শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

সিটিজেন আইন ও এনআরসি ~ রোহন কুদ্দুস

যে মুসলমান সহনাগরিকের দিকে পাঁথর ছোঁড়েন, যে মুসলমান রাস্তায় আগুন জ্বালান, যে মুসলমান ক্যাবের বিরোধিতায় ভাঙচুর করেন, তাঁদের উসকানি দেয় রাজনীতি। সেই রাজনীতি, যা সংখ্যালঘুদের উন্নতির কথা আওড়ে তাদের বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করে নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে চায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এ রাজ্যে মুসলমানদের কী উন্নতি হয়েছে সে সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই, কিন্তু সংখ্যাগুরু সমাজ থেকে তাদের আলাদা করে এনে তাদের প্রতি রাজ্যের অবশিষ্ট মানুষের অবিশ্বাস তৈরিতে মমতা পুরোপুরি সফল। রাজ্যটা তিনি সোনার থালায় বসিয়ে বিজেপি-র হাতে তুলে দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যা মুসলমানদের নিয়ে করেছেন, বিজেপি সেই একই জিনিস হিন্দুদের নিয়ে করছে। আমার ছোটবেলায় 'ভোটব্যাঙ্ক' কথাটা মুসলমান শব্দের সঙ্গে জুড়ে ছিল। এখন দেখি সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু সবাই ভোটব্যাঙ্কে পরিণত হয়েছে। ফলে মূল্যবৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব, অর্থনীতির বৃদ্ধির হার থেকে কৃষকের দুর্দশা-- এসব নিয়ে একজোট হয়ে রাজাকে প্রশ্ন করার মতো মানুষ আর অবশিষ্ট নেই। তার ওপর বস্ত্র, বাসস্থান, খিদে-- এগুলোর থেকেও আরও গভীরে গিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিয়ে রাজা নিশ্চিন্ত।

ক্যাবের ফলে হিন্দু 'শরণার্থী'রা নিরাপদ, ফলে ক্যাব সমর্থন করাই যায়-- এমন আগুনে হাত না সেঁকাই ভালো। ক্যাব কোনও বিচ্ছিন্ন আইন নয়। এর প্রয়োগ করা হচ্ছে আসামের এন আর সি-তে বিজেপি-র প্রতি তৈরি হওয়া অবিশ্বাসকে প্রশমিত করতে। আর এই এন আর সি কাকে ঘরছাড়া করবে আমরা কেউই জানি না। আবার ক্যাব মুসলমান 'রিফিউজি'দের প্রত্যাখ্যান করবে, অতএব মুসলমান হিসাবে রাস্তায় নামা দরকার, এমন চিন্তাও পাশে সরিয়ে রাখা আশু প্রয়োজন। ক্যাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হোক ধর্মনির্বিশেষে। মানুষের একজোট হওয়া জরুরি, তৃণমূল বা বিজেপি-- দু-দলেরই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে 'না' বলা জরুরি। রাজ্যটা 'নারায়ে তকবির' আর 'জয় শ্রীরাম'-এর মধ্যে ভাগ হয়ে গেলে আগুন জ্বলবে সাধারণ মানুষের ঘরে, এই সহজ সত্যিটা আমাদের মাথায় ঢুকছে না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন