বুধবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯

কাবাব রুটি ও পাহাড়ি চটির গপ্প ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

- যাব্বাবা, এ তো গলা ছিপি হয়ে যাবে গিলতে, রুটি গুলো হিমঠান্ডা, আর কাবাবও তথৈবচ
- কি করি বলুন তো? এই মাঝরাত্তিরে আমি কোত্থেকে পোলাও কালিয়া পাই?
- পোলাও কালিয়া কে চেয়েছে হে? এট্টু জল পেলেও ... শুকনো রুটি তো গিলতে পাচ্চিনা এই মাঝরাতে ...
- জল দিয়ে রুটি গিলবেন? এই ঠান্ডা পাহাড়ি দেশে যেখানে সেখানে জল খাওয়া কি ঠিক আপনার? আপনি শহুরে মানুষ...
- সে তোমাকে ভাবতে হবে না। কত ঘাটের জল খেয়ে হজম করে দিলুম
- সে করেছেন, বেশ করেছেন। এখন এখানে ওই নোংরা কুঁজোর জল খেয়ে যদি আপনার পেট খারাপ হয়, কলেরা হয় , তাহলে জবাবদিহি কে ...
- বড্ড বকবক করো হে ছোকরা ... থাক , আমার আর খেয়ে কাজ নেই, শুয়ে পড়ো দিকি।
- আপনি কিছু না খেলে যে উঠতে পারবেন না। কাল যে অনেক রাস্তা হাঁটা বাকি
- ও আমি ঠিক ...
- পারবেন না। আরে আমি আপনার গাইড। পাহাড়ে গাইডের কথা শোনার তো একটা নিয়ম আছে, না কি? 
- বেশ, হুকুম কিজিয়ে উস্তাদ
- আপনাকে খেতেই হবে
- কিছুতেই ওই লেড়ো বিস্কুট মার্কা খড়খড়ে রুটি আর জুতোর শুকতলা মার্কা কাবাব আমি খাবো না। ভুখ জিন্দা রহে।
- আপনি ... আপনি ... কি জেদি লোক রে বাবা... মহা মুশকিলে পড়লাম... একে গায়ে জ্বর, তার ওপরে বলছে খাবে না...
- খুব মুশকিলে পড়েছ, তাই না ভকৎরাম? আমি লোকটাই এরকম। জেদি, একগুঁয়ে। মুশকিলে ফেলি সবাইকে। ব্রিটিশ সরকারও আমাকে মুর্তিমান শীরঃপিড়া মনে করে।
- সে আর বলতে বোসবাবু? তারা এখন গোটা ভারত তোলপাড় করে আপনাকে খূঁজছে, কিন্তু ভাবতেও পারছেনা, সুভাষ বোস খাইবার পাস পেরিয়ে আফগানিস্থানের একটা অজ গাঁয়ে সরাইখানায় এক গাদা নোংরা পোশাক পরা গরীব পাঠানের মধ্যে গায়ে জ্বর নিয়ে শুয়ে আছে, আর তিন দিন অভুক্ত থেকেও বাচ্চা ছেলের মত জেদ করে খেতে চাইছেন না।
- রোটি তোড়ো, তুম ভি খাও, হাম ভি খায়েগা ভকৎরাম তলোয়ার। আমি জানি তুমি কিচ্ছু খাওনি, আমাকে ডাহা ঝুট বলেছ। 
- কি করে ধরলেন বোসবাবু? 
- ওসব ছাড়ো ছোকরা। একবার বেরিয়ে দেখো তো হে, যদি সরাইয়ের পাশে চায়ের দোকানটা খোলা থাকে...
- চা পেলে খাবেন তো? 
- তুম ভি খাওগে, হাম ভি
- আভি আয়া বোসবাবু

** ভকৎরাম তলওয়ারের স্মৃতিকথা থেকে সংগ্রহ করা একটা ছোট্ট ঘটনা। চা পাওয়া গিয়েছিল এবং দুজনে চায়ে ডুবিয়ে সে রাতে রুটি ভাগ করে খেয়েছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন