রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

বেসরকারী পরী ~ অঙ্কুর চক্রবর্তী

কাল রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছিলাম, ঘুম আসছিলো না... তাও চোখ বন্ধ করে জোর করে শুয়ে আছি- এমন সময় হঠাৎ বোম্ব্যাচ্যাক লেগে গেলো চোখে; বন্ধ চোখের মধ্যে দিয়েও বেশ বুঝতে পারলুম- ঘরের মধ্যে ঝকমকে আলো!!

চোখ অল্প ফাঁক করে দেখলুম- ঘরের মধ্যে সাদা কাপড় পরা এক মহিলা দাঁড়িয়ে, তার গা থেকেই কেমন যেন আলো বেরোচ্ছে... ঘুমচোখে ভাবছি- ইনি কি পাশের বাড়ির বিধবা ঠাকুমা, না কি রাণাঘাটের মিষ্টিপিসি- তখনই চটকাটা ভেঙে গেলো, আর চেয়ে দেখি- ও মা, এ যে নিযয্যস এক পরী! আমার ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে!!

গায়ে সাদা রঙের গাউনের মত কি যেন একটা, হাতে একটা সাদা লাঠির মতনও কি যেন আছে- লাঠির উপর আবার একটা তারামার্কা কি লাগানো...  মানে, একদম কপিবুক পরী আর কি... যখন দেখতে চেষ্টা করছি অন্য হাতে কাস্তে বা হাতুড়ি আছে কি না (এক হাতে তারা আছে কি না মশাই), পরী বলে উঠলো, "তা, বাবুমশাইয়ের ঘুম ভাঙলো?"

পরীর গলাটা কেমন যেন খ্যানখ্যানে... সে যাগগে; বললুম- "ঘুমাই নি তো; কিন্তু আপনি?..."

- "ধরেছিস ঠিকই, আমি একেবারে আদত পরীই বটে। কিন্তু বয়স হয়েছে, চোখেও ভালো দেখতে পাই না, এই পায়রার খোপের মত ফ্ল্যাটবাড়িতে ঠাওর করতে না পেরে কোন ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে কোন ফ্ল্যাটে ঢুকলুম কে জানে... হিসেবমতো এখানে তো একটা পাঁচ বছর একশো বিয়াল্লিশ দিন বয়সী কচি ফুটফুটে মেয়ে থাকার কথা, তা না, কোথাকার এক আধদামড়া মর্কট শুয়ে আছে..."

আমার ঘরে ঢুকে আমাকেই গাল দেওয়ায় একটু মাথা গরম হলো বৈ কি, কিন্তু ঠিক রিয়্যাক্ট করতে পারলুম না। একে তো পরী-টরী দেখে মাথা কেমন গুলিয়ে গেছে, তারপরে মনে মনে ভেবে দেখলাম- পরীদের ব্যাপারে আমার ডেটাবেস বড়ই কমজোরি। মানে, পরীরা পট করে রেগে উঠে চট করে শাপ দিয়ে ফেলে কি না, ঠিক কী ভাবে কথা বললে পরী তুষ্ট হয়, আর পরী রাগলেই বা কী করতে পারে- এসব কিছুই ঠিকমতো জানা নেই... অতএব, চটিয়ে লাভ নেই।

তাই আমতা আমতা করে বললুম- "এসেই যখন পড়েছেন, একটু বসুন না হয়..."
- "বসবো? বলছিস?" বলেই হাতের ডান্ডাটা দিয়ে ঘ্যাসঘ্যাস করে একটু পিঠ চুলকে নিলো পরী- "তা বসতে পারি, বলছিস যখন এত করে (একবারই বলেছি কিন্তু), কিন্তু কিছু খাওয়া, বড্ড ক্ষিদে লেগেছে।"

ইচ্ছে ছিলো না, কিন্তু ঘুমচোখেও উঠতেই হলো। আহা, খেতে চাইছে একজন, খাওয়াবো না? কিন্তু খাবার আছে কিছু? রান্না করা খাবার তো মনে হয় না কিছু আছে... আর আজকাল বাড়ি থেকে বেশি বেরোইনা বলে বাজারও কম করা হয়, আর সেই বাজার এক হপ্তা চালাতেও হয়। ফ্রিজ খুলে দেখি- একগাদা কোল্ডড্রিংক্স-এর বোতল। খাবার সেরকম কিছু চোখে পড়লো না। গোটাকয়েক টিফিন বাক্স আছে বটে, একটা খুলে দেখি- আধফালি কাঁচা কুমড়ো! আরেকটা খুলে দেখি, আদাবাটা!!

একটা টিফিন বাক্স খুলে কী একটা ঝোলের মত বেরোলো। শুঁকে বুঝলুম- দিন চারেক আগে বানানো মাংসের ঝোল। মাংস ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু ঝোলটা ভালো হয়েছিলো বলে বেঁচে যাওয়া ঝোলটা তুলে রেখেছি। অন্যসময় হলে রাখতুম না, কিন্তু এখন এই লকডাউন আর আনলকের বাজারে সবই দুর্মূল্য। 

কিন্তু ঝোলটা কী দিয়ে দেবো? আচমকা মনে পড়লো, বাড়িতে ফিশফ্রাই বানাবো বলে বাসা মাছের ফিলে এনেছিলাম, রাখা আছে ডিপফ্রিজে। ব্যস, চট করে একটা গ্যাসে ভাত বসিয়ে দিলাম, আর অন্য গ্যাসে একটা বাসার ফিলে নিয়ে, একটু নুন-হলুদ-লঙ্কাগুঁড়ো মাখিয়ে ভেজে নিয়ে, মাংসের ঝোলে দিয়ে বানিয়ে ফেললুম বাসা মাছের কারি। সিম্পল।

তারপর খাবার প্লেটে সাজিয়ে পরীকে ডাকতেই তার তো একগাল হাসি- "ও মা, এত তাড়াতাড়ি কী রান্না করলি রে?"

বললুম- "ভাত আর ভেটকি মাছের কারি..."

- "বাহ বাহ" বলে খেতে বসে এক টুকরো মাছ মুখে দিয়েই পরীর নাকচোখ কুঁচকে মুখটা কেমন ছাতুর পরোটার মত হয়ে গেল- "এটা কী মাছ রে? এটা ভেটকি মাছ? আমি খাস বাংলাদেশের মেয়ে, আমাকে ভেটকি মাছ চেনাচ্ছিস?"

এই রে, ভেটকি না বলে বাসা বললেই বোধহয় ভালো করতাম, রেগে আবার শাপটাপ না দিয়ে দেয়! মিনমিন করে বললাম- "আজ্ঞে, ভেটকি না, বাসা মাছ; একদম ভেটকির মতোই খেতে আর কি..."

- "অ্যাঁহ, একদম ভেটকির মত খেতে না কি! যত্তসব!! ভেটকি আমি খাইনি ভেবেছিস? আর বাড়িতে অতিথি এলে এইসব অখাদ্য-কুখাদ্য খাওয়াস বুঝি?"

মরিয়া হয়ে শেষচেষ্টা হিসেবে বলেই ফেললাম- "আজ্ঞে, পরীদের তো বাসার কারি খাইয়ে সেবা করাই নিয়ম!"

- "নিয়ম? এ আবার কোথাকার নিয়ম রে অলপ্পেয়ে??"

আমতা আমতা করে বললুম- "আজ্ঞে, ঠিক নিয়ম না, তবে বহুদিন ধরে অনেককেই বলতে শুনছি কি না যে...
.
.
.

..

Basarkari hola poriseba vala hoba" 🤭🤭😆😆

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন