভৌতিক ব্যাপার নাকি?

এই রহস্যের মীমাংসা করতে পারেনি পুলিশ।
১ এপ্রিল ১৯১৪, জুরি ৭-২ সংখ্যাধিক্যের মতে আদালত নির্মলকান্তকে খালাস দিলেন। মুক্তি পেলেন প্রিয়নাথ ব্যানার্জি। নির্মল গুলি চালিয়েছিলেন, চালাবার চেষ্টা করেছেন কিছুই প্রমান করা যায়নি। জনতা তাকে খুনী মনে করেছে, তাড়া করে ধরেছে, সবই ঠিক। কিন্তু মেঘের আড়ালে মেঘনাদ কে ছিলেন অজানাই রয়ে গেল।

স্বাধীনতার অনেক পরে জানা যায় সেদিন ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অনুশীলন সমিতির আরেক সদস্য খগেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী। নির্মলকে ব্যর্থ হতে দেখে তিনি গুলি চালান। অব্যর্থ লক্ষ্যে ফেলে দেন প্রথমে নৃপেন ও পরে অনন্ত তেলীকে এবং ভিড়ে মিশে যান। 

খাতায় কলমে নৃপেন ঘোষ ও অনন্ত তেলীর খুনী আজো অধরা!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন