সোমবার, ২ মে, ২০২২

বিজন সেতু গণহত্যা ~ সমুদ্র সেনগুপ্ত

Purulia Arms Drop Anandamargi
পুরুলিয়া অস্ত্র বৃষ্টি 
বিজন সেতু গণহত্যা: প্রকাশ্য দিবালোকে মহানগরীর এক কলঙ্কের ইতিহাস
প্রথম ভাগ: সংগঠন ও তার কার্যকলাপ:
১৯৫৫ সালের ৯ই জানুয়ারি জামালপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের একজন একাউনটেন্ট প্রভাত রঞ্জন সরকার একটি "সোসিও-স্পিরিচুয়াল" সংগঠন গড়ে তোলেন এবং নিজের নামকরণ করেন "শ্রী শ্রী আনন্দমুর্তিজি"।
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাত সরকারের শিব দর্শন, শৈশবে বাঘের পিঠে জঙ্গল ভ্রমণের অলৌকিক সব কাহিনী প্রচারিত হয়। আনন্দমার্গ'র সর্বক্ষণের কর্মী হতে দীক্ষা লাগে। পোশাকি নাম পড়ল 'অবধূত'। [সূত্র: সুশোভন পাত্র]
১৯৫৯ সালে পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদের বিকল্প হিসেবে আনন্দমার্গ তাদের "প্রোগ্রেসিভ ইউটিলাইজেশন থিওরি" বা প্রাউট তত্ত্ব কে খাড়া করে। মার্গের রাজনৈতিক কর্মসূচী পরিচালনার জন্য তৈরি হয় 'প্রাউটিস্ট ব্লক অফ ইন্ডিয়া'। তাদের মুখপত্র 'প্রাউট' থেকে এদের বিভিন্ন বিচারধারা জানা যায়। যেমন, "অহিংসা উপর ভিত্তি করে আধ্যাত্মিকতা মানবতার কোন উপকারেই আসবে না", "ভারতবর্ষের গণতন্ত্রে নিরক্ষর ও অশিক্ষিতদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত", "কমিউনিজম মানুষ কে জন্তুতে পরিণত করে" ইত্যাদি।
১৯৬০ এর শেষের দিকে মার্গ ও তার দর্শন বেশ কিছু অনুগামীকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়। এর সাথে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং গুপ্ত ধর্মীয় ব্যঞ্জনার ফলে তদানীংতন যুক্তফ্রন্ট ও পরবর্তীতে বামফ্রন্টের সাথে সরাসরি আদর্শগত সংঘাত বাধে।
এই অনুগামীদের মধ্যে বেশ কিছু ধনী ও প্রভাবশালী ভক্ত ছিলেন। যাদের একজন, রাজস্থানের গড় এর মহারাজা পুরুলিয়াতে ৫০০ একর জমি দান করে যেখানে আনন্দনগর নামে হেড কোয়ার্টার তৈরি হয়। এই নগর কে ঘিরে শুরু থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধে যে আধ্যাত্মিক কাজকর্মের আড়ালে কোনো ক্রিমিনাল কাজকর্ম চলছে কিনা। আশ্রমের বিপুল ধন সম্পত্তির আসল উৎস হিসেবে অস্ত্র স্মাগলিং কে সন্দেহ করা হয় তখন থেকেই। পরবর্তীতে কিম ডেভি দ্রষ্টব্য। [আউটলুক, ৩১শে আগস্ট, ২০১৭]
মতাদর্শগত সমস্যা ছাড়াও বামফ্রন্ট সরকার এই বিতর্কিত ধর্মীয় সম্প্রদায় কে তার সদস্যদের "সশস্ত্র" প্রশিক্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করে এবং তাদের বার্ষিক "তান্ডব" মিছিলের ওপর ধরপাকড় করে। প বঙ্গ ও বিহারে রক্তবস্ত্র পরিহিত লাঠি, তরোয়াল ও নরমুন্ড সজ্জিত মার্গদের সাথে মার্ক্সবাদী ক্যাডারদের ঘন ঘন সংঘর্ষ হয়। ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ পুরুলিয়ার আনন্দনগরে, হেড কোয়ার্টার এ পাঁচ জন মার্গ মারা যায়।
১৯৭০ সালের ৩১শে মার্চ পাটনা স্টেশনে দিল্লি এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে নামার পরেই জ্যোতি বসুর ওপরে গুলি চালানো হয়। সেই গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান তার সাথে হাত মেলানো পার্টিকর্মী আলী ইমাম। সন্দেহের তীর আনন্দমার্গীদের দিকে।
প্রভাত সরকার ওরফে আনন্দমূর্তি তার এক শিষ্য অবধুত কে খুনের দায়ে ১৯৭১ সালে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু তাকে ১৯৭৮ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই বছরে "সিডনি হিলটন বোমা বিস্ফোরণ" এর ফলে তিন জন মারা যান এবং ইভান পেডেরিক নামের একজন মার্গ তার অপরাধ স্বীকার করে।
১৯৭১'এ কলকাতার 'ধর্ম মহাচক্র'র পর 'আনন্দমূর্তি'র স্ত্রী উমা সরকার ও প্রাক্তন অবধূত, 'প্রাউটের' অর্থসচিব নওল কিশোর ফাঁস করে দেন যে "গুরুর বিরুদ্ধে জেহাদের অপরাধে ৩৬ জন আনন্দমার্গী কে ছোটনাগপুরের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পেট চিরে, চোখ উপড়ে হত্যা করা হয়।" পরে ঐ মামলায় অভিযুক্ত অন্য এক অবধূত মাধবানন্দ'ও আদালতে জানান 'গুরুর নির্দেশে তিনি নিজেই ১৮ জন অবধূত কে হত্যা করেছেন।' [নওল কিশোর তাঁর 'আনন্দমার্গঃ সয়েলিং দি সাফরন রোব' ]
১৯৭৩ সালের ২৫শে এপ্রিল নয়াদিল্লির আচার্য দিনেস্বরানন্দ নামে এক অবধুত গায়ে আগুন লেগে মারা যান। তার সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে এটি প্রতিবাদের আত্মহুতি, আনন্দ মূর্তির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। দিল্লি পুলিশের বয়ান অনুযায়ী এটি হত্যাকান্ড এবং সেই অভিযোগে দু জন বিদেশি মার্গীকে গ্রেপ্তার করে যারা আগুন লাগিয়ে ওই অবধুত কে পুড়িয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ।
[নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৬শে এপ্রিল, ১৯৭৩]
১৯৭৫ সালে রেলওয়ে মন্ত্রী ললিত নারায়ণ মিশ্র কে বোমা মেরে খুনের দায়ে চারজন মার্গ কে সাজা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন বাদে বাকিরা আবার তদানীংতন চিফ জাস্টিস এ এন রায় কে হত্যার চেষ্টায় অভিযুক্ত। এদের সতেরো বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা হয়।
এই সংগঠনের চরিত্র বোঝার জন্য একটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন। ১৯৮৩ সালে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে এক অবধুত একটি রিট পিটিশন দাখিল করে বলেন যে প্রকাশ্যে ছুরি, ত্রিশূল ও করোটি নিয়ে "তান্ডব নৃত্য" করার ওপরে জারি করা নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে হবে কারণ এটি তাদের (আনন্দ মার্গীদের) ধর্মীয় আচরণ করার অধিকারে হস্তক্ষেপ।
সুপ্রিম কোর্ট এই আবেদন বাতিল করে ঘোষণা করে যে মার্গের প্রতিষ্ঠাতার রচনাপত্র লিখিত হয়েছে মূলত হিন্দু দর্শনকে আধার করে এবং আনন্দমার্গীদের "শৈব" বলে বিবেচনা করতে হবে যা আসলে হিন্দু ধর্মের একটি সম্প্রদায়। এটি কোনো পৃথক ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে না। [ল, কলোনিয়ালিজম এন্ড রিলিজিয়াস প্লেস ইন ইন্ডিয়া- গীতাঞ্জলি শ্রীকান্তন]
১৯৭৮ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্স এর ম্যানিলায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মচারী জ্যোতি স্বরূপ বৈদ্য কে খুন করার চেষ্টার অপরাধে স্টিভেন মাইকেল ডায়ার (কানসাস) ও ভিকটোরিয়া সেফার্ড (মেরিল্যান্ড) নামের দুই মার্কিন আনন্দ মার্গীকে ১৭ বছরের কারাবাসের দন্ড হয়। এফবিআই আনন্দ মার্গ কে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।
[এফবিআই ফাইল নম্বর ১০৫-২৮৯৪২০]
১৯৯০ সালের ১৪ই এপ্রিল অমৃত্সরে পাক-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে দুজন আনন্দ মার্গী ধরা পড়ে, অটোম্যাটিক অস্ত্র ও গুলি সহ। "মানব মুক্তি মঞ্চ" নামে মার্গীদের একটি শাখা সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে পাকিস্তান থেকে এসব অস্ত্র আমদানি হচ্ছিল মার্গীদের প্রশিক্ষণের জন্য। [১৯৯০ সালের ১৮ই এপ্রিল লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি]
ভারত সরকার আনন্দমার্গ কে একটি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী জঙ্গি, ছদ্ম-ধর্মীয় সংগঠন বলে বর্ণনা করেন যারা প্রায়শই হিংসার পথ নেয় এবং স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতি দাদাগিরি ফলায়। [প্রাগুক্ত বিবৃতি]
পুরুলিয়া ও বিহার সীমান্তে জয়পুর ও ঝালদা ২ নং ব্লকের আদিবাসী, সরকারী ও রায়তি জমি মিলিয়ে হাজার একর জমি বেআইনি ভাবে দখল করতে উদ্ধ্যত হয় এই মার্গীরা। পুরুলিয়ার বাঁশগড়ের জঙ্গলে বিদেশ থেকে আমদানি করা বে-আইনি অস্ত্র মজুতের দায়ে অভিযুক্ত [প্রাগুক্ত বিবৃতি]
১৯৯৫ সালে ১৭ই ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় একটি এএন-২৬ বিমান থেকে কয়েকশ একে-৪৭ রাইফেল ও হাজার রাউন্ড গুলি ফেলা হয়। কিম ডেভি ধরা পড়ে। অভিযোগ ওঠে যে ওই অস্ত্রবর্ষণ এর গ্রাহক ছিল আনন্দমার্গীরা।
জরুরি অবস্থার সময় এই সংগঠনকে ভারত সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭৭ সালে জনতা সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
পৃথিবীর ১৮০ টি দেশে এদের প্রায় ২০ লাখ সদস্য আছে। ভারতে প্রায় সাত হাজার শাখা আছে যার মধ্যে প বঙ্গে প্রায় তিন হাজার। এরা স্কুল, কলেজ, অনাথ আশ্রম ও হাসপাতাল চালায়। [ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ১৪ই ডিসেম্বর, ২০১১]
দ্বিতীয় ভাগ: বিজন সেতু গণহত্যা ও বিচার:
১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ রেল স্টেশন, বিজন সেতু ও বন্ডেল গেট সংলগ্ন এলাকায় আনন্দ মার্গের সাথে যুক্ত ব্রহ্মচারী ও ব্রহ্মচারিণী দের ওপরে আক্রমন ও নিগ্রহের এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যার ফলে ১৭ জন মারা যান
[কান্তি গাঙ্গুলি বনাম রাজ্য সরকার ও অন্যান্য: রিট পিটিশন নং ৯৯০৯ এর প্রেক্ষিতে জাস্টিস দীপঙ্কর দত্ত এর রায়, ৮ই জুলাই, ২০১৬]
জনস্বার্থে তাৎপর্যপূর্ণ এই ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য সরকার ১৯৮২ সালের ১২ই মে কলকাতা হাইকোর্টের জাস্টিস সমরেন্দ্র চন্দ্র দেব কে নিয়ে গঠিত এক সদস্যের একটি তদন্ড কমিশন গঠন করেন। ওই কমিশনের টার্মস অফ রেফারেন্স ছিল:
(১) ১৭ জন মানুষ নিহত ও আরো মানুষ আহত হওয়ার সময় কি পরিস্থিতি ছিল ও ঘটনাক্রম ছিল; (২) আক্রমণ ও নিগ্রহ এর পেছনে কি কারণ ছিল নার ফলে ১৭ জন আনন্দমার্গী নিহত ও অন্যান্যরা আহত হয়েছিলেন; (৩) আনন্দমার্গীদের মৃত্যুর কি তাৎক্ষণিক কারণ ছিল; (৪) ঘটনাস্থলে পুলিশের পৌঁছতে দেরি হয়েছিল কি না; (৫) অন্যান্য যে কোনও অনুসন্ধানের বিষয় যা তদন্ত কমিশন প্রাসঙ্গিক মনে করবে; (৬) ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা এড়ানোর জন্য সুপারিশ।
প্রাপ্ত নথিপত্র থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে দেব কমিশনের রিপোর্ট জমা দেওয়ার তারিখ ১২ই জানুয়ারি, ১৯৮২ অবধি বাড়ানো হয় ও পরে ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩ অবধি। দেব কমিশন এর পরে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন কিনা তার সপক্ষে কোনও নথি পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১১ সালে বামফ্রন্ট কে পরাস্ত করে টিএমসি সরকার ক্ষমতায় আসে। বিজন সেতুর ঘটনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে আনন্দ মার্গীদের গণহত্যার অনুসন্ধানের জন্য ২০১২ সালের ১৪ই মার্চ জাস্টিস সন্তোষ কুমার ফৌজদার কে নিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। পরে মেয়াদকাল আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর পরে ২০১৩ সালের ৯ই এপ্রিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জাস্টিস অমিতাভ লালা কে নিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠিত হয় জাস্টিস ফৌজদারের জায়গায়।
রিপোর্ট জমা দেওয়ার মেয়াদ ২রা মে, ২০১৩ থেকে আরো ছয় মাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পরে ২০১৫ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর আরো এক বছরের জন্য লালা কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
কান্তি গাঙ্গুলি নামে সিপিআইএম এর এক রাজনৈতিক নেতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। মূলত তিনটি বক্তব্য তুলে ধরেন।
(১) এই ধরনের ঘটনায় এক বার কমিশন গড়া হলে সেটিকে অবৈধ ঘোষণা না-করা পর্যন্ত দ্বিতীয় কোনও কমিশন গঠন করা যায় না। এ ক্ষেত্রে জ্যোতি বসুর আমলের দেব কমিশনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি।
(২) সিআইডি ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছিল। নিম্ন আদালতে সাজাও হয়েছিল কয়েক জন অভিযুক্তের। সিআইডি নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেনি। আপিল করা হয়নি আনন্দমার্গীদের পক্ষ থেকেও।
(৩) এই অবস্থায় নতুন তদন্ত কমিশনে ডেকে তাঁদের মক্কেলকে সিআইডি বা আনন্দমার্গীদের তরফে জেরা করার কোনও আইনি অধিকার নেই বলে দাবি করেন কান্তিবাবুর আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, কান্তিবাবু নতুন কমিশনে যান। কিন্তু কমিশনের চেয়ারম্যানের বদলে তাঁকে জেরা করেন সিআইডি এবং আনন্দমার্গীদের আইনজীবীরা। এটা আইনবিরুদ্ধ।
এই পিটিশনের বিচার শেষে জাস্টিস দীপঙ্কর দত্তের রায়ে জানানো হয় যে বিজন সেতুতে আনন্দ মার্গী হত্যার তদন্তে গঠিত অমিতাভ লালা কমিশন বৈধ। ফলে তদন্তে স্বার্থে সিপিএম নেতা কান্তি গাঙ্গুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে কমিশন। তবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া না দেওয়ার স্বাধীনতা থাকছে কান্তি গাঙ্গুলির। সিআইডিও তাঁকে জেরা করতে পারবে না।
[প্রাগুক্ত রায়]
সর্বশেষ পাওয়া খবরের ভিত্তিতে বলা যায় এখন পর্যন্ত লালা কমিশনের পেছনে খরচ হয়েছে ৩.২ কোটি টাকা।
কমিশন এ পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। বেশ কিছু সাক্ষী মারা গেছে। কমিশনের মেয়াদ ২০১৯ সালের ১লা এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। এর মাঝে কমিশনের সচিবের পদ বহুদিন শূন্য ছিল। বিচারপতি লালা কমিশনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে নারাজ [এই সময়, ২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮]
ইতোমধ্যে সংবাদপত্রের এক অংশে এই ঘটনার জন্য অর্থাৎ আনন্দ মার্গীদের পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে অপহরণ (ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে), গায়ে আগুন ঢেলে পুড়িয়ে মারার দায়ে সিপিআইএম এর ছোট মাঝারি নেতাদের নামে অভিযোগ চালু আছে। সিপিএম বিধায়ক শচিন সেন, কান্তি গাঙ্গুলি প্রমুখের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়, বিচারও শুরু হয়।
স্বভাবতই ওই দলের পক্ষ থেকে পাল্টা অস্বীকার করাও চালু আছে। একটি থিওরি অনুযায়ী ছেলেধরা সন্দেহে উত্তেজিত জনগণ এই কাজ করেছিল।
যতদিন না লালা কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়বে ততদিন এই চাপ ও পাল্টা চাপ চলতে থাকবে।
বিজন সেতুতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৭ জন মার্গী মারা যাওয়ার ঘটনা ন্যক্কারজনক। 'ছোট্ট' , 'সাজানো ঘটনা' বা 'বিরোধীদের চক্রান্ত' নয় বরং ৪ঠা মে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত জানান "আনন্দমার্গীর ঘটনাতে আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। প্রকৃত ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক" [সূত্র: Sushovan Patra]
আজ আবার ৩০শে এপ্রিল। বাম আমলে দুই যুগ, আর এই আমলে অর্ধযুগ কেটে গেল। প্রয়াত দাসগুপ্তর মতো আমিও চাই প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক। অবিলম্বে চাই।
(কোনো সংগঠন বা ব্যক্তিবিশেষ কে আঘাত দেওয়া এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন