সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০

কারোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য

কারোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সং স্থার প্রধান নির্দেশ হল, টেস্ট টেস্ট টেস্ট, মানে অসুস্থ বা আপাত সুস্থ মানুষ এই ভাইরাস আক্রান্ত কিনা তা টেস্ট মানে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া আর সাথে সাথে তাকে কোয়ারেন্টাইন কর আর চিকিৎসা কর। এই পরীক্ষা কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কেও তারা জানিয়ে দিয়েছেন। এবার টেস্ট করতে কিছু সরঞ্জাম লাগবে যাকে আমরা কিট বলছি, তবে এ কিট প্রেগ্নেন্সি কিটের মত সহজ সরল নয়, মানে এক ড্রপ ইউরিন ফেলে রঙ পাল্টে গেলেই পজিটিভ। এ কিট ব্যাবহার করতে একটা যন্ত্রও লাগে আর সম্পূর্ণ টেস্ট করতে কিছু দক্ষতা লাগে যা শিখতে হয়।

প্রধানমন্ত্রীর একটি সাইন্টিফিক এডভাইসরি বোর্ড আছে সে এখন আমরা জেনে গেছি( যার প্রধান বিজয় রাঘবন) যারা করোনা প্রতিরোধে কি কি করা উচিৎ সে টেস্ট বল, চিকিৎসা বল বা লকডাউন বল সাজেস্ট করেন আর সেই অনুসারে তা কার্যকর করা হয়। এই যে টেস্ট ব্যাপারটা কত বেশি কত দ্রুত করা যায় তার একটা ব্লু প্রিন্ট তারা বানিয়েছেন। দেশের প্রায় ১০০ টি গবেষণা কেন্দ্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই পরীক্ষা পদ্ধতি বিভিন্ন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক কেন্দ্রকে হাতে কলমে শেখাতে যাতে তারা কিছুদিনের মধ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হয়ে ওঠে।

এবার দেখা যাক এ পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন, স্যাম্পল বা নমুনা হিসেবে নেওয়া হয় সন্দেহভাজন ব্যক্তির লালারস।সেই লালারসে থাকে ভাইরাস, মানুষের অন্য কোষ (cell) এর সাথে।এই কোরোনা ভাইরাস  RNA গোত্রের( জিনোম), মানে সেই নাইন টেনে পড়া ডিএনএ আরএনএ, বেশ মেয়েদের চুলের বিনুনির মত দেখতে। এই লালারসকে প্রথমে নিষ্ক্রিয় করা হয় কিছু রাসায়নিক দিয়ে, যাতে ভাইরাস গুলো মরে যায়, তারপর এই নিষ্ক্রিয় নমুনা থেকে আরএনএ আলাদা করা হয়। মুশকিল হল আরএনএ তো আরএনএ ই, মানে এই যে আলাদা করা হল এতে মানুষের আর ভাইরাস দু রকমের আরএনএ-ই থাকে।এবার এই আলাদা করা আরএনএ কে প্রথমে complementary DNA (cDNA) তে পরিনত করে নেওয়া হয়, আর এ কাজে যে এনজাইম লাগে তার নাম রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইম( reverse transcriptase enzyme) সাথে লাগে প্রাইমার আর সেই নাইনে পড়া এডিনিন, গুয়ানিন, থাইমিন আর সাইটসিন deoxyribonucleotide triphosphates(dNTP)। 
বোঝা গেল এতদূর, জলের মত। হ্যাঁ একটা কথা ভাইরাসের যে আরএনএ তারা উচ্চঘর, কংসরাজের বংশধর, তাতে সেই A T G C, দিয়ে যেন ছন্দ কবিতা লেখা থাকে। এবার ওই যে প্রাইমার যোগ করা হয়েছিল, সে আরএনএ এর ওপর বেশ আয়েস করে বসতে পারে, সেই আইসক্রিমের ওপর চেরি যেমন, তবে সে ভাইরাস আরএনএ এর ওপর বসবে না মানুষের আরএনএ এর ওপর বসবে তা নির্ভর করে তার ক্রমের(sequence) ওপর( মানে ধরা যাক সেই ছন্দ), মানে তা ভাইরাসের আরএনএ ছন্দর সাথে ভাল যাবে না মানুষের আরএনএ এর ছন্দের সাথে। আর যদি ভাইরাস আরএনএ এর ওপর বসে যায়( মানে সেই খাপে খাপ মন্টুর বাপ), সেই যে রিভার্স ট্রান্সকিপ্টেজ এনজাইম বলেছিলাম না, তা dNTP       
গুলোকে জুড়ে জুড়ে ভাইরাস আরএনএ এর ক্রমানুসারে( মানে as per sequence) cDNA বানাতে থাকবে, (মানে করোনা ভাইরাস আরএনএ না থাকলে এই cDNA ও তৈরি হতে থাকবে না)। এক বার cDNA তৈরি হয়ে গেলে , আর একটা শক্তপোক্ত robust ( আগের এনজাইমের তুলনায় শক্তিশালী ) TAQ পলিমারেজ নামে এনজাইম টাকে  আরও বেশ কয়েক বার কপি করে দেয়। এই এমপ্লিফায়েড কপিগুলো ডাই এর সাথে জুড়ে বিশেষ রঙ মানে কালার ইন্ডিকেশন দেয় যাতে বোঝা যায় সেই লালারসে কারোনা ভাইরাস ছিল কিনা! এই কপি বানানো যাকে বলছি এমপ্লিফিকেশন, যে মেশিনে করা হয় তা হল, RT-PCR (Real Time Polymerase Chain Reaction) machine. মোদ্দা কথা অনেকটা সেই ছেলেবেলার জলছবির মত, কাগজের ওপর জলছবি রেখে পয়সা দিয়ে জলছবি ঘষলে আস্তে আস্তে সেই ছবির অবয়ব কাগজের ওপর স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে। এখানেই অনেকটা তাই, যদি লালারসে সেই ভাইরাস থাকে সেটা ওই দুই এনজাইমের উপস্তিতিতে জানান দেয় সে আছে, মানে পজিটিভ।
এই সমস্ত উপাদান , প্রাইমার আর উপযুক্ত বিক্রিয়া মাধ্যম- এই সব মিলিয়ে বলা হয় কিট। 

এই যন্ত্র আগে তো তেমন দরকার ছিল না মূলত কিছু গবেষণাগারে আর বড় মেডিক্যাল কলেজে থাকত, প্রধানত বিদেশী, এখন দেশেও তৈরি হচ্ছে। ছোট আর বড় দু ধরনের যন্ত্রে যথাক্রমে ৯৬ আর ৩৮৪ খানা নমুনা এক এক বারে পরীক্ষা করা যায়। এই পরীক্ষা এক একটা সাইকেল চার ঘণ্টা লাগে, মানে দিনে কমবেশি চারবার চালাতে পারলে ১৫০০ নমুনা পরীক্ষা করা যায়। আর কিট এখন অনেক সংস্থা বানাচ্ছে এ দেশেই।

মানে ১০০ টা যন্ত্রে দিনে প্রায় দেড় লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে। সেই অনুসারে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে (ICMR এ অনুমতি দিচ্ছে), তারা তৈরি হচ্ছে অনেকে শুরুও করে দিয়েছে।ন্যাশনাল ইন্সটিটুট অফ ভাইরলজি ( NIV pune) আর  NCDC Delhi প্রথমে নতুন তৈরি করা কিট গুলো পরীক্ষা করে দেখে, পাস করলে ছাড়পত্র দেয় আর সেই সংস্থা কিটের বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।  

আমি গরিব আদমি আছি, এসব বিজ্ঞান টিজ্ঞান বড় ভয়, বুঝিও না, আমি ওপর ওপর( ভেতরে ঢুকলে কিছুই বুঝব না সেজন্য)  কিছু বুঝি উচ্চশিক্কিত বন্ধুদের জ্ঞানের বিচ্ছুরণ থেকে! আমাদের অনুজ সৌভিক আর দেবজ্যোতি, দিল্লীর এমন একটা গবেষণাগারের দলবলের সদস্য। সেই দল এই ট্রেনিং তত্বাবধান করছে গত ১৫ দিন ধরে, সে অনেক দৌড়াদৌড়ি, মাঠে নেমে কাজ, ভলেন্টিয়ার  তৈরি করা, হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রাখা, ল্যাবরেটরির তত্ত্বাবধান করা, ওদিকে ওপর মহলের  অফিসে আপডেট দেওয়া, মাল মসলার ( মানে ইনগ্র্যাডিয়েন্ট, কিটের) অর্ডার দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

এনিওয়ে জাস্ট জানিয়ে রাখলাম আর কি, চলুন আমরা ফেসবুক, টুইটার কি হোয়াতে জুজু জুজু খেলি, সংখ্যা নিয়ে খেলি( বাজারে এত আই এস আই ফেরত বি স্টাট, এম স্টাট ঘুরঘুর করছে, ফটাস করে লাল নীল উঁচু নিচু সব গ্রাফ এক তুড়িতে এক্স আর ওয়াই অক্ষ বরাবর প্লট করে বলে দিচ্ছে আগামী পরশু কেরলে কজনের টেস্ট পজিটিভ হবে!!!  ),তর্ক করি ( মানে ফেসবুক ফ্রম হোম)।

সবাই সাবধানে থাকুক,যারা মাঠে নেমে কাজ করছেন স্যালুট তাদের আর যথাসম্ভব সাবধানে কাজ করুন। উই শ্যাল ওভারকাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন