সহজ টিকা - লুম্পেন পুঁজি বলতে বেআইনি অর্থ লগ্নি কারবারের টাকাকে বোঝায়, অর্থাৎ সারদা-নারদা, ঘুষ, ১০০ দিনের কাজের টাকা মারা ,চালচুরি , বালি খাদান - পাথর খাদানের উপর কাটমানি , তোলাবাজি ইত্যাদি। সনাতন পুঁজি উৎপাদনের মাধ্যমে উদ্বৃত্তমূল্য আহরণ করে ক্রমে স্ফীত হয়ে ভার্টিকাল বা উল্লম্ব বৃদ্ধি ঘটায়, লুম্পেন পুঁজির ক্ষেত্রে উৎপাদনের গল্প নেই, প্রতারণা বা জবরদস্তির ক্ষেত্র বাড়িয়ে তা আহৃত হয়। এর বিস্তার হরাইজন্টাল বা অনুভূমিক, মেলা-খেলা-উৎসব-মোচ্ছবেই এর উপযোগ।
এই উপরের টিকাটা দেওয়ার কারন ,আমি নিজেও এই শব্দের একটা মোটামুটি আভিধানিক মানে খুজছিলাম ,আমার অন্য কাজের ফাঁকে । এবার পয়েন্টে আসা যাক ।
আজকে রাত ৮টা নাগাদ নদিয়ার এক পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর মাথায় গুলি লেগেছে । উনি বোধহয় বাঁচবেন না । এই প্রসঙ্গে দুইটা কথা আমার বলার আছে ।
১। এখন মোটামুটি আপনারা বুঝতে পারছেন রামপুরহাট কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । ২০১৫র পুরসভা নির্বাচন থেকে যা শুরু , তা ২০১৮-র বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত ভোট দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে । ২০২১র কোলকাতা সহ সমস্ত মিউনিসিপালিটির সমস্ত ওয়ার্ড জিততে চাওয়া সেই ঝোঁকের-ই আরো জোরালো রূপ । এরপর আসছে পঞ্চায়েতের নির্বাচন । মূল কথা হল , পশ্চিমবঙ্গ এই মুহূর্তে মমতা ব্যানার্জী শাসন করছেন না । শাসন করছে লুম্পেন পুঁজি ( যার টিকা টা উপরে দিলাম ) । এই লুম্পেন পুঁজির Horizontal growth -এর জন্যই , সব কটা ওয়ার্ড ,সব কটা গ্রাম পঞ্চায়েত দরকার । তবেই লুঠ বাড়ানো সম্ভব । কেন বাড়াতে হবে ? কারন কর্মহীন মানুষ বাড়ছে । লুম্পেন প্রলেতরিয়েতের সংখ্যা বাড়ছে । তাদের ভাড়া খাটাতে চাই আরো টাকা । আরো টাকা খাটালে চাই আরো মুনাফা । এই যে দ্বন্দ্ব দেখছি আমরা ,এই যে খুন ওটা এই লুম্পেন পুঁজির অন্তর্দ্বন্দ্ব । যত বেশী এলাকা দখল তত বেশী Horizontal growth ।
এ একটা টাইম বোম্ব । অনেক দিন ধরে সলতে পাকাচ্ছিল । এখন ফাটছে । আরো ভয়ানক বিস্ফোরণ ,এবং ক্রমাগত বিস্ফোরণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । মমতা এ বিষয় কিছুই করতে পারবেন না ,কারন ওনার দলটা তৈরি হয়েছে স্রেফ এর ভিত্তিতেই । এটা ভাঙতে গেলে তৃনমুল ভাঙতে হবে ।
মাঝখান থেকে মরে যাবে অনেক সাধারণ মানুষ । কলেটারেল ড্যামেজ ।
২। এই যে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী গুলি খেল , পঞ্চায়েত প্রধান গুলি খেল না কেন ? তারও কারন বামফ্রন্ট এর স্বপ্নের পঞ্চায়েতের চরিত্র বদল । পঞ্চায়েত ছিল গ্রামের মানুষের নিজের সরকার । প্রান্তিক মানুষের স্বনির্ভর হওয়ার জায়গা । প্রান্তিক মানুষ মানে শুধুই ক্ষেতমজুর বা জাতি ধর্ম নয় , প্রান্তিক মানুষ মানে নারীও বটে । আমাদের সমাজে ,যে সমাজে পঞ্চায়েত এসেছিল ,সে সমাজে অবশ্যই । একজন মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান মানে নারীর ক্ষমতায়ন । এই তো আইডিয়া ।
এখন মহিলা সংরক্ষিত সিটে যিনি বসছেন ,তিনি পুতুল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ,পঞ্চায়েত চালান বাবা,ভাই বা স্বামী । পুরো ইউ পি-বিহার-রাজস্থান হয়ে গেছি এই ফিল্ডে । একেকটা পঞ্চায়েত এ খরচ হচ্ছে ৮-১০ লাখ টাকা । ৫ বছরে তুলতে হবে কয়েক কোটি । এই তো সহজ হিসেব ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন