মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮

ওহা! ওস্তাদ তাজ বলিয়ে ~ তাপস দাস

তাজমহলের সামনে ওস্তাদ জাকির হুসেন বলতেন-"ওহা! ওস্তাদ ওহা! তাজ বলিয়ে।" বাড়িতে আপ্যায়ন মানেই চা। চা মানেই বাগান। রোমান্টিক আনাগোনা । বাগান মানেই কুলি কামিন। সাগিনা মাহাতো। চা বাগান মানেই লক আউট। গলা চিরে চিৎকার- " দিনু পরছ্ । দিনু পরছ্ । হুনদই ন। হুনদই ন। মিনিমাম ওয়েজ দিনু পরছ্।

সারে চার লক্ষ শ্রমিক। প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ পেটের পরিবার। ২৭৮টি বাগান। উত্তরবঙ্গ। ২০১৬ সালে গত ১০০ বছর থেকে চলতে থাকা রেশন বন্ধ করেছে সরকার। এমন কোন বাগান নেই যেখানে বিদ্যুৎ. লকড়ি, বিজলি,স্বাস্থ্য শিক্ষা কোনটার দায়িত্ব পালন করছে সরকার । ২০১৪ সালে শেষ ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ১৩২ টাকা দৈনিক মজুরি। মাজাক আর কি! ১৭ তে চুক্তি শেষ। শ্রমিকেরা মেনে নেয় নি। ২০১৪ সালে থেকে চলছে জয়েন্ট ফোরামের নেতৃত্বে আন্দোলন । ২০১৮ সালে ২৩ শে জুলাই থেকে ছিল শ্রমিকদের ঘোষিত বাগান ধর্মঘট। শ্রমিকেরা থেমে যায়। সরকার অনুরোধ করে। শ্রমিক সরকারকে সময় দেয় ৩০শে জুলাই পর্যন্ত। রাজ্যে যে উন্নয়নের সরকার চলছে, মিটিং হবে উত্তর কন্যায়।

৬ই আগস্ট। আজ ছিল ত্রিপাক্ষিক বৈঠক, শিলিগুড়ির সাধের উত্তর কন্যায়। নজিরবিহীন ভাবে এই প্রথমবার কোন সরকার শ্রমিকদের সাথে কোন আলোচনা না করে করেই একতরফা ১৭২ টাকা দৈনিক মজুরি ঘোষণা করে, কোন রকম আলোচনা, সৌজন্য না দেখিয়েই, একতরফা ভাবে ত্রিপাক্ষিক সভা ভেঙ্গে চলে যায়। অতীতে যা কখনও হয়নি, কোন সরকারের আমলে। 

তাহলে এবার শ্রমিকেরা কী করবে ? জয়েন্ট ফোরাম কী করবে? ঘরে ফিরবে ? সহ্যের একটা সীমা থাকে।

না। উত্তর কন্যায় অবস্থান চলছে। চলবে। চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত, সরকার আবার ত্রিপাক্ষিক সভা পুনরায় ডেকে শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় বসা পর্যন্ত। ততক্ষণ পর্যন্ত । অনির্দিষ্ট কালের জন্য। পেটের টানে লাগাতার আন্দোলন।

বাগানে বাগানে ধর্মঘট।

বাগানের হাজারে হাজারে কুলি কামিন, শ্রমিক মার্চ করবে উত্তর কন্যা শিলিগুড়ির দিকে।

বাকিটা ইতিহাস বলবে। খালি পেট থেকে দলা পাকানো বেরিয়ে আসা স্লোগান বলবে।

P. S উত্তরকন্যার গেট বন্ধ করে দিয়ে খাবার জল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ভিতরে আটকে রয়েছে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে গিয়ে অবস্থান শুরু করা চা শ্রমিক নেতৃত্ব। পুরো ফ্যাসিস্ট কায়দায় আটকে ফেলা হল সব নেতৃত্বকে। কাউকে বার হতে দেওয়া হচ্ছেনা। খাবার, জল সরবরাহের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জীবন জীবিকার যুদ্ধে চা শ্রমিকদের পক্ষ নিন। রুটি রুজির লড়াইয়ের পক্ষ নিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন