গতকালের নবান্ন অভিযানের পর থেকে বিভিন্ন মিডিয়া (যারা এতোদিন বোবা কালা হয়ে ছিলেন ) ,তারা হঠাত-ই প্রচণ্ড উত্তাজিত হয়ে উঠেছেন । গত পরশু অব্দি তাদের বক্তব্য ছিল বাংলার রাজনীতি মূলত ধর্ম ভিত্তিক । গত পরশু অব্দি ,প্রতিটি পাড়ায় প্রতিটি অঞ্চলে লাল ঝান্ডার মিছিল-মিটিং নিয়ে , বিশাল বিশাল জেলা ভিত্তিক কেন্দ্রিয় জমায়েত নিয়ে কোন খবর হয় নি । অতএব , ওদের হঠাত করে পাশ ফিরে শুতে অসুবিধা হবেই । বিজেপি- ফিজেপি যে আদতে টাকায় তৈরি হওয়া কাগুজে বাঘ , যার মনিবের নাম তৃণমুল স্বিকার করতে অসুবিধা হবেই । অতএব মানুষের জীবন জীবিকার দাবী নিয়ে তৈরি হওয়া আন্দোলন , যার একটি মৌলিক ধাপ এই নবান্ন অভিযান তা মেনে নিতে (ঢোঁক গেলা অবস্থাতেও) তাদের অসুবিধে হবে এটাই স্বাভাবিক ।সুতরাং লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যারিকেডকে, ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য দাবীর লড়াইকে ,ক্ষেতমজুরের বর্ধিত মজুরির দাবীকে , ফসলের বর্ধিত মুল্যের দাবীকে , বেকারের চাকরীর দাবিকে , শ্রমিকের লক্ আউটের বিরুদ্ধের আন্দোলনকে , বিদ্যুতের অনবরত বেড়ে চলা দাম কে এরা স্রেফ পেশী সঞ্চালনের সাথে তুলনা করবে এটাই স্বাভাবিক । আমি তাই আরও একবার নবান্ন অভিযানের মৌলিক দাবীগুলি , যার জন্য মানুষ কাল কুকুরের মতো মার খেলো- বাঘের মতো প্রতিরোধ করলো , শেয়ার করছি । না করলে ইতিহাস ক্ষমা করতো না । পড়লে পড়ুন , না পড়লে - হাল্কা আনফলো ।
আমাদের দাবি:
১। ধান কেনায় বোনাস তুলে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করো। কুইন্টাল প্রতি ২০০ টাকা বোনাস চাই। ন্যূনতম ৫০ টাকা পরিবহণ খরচ দিয়ে সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে হবে। চেক ভাঙানোর হয়রানি বন্ধ করতে নগদে ধান কিনতে হবে। প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক ক্রয়কেন্দ্র খুলতে হবে। অভাবী বিক্রির সময় ধান কেনা হলো না কেন রাজ্য সরকার জবাব দাও।
২। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ মেনে ধান, পাট ও গমের সহায়ক মূল্য স্থির করতে হবে। গম আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক তুলে দিয়ে কৃষক মারার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ কর। হিমঘরে রাজ্য কোটায় সরকারকে আলু রাখতে হবে। রাজ্য সরকারকে কুইন্টাল প্রতি ৭০০ টাকা দরে আলু কিনে চাষিদের সহায়তা করতে হবে।
৩। রবি ও বোরো চাষে বর্গাদারসহ সব কৃষককে ৮ সুদে ব্যাঙ্ক বা সমবায় ঋণ দিতে হবে। মৌজা ভিত্তিক শস্যবিমা চালু করা বর্গাদারসহ সব চাষিকে কৃষি বিমার আওতায় আনতে হবে। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি বন্ধ কর। কেরোসিনের বরাদ্দ কমানো হলো কেন — কেন্দ্রীয় সরকার জবাব দাও। ছোট-মাঝারি কৃষক ও বর্গাদারদের চাষ জমির বিদ্যুতের লাইন কাটা নয়, ভরতুকি দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং বর্গাদারদের চাষ ও ফসল তোলায় রেগা প্রকল্প চালু করতে হবে।
৪। তিস্তা প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে শেষ করতে হবে। পানীয় জলের স্বার্থে ভূগর্ভস্থ জলোত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করো। নদী, খাল, বিল সংস্কার করো। সুন্দরবনের বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না কেন রাজ্য সরকার জবাব দাও। নদী ভাঙনরোধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
৫। সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে রেগার কাজ চালু করতে হবে। রেগায় বছরে ১০০দিনের কাজ ও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি চাই। অবিলম্বে রেগার বকেয়া মজুরি, ভাতা ও অন্যান্য বকেয়া দিতে হবে। ১০০দিনের কাজসহ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে দুর্নীতির তদন্ত চাই। ৬০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে সব কৃষককে মাসে ৩,০০০ টাকা পেনশন দিতে হবে।
৬। কোনো গরিব মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। খাদ্য সুরক্ষা থেকে গরিব মানুষের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে কেন — রাজ্য সরকার জবাব দাও। খাদ্য সুরক্ষার বরাদ্দ কমানো বা অনিয়মিত হচ্ছে কেন রাজ্য সরকার জবাব দাও। সকলকে ডিজিটাল রেশনকার্ড দিতে হবে। সব মানুষকে গণবণ্টন ব্যবস্থার আওতায় রাখতে হবে।
৭। সব বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করো। মেধা তালিকা প্রকাশ না করে এস এম এস মাধ্যমে নিয়োগ চলবে না। সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে সমকাজে সমমজুরি চালু করতে হবে।
৮। বাস্তুহীনদের বাস্তুজমি দিতে হবে। সমস্ত গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় আনতে হবে।
৯। বনাঞ্চলের অধিকার আইন কার্যকর করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য ল্যাম্প সোসাইটিগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
১০। সব আত্মহত্যাকারী কৃষক পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১১। দুর্নীতিরোধে সব মানুষ এক হও। সমস্ত চিট ফান্ড, শিলিগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ, নারদ, ব্রিজ কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে এক হও। সাহারা ও বিড়লা ঘুষকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে। ব্যাপমসহ কেন্দ্র ও রাজ্যে দুর্নীতির তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করো। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করো।
১২। রাজ্যে ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচার বাড়ছে কেন — মুখ্যমন্ত্রী জবাব দাও। ধর্ষণ ও পাচারকাণ্ডে যুক্তদের কঠোর শাস্তি চাই। রাজ্যে নিয়ম না মেনে ব্যাঙের ছাতার মতো নার্সিংহোম হলো কেমন করে — স্বাস্থ্যমন্ত্রী/মুখ্যমন্ত্রী জবাব দাও।
১৩। বিকল্প ব্যবস্থা না করে নোট বাতিল হলো কেন — প্রধানমন্ত্রী জবাব দাও। বিদেশি ব্যাঙ্কে জমা টাকা ফেরত এলো না কেন — প্রধানমন্ত্রী জবাব দাও। নোট বাতিলের আগে রাজ্য বি জে পি জানলো কেমন করে — প্রধানমন্ত্রী জবাব দাও।
১৪। ২০১৩ সালের আইন মেনে সরকারকে জমি করতে অধিগ্রহণ হবে। জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কৃষক সমাজ জোট বাঁধো। ভাঙড় আন্দোলনে ধৃতদের বিনাশর্তে মুক্তি চাই। কর্পোরেট হাউসদের হাতে খাস জমি না দিয়ে গরিবদের জমির পাট্টা দিতে হবে। কর্পোরেট হাউসদের ঋণ ও সুদ ছাড় নয় — মাঝারি কৃষক পর্যন্ত সব কৃষকের ঋণ মকুব করতে হবে। ই পি এফ-এর সুদ কমানো চলবে না। কর্পোরেটদের সাথে চুক্তি চাষ বন্ধ করো।
১৫। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ও উভয় মৌলবাদের বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ হও। সাম্প্রদায়িক ও উভয় মৌলবাদ-নিপাত যাক। উদারনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শামিল হও। সংখ্যালঘু ও দলিতদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘ পরিবারের হামলা বন্ধ করো।
১৬। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের গণতন্ত্র ধ্বংসকারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। সংবিধান প্রদত্ত গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা চলবে না। রাজ্যে মানুষের গণতন্ত্র হরণ করা হচ্ছে কেন — রাজ্য সরকার জবাব দাও।
১৭। পলাশী চিনিকলের অব্যবহৃত জমি ভূমিহীন ও গরিব কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।
১৮। জমির মিউটেশন ফি বাড়ানো চলবে না। জমি হাঙরদের রক্ষা করতে দ্রুত জমির চরিত্র বদলের চক্রান্ত বন্ধ কর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন