বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

দেশদ্রোহী কারা? ~ অরিজিত গুহ



    ১৯২৮ সালের কংগ্রেসের কলকাতার অধিবেশন বসে পার্ক সার্কাস ময়দানে। বর্তমানে পার্ক সার্কাস ট্রাম ডিপোর সামনের যে রাস্তাটা সেই রাস্তা দিয়ে কংগ্রেসের অধিবেশনের মিছিল চলেছিল। রাস্তাটার নাম কংগ্রেস এগজিবিশন রোড আজও সেই কংগ্রেসের অধিবেশনের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। 

     এই রাস্তা দিয়েই এক শীর্ণকায় ব্যক্তির নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল যোগ দিয়েছিল কংগ্রেসের সেই মূল মিছিলে। মিছিলটি বিশেষ একটি কারণে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল কারন এর আগে কংগ্রেসের কোনো মিছিলে কলকারখানার শ্রমিক মুটে মজুরদের সেভাবে প্রতিনিধিত্ব ছিল না যা এই মিছিলের বিশেষত্ব ছিল। 

   এই অধিবেশনে মতিলাল নেহেরুর দ্বারা একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রস্তাবটি ছিল ভারতের ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের। গান্ধীজি সেই প্রস্তাব সমর্থন করলেও জওহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বোস প্রভৃতি অল্প বয়সী নেতৃত্ব এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তাঁরা বিকল্প একটি প্রস্তাব পেশ করেন যা ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী। শীর্ণকায় ব্যক্তিটির নেতৃত্বে যে মিছিলটি এসেছিল, সেই মিছিলের প্রতিনিধিরা এই পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীর প্রস্তাবের পক্ষে দাঁড়ায়। শীর্ণকায় ব্যক্তিটির নাম মুজফফর আহমেদ। যিনি কাকাবাবু নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। 

    মূল প্রস্তাবটি সংখ্যাধিক্যের জোরে একটি সংশোধনী সহ পাস হয়ে গেল। সংশোধনীটি ছিল যদি এক বছরের মধ্যে ব্রিটিশ রাজ ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস মেনে না নেয় তাহলে পরের লাহোর অধিবেশন থেকে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী উত্থাপন করবে। যথারীতি ব্রিটিশ রাজ ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস মেনে নেয় নি এবং লাহোর অধিবেশন থেকে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী তোলে আর ১৯৩০ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে নিজেদের স্বাধীন ভারতের নাগরিক বলে ঘোষণা করে। 

   কংগ্রেসের প্রবীন নেতৃত্ব এবং তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে কলকাতার এই অধিবেশন থেকেই একটা মতানৈক্য দেখা দিল। এই মতানৈক্যের প্রভাব পড়ল ভারতে, বিশেষ করে বাংলায় কাজ করা তরুণ বিপ্লবী দলের মধ্যে। তাঁরা আর এই আবেদন নিবেদনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী থাকতে পারছিলেন না। বিকল্প নেতৃত্বের প্রয়োজনে গড়ে উঠল রিভোল্ট গ্রুপ। অনুশীলন সমিতির সতীশ পাকড়াশি, নিরঞ্জন সেন এবং যতীন দাসের উদ্যোগে যুগান্তর গোষ্ঠির বরিশাল শাখা, চট্টগ্রামের সূর্য সেন, মাদারিপুরের পঞ্চানন চক্রবর্তী (কাজী নজরুলের অভিন্নহৃদয় বন্ধু), এবং আরো ছোট ছোট গ্রুপ মিলে এই রিভোল্ট গ্রুপে সামিল হল। কর্মসূচি নেওয়া হল বিভিন্ন জেলায় ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করা হবে। এই কর্মসূচি যদি বাস্তবে রূপায়িত করা যায় তাহলে প্রবীন নেতৃত্বও ও আরো অন্যান্য বিপ্লবী গোষ্ঠি এই কর্মোদ্যোগে সাড়া না দিয়ে পারবে না।
 
    অ্যাকশন প্ল্যান একজিকিউট করার হেডকোয়ার্টার স্থির হল কলকাতার মেছুয়াবাজার। সেখানকার গোপন ডেরায় দিনের পর দিন বিপ্লবীরা মিলিত হতে থাকল। আগামী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা, বোমা তৈরির ফর্মুলা, ইস্তাহার বিলির কর্মসূচি এইসবে সরগরম করে উঠল সেই বিপ্লবী ঘাঁটি।
     খবর ফাঁস হয়ে গেল গোয়েন্দাদের কাছে। ১৯২৯ সালের ১৮ই ডিসেম্বরের কুয়াশাঘন গভীর রাতে সেই ডেরা ঘিরে ফেলল পুলিশ। গভীর রাতেই গ্রেপ্তার হল সতীশ পাকড়াশি ও নিরঞ্জন সেন। খবর না থাকায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু বোমার সেল আর পিস্তল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভোরবেলায় চট্টগ্রাম থেকে শিয়ালদা এসে সেই ঘাঁটিতে উপস্থিত হন সুধাংশু দাসগুপ্ত। সাথে সাথেই তিনিও গ্রেপ্তার হন। ঘাঁটি থেকে পাওয়া বিপ্লবীদের নাম ঠিকানা থেকে একে গ্রেপ্তার করা হল প্রমোদ দাসগুপ্ত, শচীন করগুপ্ত, মুকুল সেন, রমেন বিশ্বাস, নিশাকান্ত রায়চৌধুরী প্রভৃতি বিপ্লবীকে। শুরু হল মেছুয়াবাজার বোমা ষড়যন্ত্র মামলা।
    মামলায় দোষী হিসেবে সতীশ পাকড়াশি আর নিরঞ্জন সেনের হল সাত বছর দ্বীপান্তর, মুকুল সেন শচীন করগুপ্তের হল ছ বছর দ্বীপান্তর, সুধাংশু দাসগুপ্তের পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। প্রমোদ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কোনো সূত্র না পেলেও ব্রিটিশরা বুঝেছিল একে ছেড়ে রাখা ঠিক হবে না। কাজেই তাঁকে মেছুয়াবাজার ষড়যন্ত্র মামলায় জড়াতে না পারলেও বেঙ্গল ক্রিমিনাল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে আটক করে রাখা হয় এবং বিভিন্ন জেল ঘুরে পরে সেলুলার জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। 

   মেছুয়াবাজার থেকেই প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের পরিকল্পনা হয়েছিল। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে গণেশ ঘোষ অম্বিকা চক্রবর্তীরা সেই পরিকল্পনার সফল রূপায়ন ঘটালেন। যদিও ধরাও পড়লেন সকলে এবং গণেশ ঘোষ আর অম্বিকা চক্রবর্তীও এসে পড়লেন দ্বীপান্তরের সেলুলার জেলে। এর কিছুকাল পরেই মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী হয়ে সেলুলার জেলে এলেন মুজফফর আহমেদ।
 
   মেছুয়াবাজারের গোপন ঘাঁটি থেকে যে স্ফুলিঙ্গের উৎপত্তি হয়েছিল তা দেশব্যাপি বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে নবজোয়ার আনে। বিপ্লবী জগদীশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় 'মেছুয়াবাজারে অবস্থিত গোপন বৈপ্লবিক ঘাঁটি থেকে বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের যে বহ্নিশিখা একদা প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল, সেই বহ্নিশিখাই পরবর্তীকালে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে লেলিহান শিখার মত ছড়িয়ে পড়ল। কত ত্যাগ কত আত্মবলিদান স্বাধীনতা সংগ্রামের বেদীতলে সমর্পিত হল তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। শত শত শহিদের রক্তরাঙা ইতিহাসে রচিত হল নব ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর গাঁথা'। (শৈলেশ দে সম্পাদিত অগ্নিযুগ)

   কাকাবাবুকে সবাই চেনেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীকালে সিপিআই(এম) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
   প্রমোদ দাসগুপ্ত সিপিআই(এম) দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, পলিট ব্যুরো সদস্য এবং আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গের দলের রাজ্য সম্পাদক। 
   সতীশ পাকড়াশি সিপিআই(এম) দলের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন।
   নিরঞ্জন সেন সিপিআই(এম) দলের পক্ষ থেকে ১৯৬৭-৬৮ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার মন্ত্রী ছিলেন।
   সুধাংশু দাসগুপ্ত সিপিআই(এম) দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের মুখপত্র দেশহিতৈষী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। 
   শচীন করগুপ্ত ১৯৩৮ সালে আন্দামান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হন এবং সারা জীবন শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে গেছেন।
   গণেশ ঘোষ সিপিআই(এম) দলের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গের বেলগাছিয়া বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন।

   কাজেই দেশদ্রোহী দাগিয়ে দেওয়ার আগে একটু ইতিহাসটা জেনে নেবেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বাংলার এই অগ্নিযুগ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থেকে গেছে। পুরো ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে দেখলে আরো অনেক নাম ও ঘটনা বলা যায়। তাতে লেখার পরিসরই বাড়বে শুধু। দেশ স্বাধীন করার জন্য বামপন্থীদের অবদান ইতিহাস এর পাতায় ছত্রে ছত্রে লেখা রয়েছে।

সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

কবিতা থেকে মিছিলে ~ ডাঃ সমুদ্র সেনগুপ্ত

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর জন্মদিন যে লেখাটা লিখেছিলাম তাতে এক বন্ধু মন্তব্য করেছেন, "রবীন্দ্রনাথের কবিতা নাৎসী বাহিনীর বাঁদরামো থামাতে পারে নি। পেরেছিলো স্তালিনের লালফৌজ৷ ফ্যাসিবাদ আটকানোর একমাত্র রাস্তা পালটা বলপ্রয়োগ। এছাড়া কোনো বিকল্প রাস্তা নেই।" এই প্রসঙ্গে আমার সামান্য কিছু বলার আছে। কমেন্ট হিসেবে লম্বা বলে আলাদা লিখলাম। 

ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকা কবিতাটি লেখেন ও নিজেই সেটির ইংরেজি অনুবাদ করে পাঠান অমিয় চক্রবর্তীর কাছে যিনি সে সময়ে ইংল্যান্ডে ছিলেন।জেনারেল ফ্ল্যাঙ্কোর নেতৃত্বে স্পেনে শুরু হয় ফ্যাসিস্ট আগ্রাসন। এর বিরুদ্ধে তৈরি হয় পপুলার ফ্রন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেড। নৈতিক ও দৈহিক সমর্থন দেন বহু বুদ্ধিজীবী যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ।

মার্চ, ১৯৩৭, স্পেন এর গৃহযুদ্ধের সময় পিপলস ফ্রন্ট এর সাহায্যের সমর্থনে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, "স্পেনের জনগণের এই চরম দুঃখ ও অবিচারের দিনে আমি মানবতার বিবেকের কাছে আবেদন রাখছি: স্পেনের পিপলস ফ্রন্ট কে সাহায্য করুন
জনগণের সরকার কে সাহায্য করুন, সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন, প্রতিক্রিয়াকে রুখে দিন"। স্পেনের ঘটনার পরপরই '‌লিগ এগেইনস্ট ফ্যাসিজম অ্যান্ড ওয়ার'–এর ভারতীয় শাখা তৈরি ও সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন

ফ্যাসিস্ট জাপানি সৈন্যবাহিনীর হাতে নানকিং শহরের পতনের পরে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে নিহত হন। রবীন্দ্রনাথ এই ঘটনায় বিচলিত হয়ে লেখেন চিরস্মরণীয় কবিতা: "নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস,"

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ইতস্ততঃ করছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেবেন কি দেবেন না বলে। হিটলার বাহিনীর কাছে ফ্রান্স আত্মসমর্পণ করার পরে রবীন্দ্রনাথ এক তারবার্তায় তৎকালীন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টকে মিত্রপক্ষে যোগদান অনুরোধ জানান দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে। টেলিগ্রামে লিখলেন - "Today, we stand in awe before the fearfully destructive force that has so suddenly swept the world. Every moment I deplore the smallness of our means and the feebleness of our voice in India so utterly inadequate to stem in the least, the tide of evil that has menaced the permanence of civilization.

All our individual problems of politics to-day have merged into one supreme world politics which, I believe, is seeking the help of the United States of America as the last refuge of the spiritual man, and these few lines of mine merely convey my hope, even if unnecessary, that she will not fail in her mission to stand against this universal disaster that appears so imminent."

শুধু বিদেশের রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নয়, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও কবি প্রতিবাদ করেছিলেন ফ্যাসিজমের। ১৯৩৯ সালের ১৭ মার্চ অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা চিঠিতে কবি বলেন— '‌অবশেষে আজ কংগ্রেস মঞ্চ থেকে হিটলার নীতির নিঃসঙ্কোচ জয় ঘোষণা শোনা গেল। ছোঁয়াচ লেগেছে। আমাদের এই গুরুভজা দেশে লাগবার কথা। স্বাধীনতার মন্ত্র উচ্চারণ করবার জন্য যে বেদী উৎকৃষ্ট, সেই বেদীতেই আজ ফ্যাসিস্ট সাপ ফোঁস করে উঠেছে।'‌ কিছুদিন পরে লেখা সেই অমিয় চক্রবর্তীকেই এক পত্রপ্রবন্ধে (‌২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯)‌ রবীন্দ্রনাথ সরাসরি ফ্যাসিজমের পরাজয় কামনা করলেন। সেই লেখার মধ্যে তিনি বললেন—"এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড ফ্রান্স জয়ী হোক একান্ত মনে এই কামনা করি। কেননা মানব–ইতিহাস ফ্যাসিজমের নাৎসিজমের কলঙ্ক প্রলেপ আর সহ্য হয় না।'‌

কেউ বলতেই পারেন যে এসবে প্রমাণিত হয় যে কবি সমাজ সচেতন ছিলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির খবর রাখতেন ও সাধ্যমত তার কবিতা ও লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতেন কিন্তু তার অভিঘাত কতটুকু। এর উত্তরে স্রেফ দুটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। জার্মান নাৎসি, কুখ্যাত প্রচারমন্ত্রী জসেফ গোয়েবলস একসময়ে রবীন্দ্রনাথ এর ভক্ত হয়ে ছিলেন। স্পেনে পপুলার ফ্রন্ট কে কবি খোলাখুলি সমর্থন করার পরে গোয়েবলস সেই রবীন্দ্রনাথকে কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করে আক্রমণ করেন ও ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেন। জাপান ডায়েট সিদ্ধান্ত নিয়ে কবির বক্তৃতা সেন্সার করা শুরু করে।

এবার আসা যাক লালফৌজের হাতে ফ্যাসিস্টদের পরাজয় প্রসঙ্গে। ইতিহাসের ছাত্র মাত্রেই দুটি কথা মানেন। এক. স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধটাই ছিল ডিসাইসিভ, ফলাফল নির্ধারক। দুই. সমরবিজ্ঞানের সব নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সেবার লালফৌজ জয়লাভ করেছিল। কেন করেছিল তার বহু কারণ ও ব্যাখ্যা আছে। একটি কারণ উল্লেখের জন্য জার্মান ইতিহাসবিদ Jochen Hellbeck এর সাহায্য নেওয়া যাক।

তার সুবিশাল "স্ট্যালিনগ্রাদ প্রটোকল" এ উল্লেখ করেছেন যে ১৯৪২ এর আগস্ট আর অক্টোবর মাসের মধ্যে কম্যুনিস্ট পার্টির কার্ড ঝোলানো সদস্য সংখ্যা ২৮,৫০০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩,৫০০ এবং লালফৌজ ভাবতে শুরু করে যে তারা তাদের নাৎসি প্রতিপক্ষ বাহিনীর চেয়ে রাজনৈতিক ও নৈতিক ভাবে শ্রেষ্ঠ। [Der Spiegel magazine]। ব্রিগেডিয়ার কমিসার ভাসিলিয়েভ এর ভাষায় "It was viewed as a disgrace if a Communist was not the first to lead the soldiers into battle."

এই যে নৈতিক বলে বলীয়ান হয়ে একটা ফৌজ তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বিরোধীকে রুখেদিল, বেসামরিক জনগণ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে প্রতিরোধ করলো এ জিনিষ মানব সভ্যতার ইতিহাসে অভূতপূর্ব। তার প্রেরণার উৎসমূলে আমাদের ফিরে যেতেই হবে।

এখানেই প্রশ্ন আসে নীতি, নৈতিকতা, মতাদর্শ এসব এবস্ট্রাক্ট জিনিসের ব্যবহারিক মূল্য। এগুলোর যোগান দেন চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী আদর্শবাদীরা। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যুদ্ধে তাই কবিকে প্রয়োজন। বন্দুক দু পক্ষের হাতেই আছে বা থাকবে। কোন পক্ষ চূড়ান্ত জয়লাভ করবে সেটা বলে দেবে কবি কোন পক্ষে আছেন। স্রেফ বন্দুক দিয়েই লড়াই জেতা যাবে না।

"মহাকালসিংহাসনে
সমাসীন বিচারক, শক্তি দাও, শক্তি দাও মোরে,
কণ্ঠে মোর আনো বজ্রবাণী, শিশুঘাতী নারীঘাতী,
কুৎসিত বীভৎসা‌ পরে ধিক্কার হানিতে পারি যেন.‌.‌.‌'‌

তাই বন্ধু কিছু মনে করবেন না, বোধহয় শুধু ফৌজ বা শুধু কবিতায় হবে না। ফৌজের সাথে কবি ও কবিতাকেও চাই। আজ কবি জয়দেব বসুর জন্মদিন। এই লেখাটা তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে নিবেবন করলাম।

কবিতা থেকে মিছিলে .......

বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

বোকা বিকাশ, চতুর সুব্রত আর শ্রী জগন্নাথ ধাম ~ ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক


দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা এবং দ্বার উন্মোচন হল। আমার মাথায় কয়েকটা প্রশ্নও এল। প্রথম প্রশ্ন হল, সব ধর্মের মানুষের ভোটে জিতে আসা একটি সরকার কি জনতার করের পয়সায় মন্দির তৈরি করতে পারে ? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে দ্বিতীয় প্রশ্ন, এটি কি আদৌ মন্দির নাকি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ? কারণ সরকারিভাবে এটিকে শ্রী জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলা হচ্ছে। তৃতীয় প্রশ্ন, এই যে বলা হচ্ছে দিঘা জগন্নাথ ধামকে কেন্দ্র করে পর্যটনের ঢল নামবে এবং এলাকার অর্থনীতিতে আমূল বদল আসবে, এই দাবি কতটা মজবুত ? এবারে এক এক করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। 

প্রশ্ন ১ : সরকার কি জনতার করের টাকায় মন্দির বানাতে পারে ? সংবিধান বলছে, না, পারে না। ভারতীয় সংবিধানে, ধর্মাচরণের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তা নাগরিকের জন্য। সরকারের জন্য নয়। সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ভারতে, যে কোনও নাগরিকের, বিনা বাধায় ধর্মাচরণ এবং ধর্ম প্রচারের অধিকার আছে। ২৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যে কেউ বা বিধিবদ্ধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত কোনও সংস্থা, ধর্মাচরণ, ধর্ম প্রচারের উদ্যেশ্যে ধর্মস্থান নির্মাণ, বিস্তার এবং পরিচালনা করতে পারে। এখানেও সরকারের কোনও স্থান নেই। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, ২৭ নাম্বার ধারা। আপনাদের সুবিধের জন্য, আমি ধারাটি এখানে তুলে দিচ্ছি। 
27. Freedom as to payment of taxes for promotion of any particular religion.

No person shall be compelled to pay any taxes, the proceeds of which are specifically appropriated in payment of expenses for the promotion or maintenance of any particular religion or religious denomination.

~ "Article 027 (Freedom as to payment of taxes for promotion of any particular religion)" -Part III - Fundamental Rights (12–35)
মানে দাঁড়াল এই যে, নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হবে, এমন কোনও খরচের জন্য জনতাকে কর দিতে বাধ্য করা যাবে না। দিঘা জগন্নাথ ধাম নির্মাণে ২০ একর জমি দিয়েছে সরকারি সংস্থা দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। এরপর, হিডকো, মানে আরেক সরকারি সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ আবাস পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জগন্নাথ ধাম তৈরি করেছে। সংবিধান অনুযায়ী জনতার করের টাকা সরকার বাহাদুরের কাছেই গচ্ছিত থাকে। অতএব এই ২৫০ কোটি টাকা আমার আপনার করের টাকা। তাই দিঘা জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ আদৌ সাংবিধানিক কাজ কিনা, সেই প্রশ্ন থেকে গেল। 

প্রশ্ন ২ : দিঘা জগন্নাথ ধাম কি আদৌ মন্দির ? অনেকেই বলছেন, এ তো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা তো হতেই পারে। হক কথা। কিন্তু এখানে কোন সংস্কৃতি চর্চা হবে ? এমন কোনও তথ্য কোথাও পেলাম না। বৈষ্ণব মতাবলম্বীরা বলেন, প্রভু জগন্নাথ, কৃষ্ণেরই রূপ, সেই অর্থে বিষ্ণুবতার। যদিও শৈব এবং শাক্ত মতাবলম্বীদের একটা অংশ মনে করেন, প্রভু জগন্নাথ, ভৈরবের একটি রূপ বা ভগবান শিবের অবতার। স্কন্দ এবং ব্রহ্ম পুরাণে প্রভু জগন্নাথের উল্লেখ রয়েছে। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর কথা যদি হয়, তাহলে ভারতে মূলত তিন স্থাপত্য শৈলীর মন্দির দেখা যায়। উত্তরের নাগারা শৈলী, দক্ষিণের দ্রাবিড় শৈলী এবং বাকি মোটামুটি, ভেসারা বা মিশ্র শৈলী। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কলিঙ্গ শৈলী আসলে মিশ্র শৈলী। আমার প্রশ্ন, দিঘা জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কি পুরাণ, মন্দির স্থাপত্যশৈলী ইত্যাদি নিয়ে চর্চা বা গবেষণা হবে ? এমন তথ্য কোথাও পেলাম না। বরং দেখলাম, বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল। হিন্দু ধর্ম সাকার সাধনায় বিশ্বাসী। তাহলে সংস্কৃতি কেন্দ্র নাম দিয়ে যাই বলার চেষ্টা হোক না কেন, বিষয়টা কি সংবিধানসিদ্ধ কাজ হল ? প্রশ্ন রয়েই গেল। এই প্রসঙ্গে বলি, আমাদের দেশে, মূলত দক্ষিণ ভারতে, তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্নাটকে মন্দির পরিচালন এবং পরিচালন ব্যবস্থায় দখলদারির বহু মামলায়, সুপ্রিম কোর্ট, সব ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করেছে। 

প্রশ্ন ৩ : দিঘা জগন্নাথ ধামের হাত ধরে, এলাকায় পর্যটনের জোয়ার আসবে কিনা বা পর্যটন অর্থনীতিতে গতি আসবে কিনা। এককথায় উত্তর হল হ্যাঁ। বহু মানুষ এখন মন্দির দেখতে যাবেন। কিন্তু তার মধ্যেও খানিক স্তরবিভাজন আছে। সে প্রসঙ্গে আসছি। তার আগে একটু পরিসংখ্যান দিই। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের তথ্য বলছে, কোভিডের পর, পশ্চিমবঙ্গে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাড়ে চোদ্দ কোটি পর্যটক (রাজ্যের পর্যটক ধরে) নানা জায়গা ঘুরেছেন। জাতীয় নিরিখে অষ্টম স্থান। তৃণমূল আমলে, রাজ্যের ভূবৈচিত্র, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরতে নানা কাজ হয়েছে। সরকার এক্ষেত্রে একাধিক পেশাদার এবং বেশ কয়েকটি পেশাদারি সংস্থার পরামর্শ শুনে কাজ করেছে। পর্যটন শিল্পে বৃদ্ধি তারই প্রতিফলন। এরই সুফল হিসেবে একটু একটু করে বেড়েছে বিদেশি পর্যটকও। ২০২৩ সালের তথ্য বলছে, বিদেশি পর্যটক আসেন প্রায় ২৭ লক্ষ। তবে এই হিসেবে জল হয়ে ঢুকে আছেন বাংলাদেশিরা। জল কেন বলছি ? আসলে ওই ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১২০০/১৫০০ টাকা হোটেলের বাংলাদেশি পর্যটকরা, বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে পারেন, কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ভরতে তাঁদের বিরাট অবদান আছে, তা মানছেন না রাজ্যে পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত পেশাদাররা। বরং তাঁদের ভয়, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভিসা নিয়ে কড়াকড়ির জেরে, ২০২৪ এ পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটা কমে যেতে পারে। আচ্ছা, পর্যটন ব্যবসায় বিদেশি পর্যটক এত গুরুত্বপূর্ণ কেন ? কারণ, ডলার। যত ডলার আমদানি, পর্যটন অর্থনীতিতে তত জোশ। কারণ কী জানেন, ন্যাপা, শ্যামা, পল্টু, মানে আপনার আমার মতো মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা স্বল্পবিত্তদের কৃপায়, দিঘাতে ডিম-পাওরুটি বা কাঁকড়া ভাজার ষ্টল আরও কিছু বাড়তে পারে, বিয়ার পাব, ভাল হোটেল আরও কয়েকটা বাড়তেই পারে। কিন্তু পর্যটন শিল্পে গতি এনে পর্যটন অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য তা যথেষ্ট নয়। তার জন্য দরকার পয়সাওয়ালা দেশি খদ্দের বা বিদেশি পর্যটক। 
দিঘা এখনও পয়সাওয়ালা দেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় নেই। কারণ বিচ ট্যুরিজম বলতে যা বোঝায়, দিঘাতে সেই পরিকাঠামো নেই। আজকের বাজারে পর্যটন পণ্য বিপণনের দুই মন্ত্র। ন্যাচারাল বা ইনহেরিটেড কোনও পণ্য আপনার দখলে থাকলেই হল না, তাকে কেন্দ্র করে ম্যানমেড পণ্য তৈরি করে একটা সুসংহত পণ্য তৈরি করতে হয়। দিঘাতে যতদিন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বা ওয়াটার স্পোর্টসের পেশাদার পরিকাঠামো না হচ্ছে, ততদিন দিঘা 'দীপুদা'র দিঘা হয়েই থেকে যাবে। 
রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত পেশাদাররা বলছেন, সুন্দরবনকে কীভাবে আরও বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরা যায়, সেই চেষ্টা করা যেত। উত্তরবঙ্গের পাহাড় জঙ্গলে, কী করে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করা যেত। কলকাতায় হেরিটেজ ওয়াক কী করে বিদেশিদের কাছে, ভিন রাজ্যের পয়সাওয়ালা পর্যটকদের কাছে বেচা যায়, সেই চেষ্টা করা যেত। রাজ্যে ১৩ টি শক্তি পীঠ রয়েছে। সুসংহত পরিকল্পনা করে, শক্তিপীঠ সার্কিট করা যেত। তাতে ডলার আমদানি হত। অথচ রাজ্যের অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। এটাই আরও বাড়ানো যেত। কিন্তু দিঘার জগন্নাথ ধাম সামনে রেখে সেই বৃদ্ধি অসম্ভব। 

বোকা বিকাশ আর চতুর সুব্রতর কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। আপনাদের তো বলিইনি যে এই দুই চরিত্র কারা। দুজনেই কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। একজন বিকাশ ভট্টাচার্য। অন্যজন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রতদা গত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর একটি কথা আজ খুব মনে পড়ছে। সুব্রতদা তখন প্রথম তৃণমূল সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রী। একদিন আড্ডা হচ্ছে। কথায় কথায় কলকাতায় জল জমার প্রসঙ্গ উঠল। সুব্রতদা বললেন, বিকাশবাবু কিন্তু খুব ভাল কাজ করেছেন। যাঁরা জানেন না, তাঁদের বলি, কলকাতায় জল জমার সমস্যা সমাধানে, প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে, জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পে বিকাশ ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন একটা বিরাট কাজ হয়। প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প। সেই টাকায় কলকাতায় ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভূগর্ভস্থ ইটের নিকাশি নালা সংস্কার করে, বিশেষ প্লাস্টিকে তৈরি আস্তরণ দিয়ে মজবুত করা হয়। আজ যে কলকাতায় জল জমার সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে, তার কারণ, ওই কাজ। সুব্রতদা তার কথাই বলছিলেন। প্রশ্ন করেছিলাম, দাদা, এই কাজের প্রস্তাব তো আপনি মেয়র থাকার সময়ের। আপনি করেননি কেন ? সুব্রতদা সেই ট্রেডমার্ক হাসি হেসে, অননুকরণীয় ফ্যাঁসফেঁসে গলায় বলেছিলেন, ধুর, ভোটে জিততে গেলে, এমন কিছু করতে হয়, যা পাবলিক চোখে দেখতে পায়। আমাদের দেশের পাবলিক ওতেই খুশি। মাটির তলায় ৩৫০ কোটি টাকা ঢেলে কী হত ? পাবলিক দেখতে পেত ? বিকাশবাবু ভোটে জিততে পেরেছেন ? 

দিঘার জগন্নাথ ধামের উচ্চতা দেখলাম, ২১৩ ফুট। বহুদূর থেকে দেখা যাবে।

জয় জগন্নাথ। ভুল ত্রুটি মার্জনা কোরো প্রভু….