সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ ?
সখীরি মোরি ডগর চলত মোসে করতহর
চঞ্চল চপল নটখট
মানতি নেহি কউ কি বাত
বিনতি করত ম্যাঁয় তো গেয়ি রে হার
সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ?
ওয়াপস গোকুল চল মথুরা রাজ
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
রাজদণ্ড ছোড় ভূমিপর ভাজ
ফির কাহে বাঁশুরি বাজাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
রাজ কাজ মন্ না লাগাও
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
রাতভর মাধব জাগত বে-চয়ন
কাহে আধিরাত সারথী বুলাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
উসে কাহে ভুল না পাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
বিরহা কে আঁসু কবকি পোছ ডালি
ফির কাহে দরদ জাগাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
সখীরি মোরি ডগর চলত মোসে করতহর
চঞ্চল চপল নটখট
মানতি নেহি কউ কি বাত
বিনতি করত ম্যাঁয় তো গেয়ি রে হার
সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ?
কি মুশকিল বলুন দিকি। এই আজকে জন্মাষ্টমির দিন। আমার এক তালেবর বন্ধু
তথ্যতল্লাশ করেটরে হিসেব দিলেন আজকে নাকি কেষ্টঠাকুরের ৫২৪১ তম জন্মদিন। সত্যি মিথ্যে
জানিনা। কিন্তু ভেবে বড়ই আহ্লাদিত হলুম, যে পাঁচ হাজার বছর আগেও, পাড়ার বৌ-মেয়েদের,
ফচকে ছোঁড়ারা একই ভাবে জ্বালাত। ওপরের গানের লাইন গুলোই ধরুন। পাড়ার বৌ যাবে জল
আনতে, চলার পথে এক ছোঁড়া এমন জ্বালায়, বৌটি জল আনতে কি করে যাবে, ভেবে পায় না
(সখি, জল ভরতে যাই কি করে বল তো?) অবিশ্যি শ্রীকিষেনজি মহারাজের নামে দিব্যি কেটে
কেউ বলবেন না, এই গান পাঁচ হাজার বছর আগেকার। মিঠি মিঠি ব্রজবুলি বড়জোর ৫০০ বছর
আগে এই খোলতাই রূপটি পায়। বৃন্দাবনে কেষ্টঠাকুরের দোলনায় টাটা কোম্পানীর ছাপ মারা
দেখে আলী সাহেব চমকে চোদ্দ হয়ে গেছিলেন। মনে করতে চেষ্টা করেছিলেন সে আমলে টাটা
কোম্পানী ছিল কিনা। গুরু আলি সাহেব ধার্মিক লোক। তাই সত্যযুগে টাটা কোম্পানীর
অস্তিত্ব নিয়ে ভেবেছেন। আমার মত পাপিষ্ঠ মানুষ অবিশ্যি কেষ্টা ব্যাটাকে নিয়েই
প্রশ্ন তুলে বসত। যাই হোক, এই অধম অ-সুর হঠাৎ গানবাজনা নিয়ে পড়ল কেন? আপনার
চক্ষুদুটি খুপরি থেকে বেরিয়ে তিন মিনিট পোলকা কিম্বা ফক্সট্রট নেচে আবার খুপরিতে
গিয়ে বসে আমার দিকে ড্যাবডেবিয়ে চেয়ে আছে নিশ্চই। ডরিয়ে মাত্। না-চিজ গান বাজনা নিয়ে কথা কইতে চায়না। সে বড় বেয়াদপি হবে, গুস্তাখি হবে। প্রথমে উল্লেখ করা গানটা সেদিন শুনলাম একটা সিনেমায়, আর
মোটামুটি সাধারন হতে থাকা একটা সিনেমা আমার কাছে এই গানের মুহুর্তটা থেকে অমূল্য
হয়ে গেল। খুলে কই।
গানখানা শুনেছি যে ছবিতে, তার নাম “খুদা কে লিয়ে”। আরো ব্যাপার হলো গিয়ে,
ছবিটা পাকিস্তানের। পাকিস্তানের ছবি কি করে আমার হাতে এলো, সে কেচ্ছায় আর
যাচ্ছিনা। আজকাল ইন্টারনেটের কল্যানে সব কিছুই সম্ভব, তবে কিনা পদ্ধতিটি আইনসম্মত
কিনা, সে নিয়ে প্রশ্নটশ্ন উঠলে আমি বড্ড ইয়েতে পড়ে যাব। তাই ওসব থাক। পাকিস্তানের
সিনেমা নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের ভাসাভাসা কয়েকটা নামের বাইরে খুব একটা ধারনা আছে
বলে আমার মনে হয়না। অন্তত আমি এবং আমার চেনাপরিচিত মহলের ধারনা সেরকমই। কাঁটাতারের
বেড়া ওঠার আগে ভারতে সিনেমার বড় কেন্দ্র যা যা ছিল, তার মধ্যে লাহোরও পড়ত। এমন কি
যশ চোপড়া, রামানন্দ সাগর, দেব আনন্দ, চেতন আনন্দ, বলরাজ সাহানি, প্রান এর মত
প্রখ্যাত মুম্বাই ফিল্ম জগতের নক্ষত্ররা তেনাদের ফিল্ম জীবনের শুরু করেছিলেন
লাহোরের ফিল্ম স্টুডিও থেকে। কামিনি কৌশল, অনুপম খেরের বংশের শেকড় ওই লাহোরের
মাটিতে। রাজ কাপুর, দিলিপ কুমার দের পৈত্রিক ভিটে পেশাওয়ারে। সে বাড়ি এখনো
পাকিস্তান সরকার সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন। সুনিল দত্, গুলজার (সম্পুরন সিং)
পাকিস্তান পাঞ্জাবের ঝিলম জেলার লোক, রাজেশ খান্না হলেন ভুরেওয়ালার আর আনন্দ বকশি
হলেন মূলতানের মানুষ। রাজকুমারের বংশের ইতিহাস জড়িয়ে বালুচিস্তানের সঙ্গে। অমিতাভ
বচ্চনের মা লাহোরে কলেজের লেকচারার ছিলেন। কাজেই সিনেমার ব্যাপারে পাকিস্তান একদম অগা, এটা
বললে কত্তা, ঘোড়ায় হাসব। ভাগাভাগির পর, ওদিক থেকে লোকজন এদিকে যেমন এলেন, এদিক
থেকেও নুরজাহান বা সাদাত হোসেন মান্টোর মত প্রতিভাধর মানুষ ওদিকে গেলেন। যদিও
পাল্লা মুম্বাইয়ের দিকেই কিঞ্চিত ঝুলে রইল। সবচেয়ে বড় কথা, সিনেমায় যাঁরা টাকা
ঢালবেন, তাঁদের সিংহভাগ গিয়ে গেড়ে বসলেন মুম্বাই তে। ফলে, লাহোরের ফিল্ম জগত
গোঁত্তা খেতে লাগল। আর সেই গুঁতোর ঠ্যালা লাহোর আজও পুরো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
১৯৫০ এর দশকে ভারতবর্ষে ফিল্ম নিয়ে অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজ হয়। প্রত্যক্ষ
কাজের কথায় ঢুকছিনা। সে সব তো পন্ডিতেরা চর্চা করবেন। তবে আমার মনে হয়, সত্যজিত ঋত্বিক
মৃনালরা যে ভাবে ফিল্ম সোসাইটির মাধ্যমে সিনেমার দর্শক তৈরি করেছেন, সেটা ভারতীয়
সিনেমার সাবালক হয়ে ওঠার পথে একটা বিরাট পদক্ষেপ। দর্শক না তৈরি হলে, তাঁদের ছবি
দেখত কে? আর সিনেমা এগোত কি করে? পাকিস্তানে এরকম কোন আন্দোলন হয়নি। যার ফলে,
পাকিস্তানে “কোডোপাইরিন মার্কা ছবি” বেশ কিছু তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু পথের
পাঁচালি, ভূবন সোম দূর অস্ত। তাই বলে এটা ভাবা অনুচিত, ওপারে প্রতিভার অভাব। নুসরত
ফতে আলী খানের মত সঙ্গীত পরিচালক যেখানে কাজ করেছেন, সেখানে প্রতিভার অভাব মেনে
নেওয়া যায়না। কিন্তু সিনেমা তো শুধু প্রতিভা দিয়ে হয়না। দক্ষ সংগঠক চাই। মানিকদা
কে জিজ্ঞেস করে দেখুন দিকি, প্রোডাকশন ম্যানেজার, কি নিদেন পক্ষে কামু মুখুজ্যে না
থাকলে মানিকবাবু এক্কেরে মনিহারা হয়ে পড়তেন কিনা। খুচরো ব্যবস্থা ও জোগাড়যন্ত্রের
ঝক্কি সামলানো বড্ড কঠিন কাজ। পাকিস্তানে প্রোডাকশন ম্যানেজার নেই, তা নয়। কিন্তু সব
মিলিয়ে হয়ত এত রকমের প্রতিভাধর লোকজন একটা শিল্পে এসে পড়েন নি, আর তার কারন,
কিছুটা বোধহয় টাকার অভাব। যাই হোক, সে সব বড়ই কঠিন আর্থসামাজিক কিস্যা, তাই ওদিক মাড়াচ্ছিনা। ভৌগলিক
অবস্থান ধরলে পাকিস্তানের পশ্চিমে ইরান, পূবে ভারত, আর মাথার ওপর চীন। সিনেমা
বিশ্বে এনারা নন্দাদেবী, অন্নপূর্না, ধৌলাধর। মাঝখানে পাকিস্তানের ছবির উচ্চতা ঠিক কত?
পাকিস্তানের ছবি আগেও দেখেছি। তবে সংখ্যায় খুব কম। সে ছবি কেমন? বেশীরভাগ
উর্দু, কিছু পাঞ্জাবী। আমাদের ভোজপুরি ছবির সঙ্গে বিস্তর মিল। নায়ক বেশীরভাগ
ক্ষেত্রেই সুপারম্যান – “মর্দ”। মুম্বাইতেও হাজারে হাজারে এসব ছবি হয়েছে ৭০-৮০র
দশকে। মূল ধারার পাকিস্তানি ছবি, গড়পরতা সস্তা গোছের “বলিউড মসালা” ছবির চেয়ে
আলাদা কিছুই না। তবে আমাদের এই বলিউড কিন্তু মাঝে মধ্যে চমকে দিত চিরকাল, আজও দেয়, আরো বেশী
করেই দেয় বোধহয়। ঠিক তেমনই কিছু পাকিস্তানি ছবিও আছে, যা গড়পরতা পাকিস্তানি ছবির
চেয়ে আলাদা, আর এই ছবিগুলোই আমাদের চোখের সামনে এক অন্য পাকিস্তানকে তুলে ধরে। খুব
সাম্প্রতিক কিছু মূল ধারার পাকিস্তানি ছবির নাম দিচ্ছি। “রং নাম্বার” –
রোম্যান্টিক কমেডি, বাপ ছেলের দু রকম স্বপ্ন ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে, সেই সঙ্গে
সুন্দরী প্রতিবেশী নায়িকা। “করাচি টু লাহোর” – এও হাসির ছবি, প্রেমিকার বিয়ে ঠিক
হয়ে যাচ্ছে লাহোরে শুনে নায়ক পাড়ি দেয় করাচি থেকে, এবং নানান দুর্ঘটের পর শেষে
মধুরেন সমাপয়েৎ। “বিন রোয়ে” – দুই বোনের প্রেম একই ছেলের সঙ্গে। বড় বোনের বিয়ে হয়
ছেলেটির সঙ্গে ও সন্তান জন্মের সময় মৃত্যু, ছোটো বোন তাদের সন্তানকে নিয়ে আবার
সংসার পাতে ছেলেটিকে বিয়ে করে। “না মালুম আফরাদ” – তিন যুবকের মজাদার জীবন সংগ্রাম
ও সাফল্য, কিছুটা বলিউডের গোলমালের মত। “021” – বলিউডের এজেন্ট বিনোদ আর ফ্যান্টম কে যোগ করে দুই
দিয়ে ভাগ। “মায়া” – ভূতের ছবি। “বার” – “সন্ত্রাসবাদের বিরূদ্ধে পুলিস ও প্রশাসনের
লড়াই” “ইয়ালগার” – স্বাত উপত্যকায় মৌলবাদী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান ও বীরত্ব।
“জওয়ানি ফির নেহি আনি” – এটা নিয়ে আর আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই, নামেই প্রকাশ।
এই ছবিগুলো আমার ধারনা আমাদের দেশেও ভালই চলবে। এরকম ছবি বলিউডে প্রায় প্রতি
সপ্তাহেই কিছু না কিছু বেরোয়।
এবারে আসি কিছু অন্য ছবির কথায়। যে ছবিগুলো আমাকে পাকিস্তানি সিনেমা সম্পর্কে
আগ্রহী করে তুলেছে। প্রথমেই বলব “মুর” ছবির কথা। আমাদের ভারতবর্ষে রেলওয়ে ব্যবস্থা
পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সেরা। পাকিস্তান ও ভারত দুজনেই ৪৭ সালে ব্রিটিশ রেলের অংশ
লাভ করে উত্তরাধিকার সুত্রে। কিন্তু ভারতের মত পাকিস্তান রেল এত গুরুত্ব পায়নি। ফলে
পাকিস্তান রেলওয়ে আজকে রূগ্ন। তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বালুচিস্তানের এক সুদূর প্রান্তিক রেলষ্টেশনের
ষ্টেশনমাস্টার, তার অন্য জীবিকা ও জীবনের হাতছানি ও দ্বন্দের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে
পাকিস্তানের সমাজ ও মানুষের শ্রেনীবিভাগ ও দ্বন্দ। দেখবেন, এই রেল আর ষ্টেশন
মাস্টার, জীবন ও জীবিকার জন্যে হাজার একটা প্রতিকুলতার সঙ্গে যুঝতে যুঝতে কখন যেন
তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র ও খেটে খাওয়া মানুষের প্র্তীক হয়ে উঠতে চাইছে। তবে
পাকিস্তানি ছবি ও ভারতীয় ছবির মধ্যে তফাত এখানেই, যে পাকিস্তানি ছবি এখানকার মত
খুঁটিনাটি ও কলাকৌশলের দিকে নিখুঁত নয়। হওয়া সম্ভবও নয়। এটা কিছুটা টাকার অভাব
থেকেও হয়, আর ভাল ছবি তৈরির অনভিজ্ঞতা থেকেও হয়। চিত্রনাট্য কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল,
অতিসরলিকৃত, অভিনয়ের মাত্রা সমান নয়। কিন্তু তবুও, চেষ্টা দেখে তারিফ করতেই হয়। আর
তারিফ করতে হয় এমন একটা বিষয়ের ওপরে ছবিটা তৈরির জন্যে। আর হ্যাঁ, পাকিস্তানি ছবির
সঙ্গীত, অবশ্যই মন্ত্রমুগ্ধ করার মত। ভিষন ভিষন ভিষন ভালো।
পরের ছবির কথায় আসি। এ ছবিও নিখুঁত নয়। এই চিত্রনাট্য বলিউডের উঠতি লোকজনের
হাতে পড়লেও অনেক ঘসামাজার জায়গা থেকে যাবে। ছবির নাম “খুদা কে লিয়ে”। শুরুর দিক থেকে কাহিনীর
বিশেষত্বও তেমন কিছু নেই। লাহোরের বেশ বড়লোক বাড়ির দু-ভাই মনসুর আর সারমাদ গান
বাজনা করে। গানের অনুষ্টানে মৌলবাদী হামলা হয়, কেননা গান বাজনা ইসলামে ভাল চোখে
দেখা হয়না। ছোটো ভাই আস্তে আস্তে মৌলবাদীদের খপ্পরে পড়ে, গান বাজনা ছেড়ে দেয়। এদিকে তাদের এক
কাকা থাকে লন্ডনে, সেখানে স্ত্রী বিয়োগের পর একজন সাদা মহিলার সঙ্গে লিভ-টুগেদার।
মেয়ে মরিয়ম কলেজে পড়ে, ও তার একটি সাদা বয়ফ্রেন্ড আছে, যেটা বাবার পছন্দ নয়। ধর্ম
বজায় রাখতে মরিয়ম কে নিয়ে বাপ পাকিস্তান আসে, ও বিয়ে দিতে চায় মনসুরের সঙ্গে।
কিন্তু মনসুর কিছুতেই রাজি হয়না। সে আমেরিকায় চলে যায় সঙ্গীত শিক্ষার জন্যে। এদিকে
লুকিয়ে মিথ্যে বলে মরিয়মকে উপজাতীয় এলাকায় নিয়ে এসে সারমাদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তার
বাপ লন্ডন ফিরে যায়। মেয়েকে বিয়ের পর জোর করে আফগান সীমান্তে উপজাতীয় গ্রামে আটকে
রাখা হয়। মনসুর আমেরিকায় সঙ্গীত বিদ্যালয়ে পাকিস্তানি সঙ্গীত পরিবেশন করে (আপনি
চাইলে এখানে শুনে দেখতে পারেন - https://www.youtube.com/watch?v=Os5OETlK560) । যে গানের কথা আমি
প্রথমেই লিখেছি। ভেবে দেখুন, এ সঙ্গীত উঠে আসছে এমন এক দেশের কন্ঠ থেকে, যাকে এ
দেশের বেশীরভাগ মানুষ সন্ত্রাসবাদী, মৌলবাদী, অশিক্ষিত ভাবে। রাধা কৃষ্ণর প্রেম
নিয়ে এত দরদী গান যে গায়, সে কি আমার শত্রু বা কোন মানুষের শত্রু হতে পারে? ভেবে
দেখবেন। এ ছবিতে মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের মানবিক রূপ ও ব্যাখ্যার বিতর্কের একটা
দৃশ্য আছে আদালতে। আমাদের নাসিরুদ্দিন শাহ এই দৃশ্যে অনবদ্য অভিনয় করেছেন। মনসুর
কে ৯/১১র পর আমেরিকান পুলিস সন্ত্রাসবাদী বলে গ্রেফতার করে ও অকথ্য অত্যাচার করে
মানসিক ও শারীরিক ভাবে পঙ্গু করে দেয়। ছবির শেষে এসে পুরো পরিবার আবার এক হয়।
শারমাদ আবার গান গায়। আর মরিয়ম মুক্ত হয়েও লন্ডনে বয়ফ্রেন্ডের কাছে ফিরে না গিয়ে
আবার ফিরে যায় সেই উপজাতীয় গ্রামে, আর একটা স্কুল খোলে সেখানকার শিশুদের জন্যে। অতিনাটকিয়তা
আছে, আছে অতিসরলিকরন। অভিনয়ের দুর্বলতা আছে। চিত্রনাট্যের ও দুর্বলতা আছে। কিন্তু
সব ছাপিয়ে যেটা চোখে পড়ে, সেটা হল পাকিস্তানি সমাজ, মানুষ ও তার ফরিয়াদ। তার
বদলাতে চাওয়ার ইচ্ছে। অবশ্যই এটা বলছিনা যে পাকিস্তানের সব মানুষ ই এইরকম ভাবেন।
কিন্তু ছবিতে এটুকু অন্ততঃ বোঝা যাচ্ছে, অশিক্ষা ও ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে
চাইছে পাকিস্তানের একটা অংশ। ভারতেরই মত। হয়ত বাধা বিপত্তি প্রতিকূলতা সেখানে অনেক
বেশী। তবুও সে লড়ছে।
এর পরের ছবির কথায় আসি। ছবির নাম “দুখতার”। বাল্যবিবাহ এবং অশিক্ষার কবল থেকে মেয়েকে বাঁচাতে মা-মেয়ে
গ্রামের বাড়ি থেকে পালায়। এক ট্রাক ড্রাইভারের ট্রাকে উঠে বসে রাস্তায়। পেছনে ধাওয়া
করেছে তার পরিবার, বেরাদরির লোকজন। পেলে কিছুতেই ছাড়বেনা। এমন অবস্থায় ট্রাক ড্রাইভার কি করবে?
সে কি নিজের জীবন বিপন্ন করে মা-মেয়েকে নিরাপদে লাহোর পৌঁছে দেবে? সব গল্প বলে
দেবোনা। রূদ্ধশ্বাস ছবির বাকিটুকু আপনি নিজেই দেখবেন। এমনই এক ছবি “চামবাইলি”। গনতন্ত্রের
নামে গোষ্ঠীবাজি আর মূল্যবোধের অবক্ষয়ে হল চামবাইলির বিষয়বস্তু। এ ছবি কিন্তু
ভারতীয় ছবি কে টক্কর দিতে পারে। যদিও নাম না করে এক কাল্পনিক দেশ ও শহরের কথা
রয়েছে। তবুও বুঝতে এতটুকু অসুবিধে হয়না। আর দেখতে দেখতে নিজেদের দেশের বহু চেনা
পরিচিত ঘটনার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ ? কি করে দেখবেন
পাকিস্তানি ছবি? সত্যি বলতে কি আমার এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। তবে বেশীরভাগই
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিওর সাইটে পাওয়া যায়। এ দেশের বিভিন্ন ফিল্ম ক্লাব গুলো
ব্যবস্থা করতে পারে প্রদর্শনির। সে ভাবেও দেখা যায়। কিন্তু মোটের ওপর পাকিস্তানি
ছবি দেখার ব্যবস্থা করা মোটে সোজা কাজ না। তবে কিনা আপনার সিনেমা প্রেম যদি সত্যিই
থেকে থাকে, দেখার ব্যবস্থা আপনি করেই নেবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রেমে মানুষ কি না
করে? শ্রীকৃষ্ণ রাজবেশ রাজদন্ড ছেড়ে মাঝরাতে যমুনা পেরিয়ে গোকূলে যাচ্ছেন, কেন
যাচ্ছেন জানা নেই, তবু যাচ্ছেন। রাধা পরের ঘরের ঘরনী, বিরহের চোখের জলও কবেই
শুকিয়েছে। তবু প্রেম টেনে আনে।
সুবহ সুবহ কা খয়াল আজওয়াপস গোকুল চল মথুরা রাজ
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
মনোহর বেশ ছোড় নন্দরাজ
সর সে উতরকে সুন্দর তাজরাজদণ্ড ছোড় ভূমিপর ভাজ
ফির কাহে বাঁশুরি বাজাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
কৌন সি আনোখা গীত গায় পিকাকুল
বিরহন্ লাগে ফির হৃদয় আকূলরাজ কাজ মন্ না লাগাও
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
পূর নারী সারি ব্যাকূল নয়ন
কুসুম সাজা লাগে কন্টক শয়নরাতভর মাধব জাগত বে-চয়ন
কাহে আধিরাত সারথী বুলাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
ধীরে ধীরে পঁহুছত যমুনা কে তীর
খান খান মাধব বিরহা মদীরউসে কাহে ভুল না পাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
তুমহারি পিরিয়া আব পুরি ঘরওয়ালি
দুধ নবন ঘিউ দিনভর খা লিবিরহা কে আঁসু কবকি পোছ ডালি
ফির কাহে দরদ জাগাও?
মথুরা নগরপতি কাহে তুম গোকুল যাও?
আপনিও যাবেন। ইতিউতি। পাকিস্তানি ছবি, ইরানি ছবি, চিনের ছবি দেখবেন। দেখবেন
যতই বৃন্দাবনের মাটি থেকে উঠে আসুক, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের মতই সিনেমার ভাষাও
সার্বজনীন। সেখানে
টাটা কোম্পানির ছাপ, কি পাকিস্তান-ইরানী ছাপ থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু
শ্রীকৃষ্ণের-সিনেমা সার্বজনীন মানবিক আবেদনের অস্তিত্ব প্রশ্নাতীত। মুখের ভাষা না
বুঝলেও, ঠিক বুঝে যাবেন সিনেমার ভাষা। আর বুঝবেন, হলিউড-বলিউডের বাইরের, সিনেমার
অনেক অনেক বড় একটা জগৎ আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন