মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন যে 'রমজান' মাসে রেশনে রমজান স্পেশাল প্যাকেট দেওয়া হবে।সংবাদ মাধ্যম অনুযায়ী, প্যাকেটে চাল, ময়দা, তেল, খেজুর, ছোলা এবং চিনি থাকার কথা l সংখ্যালঘু মুসলিম মানুষদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা l তবে, শুধু সংখ্যালঘুরাই নন, চাইলে সবাই রেশন থেকে ওই প্যাকেট তুলতে পারবেন l
বেশ ধেই ধেই করে লাফাবার মতন খবর, মোহন বাগান লিগ জিতলে যেরম হয় আর কি। গোটা রোজার মাস ধরে মুসলিম ভাই-বোনেরা 'রমজান' স্পেশাল প্যাকেট পাবেন। যে গরিব মুসলিম রিকশাওলা যে ধর্ম মেনে রোজা রাখে কিন্তু অভাবে পর্যাপ্ত ইফতারি জোটেনা, তার তো ভালো হবেই।
প্লাস, নিন্দুকেরা যদি 'মোছলমান পীরিতি' খোঁজে, তার জন্যে এটাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে চাইলে অমুসলিমরাও এই স্পেশাল প্যাকেট পাবে।
এই হ্যাপি এন্ডিং মার্কা গপ্পের শেষে কিছু কোশ্চেন থাকছে।
সংবিধান অনুসারে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলতে খালি মুসলমান বোঝায় না। বৌদ্ধ, জৈন , পারসিক, খ্রীস্টান সব্বাই সংখ্যালঘু। এদের ধর্মেও একমাস টানা না হলেও উপোস ব্যাপারটা রয়েছে।
তা, দিদিমণি এদের উপোসের সময় স্পেশাল প্যাকেট দেবেন না?
সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মধ্যেও অনেকে নানাসময় নানাকারণে উপোস করে থাকেন। তারাই বা নিজেদের সময় এ সুবিধে থেকে বঞ্চিত হবেন ক্যানো?
তাহলে কি এই 'রমজান' প্যাকেট এর আসল উদ্দেশ্য নিতান্তই রাজনৈতিক? নিজেকে মুসলিম-প্রেমী বলে প্রমাণ করা?
সন্দেহ নেই, যে এই কাজে 'তিনি' বেশ সফল। জমিয়তও এখন বকলমে তৃণমূলের সমর্থক। তাদের সিদ্দিকুল্লা মন্ত্রীত্ব পেলেন, মৌলানারা ইমাম ভাতা পেলেন, বাকিরা মাদ্রাসা অনুমোদনের প্রতিশ্রুতি পেলেন, আর গরিব মুসলমান পেলেন 'রমজান' স্পেশাল প্যাকেট।
অতএব 'তিনি'ই বর্তমানে বাংলার মুসলমানেদের জান-মালের রক্ষাকর্তা, তাদের পরবরিশ করনে-ওয়ালা এবং খুদ-খেয়াল-মর্জি'র মালিক।
ব্যাস? গপ্পো শেষ?
দাঁড়ান সার, এট্টু খানি বাকি আছে।
আমি বা আপনি চাই বা না চাই, আমাদের এই রাজ্য এখন জামাত আর আরএসএস
এর পরীক্ষাগার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থেই চাইছে যে হিন্দু ভোট আর মুসলমান ভোট এর মেরুকরণ হোক, যাতে তারা শক্তিশালী হয়ে বিষাক্ত ছোবল মারতে পারে।
এরা খুব সন্তর্পণে এগোচ্ছে। ধর্মের মাধ্যমে কাছে টানা, মগজ-ধোলাই আর অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষ ঢালা-এটাই এদের কাজ। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। এই ফেবুতেই জামাত আর আরএসএস এর পেজগুলো দেখবেন সময় করে। দেখতে পাবেন অর্ধ-শিক্ষিত লোকেরা কিভাবে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে, যাতে দাঙ্গা লাগে আর এদের শক্তি বাড়ে। যেকোনো রকম সংঘর্ষের ঘটনাকেই সাম্প্রদায়িক রূপ দেবার চেষ্টা চলছে।
শহর আর শহরতলি'র লোকেরা খেয়াল করে দেখবেন যে ধীরে ধীরে হিন্দু আর মুসলমান বসত আলাদা হচ্ছে। ধর্মের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছে।
আজ হয়ত একটা হিন্দু বা মুসলমান খালি হিন্দু বা মুসলমানের মধ্যে বাস করে আপাত নিশ্চিন্তি বোধ করছে, কিন্তু একই সাথে হারাচ্ছে একে অপরকে চেনার সূযোগ।
এবং ভুলে যাবেন না, দাঙ্গা লাগলে কিন্তু শত্রু এলাকা বাছতেও সময় লাগবেনা।
অনেক কেই দেখি হিন্দু সন্ত্রাসবাদের অস্ত্বিত্ব স্বীকার করেননা। ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক ব্যাপকতা অনেক বেশী। কিন্তু এদেশে হিন্দু সন্ত্রাসবাদও যথেষ্ট খারাপ চেহারা নিয়েছে।
এবং একটা বোকা যুক্তি দেওয়া হয় যে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতায় হিন্দু সন্ত্রাসবাদের জন্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই কোনকালে লিখে গেছেন স্বদেশি আমলে জল খাবার জন্য হিন্দু প্রচারক তার মুসলমান সহযোগীকে দাওয়া থেকে নেমে যেতে বলছেন।
তালিবান দেরও একসময় বিপদ হিসেবে না দেখে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লব হিসেবে দেখা হয়েছিল। সৌজন্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। তার ফলাফল এখনও ভোগ করছি। আরএসএস এর ক্ষেত্রেও একই ভুল করলে বিপদ আছে।
বাজে ক্লিশে বকা শেষ। যদি এতটা পড়ে থাকেন, তাহলে শেষটুকুও ভেবে দেখুন, এই 'রমজান' প্যাকেটের মাধ্যমে কি বিজেপি'কে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ এর সূযোগটাই হাতে তুলে দেওয়া হল না? 'তিনি' কি প্রকারান্তে সেটাই চাইছেন?
গরিব মানুষ কে যদি সাহায্য করাটাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে শুধু ইসলাম ধর্মটাই আসছে ক্যানো? বাকি ধর্ম গুলো কি দোষ করলো?
আর শুধু রমজান মাসই ক্যানো? সারা বছর সব বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষ কে এই স্পেশাল প্যাকেট দেওয়া হোক। এই দাবীটা উঠুক।
ইমাম ভাতা দেবার সময়ও একই প্রশ্ন ছিল। গরিব ইমাম রা ভাতা পেলেন। আমার বাড়ির পাশের কালীমন্দিরের গরিব পুরোহিত মশাই কি দোষ করেছিলেন? তারও তো সংসার চলে কোনোরকমে।
বিজেপি সেবারও এই ইস্যু তুলে ধর্মীয় মেরুকরণে সফল হয়েছিল। এই রমজান প্যাকেট নিয়েও তারা যথারীতি একই রকম প্রচারে নামবে।
ক্ষমতার মোহে 'তিনি' নাহয় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে আরএসএস আর জামাত কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, কিন্তু আমরা তো আর একই ভুল করতে পারিনা।
আসুন, আমরা প্রত্যেকটি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাবার সুবিধেবাদী রাজনীতি'র বিরোধিতা করি।
খুব দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন