শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫

ব্যঙ্গ ও সোশাল নেট ওয়ার্ক ~ সুশোভন পাত্র

কান দিয়ে রক্ত পড়ছে ? না চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন ? তাহলে কানে আঙ্গুল দিন। চোখ বুজে বসে থাকুন। আর একান্তই দুটোর কিছুই না পারলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরুন। নিজেরটা নিজে না পারলে, একে অপরেরটা ধরুন। কিন্তু ভুলেও হাসবেন না যেন। রসিকতাও করবেন না। ব্যাঙ্গ বাণে ফেসবুকের দেওয়াল ভরাবেন না।

পশ্চিমবঙ্গের মহামান্য মুখ্যমন্ত্রী কিছুদিন আগে চিন্তিত হয়ে বলেছিলেন রাজ্যের মুরগি কম ডিম পাড়ছে কেন ? বিজেপি সাংসদ, সদস্য আর কয়েকজন ধর্মগুরুরা আবার চিন্তিত হয়ে পড়েছেন যে হিন্দু মেয়েরা কেন ডজন ডজন 'হিন্দু বাচ্চা' উৎপাদন করছেন না। এলি-তেলি-স্বাধী থেকে পাড়ার নেতা কেউ বলছেন ৪ টে চাই, কেউ বলছেন ৫ টা। শ্রী শ্রী শঙ্করাচার্য তো এক কাঠি উপরে গিয়ে বলেছেন "নরেন্দ্র মোদী কে পরেরবার পুনারায় ভোটে জেতাতে কমপক্ষে ১০ টা করে হিন্দু বাচ্চা চাই"। আমি বলি কি আগে ঠিক করুন সঠিক সংখ্যাটা কত ? ৪ না ৫ না একেবারে ১০ টা ? তারপর শিশুদের অন্নপ্রাশনের আগে ভোটাধিকারের বিল সংসদে পাশ করুন। গর্ভবতী হিন্দু মায়েদের ২ বার ভোটাধিকারের কথাও বিবেচনা করুন। হিন্দু ভোটারের জোগান যদি চাহিদার থেকে বেশী হয় তাহলে নিখাদ, নিখুঁত, হিন্দুভোটার কে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে রাজকোষের ঘাটতি মেটানোর কথাও ভাবা যেতে পারে। সমস্যা একটাই মুরগির ডিম ফুটে সবগুলো যদি ছেলে বেরোয় তাহলে পরের বার মোদীর জন্য হিন্দুভোটার পাব কি করে ?
যে বিচিত্র দেশের রঙ্গমঞ্চে একাঙ্ক নাটক পরিবেশন করতে এসে কখনও শাহাজাদা বলেন "Poverty is a state of mind !" , ভোটের প্রচারে এসে হবু প্রধানমন্ত্রী বলেন "বীর আলেকজেন্ডার কে গঙ্গাতীরে বিহারীরা পরাজিত করেছিলেন ", কেউ বলবেন "সবাই হিন্দু" কেউ বলবেন "জন্মেই মুসলিম", অনাহার আর অপুষ্টির পক্ষাঘাতে উন্মাদ্গামী দেশের প্রধানমন্ত্রী সোনা দিয়ে নিজের নামাঙ্কিত ৯ লাখ টাকার জ্যাকেট পরে "রায় বাহাদুরের আশায়" বড়লাটের পদ লেহন করতে যান, সে দেশের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী , শেক্সপিয়ার, কিটস আর রবীন্দ্রনাথের কল্পবিজ্ঞানের কথামৃত খোদ বইমেলায় উপহার দিলে আপনি অবাক হবেন ? না কানে আঙ্গুল দেবেন ?

শুনলাম সোশাল নেটওয়ার্কে ব্যঙ্গ ঠেকাতে সরকার নাকি বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করছে। বটেই তো ! আপনার শিক্ষা, আপনার সংস্কৃতি, আপনার রুচি , আপনার জানা ইতিহাস, ভূগোলের চোদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করার সম্পূর্ণ অধিকার ওনাদের আছে। শুধু আপনারই সেগুলো নিয়ে রসিকতা করার অধিকার নেই। ব্যাঙ্গ করার অধিকার নেই। মুখ চেপে হাসারও অবকাশ নেই।

একবার হিটলার নাটক দেখতে গিয়েছিলেন, সাথী ছিলেন গোয়েরিং। নাটকটা খুব পছন্দ হয় হিটলারের। শুধু ভিলেনের বাটারফ্লাই গোঁফ হিটলারের চরম অস্বস্তির কারন হয়ে ওঠে। নাটক শেষেই অর্ডার দেন যাতে নাটকটা মঞ্চস্থ না করা হয় আর ভিলেন কে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। গোয়েরিং বলেন " ফুয়েরার, ভিলেন যদি গোঁফটা কেটে দেয় তাহলে ? " হিটলার বলেন "তাহলে গোঁফটা কাটার পর গুলি করে দিও। কেমন ? "

জনাব, হিটলারের বিচার ইতিহাস করেছে। নাৎসির বিচারও মানুষ করেছে। রসিকতাটা কিন্তু অমলিনই রয়ে গেছে। আজও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন