সভা শেষে কাকাকে জিজ্ঞাসা করলুম, 'তিনি কোথায়?' কাকা বলল, 'কে?' আমি মুখ ফসকে নীলকর বলেই শুধরে বললুম, 'ধনকড়।' কাকা বলল, 'তিনি গা ঢাকা দিয়ে চোরের সংখ্যা গুনছেন, কৃষকদের দাবিপত্র নিতে ভয় পেয়েছেন।
কগজেই দেখেছি আজ চাষিদের আজকে রাজভবন ঘেরাও প্রোগ্রাম ছিল। অফিস থেকে কাকার ফোন। বলল, 'যাবি?' আমি রাজি হতেই ফোনের ওধার থেকে কাকার গলা: তাহলে ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়েনে আমি তুলে নেব।
অটোটা শিয়ালদা ব্রিজের ওপর থেকে আর এগোতে পারছিলনা। কাকা বলল, 'চল এখানেই নেমে যাই, শিয়ালদা কাছেই, হেঁটে মেরে দিই'। শিয়ালদা স্টেশনে ঢোকার মুখটাতে গিয়ে দেখি মিছিল শুরু হয়ে গেছে। কাকা বলল, 'তাহলে আমরাও পা মেলাই'।
আমি অবশ্য মিছিলের আগা বা শেষ কোনও দিকটাই দেখতে পারিনি। অনেক মানুষ। কাকা বলল, সবাই কে লক্ষ্য কর, দেখবি চাষি, মজুর, ছাত্র, বেকার যুবক, মহিলা সব অংশের মানুষই এই মিছিলে হাঁটছে।
সত্যিই বেশভূষা দেখে, স্লোগান শুনে, ফেস্টুন দেখে খানিকটা বোঝা যাচ্ছে যে ভাঙর থেকে চাষিরা, নদীয়া থেকে ছাত্ররা, ট্রাম কোম্পানির কর্মচারী সবাই মিছিলে।
আমরা যখন রাসমণি রোডে পৌঁছুলুম, সভা সবে শুরু হয়েছে। কত মানুষ! ভীড় ঠেলে এগিয়ে কাকা বলল 'এখানেই দাঁড়াই।' আমাকে বলল, 'সভায় মূল কথাগুলি নোট করবি।' 'রাতে লিখে আমায় দেখাবি।' আমি বললুম, তাহলে কালোজাম কনফার্ম করতে হবে। কাকার মুখ থেকে শুধু 'হুম' শব্দটি বেরুল।
যিনি মঞ্চে বলছিলেন তার নাম জিজ্ঞাসা করতে কাকা বলল ইনি রাজ্যের কৃষক সভার নেতা অমল হালদার। আমি শুরু থেকে দেশের কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা সবার বক্তব্যই শুনেছি। কয়েকটা পয়েন্ট নোট করেছি।
১। স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ কৃষক আন্দোলন।
২। কৃষক এবং কৃষি বিরোধী তিনটি আইনই বাতিল করার দাবি থেকে কৃষকরা এক চুল নড়বে না।
৩। অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটির ব্যানারে দেশের কমবেশি ৫০০ টি কৃষক সংগঠন, ফেডারেশন লড়াই করছেন।
৪। দেশের কৃষি নীতি কৃষক কেন্দ্রিক নয়। বরং বৃহৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখার নীতি।
৫। এই কৃষি নীতি এমনই যে সারাদিন খেটেও কৃষকরা দিনগুজরান করতে হিমসিম খাচ্ছে।
৬। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি কৃষক বিরোধী।
৭। এই সরকারের দল ক্ষমতায় আসার আগে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু ক্ষমতায় এসেই চোখ ওল্টায়।
৮। তিনটি কৃষি সংক্রান্ত আইনের ভিত্তি কৃষি নয় বরং কর্পোরেট ভিত্তি।
৯। সারা দেশের মত এই রাজ্যেও ২১৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছে। রাজ্য সরকার সেই তথ্য হাপিস করে তিনগুন আয় বেড়ে যাওয়ার ভূয়া প্রচার করছে।
১০। মিডিয়া দেশের কৃষক আন্দোলনের নামে ভুয়া প্রচার করে বলে খালিস্তানি আন্দোলন। কখনও পাকিস্তান আর চিনের ভূত দেখেছে।
১১। সারা দেশের কৃষক আন্দোলনকে মর্যাদা না দিয়ে বলার চেষ্টা করেছে এই আন্দোলন শুধু পাঞ্জাবের।
১২। সরকার ভুয়া সংগঠন তৈরি করে এই আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
১৩। কৃষকদের আন্দোলন প্রতিবাদ থেকে রাস্তায় প্রতিরোধের জায়গায় গেছে।
১৪। অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটির ছত্রছায়ায় থাকা ৫০০ টি কৃষক সংগঠন, ফেডারেশনের মধ্যে আন্দোলনের রণকৌশল নিয়ে কোনও মতভেদ নেই।
১৫। কৃষি আইন বাতিলের দাবি থেকে দেশের কৃষক সংগঠনগুলি একচুলও নড়বে না। সংশোধন করার সরকারি প্রস্তাব বাতিল করেছে।
১৬। সরকার যে ভাবে লকডাউনের সময় আইন পাস করেছে তার সাথে তুলনীয় ডাকাত যেমন ডাকাতির জন্য রাতের অন্ধকার বেছে নেয়।
১৭। সরকারের কাছে একটাই দাবি কৃষি এবং কৃষক বিরোধী তিনটি কৃষি সংক্রান্ত আইন সহ বিদ্যুৎ বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে।
১৮। সমস্ত জিও পরিষেবা বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৯। রাজ্যে রিলায়েন্সের মল, বিক্রয়কেন্দ্র, পেট্রোল পাম্পে পিকেটিং হবে।
২০। রাজ্যের কৃষকদের কাছে আইনের বিষয়বস্তুর বিবরণ বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরতে হবে।
২১। দেশের কৃষক আন্দোলন ভাঙার জন্য শুধু পাঞ্জাবের আন্দোলন বলে যে অপপ্রচার চলছে তার যোগ্য জবাব দিতে হবে।
২২। সুপ্রিম কোর্ট কমিটি তৈরি করে কৃষকদের দাবির মিমাংসা করার প্রস্তাব অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটির বাতিল করেছে।
কালোজাম পাক্বা।
উত্তরমুছুন"ট্যাবলেটের ডায়রি" চলতে থাকুক❤️❤️❤️। কৃষকদের জয় হোক ❤️🙏।