শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০

উগ্রহিন্দুত্ববাদীর আদর্শ ~ অনির্বাণ রায়

সেকি আপনি কার্ল মার্ক্সের পরিচারিকার সাথে অবৈধ বাচ্চার কথা জানেন না? আরে ছিঃ ছিঃ জ্যোতি বসু তো বউ মরার পর শালীকে বিয়ে করেছিল! ফিদেল কাস্ত্রোর কটা রক্ষিতা ছিল জানিস? যাদবপুরে মেয়েরা ছোটো জামা পরে সিগ্রেট খায় আর ফাঁকা ফ্ল্যাটে লেনিন বোঝে।

আজ্ঞে হ্যাঁ। বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে, উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও আরএসএস মদতপুষ্ট 'বানরসেনা'রা এই ডিসকোর্সই ব্যবহার করে আজকাল। আপনি যদি না জেনে থাকেন, একটিবার ঘুরে আসুন তাদের পরিচালিত পেজগুলি থেকে৷ 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন? কেন আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আদর্শ থাকছে না? লজিকের ভাষায় এই জাতীয় কুযুক্তির একটা নাম আছে। Argumentum ad hominem, আর Graham's hierarchy of disagreement এর সবচেয়ে নীচুস্তরের সবচেয়ে কদর্য কুযুক্তি হলো এই অ্যাড হোমিনেম ও Name Calling, অর্থাৎ, মার্ক্স খারাপ কারণ, ডেম্যুথের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ভারতের সবচেয়ে বড়ো ও আজকের দিনে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলকে ৭% এর বিরুদ্ধে এরকম কদর্য আক্রমণ করার দরকার পড়ছে কেন? 

পড়ছে তার কারণ খুব সোজা। Hate Sells, আমাদের সমাজে ঘৃণা বিক্রি হয়। আর তা যদি যৌনতাকেন্দ্রীক ঘৃণা হয়ে থাকে তবে তো কথাই নেই। "আমি শুতে পাচ্চিনে, ও কেন শোবে?" মানুষের ঈর্ষার আদিমতম প্রবৃত্তিকে উশকানি দিচ্ছে এই জাতীয় ডিস্কোর্স। খেয়াল করে দেখুন প্রথমে বলা সব কটি ব্যক্তিগতজীবনকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দেওয়া কুযুক্তির পিছনে রয়েছে এক অমোঘ হতাশা। যৌনহতাশা। আমি সারাজীবন ইনবক্সে "হাই ফ্র্যান্ডশিপ করবা" পাঠিয়ে একটা ন্যুড ছবি জোগাড় করতে পারলাম না, এরা যৌনতার উৎযাপন করবে কেন? তাদের বই, মতাদর্শ, চিন্তা, চেতনা সব তুচ্ছ। যৌনজীবনই বড়ো। আজ্ঞে হ্যাঁ, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাঙালির এই যৌনহতাশাকেই পুঁজি করে বছর বছর রবীন্দ্রকেচ্ছাকে 'বেস্টসেলার' বানিয়ে থাকেন। আজকের বাঙালি যতো না গীতবিতান ছুঁয়েছে, তার বেশি পড়েছে 'কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোট', পেন্সিলে দাগ দিয়ে দিয়ে।

নীচের ছবি যে সংস্কৃতিতে মজার, 'কমন', স্বাভাবিক ও খিল্লি; সে সংস্কৃতিতে "পৃথিবীর ইতিহাস আসলে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস" এর থেকে "আব্বে শালীকে বিয়ে করেচে, জ্যোতি তো শালীমার" অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও অনেকবেশি জনমোহিনী হবে তা বলাই বাহুল্য।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন