যমুনার কালো জলে হালকা হাওয়ার পরশ, সামান্য ঢেউ, পাখিরা তাদের বাড়ি ফিরে গেছে, সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে ঘরে ঘরে। বারো বছরের এক কিশোর তখনও বিভোর হয়ে আছে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শিল্পকর্ম সহ এক আশ্চর্য্য সৃষ্টির সামনে। বিকেলে প্রথম দর্শনে তেমন আপ্লুত না হলেও, চারিপাশ ফাঁকা হয়ে আসার পরে, পুরো পরিবেশটা যেন গ্রাস করে নিল, আচ্ছন্ন করলো অস্তিত্ব। কিশোর কোনোভাবে একা হয়ে গেছিল। তার সাথের মানুষজন একটু অন্য দিকে সবাই।
বেটা আপ কাহাঁসে আয়ে হো? সম্বিত ফিরল পাশে বসা সাদা দাড়িওয়ালা অতি বৃদ্ধ মানুষটির কথায়। বললেন, উনি এখানেই থাকেন, উনি কোনোভাবে মুঘলদেরই বংশধর। ফুল ধুপ ধুনো দেন, ওনাদের রীতি নীতি অনুযায়ী ধর্মীয় কাজগুলো করেন, সরকার থেকে ভাতা পান।
বললেন আমি কি আসল সমাধি দেখতে ইচ্ছুক? অবশ্যই! আমি চললাম ওনার সাথে। জানতামও না যে যে সমাধি দেখলাম সেই দুটো আসল নয়, আসল গুলো আরো নিচে। সবাই যে সমাধি দেখে, সেই দুটো সমাধিই নয়।
তালা খুলে খুব সরু একটা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে গেলেন। উনি দেখালেন। আলো দিলেন। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা বিড়বিড় করে বললেন। মমতাজ আর শাহ জাহান শুয়ে আছেন সামনে।
বললেন এবারে ফিরে চল বেটা। আর ভুলেও একবারও পিছনে তাকাবেনা। সোজা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে বাইরের চত্বরে ফাঁকা আকাশের নিচে চলে যাও। ফিরে তাকিও না। তাজ মহলের সব দরজা বন্ধ হবে এবারে, এরপর এক মুহুর্ত থাকলেও আটকে যাবে।
আমিও কিছু না ভেবে উঠে এলাম। বাবা মা কাকু কাকিমারা আমাকে খুঁজছিল। আমাকে দেখে নিশ্চিন্ত হলো। সেই মুহূর্তে ফিরে তাকালাম একবার।
পুরো চত্বর ফাঁকা। আমরা গুটি কয়েক ট্যুরিস্ট, পনেরো ষোলজন খুউব বেশী হলে। অতি বৃদ্ধ নেই।
চার পাঁচজন সিকিউরিটি এসে সব দরজা শিকল তুলে দিয়ে আমাদের বেরোতে বললো, কারণ প্রায় আটটা বাজে। তাজ মহল বন্ধ হবে।
আবার ফিরে তাকালাম। নাহ্! কেউ কোত্থাও নেই।
ওই সিকিউরিটির লোকজন কে জিগালাম, আচ্ছা এক বয়স্ক সাদা দাড়িওয়ালা মানুষ, ওনারা দেখেছেন? জানেন?
না, ওনারা জানেন না। দেখেননি কোনোদিন। আর কেউই দেখেনি। কোনোদিন।