বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

জাহাঙ্গীরপুরীতে 'অবৈধ' উচ্ছেদ ~ অর্ক ভাদুড়ী


পেটের দায়ে যে গরীব মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান, তাঁর মাথাগোঁজার ঠাঁইকে কোনও বামপন্থী 'অবৈধ' বলতে পারেন না। 'সরকারি জমিতে বেআইনি বস্তি' গড়ে উঠেছে এবং আগামীতেও উঠবে। যতদিন না রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য সুস্থভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, ততদিন তাড়া খাওয়া মানুষ, পেট চালাতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষ রাস্তার ধারে, ফুটপাথে, সরকারি জায়গায় নিজের মাথা গোঁজার জায়গা নিজেই করে নেবেন। রাষ্ট্র যখন উচ্ছেদ করতে আসবে, তখন প্রতিরোধ করবেন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে অসংখ্য মানুষ কাজ করতে দিল্লিতে যান। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ জোগাড়ে, কেউ অন্য কিছু। তাঁদের অনেকেই মুসলিম। এই মানুষগুলোকে 'অবৈধ বাংলাদেশি' বা 'রোহিঙ্গা' বলে দাগিয়ে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র হলে প্রতিরোধ না করে উপায় নেই।
হনুমানজয়ন্তীর মিছিল থেকে যদি হামলা হয়- একবার নয়, পর পর দু'বার যদি হামলা হয়, তাহলে তৃতীয়বারে স্থানীয় মানুষজনকে রুখে দাঁড়াতেই হয়। উচ্ছেদই যেখানে একমাত্র সত্য, সেখানে কার আইন, কীসের আইন? নিজের সবটুকু শক্তি জড়ো করে রুখে না দাঁড়ালে তো তাঁদের উপায় নেই!
আমাদের মতো অসংখ্য পরিবার পূর্ব পাকিস্তান থেকে উচ্ছেদ হয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল। থাকার জায়গা ছিল না। করে নিতে হয়েছিল। সে-সবও ছিল বেআইনি বসত। সেই বসত গড়ার সাহস জুগিয়েছিল ইউসিআরসি, সাহস জুগিয়েছিল বামপন্থীরা, কমিউনিস্ট পার্টি।
জাহাঙ্গীরপুরীতে যাঁরা নিজেদের বসত বাঁচাতে লড়ছেন, তাঁরা জেনে হোক বা না জেনে, এই ঐতিহ্যের ধারক। তাঁদের প্রতিরোধেই বাংলার মর্যাদা বাড়ছে।
জাহাঙ্গীরপুরীর মানুষগুলো চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ওখানে আছেন। কেউ মাছ বিক্রি করেন, কেউ কাগজ কুড়োন, কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ অন্য কোনও পেশায়। তাঁদের বসত বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপির প্রশাসন। ওই বুলডোজারের পক্ষে যিনি সরাসরি বা পরোক্ষে কথা বলবেন, যিনি কথা বলবেন উচ্ছেদ হওয়া মানুষের বিরুদ্ধে, তিনি বিজেপির মিত্র, তিনি রাষ্ট্রের দালাল।
বামপন্থীরা জাহাঙ্গীরপুরীর উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের রিপোর্ট স্পষ্ট বলছে এই উচ্ছেদ সংখ্যালঘুদের ভিটেমাটি কাড়ার চেষ্টা। বুলডোজারের সামনে প্রতিবাদী মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েছেন শীর্ষ বামপন্থী নেতৃত্ব। আম আদমি পার্টি দাঁড়ায়নি, কংগ্রেস দাঁড়ায়নি, কমিউনিস্টরা দাঁড়িয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও যখন বুলডোজার চলছে, তখন কমিউনিস্ট নেতৃত্ব তার গতিরোধ করেছেন। আর যাঁরা সরাসরি বা পরোক্ষে উচ্ছেদ সমর্থন করছেন, হনুমানজয়ন্তীর মিছিল থেকে সংগঠিত হিংসা দেখতে পাচ্ছেন না, তাঁরা বামপন্থী নন, বাম পোশাক পরা রাষ্ট্রশক্তির পোষা দালাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন