শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

দুর্গা ও মনুস্মৃতি ইরানি ~ অবিন দত্তগুপ্ত

গতকাল মনুস্মৃতি ইরানির রাজ্যসভার বক্তব্যের একটি অংশ নিয়ে , আমার হাল্কা কিছু অশিক্ষিত সি পি এম সুলভ বক্তব্য আছে । আগে কোট-টা করি ,

"What is Mahishasur Martyrdom Day, madam speaker? Our government has been accused. I miss today Sugata Bose and Saugata Roy in the House - champions of free speech, because I want to know if they will discuss this particular topic which I am about to enunciate in the House, on the streets of Kolkata. I dare them this.
Posted on October 4, 2014. A statement by the SC, ST and minority students of JNU. And what do they condemn? May my God forgive me for reading this.
"Durga Puja is the most controversial racial festival, where a fair-skinned beautiful goddess Durga is depicted brutally killing a dark-skinned native called Mahishasur. Mahishasur, a brave self-respecting leader, tricked into marriage by Aryans. They hired a sex worker called Durga, who enticed Mahishasur into marriage and killed him after nine nights of honeymooning during sleep."
Freedom of speech, ladies and gentleman. Who wants to have this discussion on the streets of Kolkata? "

আচ্ছা প্রথম লাইনে উনি জিজ্ঞেস করেছেন , মহিষাসুর শহীদ দিবস আবার কি ? এবং শেষ লাইনে বলেছেন , এমন কথা কোলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন ?? জোট সঙ্গি সুগত আর সৌগত বাবুর উপর একটু রুষ্ট হয়েছেন , সে হতেই পারেন , ওদের নিজস্ব ব্যপার । এবার ভারতবর্ষের একজন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী , যদি নিজের দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় প্র্যাকটিসের ব্যপারে সম্পূর্ণ মূর্খ হন , তো দায় কার ? ভারতবর্ষের বিভিন্ন আদিবাসী- মূল নিবাসি জনগোষ্ঠী দুর্গা পুজার সময় মহিষাসুর উপাসনা করেন । তারা মনে করেন , ফর্সা চেহারার দুর্গা আসলে আর্য আক্রমণকারীর রূপক এবং মহিষাসুর ভারতের মুলনিবাসী অনার্য গোষ্ঠীর রাজা , যোদ্ধা । উনি টাইমস নাওএর ছাগল অর্ণব গোস্বামীর উপর এতো ভরসা রাখেন , চ্যানেলে ফোন করে ক্রন্দনরত জেনারেলকে সান্ত্বনা দেন , অথচ টাইমস গ্রুপের কাগজ পরেন না । এই খবর , এর আগে টাইমস অফ ইন্ডিয়াতেই বেরিয়েছে । লিঙ্ক ঃ ( http://timesofindia.indiatimes.com/…/articlesh…/23927688.cms ) । এবং হ্যা কোলকাতা গুজরাট নয় , কোলকাতার মানুষ অসহিষ্ণু নয় । কোলকাতা, ডায়েলেক্টিক বা ডিবেটে ভরসা রাখে । কলকাতায় , আপনি যা ইচ্ছে নিয়ে আলোচনা করতে পারেন , নইলে আপনাদের হনুমান ভাইয়েরা প্রকাশ্যে ঘর বাপসি নিয়ে আলোচনা করে ৮বি থেকে অক্ষত ফিরতে পারত না ।

এবার একটু ডাইগ্রেস করব । মেঘনাদ বধ কাব্য পড়েছেন মনু বাদী ইরানি ? মেঘনাদ কে ? অনার্য রাক্ষসদের সেরা যোদ্ধা , ট্র্যাজিক হিরো । রাক্ষস কারা ? যারা বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে থাকত । আপনার দেশের মূল নিবাসী , পৌরাণিক ভারতবর্ষের আসল বাসিন্দা । তাদের গায়ের রঙ কালো , নাক চোখ থ্যাবড়া । আর্যরা দারুণ দেখতে , চোখা নাক , ফর্সা । কিন্তু আদি ভারতবর্ষে তারা আগ্রাসনকারি । আর আদিবাসীদের তাদের চেহারার কারণে ডেমোনাইজ করার লক্ষেই , তারা রাক্ষস । ঠিক যেমন ডেমোনাইজ আপনারা করে থাকেন । মুসলমান মানেই সন্ত্রাসবাদী , বামপন্থী মানেই দেশদ্রোহী , লম্বা দাড়ি -বুরখা মানেই সন্ত্রাসের মদতদাতা , দলিত মাত্রেই নোংরা-অচ্ছুত । এই আর্যদের বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে , নিজের বাসস্থান রক্ষার আদিম ভারতের জনগোষ্ঠীর লড়াইয়ের নেতা ছিলেন এই রাবন , মেঘনাদ বা মহিষাসুর । তারা জানতেন , তাদের হেরে যাওয়া মানে তাদের ইতিহাসের বিকৃতি , তাদের গানের বিকৃতি , তাদের সংস্কৃতির বিকৃতি, তাদের ভাষার বিকৃতি । রাবণদের মতোই কালো আফ্রিকার এক সাহিত্যিক বহু বছর পরে , এই কারণেই বলেছিলেন " Until The Lions have their Own Historian , the history of the hunt will always Glorify the Hunter . " যতদিন না সিংহের নিজের ঐতিহাসিক জন্ম নিচ্ছে , ততদিন ইতিহাস শিকারির ছল-চাতুরিকেই গৌরবান্বিত করবে । সিংহের লড়াই কেউ জানতে পারবে না । মাইকেল মধুসূদন ছিলেন সিংহের ঐতিহাসিক । তিনি সিংহের দুর্দমনীয় লড়াই এবং কপটতার কাছে হার স্বীকারের গল্প নথিভুক্ত করে গেছেন । আপনি মধু কবি পড়েন নি , স্মৃতি ইরানি । বাংলার বাচ্চারা ৯-১০ ক্লাসে পরার সময় থেকেই পড়েছে । তাদের মনন আপনার মতো হিন্দুত্ববাদীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় ।

তা রাবন হেরে যাওয়ার পর কি হল ? বা মহিষাসুর বধের পর কি হল ? ইতিহাস রাবণদের খারাপ এবং আগ্রাসনকারিদের ভালো বানিয়ে দিল । কারণ ইতিহাস লিখলেন বিজয়ীদলের স্তাবক ঐতিহাসিকরা । রাবণদের গোষ্ঠীর , ভারতের মুল নিবাসী মানুষের সংস্কৃতি , তাদের গান , তাদের ভাষা , তাদের বসবাসের অধিকার সব হারিয়ে যেতে লাগল , হু হু করে । ভারতবর্ষের এক ভগ্নাংশ মানুষের বলা হিন্দী ভাষাকে , তাদের মাতৃভাষার উপর চাপিয়ে দেওয়া হল । তারা সরে গেলেন , লোক চক্ষুর অন্তরালে । এমনকি আমাদের বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও , আমি যে ভাষা লিখছি ,সে ভাষাও অনেক আংশেই অন্য ডায়ালেক্টকে একরকম একঘরে করে রেখেছে ।

সে যাই হোক , এক বন্ধু জিজ্ঞেস করেছেন , জে এন ইউ তে এই কর্মসুচীতে বামন্থীরাও অংশগ্রহণ করেছিল কি ? এবং আমরা বাম্পন্থীরা এই বক্তব্য সমর্থন করি কি না ? তার উত্তরে এবং স্মৃতি ইরানির "Freedom of speech, ladies and gentleman. Who wants to have this discussion on the streets of Kolkata? " উত্তরে এটুকুই বলার , দুর্গা পূজা বা অসুর পুজা কোনটাকেই বিরোধিতা বা সমর্থন করে না বামপন্থীরা । তবে হ্যা , বিজয়ীর উৎসব যদি বিজিতের রিচুয়ালকে বেয়াইনি ঘোষিত করতে চায় ,সেক্ষেত্রে বাম্পন্থীরা বিজিতের পাশেই দাঁড়াবে । তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার , নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার , তার দুঃখের গানের অধিকারকেই রক্ষা করবে ।

এমনটা নয় , যে মূলনিবাসী মানুষ আমাদের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছেন । সব হারালেও , লড়াইটা হারান নি । জঙ্গলের অধিকারের জন্য , কখনো বিদেশী শক্তির থেকে কখনো উঁচু জাতের নিষ্পেষণের থেকে আজদির জন্য তারা বার বার যুদ্ধ করেছেন , হেরে গেছেন, আবার যুদ্ধ করেছেন । লড়াই করেছেন বিরসা মুন্ডা , লড়াই করেছেন সিধু-কানহু ,লড়াই করেছেন রোহিত ভেমুলা । পাওনা এটাই ,এখন মূলনিবাসীদের পাশে বামপন্থীরাও লড়াই করছে । ভেমুলার পাশে লড়ছেন ,কানহাইয়া । এবারের ইতিহাসটা আপনারা লিখবেন না মনু স্মৃতি ইরানি । আমাদের-ও ইরফান হাবিবরা আছেন ।

জয় ভীম ।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন