যা যা ছিল এলিট মধ্যবিত্তের নিজস্ব অভিজ্ঞান, সবই কালের গতিতে ম্লান। ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন সে'ও তো নিভন্ত প্রায়।
তবে আদৌ সাহিত্য নিয়ে এত মধ্যবিত্ত কচকচি কেন? নতুন মধ্যবিত্তর তো রয়েছে আইপিএল, এল ক্লাসিকো। ক্লাসিক্যাল পানুচর্চা বা প্যানপেনে টিভি সিরিয়াল। এখন সব অশৈলী কাণ্ডই জিও মানে গভর্নমেন্ট অর্ডারে ঘটে নইলে এনজিওরা ঘটায়।
এ' দু'টির যে কোনও একটি থাকতেই হবে উদ্যোগের মূলে। তথাকথিত 'প্রতিষ্ঠান'ই একমাত্র 'প্রতিষ্ঠান্ন' দেবে এ'টা নেহাত বাতিল এক বস্তাপচা ধারণা। এই ধর্মযুদ্ধে মতান্তরে এই অধর্মযুদ্ধে কেউই অপ্রতিষ্ঠান নয়। বড় পত্রিকা ছোট পত্রিকা সকলেই 'প্রতিষ্ঠান'।সব খানেই সেই প্রসাদ নামের কল্পিত উচ্ছিষ্ট পাবার উমেদারির প্রতিযোগিতার আসর।
হ্যাঁ, পাঠকসংখ্যা একটা ব্যাপার বৈকি। সেই পাঠক নোবেল প্রাইজের কমিটিতে থাকেন না। নোবেল চুরি করেন না। আন্দাজ করি ইদানিং সাহিত্যও পড়েন না। ছাপার অক্ষরগুলি গল্পের ছদ্মবেশে, প্রবন্ধের রাজপোষাকে, খাট-সাহিত্য আর খাঁটি সাহিত্যের মাঝামাঝি কোনও এক অবস্থানে দোদুল্যমান থাকে যদিও বা, কবিতার পাতাগুলোকে স্বয়ং কবিও নিজের লেখার পাতাটি ছাড়া গ্রাহ্য করেন না। তবু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখতে কার না ইচ্ছে করে। তাই সম্পাদককে ছাপার অক্ষরে চেতাবনি দিতে হয়, পকেটে কবিতা গুঁজে দিয়ো না কেউ… টেলিফোন তদবির নিষিদ্ধ …ইত্যাদি।
'সম্পাদক'এর কাজটুকু নিশ্চিত ভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক। কোন লেখাটি পত্রিকার মানবর্দ্ধক, কোনটি বিজ্ঞাপন সংগ্রাহক, কোনটি পারস্পরিক পিঠ চুলকানোর আসর থেকে লব্ধ, কোন লেখাটি পঞ্চবানবিদ্ধ, এই এত সব বিবেচনা করে যে প্রতিষ্ঠান তারই নাম সম্পাদক, সে তথাকথিত 'বড়' বা পাতিরাম রিজেকটেড আতিপাতি যে কোনও পত্রিকারই হোক না কেন। ব্যবসা, যশলোভ আর পাঠকসংখ্যা ছোট বড় সবার টার্গেট।টাটা বিড়লা আম্বানি বড় তাই লড়াইহীন নরক, আর পাড়ার ঘাম ঝরানো মুদি দোকানি ক্ষুদ্র সংগ্রামী ভাই আমার, এরকম প্রলেতারিয়েত ভাবনা অলীক।
বামেদের গাঁ ছাড়া করার মহান কাজটাই তারুণ্যের প্রতীক ছিল বুঝি? তবে কেন ধন্দ লাগে যখন শুনি যে সে' কাজে ব্রতী পশুখামারের তরুণ তুর্কী ঘোড়ারা ভোটের মরশুমে খেপ খাটতে গেছে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের হয়ে? লিটল ম্যাগাজিনের 'নন্দীগ্রাম' সংখ্যাও কি কম দেখা গেছিল সে সময়? সবটাই প্রতিষ্ঠান আর তার দখলদারির খেলা।
তাই বলি কে প্রতিষ্ঠানের মুখ আর কে মুখোস, কার কোঁচড়ে ডলার আছে আর কার মুঠোতে ছড়ানোর যোগ্য খইটুকুও নেই, এ তর্ক স্থগিত রেখে যে যতটুকু লিখতে পারে লিখে যাক। কেউ লেখা চাইবে। কারওর দরজায় মাথা খুঁড়তে হবে। আডৌ কেউ না ছাপলেও নেট আছে।
ও হো বলতে ভুলেছি। নেটজগতও তো অংশত প্রাতিষ্ঠানিক আজকাল। মানে ওই নেটজিনে লেখক হিসেবে প্রবেশাধিকার, ছাপা কাগজের মতই রিজার্ভড। হে যশোকামী লেখক। হিংসে করে লাভ নেই।ভেবে দেখলে সে'টাও দরকারি এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ষোলো আনার ওপর আঠার আনা।
পার্থ, ফললাভের আশা কোরো না। মুখ ও মুখোস দুই প্রতিষ্ঠানই মৃত। একমাত্র জীবিত তুমি। তুমি সব্যসাচী। অক্লান্ত দু'হাত সমানে চলতে থাকুক।
আর তোমার অস্ত্র হোক তোমার জাগ্রত অর্দ্ধজাগ্রত অথবা ঘুমন্ত কিন্তু স্বপ্নবিদ্ধ সেরিব্রাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন