পুরোনো ব্যাগ ফেলে দেওয়ার আমরা একবার এ পকেট ও পকেট হাতড়িয়ে দেখে নিতাম। মাঝে মাঝে নীলচে মত একটাকা, লাল দুটাকার নোট বা জলতরঙ্গ খাঁজওয়ালা দশ পয়সা পাওয়া যেত। দাদু বলতেন পয়সার ব্যাগ কখনও খালি রাখতে নেই। অন্ততঃ কটা খুচরো পয়সাও থাকা উচিত। তাতে ব্যাগের অভ্যেস থাকে টাকা রাখার। কার্ডে কেনার যুগেও তাই কিছু কাগুজে টাকা বা কয়েন পার্সে রাখাটা অভ্যেসে ঢুকে গেছে। তাতে একটা সুবিধাও আছে। সবসময়েই কোন না কোন ব্যাগে কিছুমিছু টাকা থেকেই থাকে...
নীলকন্ঠ স্যারের কাছে ইংলিশ পড়তাম আমরা। সত্তরোর্ধ মাস্টারমশাইকে ভয় পেতাম না একদম, ভালবাসতাম ভীষণ । ছোট্ট ঘরটাতে ঢুকতাম বিকেলে । একটু পরে জানলার ওদিকে সন্ধ্যে নামত। এদিকে ঘরে ঘরে ধূপ আর প্রদীপের শিখা নিয়ে ঘুরে যেতেন দিদা (স্যারের স্ত্রী) । ধুনোধূপের গন্ধটা ঘরে ঘুরতে ঘুরতেই ঝপ করে লোডশেডিং। দিদা স্যারকে একটা হাতপাখা দিয়ে যেতেন আর আমাদের একটা। গোল হাতলের হাত পাখা আর সে হাতলটা ঢোকানো আর একটা সরু ফাঁপা পাইপের মত হাতলে। দিব্যি হালকা হাতে ঘোরালে তিনশো ষাট ডিগ্রিতে ঘুরত, আমরা সবাই একসঙ্গেই হাওয়া পেতাম। স্যার ওই সময় মুড়ি খেতেন নকুলদানা দিয়ে। একটা ছোট বাটিতে স্যারের মুড়ি আসত আর একটা বড় বাটিতে তেলমাখা মুড়ি আসত আমাদের তিনজনের জন্য। মাঝেসাঝে স্যার হ্যারিকেনের সলতেটা একটু নামিয়ে আমাদের গল্প বলতেন। মানুষের গল্প , মৃত্যুর পরের রহস্যময় জগতের গল্প, বিশ্বযুদ্ধের গল্প কিচ্ছু বাদ যেতনা। কারেন্ট আসার আগেই কোন কোনদিন আমরা পড়া সেরে উঠে পড়তাম । ফেরার পথে একটা বাদামী রঙ্গের ইঁট বার করা বাড়ি ছিল। সে বাড়িতে নাকি নতুন বউ বউভাতের পরদিন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছিল। আমি মৌ আর রিনিদিদি নিজের নিজের পছন্দের ঠাকুরের নাম করতে করতে পেরিয়ে যেতাম বাড়িটা । একচিলতে ওই ঘর, প্রত্যেক সন্ধ্যের লোডশেডিং আর ভুতুড়ে তকমাওয়ালা বাড়ি আমায় শিখিয়েছিল হাওয়া, মুড়ি, ভয় সবই ভাগ করে নেওয়া যায়...
জীবন কত কিছু যে শিখিয়েছে তার হিসেব নেই । জীবন জুড়ে যত মানুষের আনাগোনা, তাদের সবার কাছে কিছু না কিছু শিখেছি। শুধু আজকের দিনটাই নয়। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তেই জীবনের কাছে ঋণী আমি, জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা বা ছিন্ন হওয়া প্রতিটি মানুষের কাছেও...
শিক্ষক দিবসের শুভকামনা সব্বাইকে ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন