সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাধিকার ~ আর্কাদি গাইদার

৮বির মোড়ে যে সিগারেটের দোকান আছে, সেখানকার সিগারেট বিক্রেতা একবার আমায় বুঝিয়েছিলেন যে সিগারেট বিক্রি করাটাও আসলে একধরনের স্কিলড লেবার। যেটা অধিকাংশ লোকই পারে না।
'এই যেমন আপনি লুজ সিগারেট নেবেন। দোকানদার কি করবে? প্যাকেটের থেকে একটা সিগারেট দু আঙুল দিয়ে টেনে বার করে আপনাকে দেবে। প্যাকেটের ওপরের দিকে থাকে সিগারেটের ফিল্টারের দিকটা। ওই জায়গাটায় আঙুল দিয়ে ধরে বার করবে। আর সেটাই আপনি মুখে দেবেন। ওই ফিল্টারটা তো নোংরা হয়ে গেলো। আসল কায়দাটা কেউ জানেই না। প্যাকেটের এক সাইড হাতের চেটোয় হাল্কা করে মারতে হয়। তখন কয়েকটা সিগারেট লুজ হয়ে একটু বেরিয়ে আসবে। তখন সিগারেটের শরীরটা আলতো করে ধরে টেনে বার করে দিতে হবে। ফিল্টারে আঙুল লাগানো চলবে না।'
প্রচ্ছন্ন আত্মতুষ্টি নিয়ে বলেছিলেন তিনি।

যারা সিগারেট কেনে তারা কি এত ভাবে? আদৌ জানে যে লুজ সিগারেট বিক্রি করতে গেলে প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করবারও আলাদা কায়দা থাকে? জানবার প্রয়োজন আছে কি? কিন্তু তবুও এই দোকানদারের কাছে এই কায়দাটা প্রয়োজনীয়। নিজের জন্যে। তাকে কেউ জোর করে না। সে নিজে তাড়িত হয়ে করছে। নিজেই নিজেকে বাধ্য করছে। Watchmen গ্রাফিক নভেলে Rorschach যেমন বলেছিলো - We do not do it because it is expected, or allowed. We do it because we are compelled.'

যেমন তাড়িত হয়ে অনশনে বসেছে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা। এডমিশন প্রক্রিয়া পালটালে কিন্তু তাদের ব্যাক্তিগতভাবে কিছু আসবে যাবে না। তাদের তো এডমিশন হয়েই গেছে। তবুও তারা না খেয়ে বসে আছে। কেন? কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের প্রশ্ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়াকে তারা আপন মনে করতে তাড়িত হয়েছে।

আচ্ছা ঠিক কতটা তাড়না থাকলে ৬৬ ঘন্টারও বেশি না খেয়ে থাকা যায়? এর জন্যে কোনটা বেশি লাগে - পেটের জোর না শিরদাঁড়ার জোর? দেখেছি সুস্থ শরীরে একবেলা না খেলেই গা গোলায়। আচ্ছা তার থেকেও বেশি কি গা গোলায় না যখন একদা লোকসভার এবং রাজ্যসভার সাংসদ বলেন যে সরকার আর পদ যাওয়ার পরেই তিনি বিশেষ রাজনীতিতে আস্থা হারিয়েছেন এবং তাই তিনি আপাতত জিমন্যাস্টিক্সের খেলা দেখিয়ে এদিক ওদিক লাফালাফি করছেন? আচ্ছা জিমন্যাস্টিক্সের খেলা আর ডুগডুগির বাজনার সাথে বাদর নাচবার মধ্যে গুণগত ফারাক কি?

মইনুল হাসান, ঋতব্রতরা চকচকে তারা। তাদের দিকে সোমশ্রীরা তাকিয়ে থাকে, তাদের জন্যে পতাকা লাগায়, লোক জড়ো করে। তারা এসে গরম গরম কথা বলে। এরপর তারা হঠাত একদিন তাড়না বোধ করে তৃণমুলে চলে যাওয়ার। আর সোমশ্রীরা তাড়িত হয় ৪০ ঘন্টা অনশন করে অসুস্থ হাসপাতালে চলে যাওয়ার।

প্যাকেট একটাই। কোন সিগারেটটা কিরকমভাবে বেছে বার করা হবে, সেটাই আসল। কতজনই বা তফাত বোঝে। তাও, পার্থক্যটা রয়েই যায়। আর কেউ না জানুক, ওই সিগারেট বিক্রেতা তো জানে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন