করোনা রোগের মোকাবিলায় ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা বহু চর্চিত। ওটা বেসিক্যালি ইমিউনিটির দু নম্বর ধারা, এডপটিভ ইমিউনিটি। আমি আপনি করোনায় একবার আক্রান্ত হলে আমাদের T সেল, B সেল একই ভাবে তৈরি হয়ে যাবে রোগটার মোকাবিলায়। এই সূত্র কাজে লাগিয়েই ওই কোনভালেসেন্ট সেরা থেরাপি অর্থাৎ সেই এন্টিজেন আর এন্টিবডি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে চিত্রটা আশাপ্রদ নয়।
কোনো কোনো জনস্বাস্থ্যবিদ আবার হার্ড ইমিউনিটির কথা বলছেন। R নট ১.৫ ধরলে মোটামুটি ভাবে জনসংখ্যার ৬০% সংক্রমিত হয়ে পড়লে বাকি ৪০% ওই হার্ড বা পাল এর ইমিউনিটির দৌলতে বেঁচে যেতে পারে। মুস্কিল একটাই। সবাই চাইবে সে যেন ওই ৪০% এর দলে থাকে। না থাকলে তার দশা ওই বরিস জনসনের মতো হতে পারে।
আমাদের সবাই কেমন অদ্ভুত ভাবে ইমিউনিটির প্রথম ধারা টা ভুলে যেতে বসেছি। ইনেট বা সহজাত ইমিউনিটি। সেই মনোসাইট ম্যাক্রফ্যাজ, সেই ডেন্দ্রাইটিক সেল, সেই এলভিওলার এপিথেলিয়াম। যারা যে কোনো ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এর বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে প্রথম লড়াইটা দেয়। সেই বিশ্বস্ত, পুরোনো, প্রাচীন পাহারাদারদের কথা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি।
ওদের কথা একটু বোধ হয় ভাবা দরকার। ওদের একটু যত্নআত্মি প্রয়োজন। অতি সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে বেশ কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টি খাদ্য কে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা সাইনারজিস্টিক উপায়ে বা একযোগে দেহের ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ ক্ষমতা কে শক্তিশালী করে। তার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন A, D, C, E, B6, B12, ফলেট, কপার, আয়রন, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম [সূত্রঃ Gombart AF, Pierre A, Baghini S.A.; Nutrients 2020; 12: 236]। এদের মধ্যে আবার ভিটামিন C, D এবং জিঙ্ক নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ এভিডেন্স বা তথ্য-প্রমাণ জোগাড় হয়েছে। খুব সংক্ষেপে রেসপিরেটরি হেলথ বা শ্বাসযন্ত্র এর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এদের ভূমিকা উল্লেখ করা হল কারণ আমরা জানি যে কোভিভ-১৯ মূলতঃ শ্বাসযন্ত্রের অসুখ।
ভিটামিন সি এর ভূমিকা সেই ১৯৩০ এর দশক থেকে আলোচিত হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের একটি গবেষনায় তিনখানি কন্ট্রোলড ট্রায়ালে দেখা গেছে যে ভিটামিন সি নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে [সূত্রঃ Hemlia H, Nutrient 2017; 9:339]
শক্তিশালী ইমিউনো রেগুলেটর হিসেবে কমিউনিটি একোয়ার্ড নিউমোনিয়া তে ভিটামিন ডি এর ভূমিকাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায় [ সূত্রঃ Zdrenghea MT, Markrinioti H, Bayaran C, Rev Med Virol 2017, 27:e 1909]
জিঙ্ক কে বিবেচনা করা হয় ইমিউন ফাংশন এর "গেট কিপার হিসেবে [ সূত্রঃ Weasels I, Maywald M, Rink L, et al. Nutrients, 2017, 9:1286]। জিঙ্ক এর অভাবে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে নিউমোনিয়া এর প্রকোপ ও তীব্রতা, দুটোই বেড়ে যায় [ সূত্রঃ Barnett JB, Hamer DH, Meydani SN; Nutr Rev 2010; 68:30-7]
এই ভিটামিন সি, ডি আর জিঙ্ক এমনি এমনি শরীরে পাওয়া যাবে না। খাবারের মধ্যে দিয়ে ওদের শরীরে ঢোকাতে হবে। একটু সুষম খাবার। এই লক ডাউন এর বাজারে অনেকের কাছেই এই শব্দটা উপহাস মনে হতে পারে। তাই পাল্টে বলা যায়, একটু পেট ভরে খাবার। বেশি কিছু নয়। একটু ডাল ভাত সবজি, আর পাতের কোনে এক টুকরো পাতি লেবু। সঙ্গে যদি একটা ডিম জুটে যায়। আহা।
বিশ্বাস করুন, গুরুর দিব্যি। এটুকু পেলেই আমার শরীরের এলভিওলার এপিথেলিয়াম চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আমি জানতেও পারবো না যে সে কিভাবে ও সার্স কোভ ২ সেই নোভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে।
আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে ভাইরাসের বিরূদ্ধে লড়তে চাই। আমি চাই ভারতের সব অপুষ্ট শিশু আর বৃদ্ধ লড়ে যাক তাদের মতো করে। আপনার কাজ কেবল নজর রাখা যে তাদের পাতে যেন ভাত পরে দুবেলা। তাদের মুখের গ্রাস কেউ যেন কেড়ে না নেয়। করোনা আটকাতে গেলে চালচোরদের, রোজগার চোরদের আটকাতে হবে। নইলে বৃথা এ লড়াই। আপনার ইনেট ইমিউনিটির দোহাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন