মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৯

কৃষক কেন দাম পায়না ~ অংশুমান মজুমদার

বিপ্লব সেনগুপ্ত বা দীপঙ্কর মুখার্জীর লেখায় বাজারের সমস্যা নিয়ে একটি গল্প পড়েছিলাম। গল্পটি ইংল্যান্ডের কয়লাখনি শ্রমিকের পরিবারে কথোপকথন। অনেকেই গল্পটা পড়েছেন, তবুও শীতের রাতে খনি শ্রমিকের পারিবারিক কথাবার্তায় আজকের চিত্রও ফুঁটে ওঠে।
শ্রমিকের ছেলে তার মা কে প্রশ্ন করে: বাড়িতে আজ ঘর গরম করার জন্য ফায়ার প্লেসে কয়লা দাওনি কেন?
মায়ের উত্তর: বাড়িতে কয়লা আর নেই।
ছেলের প্রশ্ন: তাহলে দোকান থেকে কয়লা কিনে আনো।

মায়ের উত্তর: কয়লা কিনতে তো টাকা লাগবে। কিন্তু আমাদের যে টাকা নেই।
ছেলের প্রশ্ন: টাকা নেই কেন?
মায়ের উত্তর: তোমার বাবাকে খনির মালিক বেতন দেননি এবং চাকরিটাই চলে গেছে। তাই আমাদের টাকা নেই।
ছেলের প্রশ্ন: বাবার চাকরি হারালো কেন?
মায়ের উত্তর : বাজারে কয়লার মজুদ বেশি হয়ে গেছে। সে জন্য খনির কাজ বন্ধ। ফলে তোমার বাবার চাকরি গেছে। চাকরি নেই, তাই হাতে টাকা নেই। টাকা নেই, তাই কয়লা কেনা যায়নি। বাজারে কয়লার পরিমাণ 'বেশি' হয়ে যাওয়ার কারণে আজ আমাদের ঘরে কয়লা 'নেই'।
গল্পটি পড়লে আজকে আনন্দবাজার পত্রিকার আট পাতায় প্রকাশিত '৫ পয়সা কেজি পেঁয়াজ, খাচ্ছে গরুতে' খবরের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
খুচরো বাজারে পেঁয়াজের দাম আছে, অতি ফলনের খবর নেই, তবুও কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না!
বাজারে অবশ্য গরু আছে খবরেই প্রকাশ, আর আছে ফঁড়ে, যেটা খবরে নেই। তবে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের দাম সুনিশ্চিত করার প্রচেষ্টার মারাত্মক ঘাটতি যে আছে, সে কথা প্রকাশের প্রয়োজন হয় না।
দুর্দশার অন্য খবরও আছে। মহারাষ্ট্রের আখচাষীদের অল্প দামে তাঁদের কাছ থেকে আখ কিনে কারখানার মালিকরা চড়া দামে বিক্রি করে তার থেকে তৈরি হওয়া চিনি। মালিকপক্ষের কাছ থেকে বিক্রির সেই সামান্য টাকা তুলতেও কালঘাম ছুটে যায় কৃষকদের। বারবার অভিযোগ করেও কারখানার মালিকদের কাছথেকে বকেয়া না পেয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। শুক্রবার ক্ষুব্ধ চাষীরা ভাঙচুর চালায় সাতারার কৃষ্ণা চিনি কারখানায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন