৪৭-এর দেশভাগের সময় অসংখ্য মানুষ , পায়ে হেঁটে ট্রেনে চেপে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিলেন । দুরন্ত জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন । বুকের রক্ত দিয়ে সেচ্ দিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ফসল বুনেছিলেন । তাদের এই যুদ্ধ , কিন্তু ধর্মীয় ঘৃণা দ্বারা পরিচালিত হয় নি ... বেঁচে থাকাকে ভালবেসেই তারা লড়ে গেছিলেন । সেদিন, তাদের ঘৃণাকে উস্কে দিয়ে তাদের দ্বিতীয়,তৃতীয় বা অজুতবার খুন করতে চেয়েছিল আর এস এস এবং জাতিয় কংগ্রেসের একাংশ । কিন্তু তারা হেরে গিয়েছিল । ভয়ঙ্কর যুদ্ধে বন্ধু খুঁজতে শিকড়হীন মানুষের ভুল হয়নি । ভালোবাসার পক্ষে , বেঁচে থাকার পক্ষে ,তারা বামপন্থীদের হাত ধরে ছিলেন । মা ঈগলের মতো তাদের স্বার্থের লড়াই লড়েছে লাল ঝান্ডা ।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় , বর্ডার খুলে দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী । রাজাকার আর খান সেনার হাতে অত্যাচারিত লক্ষ মানুষ সেদিন ভারতের কাছে আশ্রয় নিতে এসছিলেন । মাথা বড় , ছোট শরীরের অভুক্ত বাচ্চাদের কোলে নিয়ে , মায়েরা যশোর রোড ধরে লঙ মার্চ করেছিলেন - হাতে বন্দুক । প্রতিপদে রক্তাক্ষয়ি যুদ্ধ চালিয়ে , সন্তানদের নিয়ে ভারতের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন অজুত উদবাস্তু জননী । এদের জন্য টাকা তুলতে গিয়ে ৭১এর আজাদগড়ে সি আর পি-র গুলি খেয়ে খুন হয়ে যান বামপন্থী যুবক । আজাদগড় কলোনী - উদবাস্তু রক্তে সেচ্ দেওয়া উদবাস্তু ভবিষ্যৎ ।
বহুপরে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সময় ,খবরের কাগজে একটা ছবি বেরিয়েছিল । এক সিরিয় বাবা তার সন্তানকে কোলে নিয়ে বর্ডার-এর দিকে দৌড়াচ্ছে । তাকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দিচ্ছেন এক ইউরোপীয় সাংবাদিক । বাচ্চাটার মাথা বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় মাথা আগলে রেখেছেন বাবা । আমার ঠামি তখনই প্রায় ৯০,বলেছিল - "ওরা কি ট্রেনটা ধরতে পেরেছে ? " মনের কোন গহিন কোনের স্টেশনের ট্রেন , কোন সীমান্ত পেরনো ট্রেন জানা নেই । তবে ট্রেনে চড়ার ফলাফল যে শিকড় হারানো আর ট্রেনের গন্তব্য যে বেঁচে থাকার এক ফালি আশিয়ানা , এ বিষয় কোন সন্দেহ নাই । আসলে একবার যে উদবাস্তু , তার শিকড় বরাবরের মতো বাঁধা পড়ে যায় শিকড় হারানোয় ।
রোহিঙ্গার মায়েরা তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে ,এভাবেই লড়াই করছেন - বেঁচে থাকার আশিয়ানার খোঁজে । রোহিঙ্গার মানুষ (হিন্দু,মুসলমান এবং বৌদ্ধ) আদতে আমাদেরই উদবাস্তু অতিতের বর্তমান বাসিন্দা । ভারতের ঐতিহ্যের প্রতি তারা আস্থা রেখেছেন । ভারত কখনোই অন্যায় ভাবে ছিন্নমূল মানুষকে ( যে কোন ধর্ম বা ভাষার বা জাতের) ফিরিয়ে দেয় নি । ওরা ভরসা রেখেছেন ভারতের উপর । ভারতের এক কোনে এক চিলতে জমিতে , রক্তের সেচ্ দিয়ে ওরা আবার ওনাদের ভবিষ্যতের চাষ করবেন । বরাবরের মতোই এবারও লাল ঝান্ডা ঈগল পাখির মতোই রক্ষা করবে ছিন্নমূল মানুষের অধিকার । কাল ছাত্র ফেডারেশন ও যুব ফেডারেশনের মিছিল , মায়ানমার দুতাবাস-এর লক্ষ্যে । মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার , সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক অধিকার ।গণতান্ত্রিক অধিকারের মিছিল । আমার ঠামির এখন জানা-বোঝার আর ক্ষমতা নাই । থাকলে রোহিঙ্গাদের ট্রেনটা কোন স্টেশনে থামবে ,সেই খবরটা অবশ্যই নিতেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন