বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১৮

রামায়ন ও ইন্টারনেট ~ অভিজিৎ মজুমদার

টেনিদা একটু গলাটা ঝেড়ে নিয়ে বলল, বুঝলি সেকালেও ফেসবুক, ইন্টারনেট ছিল।

ক্যাবলা চাপাস্বরে বলল, ওই শুরু হল ঢপের চপ।

টেনিদা হুংকার ছেড়ে বলল, "এ্যাই ক্যাবলা কি বললি রা?"

ক্যাবলা তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে বলল, "আমি না, প্যালা বলছিল, আসার সময় দেখে এসেছে কালিকায় চপ ভাজছে। তাই বলছিলাম, একটু চপ টপ হলে এই বৃষ্টিতে ভালো হত।"

আমি সবে প্রতিবাদ করতে যাব, এমন সময় টেনিদা উদাস গলায় বলল, "নাহ্ চপ আর খাবো না। বরং নগেনের দোকান থেকে একটু পকোড়া নিয়ে আয়। যা, ক্যাবলা তুইই যা।"

ক্যাবলা কাতর গলায় বলল, "প্যালার আনার কথা তো?"

টেনিদা বাজখাঁই একটা চিৎকার ছেড়ে বলল, "সিয়াচেনে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে আর তুই একটু চপ আনতে পারবি না? যাবি না কি এক চড়ে তোর গালদুটো গুয়াতেমালায় পাঠিয়ে দেব?"

হাবুল বলল, "কিংবা গোরক্ষপুরে।"

আমি দেখলাম আমারও কিছু বলা দরকার। একটু মাথা চুলকে বললাম, "কিংবা গোবরডাঙায়।"

বাঙাল হাবুলটা হাড়জ্বালানি হাসি হেসে বলল, "এই প্যালাডা হাফপ্যান্টুলুন ছাইড়্যা ফুল প্যান্টুল পইড়ল, কিন্তু গোমূত্র আর গোবর ছাড়াইয়া আউগ্যাইতে পাইরল না।"

টেনিদা হাবুলের দিকে কটমট করে চেয়ে বলল, "তোদের সাথে এইজন্য কোনও ইম্পর্ট্যান্ট কথাবার্তা চালানো যায় না। হচ্ছিল পকোড়ার কথা, চলে গেলি গোবরে। ক্যাবলা, তুই কি যাবি না কি... ?"

টেনিদার বাড়ানো হাতটা দেখে ক্যাবলা ব্যাজারমুখে উঠে চারটে পকোড়া নিয়ে এল।

ক্যাবলা ফিরতেই টেনিদা ওর হাত থেকে পকোড়ার ঠোঙাটা ছোঁ মেরে নিয়ে আধখানা পকোড়া ভেঙে হাবুল কে আর ক্যাবলাকে দিল। আমিও হাত বাড়িয়েছিলাম, টেনিদার কটমট করে তাকানো দেখে আবার হাত গুটিয়ে নিলাম।

টেনিদা ধোঁওয়া ওঠা পকোড়ায় একটা কামড় বসিয়ে বলল, "আহা। পকোড়া ছাড়া বর্ষাকাল যেন ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপ।"

তারপর বলল, "হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম। রামায়নের যুগেও ইন্টারনেট ছিল।"

হাবলা বলল, "মহাভারতে আছিল শুনসিলাম। সঞ্জয় নাকি ফেসবুক লাইভে কুরুক্ষ্যাত্রের যুদ্ধ দেখসিল। রামায়ণ তো তারও আগের কথা। তখনও ইন্টারনেট আছিল?"

টেনিদা একটু উঁচুদরের হেসে বলল, "নষ্ট্রাদামুসের নাম শুনেছিস?"

ক্যাবলা এতক্ষণ হাতের নুন চাটছিল। টেনিদার প্রশ্ন শুনে হাত উঁচু করে বলল, "আমি জানি।"

হাবুল ঘোঁৎ করে একটা নি:শ্বাস ছেড়ে বলল, "তুমি হইত্যাস আমগো গুগুল বাবা। তুমি জানবা না?"

ক্যাবলা হাবুলের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল, "নষ্ট্রাদামুস ষোড়শ শতাব্দীতে ফ্রান্সে জন্মেছিলেন। অনেক ভবিষ্যতবানী করে গেছেন। তবে আজকাল লোকে নিজেদের ইচ্ছেমত কথা ওনার মুখে বসিয়ে দেয়। যেমন, ভারতবর্ষে এমন একজন শাসক আসবে যাকে ইউনেস্কো বেস্ট প্রধানমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড দেবে।"

টেনিদা ক্যাবলার পিঠে একটা বিরাশি সিক্কার চাপড় মেরে বলল, "এই জন্যই তোকে এত ভালবাসি।"

আমি বললাম, "কিন্তু তার সাথে রামায়নের সম্পর্ক কি?"

টেনিদা একটা চওড়া হেসে বলল, "সে সব জানতে হলে ওই পাঁঠার মাংসের ঘুগনী যাচ্ছে, চারপ্লেট ঘুগনী নিয়ে আয়। আর হ্যাঁ, শালপাতায় আনবি, প্লাস্টিকের প্লেটে না।"

আপত্তি জানিয়ে লাভ নেই, চুপচাপ নিয়ে এলাম।

টেনিদা এক প্লেট হাবুল আর ক্যাবলাকে ভাগাভাগি করে দিয়ে নিজে তিনটে প্লেট নিয়ে বসল। আমি জুলজুল করে তাকাতে আমায় বলল, "এই বর্ষায় বাইরের খাবার তোর ওই পটল দিয়ে শিঙিমাছের ঝোল খাওয়া পেটে সহ্য হবে না।"

আমি মনে মনে বললাম, "খাও খাও। সব ভাগাড়ের মাংস। কাল যদি পেট না খারাপ হয়েছে আমার নাম পটলডাঙার প্যালারাম নয়।"



ঘুগনীটা শেষ করে শালপাতাটা আমার দিকে এগিয়ে টেনিদা বলল, "বলতো, রামায়ণ কাকে নিয়ে লেখা?"

শালপাতায় কোণে লেগে থাকা একটুকরো মাংসের কুচি তুলে মুখে দিয়ে বললাম, "কেন, রামচন্দ্রকে নিয়ে।"

টেনিদা একটা পিলে চমকানো হাসি হেসে বলল, "ফুংসুক ওয়াংড়ুর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমিও তাই ভাবতাম।"

ফুংসুক ওয়াংড়ুর নাম শুনে দেখলাম সবজান্তা ক্যাবলাও চোখ পিটপিট করে ঘুরে বসল।

-মতলব, বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ফুংসুক ওয়াংড়ু? যার নামে তিনশো বাষট্টিখানা পেটেন্ট আছে?

ক্যাবলার প্রশ্নে টেনিদা চোখদুটো আধা বুজে মাথা নাড়ল। তারপর বলল, "এই যে গল্পটা তোদের এখন বলব সেটা আমাকে বলেছে তোদের ওই ফুংসুক ওয়াংড়ু। আমি অবশ্য ওকে ফুং বলেই ডাকি। আমরা বুজুম ফ্রেন্ড কি না। এর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা সেই যখন আমি টিবেট গেলাম তখন। ফুং তখন অনেকদিন ধরে একটা জুতো বানানোর চেষ্টা করছে। যেটা পায়ে পড়ে লাফালে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়। একটা জুতো ও বানিয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা পড়ে লাফালে হিসেবের থেকে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি আগেই ওটা থেমে যাচ্ছিল। আর বুঝতেই পারছিস, পাহাড়ে ওই হিসেবের গোলমাল মানে সোওজা খাদে। বেচারা খুব মনের কষ্টে ছিল। আমি ভাল করে দেখে বুঝলাম যে স্প্রীংটা ও লাগিয়েছে, সেটা দু মিলিমিটার ছোট। আমি টেনে একটু লম্বা করে দিতেই, জুতোটা একদম পারফেক্ট হয়ে গেল। ফুংসুক তো খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে টড়িয়ে ধরে বলল, মিস্টার টেনি, ওয়াংশু কুশ থুংপা থুংপা। মানে তিব্বতি ভাষায় থ্যাংকু ভেরি ভেরি মাচ। তারপর বলল, 
তুমি আজ আমার এক অনেক বড় সমস্যা সমাধান করে দিলে। এই জুতোর আধা পেটেন্ট তোমার। জানিসই তো, আমি ফকির মানুষ, আমার কোনও লোভ নেই। তাই আমি ওকে না করে দিলাম। তখন ফুং বলল, ঠিকআছে, মিস্টার টেনি। কিন্তু আমরা তিব্বতিরা বিনা প্রতিদানে কিছু নেই না। তোমাকে এর পরিবর্তে আমি এমন একটা গুপ্ত তথ্য জানাবো, যা কেউ জানে না। এক তিব্বতি গুম্ফার সাধুর কাছে লুকিয়ে রাখা পাঁচ হাজার বছরের পুরনো পান্ডুলিপিতে আমি এটা পড়েছি। এই বলে, ও ওর সিন্দুক খুলে একটা তালপাতার পুঁথি বার করল। সেই পুঁথি পড়ে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। এই দ্যাখ সেকথা বলতেও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।"

ক্যাবলা একটু নাক কুঁচকে বলল, "তুমি কবে তিব্বত ঘুমতে গেলে? আর তিব্বতী ভাষাই বা শিখলে কবে?"

টেনিদা দাঁত খিঁচিয়ে বলল, "সে খবরে তোর কি দরকার রা? আমি চার বছরে চুয়াত্তর বার কোন দেশে কি কাজে যাই, সব কি তোকে বলে যাব? গল্প শুনতে হলে শোন, নয়তো বাদ দে। আমি চললাম।"

হাবুল হাঁ হাঁ করে উঠল। "ছাড়ান দাও, ছাড়ান দাও। পোলাপান।"

-"হুঁ, পোলাপান। এদের ধরে জলপান করে ফেলতে হয়।"

আমি জিজ্ঞেস করলাম, "ফুংসুক কি বলল?"

-"শোন তবে। রামায়ণ বলতে আমরা কি বুঝি? রামের গল্প, তাই তো? কিন্তু গল্পটা আসলে কাকে ঘিরে বলত?

আমি একটু মাথ চুলকে বললাম, "হনুমান?"

-তোর মুন্ডু। গল্পটা হচ্ছে আসলে সীতাকে নিয়ে। সীতাহরণ হচ্ছে যাবতীয় ঘটনার মূলে। তো এই সীতা কে?

ক্যাবলা বলল, "সীতা মাইয়া জনক রাজার মেয়ে আর রামজীর বিবি।" অনেক বছর পশ্চিমে কাটানোয় ক্যাবলার কথায় এখনো পশ্চিমা হিন্দির টান।

হেঁ, হেঁ করে একটা উচ্চাঙ্গের হাসি হেসে টেনিদা বলল, "সেটাই তো সবাই জানে। কিন্তু ফুংসুক যেটা বলল সেটাই আসল গুপ্তকথা।"

"ফুং তো ওর সিন্দুক খুলে আমাকে পুঁথিটা দিল। কিন্তু, কি বলব তোদের, সেই পুঁথি হাতে নিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। দেখি, সেই তালপাতার পুঁথিতে মুক্তোর মত হাতের লেখায় গোটা গোটা বাংলায় পুরো রামায়ণ লেখা।"

-"তিব্বতী গুহার পাঁচ হাজার বছরের পুরনো পুঁথিতে বাংলায় লেখা রামায়ণ? খাইসে।" হাবুল চেঁচিয়ে উঠল।

-অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান যখন কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার হয়ে তিব্বত পৌঁছন, তখনই তাঁর হাত ধরে তিব্বতে বাংলা ভাষা জনপ্রিয় হয়েছিল। বুঝলি? কিসুই তো জানিস না। ভারতের আসল ইতিহাস টিতিহাস পড়েছিস কখনো? তোর মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটখানা একবার দেখতে হচ্ছে।

-হ। একদিন আমরা হক্কলে আমাগো সার্টিফিকেট লইয়া আমু। তোমারডাও কেও কখনো দ্যাখে নাই।

সার্টিফিকেটের কথা তুলতেই টেনিদা হাবুলের পিঠে হাত রেখে বলল, "আহা, চটিস কেন? তোকে আমি কখনো কিছু বলেছি। ওটা ওই সবজান্তা ক্যাবলাকে বলা। দেখছিস না, মুখখানা কেমন পান্তুয়ার মত করে বসে আছে।"

ক্যাবলা ফিশফিশ করে বলল, "সব গাঁজা। বাংলা ভাষার বয়স খুব বেশি হলে হাজার বছর, লিপির বয়স আরও কম। আর অতীশ দীপঙ্কর মারা গেছেন ১০৫৪ সালে।"

টেনিদা ক্যাবলার দিকে চেয়ে একটা করুণার হাসি হেসে বলল, "রামচন্দ্রের জন্মের আগে যদি রামায়ণ লেখা হতে পারে, স্টেশন তৈরী হওয়ার আগেই যদি সেই স্টেশনে চা বিক্রি হতে পারে, তবে বাংলা ভাষার জন্মের আগে কেন বাংলায় লেখা হতে পারে না শুনি?"

টেনিদার উত্তর শুনে ক্যাবলার মুখটা ভেবলে গিয়ে বাসি বেগুনীর মত হয়ে গেল।

টেনিদা একবার আমাদের তিনজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার গল্প বলা শুরু করল।

"বুঝলি, সেই পুঁথিতে যা লেখা তাকে রামায়ণ না বলে সীতায়ণ বলাই ভালো। সেখানে কাহিনী শুরুই হচ্ছে জনকরাজার লাঙলে সীতার মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা নিয়ে। তারপর আছে সীতার স্বয়ম্বরের বিস্তারিত বর্ণনা। কিভাবে রামচন্দ্র হরধনু ভেঙে সীতাকে নিয়ে এলেন তার গল্প। তারপর শুধু সীতারই গল্প। বনে সোনার হরিণ দেখা, লক্ষ্নণের গন্ডী পেরিয়ে রাবনকে ভিক্ষে দেওয়া, সীতাহরণ, সীতার উদ্ধার থেকে অযোধ্যা ফিরে যাওয়া সব। মায় উত্তরকান্ড পর্যন্ত।"

টেনিদা থামতেই হাবুল বলল, "হগ্গলই তো বোজলাম, কিন্তু ফ্যাসবুক আর ইন্টারনেটের কথা কইসিলা, হেডা কই?"

ক্যাবলাও উত্তেজিত হয়ে বলল, "অওর তুমহারা আঁখ চড়কগাছ কিঁউ হুয়া?"

টেনিদা একবার আমাদের সবার মুখের দিকে তাকাল। তারপর খানিক চুপ করে থেকে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, "সীতা হল আসলে ডেটা। তোর আমার ব্যক্তিগত তথ্য। আর জনকরাজা? সে হল আসলে আধার।"

ক্যাবলা হাত তুলে বলল, "তার মানে হরধনু হল সিকিউরিটি পাসওয়ার্ড?"

"কেয়াবাত।" বলেই টেনিদা একটা বিরাশি সিক্কার থাবড়া বসাতে যাচ্ছিল ক্যাবলার পিঠে। কিন্তু আগেরবারের অভিজ্ঞতায় ক্যাবলা সুড়ুৎ করে সরে গেল আর থাবড়াটা বোঁ করে ঘুরে পড়ল হাবুলের কাঁধে। হাবুল কোঁত করে চেঁচিয়ে উঠল, "খাইসে, খাইসে।"

টেনিদা সেদিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে বলতে লাগল, "ডাটা একবার হাত বদল হয়ে মালিকের কাছ থেকে গেল আধারের কাছে, তারপর সেখান থেকে পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করে চলে গেল পরের জনের কাছে।"

-"আর ফেসবুক? তুমি যে বলেছিলে ফেসবুকও ছিল?" অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর আমারও কিছু একটা বলা দরকার মনে হল।

-"সোনার হরিণটাই তো আসলে ফেসবুক। এই যে তোরা সকাল সন্ধ্যে এটা ওটা লিংকে ক্লিক করিস "আপনি আগের জন্মে কি ছিলেন" অথবা "আপনি কোন বলিউড অ্যাক্টরের মত দেখতে" জানতে, সেগুলো আসলে কি? সেগুলো তো ওই সোনার হরিণের ফাঁদ। লক্ষ্মণ, যে কি না আসলে তোর ফোন বা কম্পিউটারের ফায়ারওয়াল, তার টেনে দেওয়া গন্ডী যদি তুই নিজেই পেরিয়ে যাস, তাহলে তোর ডাটা তো অন্যের হাতে যাবেই। রাবণ তো আর কিছু নয়, ও হল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা যে সাগর পেরিয়ে এসে তোর ডাটা চুরি করে পালিয়ে যাবে। তারপর সেই ডাটা উদ্ধার করা কি চাট্টিখানি কথা? পুরো লঙ্কাকান্ড একেবারে। শুধু উদ্ধার করেও কি রক্ষে আছে? ডাটা করাপ্ট হল কি না সেই চিন্তাও তো আছে। তাই গল্পের শেষ হচ্ছে সীতার পাতালপ্রবেশ দিয়ে। অর্থাৎ, নিজের ডাটা নিজের কাছে থাকাই ভালো। বুঝলি কিছু?"

ক্যাবলা গভীর সন্দেহের দৃষ্টিতে বলল, "এইসব ওই পুঁথিতে লেখা ছিল?"

-"তবে কি আমি এই ভর সন্ধ্যেবেলা তোদের গাঁজা দিচ্ছি?"

-"দেখাতে পারবে সেই পুঁথি?"

টেনিদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "সেটাই তো ট্র্যাজেডি রে। সবে পুঁথিটা পড়া শেষ করেছি, এমন সময় শুনি গুড়গুড় আওয়াজ। তাড়াতাড়ি আমি আর ফুং বাইরে এসে দেখি এক বিশাল বরফের স্রোত ওপর থেকে নেমে আসছে। আর দু মিনিট দেরি হলেই আমরা দুজনেই ওর তলায় চাপা পড়ে যেতাম। কোনওমতে প্রাণ নিয়ে ফিরেছি। ওই পুঁথিটা ওই বরফের তলায় চিরকালের মত চাপা পড়ে গেল।"

-তোমরা বাঁইচলা কি কইর্র্যা?

-"ওই যে ফুংসুক ওয়াংড়ুর জুতো। ওটাই তো এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিল। একজোড়াই ছিল, তাই আমি পায়ে পড়লাম আর ফুংকে বললাম আমার হাতটা শক্ত করে ধরতে। তারপর একটা লাফ দিয়েই সোজা অন্য পাহাড়ে।"

আমরা সবাই খানিক চুপ করে বসে রইলাম। তারপর ক্যাবলা বলল, "তো এতসব ঘুরিয়ে লেখা কেন? সিধা সিধা লিখলেই তো পারত।"

টেনিদা মুচকি হেসে বলল, "পুঁথিটা তো নষ্ট্রাদামুসের লেখা। ওনার সব কিছু রহস্য করে লেখার অভ্যেস ছিল না? তাই।"

ক্যাবলা বললে, "সব বাজে কথা- বানানো।"

টেনিদা দাঁত খিঁচিয়ে বললে, "বানানো? তোদের এসব গোপন কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে।"

এই বলে চাটুজ্জেদের রোয়াক থেকে নেমে টেনিদা পটলডাঙা স্ট্রীট ধরে হনহন করে হাঁটা দিল।

(সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন