বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬

কাশ্মীর ~ অনিমেষ বৈদ্য

কাশ্মীর নিয়ে কথা বললেই অবধারিত ভাবে যেটা আসবে তা হলো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কথা। নিজের জন্মভূমি থেকে উৎখাত হওয়ার যন্ত্রণা অপরিসীম। তা অস্বীকার করার কোনও প্রশ্নই নেই। আগে একাধিক বার সেই যন্ত্রণাকে ছোঁয়ার চেষ্টাও করেছি শব্দে। কিন্তু যেটা অবাক লাগে তা হলো কাশ্মীর ইস্যু এলেই শুধুমাত্র কাশ্মীরি পণ্ডিতের কথা তুলে ধরা হয়। প্রতিদিন এতো এতো ইভেন্টের রিকোয়েস্ট আসে কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা ইভেন্টের রিকোয়েস্টও পেলাম না যেখানে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এই উৎখাত হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ এসে বলেছে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা। এমন ইভেন্ট হলে আমন্ত্রণ পেতে ইচ্ছুক। আন্তরিক ভাবেই শুনতে যাবো। কিন্তু কাশ্মীরে মানুষ মরলেই শুধু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের রেফারেন্স টানা দেখতে দেখতে ক্লান্ত। ওই সিপিএম মেরেছে তাই তৃণমূলের মারকে ন্যায্যতা দেওয়া টাইপ।

কাশ্মীরের মৃত্যু নিয়ে কথা বললেই জঙ্গি সমর্থক। এবং যারা বলছে তাদের অনেকের আবার বিজেপির উপরে অগাধ আস্থা। আবার বিজেপির সঙ্গে সেখানে জোট পিডিপি-র, যারা আফজাল গুরুকে শহীদ মানে। কিন্তু এই জঙ্গি-বিরোধীদের কাছে আবার আফজাল গুরু জঙ্গি। সত্যি! সব হিসেব গুলিয়ে যায়। ঘেঁটে যাই। অবশ্য ঘেঁটে থাকা লোক আবার নতুন করে কী ঘেঁটে যাবে!!!

সরকারি ভাবেই ২০০৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত কাশ্মীরে হিংসার বলি হয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ (৭ হাজার সেনা সহ)। নিখোঁজ ৩ হাজার চারশো লোক। নাহ! আমার বলা কথা নয়। সরকারি হিসেব। এই নিখোঁজ, মৃত প্রতিটি কাশ্মীরিই জঙ্গি!! এদের মধ্যে একজনও নেই যে শুধু তার স্বাধীনতার দাবি জানাতেই মিছিলে গিয়ে খুন হয়েছে!!

বিধবা শব্দটির মানে কী তা জানি আমরা সবাই। তাদের দুঃখ, দুর্দশা নিয়ে হাজার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু 'আধা বিধবা' শব্দটি শুনেছেন কি? নাহ! আমিও শুনিনি কিংবা জানতাম না আগে। জেনেছিলাম হায়দার সিনেমাটা দেখেই। কাশ্মীরে পুলিশ-সেনা যে সব বিবাহিত পুরুষদের তুলে নিয়ে যায় তাদের স্ত্রীরা 'আধা বিধবা'। কারণ তারা অনেকেই জানতে পারেন না যে তাদের স্বামী আদৌ বেঁচে আছে কি না।

বাসে ভাড়া দেওয়ার পরেও কন্ডাক্টর টিকিট দেখতে চাইলে আমাদের সে কি তুমুল বিরক্তি। কিন্তু কাশ্মীরে প্রতি মুহূর্তে আপনাকে আপনার পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। না দেখালে কি পরিণাম হবে তা অনুমান করা যায়। একজন লোক তার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকছেন না। একজন যেই হুকুমের সুরে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেন ওমনি তিনি 'স্বাভাবিক' হলেন এবং তারপর বাড়ির গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। নাহ! আমার কথা নয়। হায়দার সিনেমাটা দেখলেই দেখতে পাবেন। মনে রাখবেন সে সিনেমা ভারত সরকারের অনুমতিপ্রাপ্ত।

জঙ্গিদের সমর্থন করতে হবে না। কিন্তু এই ঘটনাগুলো নিয়েও ভাবা যাবে না তাই বলে!!! এই মানুষদের কথা তুললেও শুনতে হবে ভারত-বিরোধী, জঙ্গি সমর্থক!! আমি নিজে কাশ্মীরি হলে আজাদি চাইতাম কি চাইতাম না জানি না, কিন্তু এই অন্তহীন মৃত্যু মিছিল নিয়ে এই দূরে বসেও একটুও ভাবিত হবো না!!! যদি দেশের কথাও ভাবি তাহলেও তো কাশ্মীরিরা এই মুহূর্ত পর্যন্ত ভারতীয়ই বটে। একজন ভারতীয় হয়ে অন্য ভারতবাসীর মৃত্যু মিছিল নিয়ে চিন্তিত হবে না আমাদের ভারতীয় আবেগ!!! তাই নিয়ে কথা বললেও শুনতে হবে জঙ্গিবাদের সমর্থক!!!

এর থেকে সোজাসুজি বলুন। কাশ্মীরি মাত্রই জঙ্গি, এতোদিনের প্রতিটি মৃত্যুই জঙ্গির মৃত্যু, আর সেই মৃত্যুতে আপনার এক বিন্দুও দুঃখ নেই, সেই মানুযদের নিয়ে আপনার মানবিকতা এক বিন্দুও বরাদ্দ নেই, তারা প্রত্যেকে খুন হওয়ার যোগ্য, এবং আপনি এদের খুন দেখতে চান। এতে অন্তত আপনার বিরোধিতা করলেও আপনার সততার প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন