শুরুতেই একটা ছোট গল্প বলি। আমি যে ভদ্রলোকের কাছে স্প্যানিশ ভাষা শিখি মাদ্রিদ-এ, তিনি হঠাৎ গত বছরে একদিন এসে বললেন যে তাঁর স্ত্রী-র ব্রেস্ট ক্যান্সার হযেছে। তারপর চিকিৎসা শুরু হলো। দীর্ঘ একবছর। প্রতি ২১ দিন বাদে Herceptin বলে একটি ওষুধ আর সঙ্গে কেমোথেরাপি। মাঝে একটা অপারেশন, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় মাস্টেকটোমি বলা হয়। পুরোটাই ফ্রি, সরকারী হাসপাতালে। আমি ভাবছিলাম, আমাদের দেশে কারো এই সমস্যা হলে খরচ তা ঠিক কত হতো ! শুধু Herceptin এর খরচ হত ২৩ লাখ টাকা ! প্রশ্নটা ক্রয়ক্ষমতা-র, তোমার টাকা থাকলে চিকিৎসা হবে, আর না থাকলে নয়।
স্বাধীনতার পর ৬৭ বছর কেটে গেল। আমাদের দেশে এখনো আমরা একক স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে উঠতে পারলাম না। কিছু কিছু সূচী বাস্তবায়িত হযেছে, যেমন রাজীব আরোগ্য যোজনা বা সেইরকম আরো কিছু , কিন্তু এর পুরোটাই হয়েছে ¨দাতব্য ¨ করার মানসিকতা নিয়ে, ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨ কে স্বীকৃতি দিতে নয় ! লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়েছে, আমরা ক´জন কে দেখছি ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨নিয়ে আলোচনা করতে ? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, তার নির্বাচন অথচ ¨পোলিও নির্মূল¨এর মত বিক্ষিপ্ত জয়লাভ আর সাইনবোর্ড এ তার বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কেউ কিছু নিয়ে চিন্তিত তো মনে হয় না ! স্বাস্থ্য বিশ্বের সর্বত্র একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু, ভারতের দুঃখজনকভাবে এটা শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তেহার-এ ক্ষণস্থায়ী উল্লেখ হিসেবেই থেকে যায়। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সোনার পাথরবাটি , ডাক্তার রোগীর অনুপাত স্বাভাবিক গড়ের নীচে , ৭৮% চিকিৎসার খরচ নাগরিক কে দিতে হয় নিজের পকেট থেকে, জনস্বাস্থ্যচিকিৎসা খাতে সরকারী ব্যয় GDP র ৩ শতাংশের নিচে ! ব্রাজিল এ সেটা ১০ শতাংশ, ফ্রান্স -এ ১২ শতাংশ। ভাবা যায় ! সমস্যাটা কিন্তু অনেক গভীর।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতে মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বাধিক এবং এটা কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যসেবায় কতটা টাকা খরচ করতে পারি তার সাথে সম্পর্কহীন। প্রতি বছর ১.৪ মিলিয়ন শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিন আগে মারা যায়। দুর্ভাগ্যবশত এই মৃত্যু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য এবং কম খরচেই সেটা করা সম্ভব। বর্তমান নীতি অনুযায়ী একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই এই কাজ করতে পারেন আর আগেই বলেছি যে এইসব বিশেষজ্ঞদের পর্যাপ্ত যোগান আমাদের দেশে নেই। দেশে আজ পর্যাপ্ত মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন যেখানে স্ত্রীরোগবিদ্যা, এবং পেডিয়াট্রিক্স মত ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা কোর্স ক´রা যাবে। গত কয়েক বছরে নার্সিংশিক্ষার কলেজ গুলিতে ভর্তির হার ৫০% এর নিচে ! কেউ কি ভেবে দেখেছে যে আগামী কয়েক বছরে দেশে নার্স একটি তীব্র ঘাটতি হবে ! কারণ টা কি ? নার্সিং এখন একটি মৃত শেষ পেশা মনে করা হয়। কারণ কেউ ভাবে না যে এই পেশায় কর্মজীবনে অগ্রগতি সম্ভব। একটু অন্যভাবে ভাবলেই হয়। নার্সের পেশাকে কি কিছুটা আকর্ষনীয় করে তোলা যায় না? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭% নার্স anesthetists এর কাজ করেন। আর আমরা আমাদের দেশে ২০ বছরের ক্রিটিক্যাল কেয়ার এ কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও কোনো নার্সকে paracetamol বিধান করার অধিকারটুকু দেই না। সবসময় যে বেশী টাকার প্রয়োজন তা কিন্তু নয়! মেডিকেল শিক্ষাকে দেশের দেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ভাবতে হবে।
ভাবতে হবে যে কি করলে কলকাতা বা সিঙ্গুরে বসে একজন টাটা মেমোরিয়াল বা ভেলোরের হাসপাতালের ডাক্তারের মতামত নিতে পারবেন। ইনফরমেশন টেকনোলজি তে আমরা এতো অগ্রগতি করেছি, সরকার কি ভেবে দেখেছেন যে তার প্রয়োগ কিভাবে করা যায় ? একটি পরিকল্পিত Health eco -system এর প্রয়োজন আজ দেশে , যেখানে তথ্য-বিনিময় হবে সাবলীল।
অভিমুখহীন গবেষণা। কোন জাতীয় গবেষণা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ? আজকে বোধহয় ভাবার সময় এসেছে। সরকার কোন গবেষণা কে আর্থিক সাহায্য দেবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে সেটাও ভেবে দেখা দরকার। ভ্যাকসিন সম্পর্কিত গবেষণা না মৌলিক গবেষণা, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে সেই নীতিটা কিন্তু সরকারের থেকেই আসা উচিত। সব জাতীয় গবেষণাই গুরুত্বপূর্ণ , কিন্তু সেখানে উচিত দেশের প্রয়োজন ও সরকারের ব্যয় এর মধ্যে একটি ভারসাম্য ।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সার্বজনীন স্বাস্থ্যের অধিকার¨ নিয়ে অনেকদিন ধরে বললেও, কাজের কাজ খুব কি হয়েছে ? তাঁরা দাবি করেন যে National Rural Health Mission (NRHM) এর ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এই দাবি সংশয়াতীত নয়। এবারের ইস্তেহার-এ তাঁরা বলেছেন যে ¨ক্ষমতায় এলে সার্বজনীন ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨ কে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি (GDP র ৩%) করা হবে। প্রতিটি স্কুল এবং পরিবারের জন্য প্রায়োগিক টয়লেট নিশ্চিত করা হবে। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত মধ্যে একটি তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু হবে। প্রজেক্ট ভিশন ২০২০ তে স্বাস্থ্য খাতে ৬০ লক্ষ মানুষের নতুন চাকরি হবে।¨ কিছু অত্যাধুনিক মোবাইল medical service ভ্যান এর কথা বলা আছে, যা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান এর বিজ্ঞাপন ই মানায়, দেশের সর্ববৃহৎ (?) রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো তে বেমানান। রাহুল গান্ধী মহাশয় তাও সভাসমিতি তে এটা নিয়ে দু-চার কথা বলছেন।
BJP ইস্তেহার-এ সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছে। অপ্রচলিত/বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থ্যার (যেমন হোমিওপেথী, আয়ুর্বেদ, যোগ ইত্যাদি) কথা বলা হেছে ম্যানিফেস্টো তে। সবচেয়ে ভীতিপ্রদ এখানে FDI (Foreign direct investment) বিলগ্নির ইঙ্গিত !
Aam Aadmi Party বা আপ , এম্বুলেন্স এর বাইরে বেরোতে পারেন নি এখনো। জনস্বাস্থ্যনীতি আর এম্বুলেন্স এর পার্থক্য টা এখনো বুঝে উঠতে পারেন নি ওনারা। হয়তো আরেকটু সময় লাগবে। তবে জনস্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে দুর্নীতি-র যোগাযোগটা উল্লেখ করা আছে। এটা উপেক্ষা করার বিষয় নয়, করছিও না। তবে এই লেখাটা জনস্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কিত বলে এব্যাপারে আর বেশি আলোচনা করছি না।
অধুনা মিডিয়ার আশীর্বাদধন্য এই রাজ্যের শাসক দলের ইস্তেহার পড়লাম। স্বাস্থ্যনীতির সর্বাঙ্গীন পরিবর্তন (comprehensive change) এর কথা বলা গেছে তাতে। কিভাবে সেটা বলা নেই। কিছু কথা আছে যা অনেকটা দাতব্য করার মানসিকতা প্রকাশ করে। আর ম্যানিফেস্টোর বাইরে এসব নিয়ে কোনো উচ্যবাচ্য তো চোখে পড়ছে না !
কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তেহার-এ জন্যস্বাস্থ্য নীতি র ব্যাপারে অনেক বেশি সক্রিয়। কমিউনিস্ট পার্টি সার্বজনীন জন্যস্বাস্থ্য নীতি প্রয়োগের অঙ্গীকার করেছে। কমিউনিস্ট পার্টি GDP র ৫% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করার প্রস্তাব এনেছে। পার্টি স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিকরণ-এ বাঁধন আনার আহ্বান জানিয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী যে বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গুলি কিন্তু রাষ্ট্র আশ্রিত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর উদাহরণ দিয়েই লেখাটা শুরু করেছিলাম, সঙ্গে যোগ করব কিউবা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, যেখানে স্বাস্থ্যের অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে এবং তা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত ও সফল। ভারতবর্ষের কথা বললে বলা যায় যে প্রতি বছর ৮ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যায় এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে গিয়ে যা আদতে স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিকরণ-এর ফল । কমিউনিস্ট পার্টি এছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা এবং বিনামূল্যে ডায়গনিস্টিক সুবিধা প্রদান, পাশাপাশি আরও জেনেরিক ওষুধ এর outlet খোলার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। ইস্তেহার-এ আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মেডিকেল ডিভাইস ও ওষুধের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি র ব্যাপারে জোর দেওয়া। ক্লিনিকাল ট্রায়াল এ অংশ নেওয়া রোগীদের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এর কথাও বলা আছে ম্যানিফেস্টো তে।
কোথায় ফাঁক সেটা বুঝতে হবে আর তা বন্ধ করার কাজটা করতে হবে একটা সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে আর সেটাই আমাদের আশা এই ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন এর পরিপ্রেক্ষিতে।
স্বাধীনতার পর ৬৭ বছর কেটে গেল। আমাদের দেশে এখনো আমরা একক স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে উঠতে পারলাম না। কিছু কিছু সূচী বাস্তবায়িত হযেছে, যেমন রাজীব আরোগ্য যোজনা বা সেইরকম আরো কিছু , কিন্তু এর পুরোটাই হয়েছে ¨দাতব্য ¨ করার মানসিকতা নিয়ে, ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨ কে স্বীকৃতি দিতে নয় ! লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়েছে, আমরা ক´জন কে দেখছি ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨নিয়ে আলোচনা করতে ? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, তার নির্বাচন অথচ ¨পোলিও নির্মূল¨এর মত বিক্ষিপ্ত জয়লাভ আর সাইনবোর্ড এ তার বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কেউ কিছু নিয়ে চিন্তিত তো মনে হয় না ! স্বাস্থ্য বিশ্বের সর্বত্র একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু, ভারতের দুঃখজনকভাবে এটা শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তেহার-এ ক্ষণস্থায়ী উল্লেখ হিসেবেই থেকে যায়। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সোনার পাথরবাটি , ডাক্তার রোগীর অনুপাত স্বাভাবিক গড়ের নীচে , ৭৮% চিকিৎসার খরচ নাগরিক কে দিতে হয় নিজের পকেট থেকে, জনস্বাস্থ্যচিকিৎসা খাতে সরকারী ব্যয় GDP র ৩ শতাংশের নিচে ! ব্রাজিল এ সেটা ১০ শতাংশ, ফ্রান্স -এ ১২ শতাংশ। ভাবা যায় ! সমস্যাটা কিন্তু অনেক গভীর।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতে মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বাধিক এবং এটা কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যসেবায় কতটা টাকা খরচ করতে পারি তার সাথে সম্পর্কহীন। প্রতি বছর ১.৪ মিলিয়ন শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিন আগে মারা যায়। দুর্ভাগ্যবশত এই মৃত্যু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য এবং কম খরচেই সেটা করা সম্ভব। বর্তমান নীতি অনুযায়ী একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই এই কাজ করতে পারেন আর আগেই বলেছি যে এইসব বিশেষজ্ঞদের পর্যাপ্ত যোগান আমাদের দেশে নেই। দেশে আজ পর্যাপ্ত মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন যেখানে স্ত্রীরোগবিদ্যা, এবং পেডিয়াট্রিক্স মত ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা কোর্স ক´রা যাবে। গত কয়েক বছরে নার্সিংশিক্ষার কলেজ গুলিতে ভর্তির হার ৫০% এর নিচে ! কেউ কি ভেবে দেখেছে যে আগামী কয়েক বছরে দেশে নার্স একটি তীব্র ঘাটতি হবে ! কারণ টা কি ? নার্সিং এখন একটি মৃত শেষ পেশা মনে করা হয়। কারণ কেউ ভাবে না যে এই পেশায় কর্মজীবনে অগ্রগতি সম্ভব। একটু অন্যভাবে ভাবলেই হয়। নার্সের পেশাকে কি কিছুটা আকর্ষনীয় করে তোলা যায় না? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭% নার্স anesthetists এর কাজ করেন। আর আমরা আমাদের দেশে ২০ বছরের ক্রিটিক্যাল কেয়ার এ কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও কোনো নার্সকে paracetamol বিধান করার অধিকারটুকু দেই না। সবসময় যে বেশী টাকার প্রয়োজন তা কিন্তু নয়! মেডিকেল শিক্ষাকে দেশের দেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ভাবতে হবে।
ভাবতে হবে যে কি করলে কলকাতা বা সিঙ্গুরে বসে একজন টাটা মেমোরিয়াল বা ভেলোরের হাসপাতালের ডাক্তারের মতামত নিতে পারবেন। ইনফরমেশন টেকনোলজি তে আমরা এতো অগ্রগতি করেছি, সরকার কি ভেবে দেখেছেন যে তার প্রয়োগ কিভাবে করা যায় ? একটি পরিকল্পিত Health eco -system এর প্রয়োজন আজ দেশে , যেখানে তথ্য-বিনিময় হবে সাবলীল।
অভিমুখহীন গবেষণা। কোন জাতীয় গবেষণা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ? আজকে বোধহয় ভাবার সময় এসেছে। সরকার কোন গবেষণা কে আর্থিক সাহায্য দেবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে সেটাও ভেবে দেখা দরকার। ভ্যাকসিন সম্পর্কিত গবেষণা না মৌলিক গবেষণা, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে সেই নীতিটা কিন্তু সরকারের থেকেই আসা উচিত। সব জাতীয় গবেষণাই গুরুত্বপূর্ণ , কিন্তু সেখানে উচিত দেশের প্রয়োজন ও সরকারের ব্যয় এর মধ্যে একটি ভারসাম্য ।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সার্বজনীন স্বাস্থ্যের অধিকার¨ নিয়ে অনেকদিন ধরে বললেও, কাজের কাজ খুব কি হয়েছে ? তাঁরা দাবি করেন যে National Rural Health Mission (NRHM) এর ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এই দাবি সংশয়াতীত নয়। এবারের ইস্তেহার-এ তাঁরা বলেছেন যে ¨ক্ষমতায় এলে সার্বজনীন ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨ কে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি (GDP র ৩%) করা হবে। প্রতিটি স্কুল এবং পরিবারের জন্য প্রায়োগিক টয়লেট নিশ্চিত করা হবে। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত মধ্যে একটি তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু হবে। প্রজেক্ট ভিশন ২০২০ তে স্বাস্থ্য খাতে ৬০ লক্ষ মানুষের নতুন চাকরি হবে।¨ কিছু অত্যাধুনিক মোবাইল medical service ভ্যান এর কথা বলা আছে, যা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান এর বিজ্ঞাপন ই মানায়, দেশের সর্ববৃহৎ (?) রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো তে বেমানান। রাহুল গান্ধী মহাশয় তাও সভাসমিতি তে এটা নিয়ে দু-চার কথা বলছেন।
BJP ইস্তেহার-এ সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছে। অপ্রচলিত/বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থ্যার (যেমন হোমিওপেথী, আয়ুর্বেদ, যোগ ইত্যাদি) কথা বলা হেছে ম্যানিফেস্টো তে। সবচেয়ে ভীতিপ্রদ এখানে FDI (Foreign direct investment) বিলগ্নির ইঙ্গিত !
Aam Aadmi Party বা আপ , এম্বুলেন্স এর বাইরে বেরোতে পারেন নি এখনো। জনস্বাস্থ্যনীতি আর এম্বুলেন্স এর পার্থক্য টা এখনো বুঝে উঠতে পারেন নি ওনারা। হয়তো আরেকটু সময় লাগবে। তবে জনস্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে দুর্নীতি-র যোগাযোগটা উল্লেখ করা আছে। এটা উপেক্ষা করার বিষয় নয়, করছিও না। তবে এই লেখাটা জনস্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কিত বলে এব্যাপারে আর বেশি আলোচনা করছি না।
অধুনা মিডিয়ার আশীর্বাদধন্য এই রাজ্যের শাসক দলের ইস্তেহার পড়লাম। স্বাস্থ্যনীতির সর্বাঙ্গীন পরিবর্তন (comprehensive change) এর কথা বলা গেছে তাতে। কিভাবে সেটা বলা নেই। কিছু কথা আছে যা অনেকটা দাতব্য করার মানসিকতা প্রকাশ করে। আর ম্যানিফেস্টোর বাইরে এসব নিয়ে কোনো উচ্যবাচ্য তো চোখে পড়ছে না !
কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তেহার-এ জন্যস্বাস্থ্য নীতি র ব্যাপারে অনেক বেশি সক্রিয়। কমিউনিস্ট পার্টি সার্বজনীন জন্যস্বাস্থ্য নীতি প্রয়োগের অঙ্গীকার করেছে। কমিউনিস্ট পার্টি GDP র ৫% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করার প্রস্তাব এনেছে। পার্টি স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিকরণ-এ বাঁধন আনার আহ্বান জানিয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী যে বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গুলি কিন্তু রাষ্ট্র আশ্রিত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর উদাহরণ দিয়েই লেখাটা শুরু করেছিলাম, সঙ্গে যোগ করব কিউবা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, যেখানে স্বাস্থ্যের অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে এবং তা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত ও সফল। ভারতবর্ষের কথা বললে বলা যায় যে প্রতি বছর ৮ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যায় এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে গিয়ে যা আদতে স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিকরণ-এর ফল । কমিউনিস্ট পার্টি এছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা এবং বিনামূল্যে ডায়গনিস্টিক সুবিধা প্রদান, পাশাপাশি আরও জেনেরিক ওষুধ এর outlet খোলার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। ইস্তেহার-এ আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মেডিকেল ডিভাইস ও ওষুধের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি র ব্যাপারে জোর দেওয়া। ক্লিনিকাল ট্রায়াল এ অংশ নেওয়া রোগীদের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এর কথাও বলা আছে ম্যানিফেস্টো তে।
কোথায় ফাঁক সেটা বুঝতে হবে আর তা বন্ধ করার কাজটা করতে হবে একটা সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে আর সেটাই আমাদের আশা এই ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন এর পরিপ্রেক্ষিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন